লেখক : রুবাই শুভজিৎ ঘোষ
।।১।।
যে জাতি যতই হোক সভ্য,
কোনও অর্জুনই চাইবে না আর এক একলব্য।
আমি হই আইনস্টাইন,
তোর বাপ নিশ্চয়ই চায়না!
সবারই মধ্যে লুকিয়ে থাকে হিংস্র এক হায়না।
।।২।।
নীতি ধুয়ে যাক বাস্তবতায়,
মানুষেরও কিছু অন্ধকূপ থাকে।
তোমার রোমকূপের জলে ধুয়ে যায় সব প্রেম।
এইবেলা করি খেলা চলো
টিফিন খাওয়ার ফাঁকে।
টিফিন খাওয়ার ফাঁকে
আমার পুরুষত্ব পান করলে তুমি।
আমি পান করছিলাম ক্যাপুচিনো।
শনিবার রাতে ঘর বুক করা আছে,
আসার পথে তুমি কনডোমটা কিনো।
।।৩।।
রাত বাড়লে পৃথিবী আরও ডার্ক হয়।
ভদ্দরলোকেরা ঘুমিয়ে পড়ে বিছানায়।
অ্যাডামেরা ঘুরে বেড়ায় ইভেদের জন্য,
কালচে চাঁদের নীলচে জোছোনায়।
রাত বাড়লে সব সম্পর্কেরা মুছে যায়,
দুটো শরীরের দুরত্ব যায় কমে,
দেহরা পারদের মত জুড়ে যায়,
উত্তেজনা জমা হয় দেহরোমে।
সব মিলনই বৈধ হতে হয়না।
এটাই তো রাতের অপার মহিমা।
শুধু সকাল বেলায় সব প্রেমই
নিজের নিজের বিছানায় ফিরে যায়।
।।৪।।
শালপাতায় অফার করলাম একটা দেহ,
রক্তমাখা!
হুজুর আমার বিবিজানকে ধর্ষণ করেছিল ঐ কুত্তা।
সব হিসাব ছিল তুলে রাখা।
আজ সুদে আসলে সব চুকিয়ে নিলাম।
অনেকদিন পর মন হল শান্ত।
ধর্ষণ করেও কেউ ঘোরে যখন রাস্তায়,
আইনের বিচার তখন লাগে ভ্রান্ত।
।।৫।।
মানুষের কিছু ইচ্ছে থাকে দমানো,
যেগুলো না চাগানোই ভালো।
মাঝে মাঝে তারা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।
মানুষ তখন পতঙ্গের মত ছোটে,
বেইজ্জতির খোঁজে।
তোরও জেগেছিল তেমন ইচ্ছে একবার,
তার সঙ্গী হয়েছিলাম আমি।
মদের নেশায় ডুব দিলাম অধঃপাতে।
শরীর হল তুচ্ছ, ইচ্ছে হল দামী।
ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছুই করিনি কেউ।
তবে অতটা করারও ইচ্ছে ছিলনা কারও।
কিন্তু দমানো ইচ্ছে একবার ছাড়া পেলে
মনে হয় শুধু করতে থাকি আরও।
সূর্যের আলোয় যখন ফিরে এল মনুষ্যত্ব,
দেখেছিলাম কয়েক ন্যানোমিটার দুই শরীরের দুরত্ব।
জামাকাপড়েরা সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে নীচেতে,
আর আমার ওপর তোর নগ্ন অস্তিত্ব।
।।৬।।
সূর্যের আলোতেও ডোন্ট কেয়ার ভাব কারও,
কেউ নিজের দশায় অনুতপ্ত।
শ্যাম্পেনে ধুয়ে যায় সবার শরীরগুলো।
কার দেহ কার কাছে সে তো বলা শক্ত।
যার বুকে নেশা চড়ে হারানোর,
তাকে আজ চেনে কার সাধ্য!
শান্ত অন্তর্বাসেরা শুয়ে থাকে মেঝেতে,
তার শোয়া বড়ই অবাধ্য।
এসব করলে তারা হয় আধুনিক।
একটু সভ্য হলেই পুরোনো।
অবশ্য সভ্যতা এখন তো আপেক্ষিক।
তাদের মন এসবেই জুড়োনো।
।।৭।।
রাত্রিবেলা রাতের শহর জাগে
ডিস্কো, ক্লাব আর অবাধ্যতার আগে!
শরীরে জাগে অনেক বক্ররেখা,
সরলরেখাতে উত্তেজনা লাগে!
নিয়মমতো দিনরাত্রি আসে।
রাতের বেলায় ঘুমিয়ে পড়ে দেশ।
তবু কিছু গাড়ি ছোটে আলোর বেগে!
গাড়ির ভেতর আদিম পরিবেশ!
দ্রুতগতিতে বদলে যায় সম্পর্ক,
সম্পত্তি ভাগ হয়ে যায় হাতে!
এক শরীরে অনেকগুলো শরীর!
মানুষ নিজেকে হারিয়ে ফেলে রাতে!
কামনাকে যখন কনুই মারে নেশা
গাড়ির গতি হারায় তখন সীমা।
পথের ধারে ঝুপড়িতে যারা থাকে
তাদের কারও থাকে না জীবনবীমা!
**মানুষের চিন্তাভাবনার দুটো রূপ থাকে। একটা ভালো, একটা খারাপ বা অন্ধকার দিক। এই কবিতাগুলো মনের অন্ধকারের সেই আবেগগুলোকে তুলে ধরে। মানুষের নেতিবাচক আবেগ নিয়ে লেখা এই কবিতাগুলো।
লেখক পরিচিতি : রুবাই শুভজিৎ ঘোষ
লেখকের জন্ম পশ্চিমবাংলায়। পেশায় একটি বহুজাতিক সংস্থার তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। নেশায় লেখক এবং পরিচালক। বাঙালির জনপ্রিয় ওয়েবসাইট সববাংলায় এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। কবিতা থেকে শুরু করে গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, চিত্রনাট্য সবকিছুই লিখতে ভালবাসেন। লিটিল ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক বিভিন্ন ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখেছেন। স্রোত থেকে প্রকাশিত তাঁর কবিতার সংকলন দৃষ্টি এবং বালিঘড়ি। এছাড়া তথ্যচিত্র, শর্ট ফিল্ম বা অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ভিডিও পরিচালনা করেন। ধর্ম এবং বিজ্ঞান তাঁর প্রিয় বিষয়। ভ্রমণ তাঁর অন্যতম শখ। অন্যান্য শখের মধ্যে রয়েছে স্কেচ, ফটোগ্রাফি, ছবি ডিজাইন করা।
তীব্র, অকপট