লেখক: স্বাগতা আচার্য্য
মাকড়সার জাল সরালেই না ফিরতে চাওয়া দিন হঠাৎ চখা হয়ে ওঠে। ঠিক জোনাক ফোটা সন্ধ্যের মুখে টলটলে দুধের গ্লাসে কয়েকদানা চিনি মিশিয়ে মা এগিয়ে আসতো। আর বাটিতে ফুলফুল চানাচুর কালেভদ্রে মুড়ির ওপর ভেসে বেড়াতো। পড়তে বসে মুড়ি টুকু শেষ করে ঢকঢক করে দুধ খেয়ে নিতাম। আর চিনি টুকু গ্লাসের তলা থেকে জিভ দিয়ে চেটে খাওয়ার চেষ্টা করতাম। কিছুক্ষণ হাওয়া লাগার পরে মুখ হয়ে যেত চ্যাটচ্যাটে।
বিস্কিট আসতো ব্রিটানিয়া কিংবা মারি গোল্ড।
কয়েকটা থাকতো কৌটোয়, বাকিটুকু যে কোথায় ভ্যানিশ হয়ে যেত তার হদিশ মিলতো কোন অতিথি বাড়িতে এলে।
বাবার কোন পুজো বাড়ি ফেরত পুঁটুলিতে থাকতো চালের ডালের পৃথক ব্যবস্থা। আর এককোনে কলাপাতায় মোড়া একটুকরো সন্দেশ। চাল হাতড়ালে দু -এক টাকার কয়েন, আর ওপরে ছড়ানো আলু, কাঁচা কলা, একটা পাকা কলা, বড়জোর এক আধটা ফল। লোলুপ দৃষ্টি সন্দেশ এর দিকে…আর মায়ের চোখ এড়িয়ে টুক করে একটা কোন ভেঙ্গে খেয়ে নেওয়া। আর তারপর কোনটুকু আবার আগের মতো শেপ দেওয়ার চেষ্টা। তবে ধরা পড়লেই প্রথম এবং শেষ প্রশ্ন- “খালি মুখে নিলে মুড়ির সঙ্গে কী খাবি?”
উত্তরটা অজানা আজও! শুধু এখন আর সন্দেশ-চানাচুর-বিস্কিট কোনটাই খুব বেশি খাই না, খেতে ভাল লাগেনা। মা বরং জোর করে মুখে গুঁজে দেয়। কৌটোয় এখন ছোটবেলার সব প্রিয় খাবার প্রায় মজুত থাকে। মা এখন আর চিন্তা করে না সন্ধ্যায় মুড়ি কী দিয়ে দেবে? কারণ ছেলে-মেয়েরা প্রায়ই সন্ধ্যেবেলায় মুড়ির পাট তুলে দিয়েছে, আর একটু-আধটু খেলেও ব্যবস্থা করে নেয় পছন্দমতো। সবাই তাতেই ভাগ বসায়।
অধরা কুয়াশার স্তর ছোটোবেলাটুকু ঢেকে রাখুক!
এ যেন কঠিন বিজ্ঞানের বিষয়, পড়ে গেছি কিন্তু বুঝে উঠিনি। আর এখন সহজে বুঝে যাবার ভয়ে আর খুলেও দেখিনা। তবু কখনো ঝলমলে রোদে সে কুয়াশা সরে শৈশবের ক্ষেত ভেসে ওঠে….আবার যত্ন করে জাল বুনে দিই। থাকুক না একটু আবছায়ায়!
লেখকের কথা: স্বাগতা আচার্য্য
নেশায় -আবোলতাবোল পাঠিকা। পেশায় -সেবিকা। নিবাস -পূর্ব মেদিনীপুর।
লেখকের ভাষায় – “যা ভাবি লেখা আসে তার সিকি; হইচই মার্কা মনন। এলোমেলো বুনন। গুণ খুব একটা নেই। কেউ লেখা চাইলে ধড়ফড় করে কেমন। ভুল ক্রুটি নিজগুনে ক্ষমা করে দেবেন। জানাবেন অকপটে। পরের বার শুধরে দেবার আশায় আছি।”