লেখক : রতন চক্রবর্তী
ইংরেজিতে সেকুলার শব্দটির অর্থ —গির্জা বা ধর্মপ্রতিষ্ঠানের প্রভাব ও পরিষেবা থেকে মুক্ত থাকা।সেকুলার ধারণা রেনেসাঁসের অবদান বলে মনে করা হলেও প্রাচীণ গ্রিসে এই ধারণার দার্শনিক ভিত্তি ছিল।বহু পশ্চিমা পণ্ডিত মনে করেন,খলিফা শাসিত স্পেনের আন্দুলেশিয়ার দার্শনিক, আইনজ্ঞ ও প্রখ্যাত চিকিৎসক আলঅওয়ালিদ মহম্মদ ইবন আহমদ বিন রুশদ সেকুলারিজম আইডিয়ার জনক।তিনি দশম শতকের( ১১০০ সাল)মাঝামাঝি সময়ে বিজ্ঞান ও দর্শন শস্ত্রকে ইস্লামিতন্ত্রের বাইরে এনে নিবিড় চর্চার কথা বলেন।এক সময় এক খলিফা আবু ইয়াকুব ইউসুফ তাঁর গুণাগ্রহী পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।কিন্তু তৃতীয় খলিফা আব্দুল ইয়াসুফ ইয়াকুব কিন্তু মোল্লাদের প্ররোচনায় রুশদের দর্শন চর্চার বইপত্র পুড়িয়ে দেন।কিন্তু এই চিন্তা নিয়ে পরবর্তী কয়েকশতক নানা চিন্তা ও তর্ক চলে পশ্চিমি দুনিয়ায়। ১৮৫১ সালে সেকুলার এবং জিঙ্গোইজম শব্দদুটি প্রথম ব্যবহার করেন লন্ডনের ওয়েনপন্থী ইউটোপিয়ান সোশ্যালিস্ট জর্জ জ্যকব হলিয়ক।১৮৭০ সালে তিনি সেকুলার তত্ত্বের বিস্তৃত রূপ দিয়ে দ্য প্রিন্সিপলস্ অব সেকুলারিজম পুস্তিকাটি প্রকাশ করেন।তাতে তিনি বলেন,ঈশ্বর-নিরীশ্বরবাদী নিয়ে তর্কের বিষয় বা নিরীশ্বরবাদীদের গোড়ামির বিষয় কিন্তু সেকুলারিজম নয়।সেকুলার রাষ্ট্র ব্যবস্থা হল এমন এক সামাজিক ব্যবস্থাপনা বা তন্ত্র যা ধর্ম থেকে সম্পূর্ণ ভাবে বিযুক্ত। নেহরু এই ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়াসী ছিলেন। উগ্র ধর্মীয় সম্প্রদায় গুলিকে তোষণ ও পোষণ করা উগ্র দক্ষিণপন্থী রাজ নৈতিক দলগুলির স্বভাবধর্ম।বাম বা গণতান্ত্রিকরাও কখনো কখনো এই ধর্মের তাস খেলে উচ্ছিষ্ট ভোটের আশায়। ফলে তারা নিজেদের অজান্তেই ধর্মমোহ ঘেরবন্দি দশায় পড়ে।এই দশাপ্রাপ্তির সময় রবীন্দ্রনাথও অনুপস্থিত থাকেন বোধ বুদ্ধি ও মননে।দুর্ভাগ্য দেশের।এর মূল্য চোকাতে হয় সাধারণ মানুষকে।
লেখক পরিচিতি : রতন চক্রবর্তী
অর্ধশতক সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। দৈনিক, সাপ্তাহিক বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় চাকরির পাশাপাশি কাজ করেছেন বিদেশি দূতাবাসের কলকাতা তথ্য দপ্তরে। তথ্যচিত্র পরিচালনা করেছেন। লিখেছেন ছোট গল্প, নাটক চিত্রনাট্যও। মার্কসীয় দর্শনে বিশ্বাসী।
জন রিডের টেন ডেজ দ্যাট স্যুক দ্য ওয়ার্ল্ড নামে রুশবিপ্লবের দশ দিনের কাহিনি নিয়ে বিশ্বখ্যাত রিপোর্টাজ গ্রন্থ অবলম্বন করে লিখেছেন নাটক অভ্যুত্থান যা ৭৪ জন কুশীলব নিয়ে অভিনীত হয়।