অম্লানটাইমস-৯

লেখক : অম্লান ভট্টাচার্য

নিজেকে ভাঙুন নিজেকে গড়ুন

যে মানুষ তার নিজের পারিপার্শ্বিক অবস্থার বিচারে যখন ভীষণ ভীত, স্থবির ও পজিটিভ চিন্তারহিত হয়ে যায়, সে পরবর্তী পর্যায়ে পা রাখতে বা এগিয়ে যেতে একদম পারে না। তার সুস্থ, স্বাভাবিক মানসিক ছন্দের তাল কেটে যায়, তখন বুঝতে হবে সে মানুষ ভয়ের কাছে মাথা নত করেছে। সে মানুষ মাথা উঁচু করে বাঁচার রাস্তা ভুলে গেছে, সে মানুষ সমস্যার প্রতি টানটান মুষ্টিবদ্ধ চেতনার অঙ্গীকারে লড়াই না করার ফলে, মন শক্ত করে মাথা উঁচু করে দৃঢ় প্রত্যয়ে, বেঁচে থাকার গরিমা হারানোর ফলে এবং দীর্ঘদিন এই অবস্থায় বেঁচে থাকতে থাকতে সে মানুষরূপে শিরদাঁড়াবিহীন এক নিম্নতর মানুষে পরিণত হয়।
শিরদাঁড়া নিয়ে মানুষের জন্ম হয় ঠিকই কিন্তু দেখা যায় সামাজিক অর্থনৈতিক ও নানাবিধ কারণে মানুষটি শিরদাঁড়াবিহীন প্রাণীতে পরিণত হয়েছে। আমার এই প্রবন্ধে যে মানুষটির কথা বলছি তিনি কোন বিশেষ ব্যক্তি নন, তিনি আবার নৈর্ব্যক্তিক নন, একটা বিশেষ মানসিক অবস্থার প্রতীক সে এবং সমগ্র এইসব মানুষদের মুখ। আমি নিশ্চয় শুধু এই কয়টি কথা বলতে এই প্রবন্ধের মুখবন্ধ তৈরি করছি না।
আমার বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, যে অসুস্থ সমাজে আমাদের বাস সেই অসুস্থ সামাজিক পরিবেশ, তার অর্থনীতি, তার প্রতিটি বিভাগ এই অসুস্থ মানুষদের সৃষ্টি করে। একটা পঙ্গু অর্থনৈতিক আবহে মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ে অর্থাৎ পঙ্গু অর্থনীতির সাথে প্রতিদিন মানুষকে প্রাণপণ যুদ্ধ করতে হয় যা ক্রমশই তাকে পঙ্গু বানিয়ে দেয়। ক্রমশ মাথা নিচু করে জীবন যুদ্ধে লড়তে লড়তে মানুষ শিরদাঁড়াবিহীন এক নতুন প্রজাতির মানুষ রূপে সমাজে ঘুরে বেড়ায় এবং নিজের শিরদাঁড়া হারিয়ে ফেলে সারা জীবনে হারানো শিরদাঁড়া খুঁজে পায় না।

অর্থনৈতিক শ্রেণীবিভক্ত সমাজে শিরদাঁড়াবিহীন মানুষ আমাদের চারপাশে দেখতে পাওয়া যায়, এর কারণ অনেক গভীরে, আর্থ-সামাজিক সিস্টেমের মধ্যে যে অসম বন্টন ব্যবস্থা চলে আসছে তার কুপ্রভাব আমাদের চারপাশে জ্বলন্তভাবে বিদ্যমান, আমরা মানসিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ি এবং মানসিক স্বাস্থ্য একদম তলানিতে গিয়ে ঠেকে। এই অবস্থার পরিবর্তন না করতে পারলে ক্রমশ সম্পদের বৈষম্য হেতু ধনী-দরিদ্রের বিশাল প্রভেদ চোখে পড়ে এবং এই হেতু সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। দেশে বিদেশে এই সামাজিক অস্থিরতা থেকে সামাজিক বিপ্লবের জন্ম হয়। কিন্তু হঠাৎ করে সামাজিক বিপ্লব যেমন হয় না, তেমনি যে কোন স্ফুলিঙ্গের বহিঃপ্রকাশ বিপ্লবের রাস্তা তৈরি করে দিতে পারে।
অম্লানটাইমস-এর ছন্দ পতন না ঘটিয়ে মূল আখ্যানের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় করে এই প্রবন্ধের অবতারণা।
অম্লানটাইমস, কলকাতা।


আগের ও পরের পর্বের লিঙ্ক<< অম্লানটাইমস-৮

লেখক পরিচিতি : অম্লান ভট্টাচার্য
জন্ম ২৫ ডিসেম্বর ১৯৫৭, কলকাতা। স্কুল - ঢাকুরিয়া রামচন্দ্র হাইস্কুল, কলেজ - সেন্টপলস, বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক, কলা বিভাগে স্পেশাল স্নাতক, কারিগরি শিক্ষা, কম্পিউটার ডিপ্লোমা ও টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউটে শিক্ষা গ্রহণ, কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি অবশেষে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ অবসর। এযাবৎ তিনটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত, মূলত কবিতা প্রাধান্য পেয়েছে লেখালেখিতে এবং এই সূত্রে চতুর্থ কাব্যগ্রন্থের প্রকাশ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

লেখা জমা দিতে ছবিতে ক্লিক করুন