লেখক : শংকর ভট্টাচার্য
মাক্সিম : একটি সাধারণ সত্য বা আচরণের বিধি প্রকাশ করে একটি সংক্ষিপ্ত, মজার বিবৃতি যা শব্দের চেয়ে জোরে কথা বলে।
১) প্রকৃতির সবচেয়ে বড় ভুল করে ছিল মানুষ বানিয়ে কারণ অমানুষিক অত্যাচার নির্যাতন করার উপায়গুলি মানুষের উদ্ভাবন।
২) ধর্মে নারীর কোন স্থান নেই কারণ অধার্মিকরাই ধর্মের মাতব্বর।
৩) দূষণগুলির মধ্যে সেরা রাজনৈতিক দূষণ ।সবই দূষিত করতে পারে।
৪) পরস্পরের প্রতি নিন্দা,গালমন্দ যার নিত্য অভ্যাস তাঁর কাছে এসব রুচি ও প্রগতির লক্ষণ।
৫) দূরদর্শনের বাক্স ও ভোট-বাক্স এই দুইই বোকা-বাক্স তবু মানুষ বাক্স-জাত হয়।
৬) সাপের খোলস ছাড়ার মতন খোলস বদল রাজনীতির পেশায় সত্ত্ব-গুণ ! গুণেরও খোলস বদল ! গুণ বা ধর্ম বা পরিবর্তিনের ব্যাখ্যাকারদের রাম-রাজত্ব চলছে।
৭) মানুষের চাহিদার এমনিতে কোন মূল্য নেই,যদি না তা কোন রাজনৈতিক দলের স্বার্থের অনুকূল হয় ।
৮) সামাজিক মানুষের বেশীরভাগ দ্বন্দগুলি কৃত্তিমভাবে তৈরী, ক্ষমতালোভী লোকদের দ্বারা।
৯) মানুষের শ্রেণী বিভাজন ক্ষমতালোভীদের প্রিয়, এক ধরনের মতবাদে স্থান পেয়েছে।
১০) মানুষের নানা সমস্যা সমাধানে ও তাঁদের সুখী করার জন্য যারা স্বপ্ন তৈরী করে এবং বিক্রি করে তাহাদের রাজনীতিজ্ঞ বলা হয়। স্বপ্নের মোহতে আছন্ন হবার মত বোকা মানুষের অভাব নেই।
১১) ক্ষমতা খুব স্বার্থপর। ক্ষমতার সাধনা যে করে সেও স্বার্থপর হয়।
১২) মৃত্যু মনে দাগ কাটলেও তাঁকে মুছে দেওয়ার উপকরণের অভাব নেই।
১৩) বিবাহের পর স্বপ্নপুরীর নায়ক নায়িকা সুখের সন্ধানে মা বাবার সাথে থাকেন না।পিতা মাতাকে পরিত্যাগের এই শিক্ষাকে আধুনিকতা বলিয়া গণ্য করা হয়। এই শিক্ষা অচিরেই নায়ক নায়িকাকে উচিত শিক্ষা দেয়।
১৪) কোন মাতা পিতা বিশ্বাস করেন না যে তাঁহারা যে আচরণগুলি পালন করেন তাহাই দৃষ্টান্ত মনে করিয়া সন্তানরা অনুসরণ করে।
১৫) যেমন ইচ্ছা যা খুশি বলতে পারেন যদি আপনার পেশা রাজনীতি হয়।
১৬) সাপ যখন ব্যাঙকে খায় তখন ব্যাঙের কিছু করার উপায় থাকে না,সাপ যখন সাপকে খায় তখন ঐ সাপের কিছু করার উপায় থাকে না। পৃথিবীতে কেউ যদি মনে করে সেই এক এবং একমাত্র পরাক্রমশালী — এটি তাঁর মিথ্যা ধারণা।
১৭) মানুষ যখন শিশু থাকে তখন পৃথিবীকে সে বিশাল জগৎ মনে করে, মানুষ যখন বৃদ্ধ অসহায় হয়ে পড়ে তখন এই পৃথিবীটা তাঁর কাছে খুব ছোট্ট জায়গা মনে হয়।
১৮) যেকোনও কর্মদিবসের ভরদুপুরে লাখো লোক জমায়েত করে যেখানে চরানো হয় সেই জায়গার নাম ময়দান।
১৯) উৎকোচ নেয়া বা দেয়া এই বহমান কর্মকুশল অপসংস্কৃতি উভয় পক্ষের কোন পদমর্যাদার ক্ষতি করেনা!
২০) চাকুরেয়ালারা অফিস কাছাড়িতে দলের চাটুকারিতা করেও এই ব্যাধি নিয়ে তারা সকলে সমালোচনা করে থাকেন এবং সাধু সাজতে চান চাকুরি থেকে অবসর নেয়ার পর, চাকুরি জীবনে নয়।
২১) সত্য লড়ে একা, মিথ্যার চিরকালই কোমর বাঁকা। সত্যের হয় জয়, নেই কোন সংশয় ।
২২) নিজেকে তোমার চেনা চাই তাহলেই তুমি হবে তাই।
২৩) আপনি বাঁচলে বাপের নাম,থালা ঘন্টা ঢোল বাজিয়ে করোনা য়ায় না বুঝলেন রাম।
২৪)নির্বাচনে মারামারি বন্দুক গুলি, এগুলো না থাকলে নির্বাচনকে আমরা নিরামিষ বলি।
২৫) বিচারক যখন কোন বিষয় বিশদে না বুঝে নিয়মাবলী ঘোষণা করেন তখন বুঝতে হবে আপনার প্রত্যাশা ভুল।
২৬) ৭৫ বছর লাইনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আজকে আমরা বেকুব,বেলাইনে দেশ! দেশের নেই শিক্ষা ও ভদ্রবেশ,গদীয়ানদের শ্রীবৃদ্ধির নেই শেষ।
২৭) বিচারকদের চোখ কান খোলে অনেক দেরী তে,দেশে করোনার বরণ ঢালায় মানুষ ব্যস্ত যখন মৃতদেহ সাজাতে ।
২৮) নির্বাচন, দফায় দফায় জনসমাবেশ,পাপ পূণ্য হরেক রকমের মেলা– বিচারকদের ছিল না চোখ খোলা। অতিমারীর কেন্দ্র খুঁজে পাওয়া গেছে ভোট শেষে ভোট গণনা কেন্দ্রে, মাথা ঘামিয়ে টিকার ডাবল ডোজের নিধান গনৎকারদের,যেন হাতের মোয়া টিকা– কজনা পেয়েছেন ডাবল ডোজ কোন বয়সের ? অজানা বিচারের ফিচার এই দেশেতে!!
২৯) মস্তিষ্কের হজম ক্ষমতা কম থাকলে বলে মাথামোটা, পেটমোটা নিয়ে এমন কিছু বলা যায় না। ইদানিং মাথামোটা পেটমোটা মানুষ রাষ্ট্র শাসনে দেখে মিডিয়া চাণক্যর নাম করছে। কিন্তু হলফ করে বলা যায় চাণক্য মাথামোটা ছিলেন না।
৩০) মহাজনদের বন্ধকী কারবার যেমন সোনাদানা সম্পদ নিয়ে হয় তেমনি রাজনীতিতে বন্ধকী কারবারে মস্তিক বন্ধক নেওয়া হয়,কোন শিক্ষার মাপকাঠি এতে বলা নেই।
৩১) হিংসা বিদ্বেষ প্রকান্তরে মর্ষকাম, মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবে এইগুলি আনন্দদায়ক।
৩২) মানুষের দরবারে সংবাদ রূপকথা নয়, দেশবাসী সবার মর্যাদা রক্ষার ভার সে বয়।
৩৩) শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে দাম্ভিকরাই প্রচার করে, সে বা তাঁরা সাধারণের থেকে উচ্চ আসনে আছে তাই বোঝাতে চায়। এ এক লজ্জা যে দেশে এখনও শিক্ষা ঘরে ঘরে পৌঁছতে পারেনি।
৩৪) শামুকে মত চরিত্রের মানুষ গভীর রাজনৈতিক সংকটেও খোলশের মধ্যে থাকে। এদের আর্থিক অবস্থা ভালো ও শিক্ষা উচ্চ মানের হলেও নিজ বৃত্তেই সুখ ও পছন্দ গুলি নিয়ে সময় কাটায়।
৩৫) কেউ সৌজন্য না দেখিয়ে আত্মগরিমায় ভোগেন এবং মানুষের কাছে উপহাসের বস্তু হন, কেউ সৌজন্য দেখিয়ে আত্মমর্যাদাশালী হন এবং তিনি মানুষের ভালোবাসা পান।
৩৬) জাতের নামে বজ্জাতি করতে স্বৈরাচারীরা আসুরিক ছদ্মবেশে হম্বিতম্বি আস্ফালন করে, মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলে ঐ অসুর বেশধারীরা মূষিকে পরিণত হয়।
৩৭) মস্ত বড় যোগ বিয়োগ গুন ভাগের ঘোঁরপ্যাঁচের নাম বাজেট বা প্যাকেজ যা সাধারণ মানুষ কোন দিন বুঝতে পারেনি যাকে শুধু বিজ্ঞাপন ভাবে ।
৩৮) বিচার এবং আইনের তত্ত্ব ও সূত্রগুলি মানুষ বার বার সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে,কিন্তু রাজনীতি ও ন্যায়রক্ষকরা তাদের কামনা বাসনা লোভগুলিকে উচ্চাশা পূরণে জন্য প্রাধান্য দিয়ে বিচার এবং আইনকে সত্যর থেকে বিচ্ছিন্ন করে অবিরত চেষ্টা করে যাচ্ছে পিছিয়ে দিতে মানুষের সভ্য সমাজের অভীপ্সাকে।(মাক্সিম/শ)।
৩ব৯) সত্য এমনই গুন সম্পন্ন যে মানুষ তাঁর সাধারণ বুদ্ধি দিয়ে বুঝতে পারে কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা ।(মাক্সিম/শ)।
৪০) কামনা বাসনা লোভ যখন জড়িয়ে থাকে শিক্ষায় ও কর্মে তখন কোনটা ভালো মন্দ তা চেনা মুস্কিল হয় ঐ অবস্থায় কাউকে জ্ঞান দান ওপর চালাকি হয়ে যায়।
৪১) পরাজয় যখন মানা যায়না তখন তা হিংসা বিদ্বেষের কারণ হয়, স্বৈরাচারী মনোভাব সুখের জন্য যেকোন অন্যায় করতে পিছপা হয় না।
৪২) যে নীতিতে শত্রু মিত্র হয় বা মিত্র শত্রু হয় এমন নীতির কারণে সমাজে অন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং প্রসার ঘটে–এই নীতি হীন রাজনৈতিক শক্তির উৎস ক্ষমতার লোভ।
৪৩) দেহ মন গড়তে যারা চায়, শুধু বই পড়ে কি তাই পাওয়া যায়?কথামৃত নয় বৃথা শুদ্ধতা চাই দেহে মনে,কোন বিক্রিয়া হয় না ঠিক যদি থাকে ভেজাল তাতে, মানুষ হতে চাইতে হবে এ জীবনেই শুদ্ধ মনে ও দেহেতে। যদি রাত যায় দিন যায় কামনা বাসনা নিয়ে,দেহ মন ভেজা কাঠখড়ে কি হবে আগুন দিয়ে?
৪৪) এলিট কালচার এক দুষ্ট ব্যাধি যা থাকে মগজে,আক্রান্ত বেশী বিদ্বজ্জনরা সমাজে,বিদ্যার গর্বে করে থাকেন অহং নির্মাণ।
৪৫) বস্তু-চেতনা তৈরি হয় মানুষের মনে, তাই সে পেয়েছে ইচ্ছা নিষ্ঠা একতা শ্রম, জয় করেছে সকল বিকার বিভ্রম, শুধু দুই হাত নয়- আছে চোখ মুখ নাক কান পা,নয় এরা যা তা,বস্তুকে লাগিয়েছে কাজে খেটেখুটে সব তৈরি তে,মহাকাশ যান থেকে ডাল ভাত রুটিতে, পেয়েছে খুঁজে বিজ্ঞান — অটল তাঁর জিজ্ঞাসা ও মানুষে মানুষে সম্পর্ক ভালবাসা।
৪৬) বিকার– খোঁজে না ভাল কিছু –বিকারের ভাষা ভাসায় লজ্জাবোধ- চেনায় না নিজের মর্যাদাকেও। কথায় বলে– ভাষাই আপনার পরিচয়!!
৪৭) আমাদের আধুনিক মন দিয়ে সব রাগ অনুরাগ ও সম্পর্কের হিসেব করা যায় না। এ জগতে প্রত্যেকটি সম্পর্কের কিছু নিজস্বতা আছে। যে যার নিজের মত করে ভালোবাসাকে রূপ দেয়। প্রত্যেকটি ভালোবাসাবাসি অনন্য।
৪৮) স্মৃতির অসাধারণ ক্ষমতা, যা মুছে দিতে চায় বা রাখতে চায় তাই পারে। মোছা জিনিস ফিরিয়ে এনে আবার দেখতে পারে।
৪৯) ভবসংসারে জন্ম নিয়ে কেউ মানুষ হয় কেউ অমানুষ হয়। কেউ জানেনা কে কি হবে পরিণত বয়সে।
৫০) মানুষ মানুষকে চেনে না কারণ মানুষ মানুষের বাইরের খোলস দেখে।
[মাক্সিম সম্পর্কে আপনার মতামত এই চেষ্টাকে আরও সমৃদ্ধ করবে নিশ্চিত ভাবে বিশ্বাস করি। লেখক– শংকর ভট্টাচার্য।]লেখক পরিচিতি : শংকর ভট্টাচার্য
বয়সে বৃদ্ধ তবে মননশীল।