পাগলটা হাসছে

কবি: রাজীব চক্রবর্ত্তী

রাজার অসুখের সেই পাগলটাকে মনে আছে?
সেই পাগলটা! যার কাছে খাওয়াটা ছিল একটা ঝঞ্ঝাটের ব্যাপার।
 খাওয়া নিয়ে তার কোনও মাথা ব্যাথা ছিল না। খাবার পেলে খেত না পেলে নয়।
 
খাবার পাওয়া গেলে তবেই তার খিদে পেত!
সুখে থাকার এমন অভিনব পন্থার কথা শুনেছেন আগে?

সেই পাগলটা আজ হাসছে।
কোথায়?
কি আশ্চর্য! দেখতে পাচ্ছেন না?
চেয়ে দেখুন। থামওয়ালা বিশাল বড় চাতালটায় শুয়ে পা দোলাচ্ছে আর হাসছে।
কোন চাতাল?
যে চাতালটার গর্ব আপনারা সবসময় করেন। 
সেই চাতালটা যার পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ চারদিকে চারটে মস্ত স্তম্ভ রয়েছে। 

এককালে স্তম্ভগুলো ছিল সুদৃশ্য মার্বেলে মোড়া।
বে আক্কেলে কিছু লোক পানের পিক ফেলে নোংরা করলেও
স্তম্ভগুলোর শরীর মোটামুটি ঠিকই ছিল।
এখন কিন্তু ওগুলো নড়বড়ে।
অনেক দিন ধরেই ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছিল।
প্রথম দিকে কিছু লোক রাতের অন্ধকারে 
একটা দুটো করে ইঁট খুলে নিয়ে যেত।
কেউ বাড়ির দেয়াল দিত। কেউ বাগানের পাঁচিল।
কিছু মানুষ আবার সেই ইঁট দিয়ে অন্যের মাথা ফাটাত।
সেসব দিন গেছে।

এখন সবার হাতে সময় কম।
দিনের বেলা হইহই করে এল একদল।
বেপরোয়া ভাবে শাবল, গাইতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল।
মজবুত স্তম্ভগুলো থেকে খসে পড়তে লাগল ইঁট।
কিছু গেল দেবালয়ে, কিছু রাজপ্রাসাদে।
সুদৃশ্য মার্বেলগুলো খুলে নিয়ে গেল শ্রেষ্ঠির দল।

চাতালের নিচে অনেক মানুষ শুয়ে আছে। 
অধিকাংশই নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে।
কেউ এত খেয়েছে যে গরমে ঘুম আসছে না।
কেউ আবার খিদের জ্বালায় ঘুমোতে পারছে না।
একদল মানুষ স্তম্ভগুলোর চারপাশে ঘুরছে।
পাকাপাকি ভেঙে পড়ার আগে যেটুকু পারে কুড়িয়ে নিচ্ছে।

পাগলটা একবার পাশ ফিরল।
চিৎকার করে বলে উঠল –
অনেক ঘুমিয়েছিস। এবার ওঠ।
ভেঙে ফেল এই নড়বড়ে স্তম্ভগুলো।
সবাই মিলে নতুন চাতাল বানাতে হবে। 
কেউ উঠল না। 
সবাই বিরিক্তি নিয়ে বলে উঠল-
আ:! অশান্তি করো না।

পাগলটা একদলা থুথু ছেটাল। 
তারপর হো হো করে হাসল।
বিড়বিড় করে বলতে লাগল –
আমার মত খিদেকে কি আর আয়ত্তে আনতে পারবে?
মরবে! সবকটা মরবে। 
চাতালের নিচে বসে বসেই মরবে।

পাগলের কথা কেউ শুনল না। 
কোনওদিন শোনেও না।

ভঙ্গুর স্তম্ভগুলোর দিকে তাকিয়ে,
পাগলটা কিন্তু হাসছে। শুধুই হেসে চলেছে …


লেখকের কথা: রাজীব চক্রবর্ত্তী
জন্ম ১৯৭০ সালের ৩০শে ডিসেম্বর, কলকাতার সিঁথিতে। পেশায় কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারী। দৈনন্দিনতার ক্লান্তি কাটাতেই মূলত: কলম ধরা। বেশ কয়েকটি লিট্ল ম্যাগাজিনে লিখেছেন গল্প, কবিতা। ২০১৭ সালে প্রকাশিত “সংশ্লেষ” নামক গদ্য সংকলনে স্থান পেয়েছে তাঁর মুক্তগদ্য। ঐ একই বছরে সোনারপুর কাব্যমঞ্চ আয়োজিত স্বরচিত কবিতা প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান লাভ করেন তিনি। ২০১৯ সালে প্রকাশিত “অন্য গদ্য” গ্রন্থে স্থান পেয়েছে তাঁর গদ্য। জীবনের বিবিধ অনুভূতি, বাস্তবতাকে ছন্দে বাঁধার প্রয়াসে তাঁর কবিতাচর্চা।

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

2 Comments

  1. ইচ্ছেমৃত্যু

    পাগলটার হাসা ছাড়া আর করার কীই বা আছে! ভাল লাগল কবিতাটি – এই সময়ে বড্ড প্রাসঙ্গিক।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।