লেখক : অয়ন মৈত্র
অভিমান আমরা সবাই করি।সেই শিশু বয়সে শারীরিক আর জৈবিক অনুভূতিগুলোর বাইরে যদি আর কোন অনুভূতি থাকে, সেটা অভিমান।মানুষের প্রথম অভিমান শুরু মা’কে দিয়ে।জীবনের সেই প্রথম সকালে মায়ের ওপর শিশুর যে একাধিপত্য থাকে- সেখানে সব প্রলোভন স্রেফ গৌণ হয়ে যায়।’আমার মা’ থেকে এক মাছরাঙা দুপুরে মা কখন যে কেবল ‘আমারই’ হয়ে যায় সেই বিবর্তনের কোন সংজ্ঞা হয় না।ছোটবেলার সেই অভিমান এরপর কত ক্ষেত্রে, কত মুহূর্তে আমাদের বুকের মধ্যে জন্ম নেবে তার কোন হিসেব আমরা না রাখলেও, অভিমানের সেই উত্তাপে আমরা সবাই দগ্ধ হব এরপরে। অভিমান আসলে সেই অহংবোধ, সেই আত্ম মর্যাদা বোধ তৈরী করে-যার শুরুটায় নিজের কাছে নিজের গুরুত্ব হঠাৎ বেড়ে যায়। অভিমানের আক্ষরিক অর্থ- খুব কাছের কারো কাছ থেকে যে সাড়া, বা ব্যবহার আশা করা হয়, তেমনটা যদি না আসে এবং তার সাথে যদি প্রচ্ছন্ন অবহেলা মিশে থাকে, সেই সকল আঘাত মনে যে মিশ্র অনুভূতির জন্ম দেয়- তার ওপর তলায় এক অবাক করা অস্ফুট ব্যাথা থাকে আর নিচের তলায় তৈরী হয় এক হৃদয় অহংকার-ইংরেজিতে সেই অহংকারের নাম ইগো। ইগো মনের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট করে দেয়। অভিমানের ব্যাথা বেদনার জায়গা বদল হয়ে যায় নিজের সাজানো সমস্ত যুক্তির কাছে। নিজেকে আকাশচুম্বী করতে করতে এমন এক উচ্চতায় আমরা চলে যাই তখন, যে উচ্চতা থেকে এই আপামর জনসাধারণকে কি অপ্রাসঙ্গিক, গৌণ মনে হয়। ছোটবেলার সেই ইগো যেখানে আমার মা’ই ছিল দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মা- সেই ইগো বয়স বাড়ার সাথে সাথে মা’কে স্থানচ্যুত করে দেয়।স্থান দখল করে ‘আমি’। আমার দেখানো সমস্ত যুক্তিই তখন অকাট্য হয়, আমার বলা সমস্ত কথাই তখন ভীষণ প্রাসঙ্গিক হয়ে যায়।অভিমান থেকে ইগোর মাঝে এরকম ডেলি প্যাসেঞ্জারী আমরা প্রত্যেকেই করি।ভবিষ্যতে করতে থাকব। শুধু খেয়াল রাখি না, এই রোজকার যাতায়াতে আমাদের মনের উপত্যকায় যারা ঘর বাড়ি বানিয়ে বসবাস করত, তারা কিভাবে জমি হারিয়ে অসহায় হয়ে সমতলে নেমে গেছে।আমরা বুঝি না, তারা বেবাক বিস্ময়ে আমাদের দিকে চেয়ে রয়েছে কেন। ইতিহাস বোঝেনি পৃথিবীর সব সাম্রাজ্যবাদী শাসকের থেকে অনেক বেশি ক্ষমতাশালী মানুষের ইগো।