এক বৃষ্টির রাতে

লেখক : অমিতাভ সাহা

অনেকদিন আগের কথা। রাত দশটা। বাইকে বাড়ি ফিরছি। হঠাৎ ঝমঝম বৃষ্টি করে শুরু হয়ে গেল। বাইকটা স্টার্ট বন্ধ করে রাস্তার একপাশে বৃষ্টির মধ্যে একটা বন্ধ কনফেকশনারি দোকানের বারান্দায় ছাদের নীচে দাঁড়ালাম। দেখলাম এক যুবতী মেয়ে ভিজতে ভিজতে এসে বারান্দায় উঠল। বৃষ্টিতে যুবতীর সালোয়ার-কামিজ, ওড়না সব ভিজে গেছে। পিঠের মাঝ বরাবর খোলা চুল ভিজে গেছে। ওড়না দিয়ে মেয়েটি মুখ ও মাথার চুল মুছল। মেয়েটির লম্বাটে ফর্সা শরীর। ভেজা কামিজ মাংসল শরীরের সঙ্গে সেঁটে গেছে। ভেজা শরীরে মেয়েটিকে দারুণ দেখাচ্ছিল। শরীর থেকে দামি পারফিউমের মিষ্টি সুবাস নাকে আসছিল। বৃষ্টি হচ্ছে তো হচ্ছেই। থামার কোনও লক্ষণ নেই। কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হবে কে জানে। বৃষ্টির ধরণ দেখে মনে হলো সারা রাত ধরেই বৃষ্টি ঝরবে। মেয়েটা নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে। বেশ চিন্তাগ্রস্ত মনে হলো ওকে। হয়তো ভাবছে বৃষ্টি যদি না থামে।

প্যান্টের পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করলাম। একটা সিগারেট বের করে একটু নম্রতার ভঙ্গিতে বললাম, “এক্সকিউজ মি, আমি একটা সিগারেট ধরাব। আপনার আপত্তি নেই তো?”

মেয়েটি হ্যাঁ বা না কিছু বলল না। সিগারেট খাওয়ার নেশাটা দমন করতে পারছিলাম না কিছুতেই। লাইটার দিয়ে সিগারেট ধরালাম। মেয়েটি কিছু বলল না।

সিগারেট টানতে টানতে মেয়েটিকে বললাম, “আপনি কোথায় যাবেন?”

“মহিষবাথান”, মেয়েটি জানাল।

আমি বললাম, “আমি যাব রাজারহাটের দিকে। কিন্তু যদি বৃষ্টি না থামে, তা হলে কী করবেন?” কোনও রিকশাও চলছে না।

কয়েক মিনিট পর একটি হুড ফেলা রিকশা দেখে “এই রিকশা,” বলে ডাকলাম ।

রিকশাটি থামল না। লক্ষ্য করলাম রিকশাটি খালি নয়। একজন যাত্রী জবুথবু হয়ে বসে আছে রিকশাতে। এরপর একটি খালি রিকশা দেখলাম। রিকশাওয়ালা পলিথিন গায়ে জড়িয়ে মাথায় ক্যাপ পরে রিকশা চালিয়ে যাচ্ছিল।

“এই রিকশা, মহিষবাথান যাবে?”

রিকশাওয়ালা কিছু না বলে চলে গেল। রিকশাওয়ালারা আজকাল ওইরকম। ওদের মেজাজ মর্জি বোঝা দায়। মেয়েটার জন্য একটা রিকশার ব্যবস্থা করা খুব জরুরি। রাত ঘনিয়ে আসছে। মেয়েটিকে ভীষণ চিন্তিত মনে হলো। মহিষবাথান বেশ কয়েক কিলোমিটার, শহরের প্রায় শেষ প্রান্তে।

কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি কিছুটা কমল। মনে করলাম, নেমে যাই রাস্তায়। বাইকে খুব জোরে টান দিয়ে চলে যাব। কিন্তু ভাবলাম মেয়েটি কী করবে। এই বৃষ্টির রাতে কীভাবে এতদূর যাবে। অথচ সে মুখ ফুটে কিছু বলছে না। নিজেই অযাচিত হয়ে বললাম, “এভাবে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন? কোনও যানবাহন নেই। কীভাবে যাবেন?”

মেয়েটি বলল, “সেই তো, কী যে করি।”

বৃষ্টি পড়েই চলেছে। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, এরই মধ্যে নেমে পড়ব। আমার বাড়ি যেতে যেতে সবকিছু ভিজে যাবে। যাক। এভাবে তো সারারাত দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না।

মেয়েটিকে বললাম, “আমি আপনাকে লিফট দিলে আপনি কি কিছু মনে করবেন?”

মেয়েটির মুখে এক চিলতে হাসি ফুটল। বলল, “আমাকে পৌঁছে দিলে তো খুব উপকার হয়।”

আমার মুখের দিকে তাকাল। হয়তো বুঝতে পারল, আমি যাই হই, গুণ্ডা-বদমাশ নই ৷

“ঠিক আছে, এবার নেমে পড়া যাক,” বললাম আমি ।

পা দুটো বাম দিকে করে আমার বাইকের পিছনে বসল মেয়েটি। মোটর বাইকে স্টার্ট দিয়ে জোরে ছুটলাম। কিছুদূর যেতেই আরও ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হলো।

ভিজে গেছি, যেখানে-সেখানে থামার দরকার নেই। মেয়েটিকে বললাম, “কোথাও দাঁড়াব নাকি?”

মেয়েটি বলল, “না, আপনি চালিয়ে যান”। বাইক চালাতে চালাতে মেয়েটিকে বললাম, “কোথায় গিয়েছিলেন?”

ও বলল, “রানিবাগানে মামার বাড়ি গিয়েছিলাম। বাড়ি থেকে বের হয়ে রিকশা নিয়ে মহিষবাথান চলে যাব ভেবেছিলাম। কিন্তু কোনও খালি রিকশা পেলাম না। তারপর হঠাৎ করেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। তারপর তো বুঝতেই পারছেন কী বিপদে পড়লাম। আপনি না থাকলে কী যে হত!”

“কী করেন আপনি?”

“মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছি।”

“কোন সাবজেক্ট?”

“কেমিস্ট্রি। আপনি কী করেন?”

“এম.এ পাশ করে একটা বেসরকারি কলেজে ঢুকেছি। বাংলা পড়াই।”

“ভালই তো।”

“কোন কলেজে আছেন?”

“কোচবিহার বি.এড কলেজে।”

ইতিমধ্যে মহিষবাথান এসে গেছি। মেয়েটিকে বললাম, “আপনাকে কোন জায়গায় নামাব?”

মেয়েটি একটি ফাঁকা জায়গার উপর একটি একতলা বাড়ির দিকে নিয়ে যেতে বলল। বাড়িটার সামনে মেইন গেটের কাছে বাইক থামালাম। বাড়িটা হলুদ রঙের। বাড়ির চারদিকে সীমানা প্রাচীর।

মেইন গেটের দরজা খুলল মেয়েটি।

“আমি এবার আসি,” বলে ফিরে যাচ্ছিলাম।

মেয়েটি বলল, “আপনি এত কষ্ট করে বৃষ্টির মধ্যে আমাকে নিয়ে এলেন, একটু আসুন না আমাদের বাড়িতে। বাড়িতে তেমন কেউ নেই, একমাত্র আমার মা ছাড়া।”

বৃষ্টি ততক্ষণে পুরোপুরি থেমে গেছে। আমি বাইকটা বাড়ির সামনে রাখলাম।

মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বললাম, “বাড়িতে আপনি আর মা ছাড়া কেউ থাকেন না মানে? বাবা নেই?”

মেয়েটি বলল, “বাবা মারা গেছেন কয়েক বছর হলো। আমরা দু’বোন। আমার কোনও ভাই নেই। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। কলকাতায় থাকেন।”

“সংসার চলে কীভাবে?” বললাম আমি ।

“বাবার পেনশন আর গ্রামের বাড়িতে কিছু জমিজমা আছে। এতে বেশ চলে যায় আমাদের।”

আমি চলে যাচ্ছিলাম। মেয়েটি বারবার অনুরোধ করল আমাকে বাড়ির ভিতরে যেতে। বলল, “বৃষ্টিতে আপনি সম্পূর্ণ ভিজে গেছেন। শুকনো টাওয়েল দিয়ে একটু মাথা মুছবেন তো? তা না হলে শরীর খারাপ হবে। ইনফ্লুয়েঞ্জা হতে পারে।”

“চুল না হয় মুছলাম। শার্ট-প্যান্ট তো ভিজে জবজবে। তার চেয়ে বরং তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যাওয়াই ভাল,” বললাম আমি।

মেয়েটি বলল, “না না, তা কী করে হয়? আপনি আমাকে লিফট না দিলে কী যে হত! আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাবার ভাষা আমার জানা নেই।”

বাইকটাকে বাড়ির লনে দাঁড় করালাম। মেয়েটির সঙ্গে বাড়ির বারান্দায় উঠলাম। মেয়েটি কলিং বেল টিপল। প্রায় ষাট বছরের এক মহিলা দরজা খুললেন। মহিলা উদ্বিগ্ন হয়ে মেয়েটিকে বললেন, “বৃষ্টিতে একেবারে ভিজে গেছিস যে, রুমেলা? তাড়াতাড়ি কাপড়-চোপড় পাল্টে নে।”

এরপর ভদ্রমহিলা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুমি কে, বাবা?”

আমি মহিলাকে নমস্কার জানালাম, তারপর বললাম, “আমি রাজারহাটের পাশেই থাকি।”

রুমেলার দিকে তাকিয়ে বললাম, “ওকে একটু পৌঁছে দিতে এসেছিলাম।”

মহিলা বললেন, “আমি তো বাবা চিন্তায় অস্থির। এত বৃষ্টিতে মেয়েটা কীভাবে বাড়ি ফিরবে।”

মহিলার উদ্বিগ্ন হওয়া খুবই স্বাভাবিক।

রুমেলা তাড়াতাড়ি একটি পরিষ্কার তোয়ালে এনে দিল আমাকে। আমি আমার চুল ও ভেজা হাত মুছলাম।

রুমেলা ভিতরে গিয়ে কাপড় পাল্টে এল। বলল, “বাড়িতে ছেলেদের কোনও পোশাক নেই যে আপনাকে পরতে দেব। একটু বসুন, তাড়াতাড়ি চা নিয়ে আসছি।”

আমি বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও আমাকে এক কাপ ধূমায়িত চা এনে দিল। কড়া লিকারের চা।

চা শেষ হলে রুমেলা বলল, “রাতে একটু ডাল-ভাত খেয়ে যাবেন”।

আমি বললাম, “না, এই যথেষ্ট। আমি এখনই উঠব। বাড়িতে সবাই চিন্তা করবেন”।

“বাড়িতে কে কে আছে আপনার?” বলল রুমেলা।

আমি বললাম, “মা-বাবা, ছোট দু-ভাই আর এক বোন। এবার আসি” বলে আমি ঘর থেকে বের হতে উদ্যত হলাম।

রুমেলা মেইন গেট পর্যন্ত এল। বলল, “কাছেই যখন থাকেন, তা হলে মাঝেমধ্যে আসবেন। এলে খুব খুশি হব। আশা করি বাড়ি চিনতে অসুবিধা হবে না।”

আমি বললাম, “ঠিক আছে আসব। তবে সন্ধ্যার পর। বিকেলে একটা কোচিং সেন্টারে পড়াই।”

রুমেলাকে বিদায় জানিয়ে বাইকে স্টার্ট দিয়ে দ্রুত গতিতে বাড়ির দিকে ছুটলাম ।

বাড়িতে পৌঁছলাম। রাত তখন অনেক হয়ে গেছে। ছোট বোন রিমা দরজা খুলল। আমার জামা-কাপড় ভেজা দেখে তাড়াতাড়ি পাজামা ও টি-শার্ট এনে দিল। নিজের ঘরে ঢুকে জামা-কাপড় পাল্টে নিলাম। ভেজা শার্ট-প্যান্ট বাথরুমে রেখে চোখ-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ডাইনিং টেবিলে খাবার রাখা ছিল। তাড়াতাড়ি খাওয়া-দাওয়া সেরে বনফুলের “হাটেবাজারে” উপন্যাস নিয়ে পড়তে বসলাম। উপন্যাসটাতে মন বসাতে পারছিলাম না। বারবার রুমেলার কথা মনে হতে লাগল। মেয়েটি বেশ ভদ্র। কেমিস্ট্রিতে মাস্টার্স পড়ে। মেধাবি মেয়ে। ছোট্ট পরিবার। মা আর মেয়ে। বইটা পড়া হলো না। রেখে দিলাম। শুয়ে শুয়ে অনেকক্ষণ ভাবলাম ওকে নিয়ে। মেয়েটি কি কাউকে ভালবাসে? মেয়েটিকে দিব্যি ভালবাসা যেতে পারে। লম্বা ফর্সা চেহারা, টিকালো নাক, ছোট চিবুক। নরম সুরে কথা বলে। এরকম সুন্দরী মেয়ে সচরাচর দেখা যায় না। মনে মনে স্থির করলাম, আগামীকালই সন্ধ্যার পর যাব ওদের বাড়ি। আমার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবে তো? সকালে কলেজে গেলাম। বিকেলে কোচিং ক্লাশ নিয়ে খাগড়াবাড়ি মার্কেটে একটু আড্ডা দিয়ে সাতটার দিকে রওনা দিলাম রুমেলাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

মহিষবাথানের গত রাতের সেই বাড়িটার গেটের সামনে মোটর বাইক থামালাম। মেইন গেটের দরজা খুললাম। গাড়িটাকে ভিতরে ঢোকালাম। দরজার কাছে দাঁড়ালাম। বাড়িতে কোনও আলো জ্বলতে দেখলাম না। বাড়ির বাইরেও কোনও আলো ছিল না। শুক্লপক্ষের রাত। বৃষ্টি নেই। আকাশ ঝকঝকে পরিষ্কার। কলিং বেল টিপলাম। ভিতরে কোনও শব্দ হলো কিনা জানতে পারলাম না। কী ব্যাপার! বাড়িতে কি ওরা নেই? হঠাৎ দরজার কড়ার দিকে তাকালাম। দরজায় তালা। তবে কি ওরা কোথাও বেড়াতে গেছে? বারান্দায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বাইক নিয়ে বের হলাম। আবার ফিরে গেলাম মার্কেটে।

রাত দশটার সময় আবার গেলাম সেই বাড়িতে। দেখলাম দরজায় তালা ঝুলছে। বাড়ির সীমানা প্রাচীরের ভিতরে বাতাবি লেবুর গাছের নীচে দেখলাম কয়েকজন যুবক সিগারেট টানছে। সিগারেটের গন্ধ আমার জানা। মনে হলো ওরা গাঁজা টানছে। আমাকে দেখে যুবকদের মধ্যে একজন বলল, “কে ওখানে? কী চাই?”

আমি বললাম, “এটা রুমেলাদের বাড়ি না? এখানে তো রুমেলা ও ওর মা থাকেন।”

হাসতে লাগল যুবকগুলো।

“কী যে বলেন আপনি? এই বাড়িতে কেউ থাকে না।”

“কেউ থাকে না মানে?”

“হ্যাঁ, কেউ থাকে না। বাড়িটা বহুদিন থেকে তালাবন্ধ।”

আমি একটু এগিয়ে গেলাম তাদের কাছে। একজন যুবক আমার মুখের উপর গাঁজার ধোঁয়া ছেড়ে বলল, “এখানে অনেকদিন হলো কেউ থাকে না।”

“কী বলছেন আপনারা! গতরাতেই আমি এ বাড়িতে এসেছিলাম। কিছুক্ষণ ছিলাম। চা খেয়ে গেছি।”

হাসতে লাগল ছেলেগুলো। ওদের মধ্যে একজন বলল, “আপনি দেখছি আমাদের চেয়েও বেশি মাল টেনেছেন। আপনার মাথা ঠিক নেই। তাড়াতাড়ি বাড়ি গিয়ে শুয়ে পড়ুন।”

আমি বললাম, “আশ্চর্য ব্যাপার! গতকাল আমি ঠিকই এসেছিলাম, সত্যিই বলছি। তারপরও আপনারা আমাকে নিয়ে মশকরা করছেন?”

ঘন গোঁফওয়ালা লম্বা চুলের একজন যুবক বলল, “বাড়িটা এক বিধবা বয়স্কা মহিলার ছিল শুনেছি। বছর চারেক আগে ইলেকট্রিক শর্টসার্কিটে আগুন লেগে বয়স্কা মহিলা ও তাঁর এক যুবতী মেয়ে মারা যান। তারপর ওই মহিলার এক ভাইপো কিছুদিন ওই বাড়িতে থাকে। কয়েক মাস পর ওই ছেলেটাও মারা যায়। ছেলেটিকে তার বেডরুম থেকে মৃত্যুর কয়েকদিন পর উদ্ধার করা হয়। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়। কিন্তু এই ঘটনাটা রহস্যাবৃত, কারণ ছেলেটির বয়স ছিল ত্রিশ বছরের মত। এরপর এক সরকারি কর্মকর্তা ভাড়া নেন বাড়িটা। কয়েক মাস পর রহস্যজনকভাবে ভাড়াটে ভদ্রলোক, তাঁর স্ত্রী ও একমাত্র পাঁচ বছরের পুত্র সন্তান অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুবরণ করেন। ঘরের বিছানাপত্র, আসবাবপত্র সব পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। ভদ্রলোক, তাঁর স্ত্রী ও পুত্রের শরীর পুড়ে কয়লা হয়ে গিয়েছিল। থানা পুলিশ হয়েছিল। গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন তদন্ত করেছিল, কিন্তু কীভাবে আগুন লেগেছিল, তার কোনও ক্লু কেউ বের করতে পারেনি। এই এলাকায় যাকেই জিজ্ঞেস করবেন তারা সবাই বলবে এই ঘটনা। এটা একটি অভিশপ্ত বাড়ি। বাড়ির মূল মালিক, অর্থাৎ বিধবা মহিলার মেয়েটি নাকি ইউনিভার্সিটিতে পড়ত। ওই মহিলার ছোটভাই মাঝেমধ্যে দিনের বেলায় বাড়িতে আসেন কিন্তু রাতে থাকেন না। বাড়িতে টু-লেট লেখা দেখে অনেকেই ভাড়া নিতে আসে। কিন্তু আশপাশের লোকজনের মুখে এসব ঘটনা শুনে আর ভাড়া নেয় না।”

কথাগুলো একটানা বলে দম নিল যুবকটা। তারপর বলল, “আমরা নেশাটেশা করি। ভূত-পেত্নীর ভয় করি না। নেশা করা হয়ে গেলে চলে যাই। এ বাড়ির ত্রিসীমানায় কেউ আসে না।”

তবুও আমার বিশ্বাস হলো না কথা শুনে। বাড়ি ফিরলাম। পরের দিন শুক্রবার সকাল দশটার দিকে সেই বাড়িতে আবার গেলাম। দেখলাম দরজায় সেই ঢাউস তালাটা ঝুলছে। দরজায় টিনের পাতে লেখাঃ ‘টু লেট’। টিনটা কাঁটা দিয়ে দরজায় লাগানো। টিনের প্লেটে টু লেটের নীচে যোগাযোগের ঠিকানা লেখা। বাড়ির লনে বাতাবি লেবু গাছটা দেখলাম। একটা কাঁঠাল গাছ ও একটি কুল গাছও দেখলাম। চারদিকে অনেক আগাছা জন্মেছে পরিচর্যার অভাবে। কেমন ভূতুড়ে পরিবেশ মনে হল।

তাড়াতাড়ি বাড়ির প্রাঙ্গন থেকে বের হচ্ছি। এমন সময় দেখলাম, একটি কালো বিড়াল জঙ্গলের মধ্য থেকে লাফ দিয়ে বারান্দায় উঠল। দেখলাম বিড়ালটি আমার দিকে বাঘের মত জ্বলজ্বলে চোখে চাইল।


লেখক পরিচিতি : অমিতাভ সাহা
কোচবিহার শহরের বাসিন্দা। শখের বশে লেখালিখি করেন। কিছু লেখা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

লেখা আহ্বান - বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন

দীপায়ন