লেখক : আবদুস সালাম
আ্যরিষ্টটলের কথায় “the truth of poetry is not a copy of reality, but a higher reality, what ought to be, not what it is”।
হৃদয়বত্তা ও মগজের তথা অভিজ্ঞতার সারবত্তার সার্থক সংশ্লেষেই হয় কবিতার জন্ম। জন্মদাতার পশ্চাদভূমি আলোকিত করে রাখেন পূর্বজ কবিরা। কল্পনা ও চিন্তার সমন্বয়ে সমকালের সঙ্গে সর্ব কালের অদৃশ্য রাখি বন্ধনে জন্ম হয় কবিতার। বস্তুবিশ্ব তথা ইন্দ্রিয়বেদ্য জগতের রূপ রস শব্দ ঘ্রাণ স্পর্শ যখন কবির মনের কল্পনা মাধুরীতে জারিত হয়ে ছন্দবদ্ধ ও শিল্প জাত রূপ ধারণ করে তখনই জন্ম হয় প্রকৃত কবিতার।আর সেই কবিতা তখন কালোত্তীর্ণ হয় ।
কবিতা কাকে বলে এই নিয়ে বহু পন্ডিতগণ বহু রকম মত দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ব্যবহারিক জীবনে বস্তুগত সত্য যখন কাব্য ও সাহিত্যে রূপান্তরিত হয় ভাবগত সত্যে তখন সেই সত্যের উপলব্ধি সঞ্চার করে অপূর্ব আনন্দ। যন্ত্রণা ও পীড়নের অতি বিষন্ন মূহুর্তটিকে প্রাঞ্জল করে তোলে। কবিতার ভাষা যেহেতু আবেগপ্রবণ ও কল্পনার ভাষা সেই হেতু ছন্দবদ্ধরূপই তার পক্ষে বেশি মানানসই। তবে একথাও বলা যেতে পারে কবিতা অনুভূতি ও কল্পনার চরিত্রে চৈতন্যের বাচনিক রূপ। অতএব কবিতার বিষয় তথা ভাববস্ত এবং কল্প মাধ্যমের পরিপূরক ও অবিচ্ছেদ্য সংহতি। এখানে ছন্দ তার অস্তিত্বের দোসর। তবে কবিতা সত্য, আবেগ, অনুভূতি ও প্রত্যয় নির্ভর। ওয়ার্ডসওয়ার্থ বলেছেন কবিতা সত্য, আবেগ ও অনুভূতি প্রবণ। ওয়ার্ডসওয়ার্থ এর ভাষায় “poetry is the impassioned expression which is in the countenance of all science”
রোমান্টিক কবিগণ যেমন ওয়ার্ডসওয়ার্থ, কোলরিজ, শেলী, কীটস প্রমুখ কবিতার ভাষা ও আঙ্গিক নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন।ওয়ার্ডসওয়ার্থ এর “লিরিক্যাল ব্যালাড্স” এর মুখবন্ধ, কোলরিজের “বায়োগ্রাফিয়া লিটারারিয়া”, শেলীর “ডিফেন্স অফ পোয়েট্রি” এবং কীটস এর অমূল্য পত্রগুচ্ছ কাব্যতত্ত্বজিজ্ঞাসার এক অমূল্য সম্পদ। ওয়ার্ডসওয়ার্থ কবিতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন “poetry is the spontaneous over flow of powerful feelings”।
শক্তিমান অনুভূতির স্বতঃস্ফূর্ত উৎসার জন্ম নেয় শান্ত, স্মৃতিবাহিত আবেগের মধ্য থেকে “from emotion recollected in tranquility”। কবি হবেন কথালাপী মনুষ্য কন্ঠ, a man speaking to men। সমস্ত জ্ঞানের নিঃশ্বাস বায়ু ও আত্মায় হলো কবিতা।ওয়ার্ডসওয়ার্থ আবার এও বলেন সেরা শব্দ সমূহের বাণী বিন্যাস “best words in the best order”। এক বাক্যে কবিতার সংজ্ঞা নির্ধারণ করা অতীব দুস্কর এতে কোনো সন্দেহই নেই। যেমন ওয়ার্ডসওয়ার্থ বারবার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গিয়ে বারবার সংজ্ঞা পাল্টে দিয়েছেন।
কবিতার স্থান বিজ্ঞানের বিপরীত বিন্দুতে। কবিতার উদ্দেশ্য আনন্দ দান করা, সত্য প্রতিষ্ঠা তার কাজ নয়। এই সব আলোচনায় রং চড়িয়ে শেলী বলেছেন কল্পনার অভিব্যক্তিই কবিতা। “the expression of the imagination”। আরও একধাপ এগিয়ে কীটস বলেন সংক্ষিপ্ত বাগবন্ধই হলো কবিতা “fine excess”।এডগার আ্যলেন বলেন সৌন্দর্যের ছন্দিত সৃজন হলো কবিতা “the rhythmic creation of beauty”। ভিক্টোরিয়া যুগের কবি সমালোচক ম্যাথু আর্নল্ড বলেছেন কবিতা হলো জীবনের সমালোচনা “poetry is at bottom a criticism of Life under the condition fixed for such a criticism by the law of poetic truth and poetic beauty”।ওয়াটস ডানটন বলেন আবেগ মন্ডিত ছন্দিত ভাষায় মানব মনের মূর্ত ও শিল্পীত প্রকাশ “the concert artistic expression of the human mind in the emotional and rhythmical language”
কবিতা এমন এক অনুভব নির্ভর বাণী শিল্প যে তাকে কোনো বিশেষ সংজ্ঞায় বা নিয়মে বেঁধে রাখা দুষ্কর। তবুও কবিগুরুর অনুভবগুলো যথাযথ ভাবে প্রণিধানযোগ্য —
“অন্তর হতে আহরি বচন
আনন্দলোকে করি বিচরণ
গীতরসধারা করি সিঞ্চন
সংসার ধূলি জালে”
মাঝে মধ্যে কবিতা প্রকৃত মানব জীবনের পর্যালোচনার বস্তু হয়ে উঠতে পারে। কবিতা বস্তুসত্য থেকে ভাবসত্যে পৌঁছে যায়। তাই হার্ডসন বলেন “by poetic touch we do not mean fidelity to facts in the ordinary acceptation of the term.such fidelity we look for in science. By poetic truth we mean fidelity to our emotional apprehension of facts, to impression which they make upon us, to the feelings of pleasure or pain, hope or fear,wonder or religious reverence which they arouse. Our first test of truth in poetry , therefore, is the accuracy in expressing,not what things are in themselves,but their beauty and mystery, their interest and meaning for us.”।
আসলে কবিতার কারবার চলে অনুভূতি নিয়ে। কবিতায় গভীর ভাবনা ও মনন উপজীব্য হতেই পারে। একথা সঠিক যে তাকে গভীর অনুভূতির স্নিগ্ধ রূপ ও রসে সিক্ত করতে হয়।
দার্শনিক দিক দিয়ে দেখলে হৃদয়বৃত্তি থেকে বুদ্ধিবৃত্তি বড়। দার্শনিকগণ অমূর্ত বিশুদ্ধ চিন্তার কারবারি। অন্যদিকে কবিগণ অমূর্ত চিন্তাকে প্রতীক ও চিত্রকল্পের রূপ দেন কবিতার শরীরে। এখানে একটা কথা বলতেই হয় বিজ্ঞানের মতো দর্শনের সাথে কবিতার কোনো বৈরী ভাব নেই। তাইতো আমরা বিশ্ব বরেণ্য কবিগণের কবিতায় আমরা খুঁজে পাই দার্শনিক প্রজ্ঞা ও দীপ্তি।
বিষয়শৈলী মনোভঙ্গির বিভিন্নতায় কবিতাকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি।এক মন্ময় বা গীতিকবিতা, দুই তন্ময় বা বস্তুনিষ্ঠ কবিতা subjective lyrical and objective lyrical। আত্মভাবনা মূলক কবিতায় কবি ডুব দেন তাঁর আপন মননের গভীরে যেখানে কবি খুঁজে পান ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির অনুরণন। তাঁর ব্যক্তিগত অনুরণনকে রূপ দেন কবিতার শরীরে।এই সব কবিতাগুলো আমাদের কাছে মৃন্ময় কবিতা। অন্যদিকে কবি যখন ব্যক্তিসত্ত্বাকে পেরিয়ে বস্তুজগতের দিকে ধাবিত হন, তখন তার অন্তর যদি অন্তর মুখী না হয়ে বহির্মুখী হয়, বহির্জগতের ঘটনাবলী, আবেগ মন্থন ও অভিঘাতের মধ্য থেকে যে কবিতার জন্ম হয় তাই এত তন্ময় বা বস্তুনিষ্ঠ কবিতা objective poem।
কবিতায় যদি মানবিকতার বিকাশ ও জাগরণের ছোঁয়া না থাকে তাহলে জীবনের অর্থ শূন্য হয়ে যায়। কবিতা মানুষের জীবনের অর্থ খুঁজতে খুঁজতে শিল্পের দরজায় আঘাত হানে। জাঁ পল সাঁতরে বলেন “life has no meaning the moment you lose the illusion of being enternal Before you come alive, life is nothing and value is nothing else but the meaning that you choose.jean Paul sartre”।
কবিতা যে এক ধরনের হৃদয় চর্চা এবং হৃদয়ের কাছাকাছি কবিতার আবেদন এ কথা বহু পুরাতন হলেও আজ একথা সত্য। পৃথিবী জুড়ে যদি মানুষের হৃদয় না থাকে তবে কবিতার ভবিষ্যত বলে কিছুই থাকবে না। কবিতা তখন কার কাছে তার বাঁচার আবেদন জানাবে।
জীবনানন্দ দাশের কথায়
“যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয়
মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়”
মানুষের প্রতি আস্থা রেখে যারা আজও শিল্প, সাহিত্য সাধনা করে তাদের হৃদয় যে শকুন শেয়ালের খাদ্য একথা আজও পুরোনো হয়নি। রাজনীতি আর রাষ্ট্রনীতি নিয়েই যতো উদ্দীপনা।যুদ্ধ ও সন্ত্রাস মানুষ যতখানি আগ্রহ নিয়ে চর্চা করে হৃদয় নিয়ে তারা দশ শতাংশও করে না । অতএব শিল্প ও সাহিত্য সাধনার ভবিষ্যৎ যে অন্ধকার তার বলার অপেক্ষা রাখে না।
বর্তমান সময়ে মানুষ এতো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে একান্তে অনুভবের সময় কোথায়? আবেগ আর হৃদয়ের স্পন্দন কমে আসছে দিন দিন।
মানবিক পৃথিবী মরে যাচ্ছে প্রতিদিন ,সরে যাচ্ছে আমাদের পায়ের তলার মাটি।
ঋত্তিক ত্রিপাঠী র কবিতায় দেখি
“একজন মানুষ হেঁটে যাচ্ছে
তাঁর দুটো পায়ের মধ্যেকার দূরত্ব দেখে বোঝা যায়
সে আজ কতো ভোরে উঠেছে
সে আজ কতো মানুষ কে কথা দিয়েছে
কতো জনকে অবিশ্বাস করেছে—–“
সারা দিন জীবন বৃত্ত জুড়ে চলেছে কতো যুদ্ধ। জীবনের বহুরৈখিক পর্যটনে তাকে পাড়ি জমাতে হয় । সংসারের সমস্ত দিক বজায় রেখে দিনযাপনের সিঁড়ি বেয়ে তাকে উঠতে নামতে হয়। তাই তো মানুষ যতোদিন বেঁচে থাকে ততদিন স্বপ্ন দেখে। চিরকাল আমরা আবেগের কাছে সকলেই দায়বদ্ধ ।
যন্ত্র নির্ভর সভ্যতায় মানব জীবন বিলাসিতার ঢেউয়ের দোলায় দুলছে। বিলাসিতা যতোই দিন দিন বাড়ছে কবিতার মৃত্যু তেমনি ঘনিয়ে আসছে দিন দিন। কবিতা একমাত্র বেঁচে থাকে আমাদের হৃদয়ে। আর হৃদয় যদি না থাকে তবে কবিতার স্থান কোথায় ? ভেবে আকুল হই। হৃদয়ের ভাঙনে কবিতার হৃদয় জর্জরিত হয়। দেশ রাষ্ট্র মন্দির মসজিদ ভাঙার খেলা চলছে নিরন্তর । চলেছে সমাজ পরিবার রাজনৈতিক দল ভাঙার মরণ খেলা। কালের নির্মম প্রভাবে ভাঙনের মর্মভেদী হাহাকার শুনি প্রিয় কবিগণের কবিতায়। মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায় এর কবিতায় দেখি —
“প্রাণ তবু পথ ভাঙছে।বাড়ি পড়ছে। পার হচ্ছে ক্যাকটাস কাঁটায়
ইঁটের ভগ্ন মূল্যবোধে নগ্ন মাঠ,প্রত্যাশায় চোরাবালি,পার
হয়ে যাচ্ছে বিধ্বস্ত স্নায়ুর দেশ রোমহর্ষ ধর্ষিত সময়__
না,আজ সময় নয়। এখন ভাঙন। ভাঙতে হচ্ছে পোড়ো বাড়ি—— “
মূল্যবোধ ভেঙে যাওয়া সমাজ আত্মপ্রচার চরম বিপর্যয়ে বুকে পড়েছে। মানুষের আশা নিরাশার ভিতর শূন্য ভাঁড়ারে বিধ্বস্ত হচ্ছে সময়ের আগুনে। রাজনীতি, হানাহানি, দলবদল, অস্থির অর্থনীতি, করোনার মতো অতিমারীর প্রভাব জীবনকে বাস্তবনিষ্ট ও স্বার্থপর করে তুলেছে। বেড়ে চলেছে আত্মহননের প্রকোপ। আত্মবিশ্বাস ভেঙে চলছে প্রতিনিয়ত। অবসাদগ্রস্ত জীবনের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছে অর্থনৈতিক প্রশ্রয়। বিবাহিত জীবনের সংগ্রামে মানুষ দিশেহারা তাই যৌনতৃপ্তির স্বাদ নিতে লিভ টুগেদারের আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। আগামী প্রজন্মকে ঠেলে দিচ্ছে বংশপরিচয়হীন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। একবারও তারা ভাবছে না বেলেল্লাপনার ফসলগুলোর ভবিষ্যত কী? মা বাবাকে হোমে পাঠিয়ে গড়ে তুলছি নিউক্লিয় পরিবার। সভ্যসমাজ জটিলতার কূটপ্রশ্নে জর্জরিত। কবিদের কলম থেকে বেরিয়ে আসছে দীর্ঘশ্বাসের শব্দ ব্যঞ্জণা, বিবৃতি। ভাষা শব্দ ব্যবহারে আত্মপীড়নের মর্মরধ্বনি উঠে আসছে কবিতার শরীরে। বিচ্ছিন্ন অভিঘাতের মুখে দাঁড়িয়ে আছে আজকের কবিতা। ওয়ার্ডসওয়ার্থ বলেছিলেন “Fill your paper with the breathing of your heart” সময়ের নিষ্ফলা দহন কবি হৃদয়কে বারবার দগ্ধ করে চলেছে। সমস্ত শূন্যতা, পাওয়া না পাওয়ার অব্যক্ত যন্ত্রণা পরিলক্ষিত হয়ে চলেছে কবিতার শরীরে। রবার্ট ফ্রস্ট বলেছেন “poetry is when an emotion has found its thought and the thought has found words”। শব্দের মধ্যেই ভাবনার দলিল স্পষ্ট হয়ে কবিতার শরীর । কবিতায় উঠে আসছে মেটাফর মেটাফিজিক্স এর প্রভাব। শিল্প নতুন দিকে মোড় নিচ্ছে।আ্যন্ট্রি পোয়েট্রি লেখার ভাবনা কবিদের মনে জড়ো হচ্ছে। চিরন্তন বিশ্বাসের দরজা ভেঙে চুরমার হয়ে চলেছে নিয়ত। কবি মন্দাক্রান্তা সেন লিখলেন
“পিতার কন্যা না হয়ে
আমি পিতার প্রেমিকাও হতে পারতাম
হে ঈশ্বর ।
তাতে কি এমন আহত মেতে তোমার”
কবি সৈয়দ খোসার জামাল যুগের পল্লবিত হাহাকার কে তুলে দিলেন কবিতার শরীরে__
“যতোই এগোতে চাই, মতোই থেকেছি দূরে দূরে
ধ্বস্ত প্রায় ফিরে আসি, বৃথা যায় সময় প্রবাহ
রাজ্যপাট কর্মহীন, নির্বিকার, ক্লীবের শিকার –“
চরম হতাশায় শূন্য গিলে খায় কবিতার শরীর। একাকীত্ব আর বেদনা উঠে আসছে উপলব্ধির আলোয়।তাই ভার্জিনিয়া উলফ ফের কথায় বলতে হয়
“Alone, I often fall down into nothingness.
I must push my foot stealthily lest I should fall of
The edge of the world into nothingness. I have to bang
My head against some hard door to call myself back to the body.”
গোলাম রসুলের কবিতায় দেখি নিঃসঙ্গতা, শূন্যতার ছড়াছড়ি। তাই তিনি লিখেছেন–
অদূরে দাঁড়িয়ে আছে আমার সত্ত্বা
দারুণ এক বিপর্যয়ে হারিয়ে গিয়েছিল
চাঁদের আলোয় সে ফিরে এসেছে আমি তাকে জড়িয়ে ধরে আবার তুলে দিলাম গাড়িতে
আর হৃদয়ের অভাবে মোটরের যন্ত্রপাতিগুলো ভাঙতে লাগলাম—–
যান্ত্রিক জীবনের আত্মিক ভাঙনের বস্তুতান্ত্রিক সুর ফুটে উঠতে দেখছি তার কবিতার শরীরে। তিনি আরও বলেছেন
মহাশূন্য নুড়িপাথর
আর দেখার জন্য বিস্ময়
হাজার হাজার নিরবতা বল্লম হাতে সারিবদ্ধ—
সব ধারণার মধ্যে শূন্যতর বিস্তার।
এমিল কিরন এই উপলব্ধি নিয়ে বলেছেন “By all evidence we are in the world todo nothing”
শতাব্দীর ডানায় বাঁধা হৃদয় ভাঙা আর্তনাদ। there is nothing as whole as a broken heart—-
প্রেম আজ দাঁড়াবে কোথায়? হাজার বছর পাড়ি জমাবে তার রসদ হারিয়ে যাওয়া হৃদয় নিয়ে। তাই কবি ক্যারোলিন টিজার লিখেছেন—
“After you left me forever
I was broken into pieces
and all the pieces flung
into the river”——
আজ পৃথিবীর আনাচে কানাচে চলছে দেশ ভাঙার, মানুষের মনুষ্যত্ব বোধকে বিষিয়ে তোলার মরণ খেলা।
তবুও চাষা যেমন আশায় বুক বেঁধে মাঠে চাষ করে তেমনি কবিকূলও হৃদয় দিয়ে অনুভবের নদীতে স্নান সেরে পবিত্র হয়ে কবিতার ডালি উপহার দেবেন এটুকু আমরা মনে করতেই পারি। পৃথিবীর বায়ু যতই বিষাক্ত হোক না কেন একদিন না একদিন অমানিশা কাটবেই। পৃথিবী আবার শান্ত হবে। আবার আকাশে চাঁদ উঠবে।বর্ষায় ময়ূর নাচবে।সূর্য হাসবে। স্নিগ্ধ সকালের শিশির সূর্য কে ডেকে এনে মিতালী পাতাবে।
কবিতার জন্ম রহস্য, সংজ্ঞা, স্বরূপ নিয়ে যতই চমকপ্রদ বিচিত্রমুখী মন্তব্য আমাদের সামনে আসুক না কেন, কবিতার স্বরূপ, কবিতার মনন পাঠককে বুঝে নিতে হয় তার উপলব্ধির আলোয়। তত্ত্ব, সংজ্ঞার ভাব জগৎ থেকে নেমে এসে বাস্তব এবং ব্যক্তিগত উপলব্ধির ক্ষেত্রভূমিতে দাঁড়িয়ে খুঁজে নিতে হবে কবিতার সৌন্দর্য। কবিতা রচনা যেমন সৃজনী অভিজ্ঞতা তেমনি কবিতা পাঠ ওমূর্ত সৃজনীর অভিজ্ঞতা। অগাষ্টাইনের কথায় “If not asked, I know, If you asked me, I know not”।
লেখক পরিচিতি : আবদুস সালাম
আবদুস সালামের জন্ম ১৯৫৭ সালে, মূলত নয়ের দশকের কবি! বহু পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখা প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'নিস্তব্ধতা এসে কথা কয়' ২০১৭ কৃষ্ণসীস প্রকাশনা দূর্গাপুর, 'এবং হলুদ পাতার মতো মৃত্যু ঝরে' ২০১৮ দৌড় প্রকাশনা হৃদয়পুর,বারাসাত, 'অলীক রঙের বিশ্বাস' ২০২০ চক্রবর্তী প্রকাশনা কলকাতা, যৌথ কাব্যগ্রন্থ মেঘের রঙ শীত প্রথম খন্ড, দ্বিতীয় খন্ড ২০১৯,২০২০ মহুয়া প্রকাশনা কলকাতা। নেশা বইপড়া আর যৎসামান্য লেখার চেষ্টা । একটু আধটু কাছে পিঠে ঘুরতে যাওয়া। পূষন পত্রিকার তরফে পুরস্কার (নিস্তব্ধতা এসে কথা কয়) কাব্যগ্রন্থের জন্য সম্মাননা এছাড়া অনেক জায়গায় সংবর্ধনা ও, সম্মাননা জড়ো হচ্ছে ঝুলিতে!
সমৃদ্ধ হলাম।