লেখক : অভীক সিংহ
“স্টুডেন্টদের ইমেলটা দেখেছ সান্যালদা?” আমি চায়ে শেষ চুমুকটা দিয়ে কাপটা পাশে রাখলাম।
“হুমম, দেখলাম।” সান্যালদা খবরের কাগজ থেকে মুখ না তুলেই বলল।
“কী মনে হ’ল?”
“মাইরি ঢপবাজির একটা লিমিট থাকে। হস্টেলে নাকি ভূতের উপদ্রব হচ্ছে, আর সেই জন্য নাকি বাবুদের পরীক্ষার তারিখ পেছোতে হবে। কি বহর আব্দারের, আহা, মরে যাই।” সান্যালদা খবরের কাগজ থেকে মুখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে বলল।
“সত্যি এদের মাথায় আসেও বটে,” আমি সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললাম, “হস্টেলের পিছনের দিকের জঙ্গলটায় বছর দশ-বারো আগে কেউ নাকি আত্মহত্যা করেছিল। তারই ভূত নাকি গতকাল মাঝরাতে এসে হস্টেলের ছাদে নাচানাচি করছে, লাইট নিবিয়ে দিচ্ছে, দরজায় টোকা দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে বলে নাকি পড়তে অসুবিধে হচ্ছে। আজ সারাদিন ওয়ার্ডেনকে খেজুর করবে এই নিয়ে।”
“তাও ভাগ্যিস বলেনি যে ভূতে মদ গিলে পালিয়ে যাচ্ছে।” সান্যালদা হেসে উঠল।
“সেটাই খালি বলতে বাকি রেখেছিল,” আমিও হাসতে হাসতে বললাম।
“তবে সক্কাল সক্কাল এইরকম জিনিসপত্র দেখলে কিন্তু সারাদিনের খোরাকের জোগাড় হয়ে যায়। কী বল?” সান্যালদা খবরের কাগজটা টেবিলে রেখে জিজ্ঞাসা করল, “তা তুমি আবার ভূতে-টুতে বিশ্বাস করো নাকি?”
“তুমি সক্কাল সক্কাল খেজুর করার জন্য আমাকেই পেলে গো সান্যালদা?” আমি সিগারেটে একটা টান দিয়ে বললাম।
“আরে বলই না,” সান্যালদা একটু জোর দিয়েই বলল, “বিশ্বাস কর কি?”
আমি একটু চুপ করে থেকে বললাম, “চোখে দেখাটাকে কি বিশ্বাস করার পর্যায়ে ফেলা যায়?”
সান্যালদা এবারে একটু বেকায়দায় পড়ে গেল। একটু আমতা আমতা করে বলল, “মানে… তা কিছুটা… ওই আর কি… যায় বইকি।”
আমি একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম, “তাহলে হাণ্ড্রেড পার্সেণ্ট বিশ্বাস করি।”
সান্যালদা এবারে একটু অধৈর্য্য হয়ে বলল, “এটা এবারে একটু বেশি হয়ে গেল না অভীক? নিজের চোখে ভূত দেখেছো? অ্যাঁ? পেঁজোমি হচ্ছে?”
“নইলে আর বলছি কি গুরু। নৈশযাপনও করেছি একসাথে।”
“দুত্তোর, আমি চললাম। আবার একটা গাঁজাখুরি গল্প দেবে।” বলে সান্যালদা চেয়ার থেকে উঠতে গেল।
“আরে বসো, বসো। তোমার তো এখন কোন ক্লাসও নেই, মিটিংও নেই। কোথায়ই বা যাবে? তার চেয়ে আরেকটা করে চা নিয়ে বসি। গল্পটা শুনেই দেখো। শীতের নরম সকালে গরম চা আর চরম ভূত – এই তো জীবন।” আমি সিগারেট থেকে ছাইটা ঝাড়তে ঝাড়তে বললাম।
“তা অবশ্য খুব একটা মন্দ বলনি। অফিসে এখনই কোন দরকারী কাজও নেই, ফালতু বসে বসে বোরই হব। তার থেকে আরেককাপ চায়ের সাথে তোমার গল্পটাই বেটার।”
“দাঁড়াও, তাহলে দু’কাপ চা দিতে বলে দিই।” আমি সিগারেটটা ফেলে লাউঞ্জের বেয়ারাকে দু’টো চা দিতে বললাম। গরমাগরম চা চলে এল কয়েক মিনিটের মধ্যেই। একটা সপ্রেম চুমুক দিয়ে গল্পটা শুরু করলাম।
সে আজ থেকে প্রায় উনিশ বছর আগের কথা। সদ্য ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে চাকরির সন্ধান করছি। কলকাতার চাকরির বাজারে তখন বাজে রকমের খরা চলছে। আমার অনেক বন্ধুই চাকরির সন্ধানে পাড়ি জমিয়েছে ব্যাঙ্গালোরে। আমি রয়ে গিয়েছি কলকাতাতেই। সকালে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে চাকরির খোঁজ করি, আর সন্ধ্যেবেলায় বাড়ি ফিরে গেট আর ক্যাট পরীক্ষার প্রস্তুতি নিই। প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি, আমাদের একটা ফ্ল্যাট আছে লেকটাউনে, আর আমি সেখানে মোটামুটি একাই থাকতাম। তখনও আমরা পাকাপাকিভাবে কলকাতায় চলে আসিনি। মা আর বোন থাকত মেদিনীপুরে। বাবা বেশিরভাগ দিনই থাকত বেহালায় হাসপাতালের কোয়ার্টারে, আর মাঝে মধ্যে লেকটাউনে এসে আমাকে হাতখরচা দিয়ে যেত। ওই টাকা থেকেই দু’বেলা খাওয়া, বাসে করে যাওয়া-আসা, বইপত্র কেনা, আর সিগারেটের খরচা চালাতে হত। টাকা বাঁচানোর চক্করে কখনও একবেলা খাওয়া, বাসে না চেপে পায়ে হেঁটেই মেরে দেওয়া, অথবা গোল্ড ফ্লেকের বদলে নিখাদ দিশি বিড়ি। পাশের গলিতে এক বন্ধু থাকত, সন্ধ্যের দিকে ওর মেসে গিয়েই আড্ডা দিতাম। রাতের খাওয়াটা অনেক সময়ই ওদের মেসেই সেরে নিতাম, খরচাটাও একটু বেঁচে যেত। এইভাবেই দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু তারমধ্যেই অদ্ভুতভাবে একদিন কেস খেয়ে গেলাম।
সেদিন কোন এক অজ্ঞাত কারণে দুপুর থেকেই লোডশেডিং। আমি তো ব্যাপারটা জানতাম না, কারণ সকাল থেকেই বাইরে বাইরে ঘুরছি। এক্সাইড মোড়ের দিকে কয়েকটা কোম্পানীর অফিসে বায়োডাটা দিতে গিয়েছিলাম, ফিরতে গিয়ে দেখি রাস্তায় মিছিল। স্বভাবতই ফিরতে ফিরতে একটু সন্ধ্যেই হয়ে গিয়েছে। ফ্ল্যাটের সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে দেখি পুরো সিঁড়ি অন্ধকার। আমার ফ্ল্যাটটা চারতলায়। সেই অন্ধকারের মধ্যে হাতড়ে হাতড়ে ওপরে ওঠাটাও মুশকিল। আমি সিঁড়ির নীচে আলোর স্যুইচগুলো টিপে দেখলাম কোনটাই জ্বলছে না। বুঝলাম, লোডশেডিং হয়েছে। তারপরেই খেয়াল পড়ল, গলির মধ্যে রাস্তার দু’দিকে বেশিরভাগ ল্যাম্পপোস্টই জ্বলছিল না। আমার তো মাথায় হাত। একে এই ভ্যাপসা গরম, তার উপরে লোডশেডিং। ঘরে গিয়ে একটু পাখা না চালাতে পারলে তো অবস্থা একেবারে ভেজা ঠোঙা হয়ে যাবে। কি করি? সাতপাঁচ ভেবে পাশের গলিতে বন্ধুর মেসের দিকে পা বাড়ালাম। যদিও সেখানেও লোডশেডিং, অন্তত সময়টা তো একটু কাটবে। কিন্তু কপাল খারাপ। মেসে গিয়ে জানতে পারলাম যে আমার বন্ধুটির আজ নাইট শিফট, প্রোজেক্টের ডেলিভারি হওয়ার কথা আছে। তার ফিরতে ফিরতে কাল দুপুর। অগত্যা উপায়ান্তর না দেখে ফ্ল্যাটের দিকেই পা বাড়ালাম।
সিঁড়ি বেয়ে ফ্ল্যাট অবধি এসে কতকটা হাতড়ে হাতড়েই অন্ধকারের মধ্যে চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলাম। এখানে বলে রাখি, ফ্ল্যাটে তিনটে বেডরুম, আমি থাকি একটায়। ফ্ল্যাটে আসবাব বলতে একটা টেবিল, দুটো চেয়ার, রান্নাঘরে কয়েকটা বাসন, একটা ড্রেসিং টেবিল, আর একটা ক্যাম্প খাট। সবচেয়ে বড় ঘরটা মা-বাবার, আমি আপাতত সেই ঘরটাতেই আস্তানা গেড়েছিলাম। একটা বড় বারান্দা, বাইরে নারকেল গাছ। সন্ধ্যের পর থেকে বেশ হাওয়া দিত। ড্রেসিং টেবিল আর খাটটাকে আপাতত সেইঘরেই গুঁজেছিলাম। কিন্তু ফ্ল্যাটে প্রায় কোন আসবাবপত্র না থাকার কারণে ফ্ল্যাটটাকে বিশাল লাগত, কথা বললে গমগম করত। কিন্তু বিশালত্ব যে একপ্রকার ভীতিপ্রদ রূপ নিতে পারে, সেটা লোডশেডিংয়ের অন্ধকারেই উপলব্ধি করলাম। অন্ধকারটা চোখে সয়ে যাওয়াতে পুরো ফ্ল্যাটটার চারিদিকে ভাল করে চেয়ে দেখলাম। কেমন একটা অস্বস্তিবোধ হতে লাগল। একমুহূর্তের জন্য মনে হল যেন অন্ধকার ফ্ল্যাটটা আমাকে হাঁ করে গিলতে আসছে। ঘরের দরজা-জানালা, ছাদের আর মেঝের কোণ, দেওয়াল – সব জায়গা থেকে যেন হাজার হাজার অদৃশ্য চোখ আমাকে দেখছে। চিন্তাটাকে আর বেশি প্রশ্রয় না দিয়ে জুতো খুলে রেখে ব্যাগপত্র নিয়ে ঘরে ঢুকে জামাপ্যাণ্ট বদলে নিলাম। মুখ-হাত ধুয়ে ঘরের বারান্দায় এসে একটা সিগারেট ধরালাম। দূর থেকে রাস্তায় একটা-দু’টো গাড়ির আওয়াজ হালকা ভেসে আসছে, বাড়ির নীচের রাস্তার কুকুরগুলো আজ মনে হয় যুদ্ধবিরতি নিয়েছে। চারিদিক বেশ চুপচাপ, বেশ থমথমে। কালো আকাশটার হালকা মেঘে চাঁদ মুখ লুকিয়েছে, টিমটিমে তারাগুলোকেও কেউ যেন আকাশের শ্লেট থেকে মুছে দিয়েছে। সামনে নারকেল গাছটা হালকা হাওয়ায় দুলছে, তার পিছনে পুরো পাড়াটা আবছা কালো রঙের চাদরে ঢাকা। প্রকৃতি যেন কোন এক মন্ত্রবলে পুরো পাড়াটাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। ঠাণ্ডা হাওয়ায় সিগারেটটা খেতে খেতে বেশ আমেজ চলে এসেছিল, হঠাৎ কোন একটা বাড়ি থেকে বেড়ালের কান্নার আওয়াজ ভেসে আসল। অন্ধকারের নিকষছায়ায় সেই কান্নার আওয়াজটা যেন একটা অশুভ সঙ্কেতের ইঙ্গিত। আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠল সেই অস্বস্তিভাবটা। আর প্রায় তার সাথে সাথেই মনে পড়ে গেল খুব পুরনো একটা ঘটনার কথা। এই ফ্ল্যাটবাড়িটা তৈরী হওয়ার সময় একজন শ্রমিক পাঁচতলার উপর থেকে পা পিছলে পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছিল। পুলিশ ঠিক এই নারকেল গাছটার নীচ থেকেই নিয়ে গিয়েছিল তার থেঁতলে যাওয়া রক্তাক্ত শরীরটা। ফ্ল্যাট তৈরীর কাজ বেশ কিছুদিন বন্ধও রাখতে হয়েছিল। “তাহলে এই ফ্ল্যাটবাড়িটা কি একটা ভয়াবহ মৃত্যুর নীরব সাক্ষী?” কেন জানিনা, কথাটা মনে হতেই পিঠ দিয়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত নেমে গেল। ঠিক যেন মনে হল নারকেল গাছটা থেকে কেউ আমার দিকে লুকিয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। পরের মুহূর্তেই হাসি পেয়ে গেল। নিজেই মনে মনে বলে উঠলাম, “ধুৎ, এসব কি ভাবছি? আমি না শালা ইঞ্জিনিয়র? সায়েন্সের পাবলিক হয়ে ভূতের ভয়ে সব লিক হয়ে যাচ্ছে। ভ্যাট!” হাসতে হাসতে সিগারেটটা ফেলে ঘরে চলে আসলাম। তখন ঘড়িতে বাজে রাত আটটা।
আলোর অপেক্ষা করতে করতে কেটে গেল আরও প্রায় দেড়টা ঘণ্টা। খিদেও পাচ্ছে। বাড়ি ফেরার পথে দু’টো রুটি আর আলুর দম প্যাক করে এনেছিলাম। সেটাই ব্যাগ থেকে বের করে খেতে খেতে ভাবলাম যে আজ আর কারেণ্টবাবাজীর দেখা পাওয়া যাবে বলে তো মনে হয় না। অনর্থক অপেক্ষা করে কোন লাভ নেই, কাল সক্কাল সক্কাল আবার কলেজ স্ট্রীটের দিকটায় যেতে হবে। তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়াই ভাল। খাওয়াদাওয়া শেষ করে হাতমুখ ধুয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে একটা গল্পের বই নিয়ে খাটে বসলাম। কিছুক্ষণ পড়ার পরেই ঘুম পেতে লাগল। মোমবাতিটা নিবিয়ে গল্পের বইটা মাথার পাশে রেখে শুয়ে পড়লাম। ক্লান্তও ছিলাম, কয়েক মিনিটের মধ্যেই তলিয়ে গেলাম গভীর ঘুমে।
কতক্ষণ ঘুমিয়েছি খেয়াল নেই। হঠাৎ ঘুমটা গেল ভেঙ্গে। ভ্যাপসা গরমে ঘেমে নেয়ে একশা দশা, তার সাথে তেষ্টায় তালু শুকিয়ে বালুচর। খাটের পাশে রাখা বোতলটা থেকে ঢকঢক করে গলায় জল ঢেলে চোখ কচলে বারান্দার দরজা বাইরের দিকে তাকালাম। রাত বাড়ার সাথে সাথে আরও গাঢ় হয়েছে অন্ধকারটা। বাইরেটা একেবারে নিঝুম, কোন সাড়াশব্দ নেই। খাটে শুয়ে শুয়েই খোলা দরজা দিয়ে হাওয়ায় দুলতে থাকা নারকেল গাছটা আবছা দেখতে পাচ্ছি। বালিশের নীচ থেকে ঘড়িটা বের করে সময় দেখলাম, রাত একটা। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে, কাল তো আবার সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বেরোতে হবে। আবার চোখ বুজে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু কেন জানিনা, ঘুমটা আর কিছুতেই আসছিল না। মনের মধ্যে বারবার ফিরে ফিরে আসছিল সেই অস্বস্তিভাবটা। চোখ বুজে খালি মনে হচ্ছিল কেউ যেন আমার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। মন থেকে এই সব উদ্ভট চিন্তাভাবনাগুলোকে কিভাবে দূর করা যায় ভাবছি, এমন সময় একটা আওয়াজে ঘুমটা কেটে গিয়ে সম্পূর্ণ সজাগ হয়ে উঠলাম। একটু খেয়াল করাতেই স্পষ্ট শুনতে পেলাম ঘরের মধ্যে কারও একটা চলার আওয়াজ। কেউ যেন একটা ভাঙা পা নিয়ে মাটিতে ঘষটে ঘষটে হেঁটে বেড়াচ্ছে ঘরের চারিদিকে। কার পায়ের আওয়াজ? প্রশ্নটা মনে হতেই মুহূর্তের মধ্যে চোখের সামনে ভেসে উঠল সেই শ্রমিকের থেঁতলে যাওয়া কাল্পনিক অবয়বটা। “তাহলে ভাঙা পা নিয়ে কি সেই –” আর ভাবতে পারলাম না। সেই গরমের মধ্যেও হাত-পা ঠান্ডা অসাড় হয়ে আসল, গায়ের লোম খাড়া হয়ে উঠল। বহুকষ্টে শক্তিসঞ্চয় করে ডাক ছাড়লাম, “কে? কে আছে ওখানে?” ঘরের দেওয়ালে আমার আওয়াজটাই প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে এল আমার কাছে। আস্তে আস্তে পায়ের আওয়াজটা বাড়তে বাড়তে ঘুরতে লাগল আমার খাটের আশেপাশে। আমি আবছা অন্ধকারের মধ্যে চারিদিকে দেখার চেষ্টা করছি, কিন্তু কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। ভয়ে রীতিমত কাঁপতে শুরু করেছি। এমন সময় হঠাৎ চোখটা গিয়ে পড়ল আমার পায়ের দিকের দেওয়ালটার উপরে। দেওয়ালটার দিকে তাকিয়ে দেখতেই আমার চোখ ভয়ে ঠিকরে বেরিয়ে আসার উপক্রম। দেওয়ালটার গায়ে সেঁটে আছে একটা ছায়ামূর্তি। যেন হাওয়ায় ভর করে আমার সামনে দাঁড়িয়ে। খোলা চোখের ভয়াবহ জ্বলজ্বলে দৃষ্টি সোজা আমার উপর। আমার গলা দিয়ে আর কোন আওয়াজ বেরলো না। আমি গোঁ-গোঁ করতে করতে মূর্চ্ছা গেলাম।
এই অবধি বলে থামলাম। সান্যালদা চা খাওয়া থামিয়ে রূদ্ধশ্বাসে একেবারে হাঁ করে শুনছিল। আমি থামাতে একটু গলা খাঁকারি দিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “তারপরে কী হ’ল?”
আমি একটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললাম, “সেদিন রাতে আমার দুটি জিনিস উপলব্ধি হ’ল সান্যালদা।”
“কিরকম?”
“প্রথমতঃ, বারান্দার সামনে নারকেল গাছ থাকলে বারান্দার উপরে ফাইবারের শেড লাগাতে নেই। পাতার ঘষা লাগলে বাজে রকমের খড়খড়ে আওয়াজ হয়।”
“আচ্ছা। আর অন্যটা?”
আমি সিগারেটে আরেকটা টান দিয়ে সান্যালদার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম, “দ্বিতীয়তঃ, ড্রেসিং টেবিলের সামনে খাট পেতে ঘুমোলে রাতবিরেতে হার্টফেলও হতে পারে।”
“ও হো হো, তার মানে ভূতটা –” বলেই সান্যালদা হো-হো করে হেসে উঠল।
লেখক পরিচিতি : অভীক সিংহ
গল্পটির লেখক ড: অভীক সিংহের জন্ম পশ্চিমবঙ্গে। পেশায় অর্থনীতির অধ্যাপক এবং গবেষক, যুক্ত আছেন লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে, বর্তমান বাসস্থান চীন। তবে ভালবাসাটা আজও লেখালিখি, পেন্সিল স্কেচ, যন্ত্রসংগীত, এবং নিত্যনতুন রান্নাবান্নার সাথেই রয়ে গিয়েছে। প্রথম বই "R.E.CALL: এক Recollian-এর গল্প" প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালে। দাদুর হাত ধরে কবিতা দিয়ে লেখালিখির সূত্রপাত হলেও এখন প্রবন্ধ এবং গল্পতেই মনোনিবেশ করেছেন।