লেখক : ড: বিশ্বজিৎ বাউনা
১.
বীজ
লাঙল জানে মাটি চিরে এনে দিতে আরোহী ত্রাণ,
কাঙ্ক্ষিত বাতাসের আদর নত হয় বীজ জুড়ে-
মুহূর্তের মুগ্ধতা জাগিয়ে তোলে নিভৃতের প্রাণ,
শাখা উজ্জ্বল হয় স্বপ্নের সব প্যাপিরাস খুঁড়ে।
এতদিন জড়ত্বে বিভোর ছিল খোসা নিয়ে ঘুম,
আজ প্রেমিকা জলের ছোঁয়া লেগে সুখ অনাবিল।
চাহিদা সতেজ হলে রঙে রঙে দোলে মরশুম…
রোদ যেন আজ হয়েছে নিরামিষ ডানার চিল।
খনিজের দানা ভেতরে নিশাচর আত্মীয় স্রোতে,
শামুক শব্দের মতো চিরন্তন এই পদাবলী।
ধীরে ধীরে বিকশিত পাখা তার উদার কপোতে
সবুজ হয়; কাছেপিঠে হেসে ওঠে সব বনস্থলী।
সব পোকাদের এড়িয়ে বুকে রাখি অর্বুদ বাড়ি।
শস্য যেন শিরাময় ফলুই, বীজ তার সে নাড়ি।
২.
কবিতার জন্ম
নিয়োজিত আগুন থেকে আগুনের অক্ষরে নামি,
দূরে দেখি মাথায় আকাশ নিয়ে দুলে যায় ঘাস।
দহনের ছাই উড়ে আসে, ঘেঁটে পাই অন্তর্যামী-
আলোর পাঁজরে প্রজাপতি ফুটে থাকে বারোমাস।
রাধিকা বিরহের মতো প্রেম উতলা, চির ঋণী।
কাগজে কাটাকুটি নিয়ে পড়ে থাকে কবির দেহ।
মধু যামিনীর ছলে হুলের হানা প্রত্যহ চিনি-
স্খলিত প্রান্তরে এত এত পীড়া, ছুঁয়ে দ্যাখে কেহ?
কচুপাতার আদলে ক্ষণ খসে পড়ে ধীরে ধীরে,
অমানিশা দীর্ণ করে প্রভা: বোধ সেই বজ্রপাত।
অহরহ ঠোকাঠুকি, আঘাতে আঘাতে মন ঘিরে
আক্ষরিক ধ্যানে কদাচিৎ পাই সেই দৈব সাক্ষাৎ!
তবু সেই অক্ষরের চকমকি অতল, অম্লান-
আগুন আর ছাই একে অন্যকে দেয় চির প্রাণ।
৩.
ছান্দসিক
আয়ুর ধারাপাতে এই প্রসব চির বৈতরণী।
মোক্ষম মোহ নিয়ে গোপনে ভাসে জুঁই জপমালা।
পুণ্য এই ভেলার সমীপে চোখ তার প্রিয় মণি,
হলুদ লালসায় খাবি খায় প্রেত পৌষের পালা।
বাহ্য ধরাধামে আজ বাড়ন্ত বিরহিনী সে ঋতু,
ছায়া বিলিয়ে সংসারী পাতা খসে যায় নাব্যতায়।
পড়শীর ঋণ স্বীকারে ভণ্ডরা চিরদিন ভীতু,
একাকী কাদাখোঁচা পাখি নিজের স্মৃতি ধরে খায়।
প্রণয়ের চ্যুতি আজ বল্কলে সে দাবানল খুঁটে
নিহত পাপড়ি নিয়ে ধ্যান বসে আছে জ্বর গায়ে।
যেন জোনাকিরা আজ ফুটেছে মৃত্যুর চিরকুটে…
ফলিত বিভ্রম লেগে আছে মহাকালেরই পায়ে।
অভিসার দীর্ঘ হয়ে আজ মনে মনে বাসন্তিক-
মৃত্যুর দোতারায় প্রসবিনী প্রাণ সে ছান্দসিক।
৪.
মুহূর্তকালীন
পালকের থেকে শূন্য গড়িয়ে পড়ে আছে অতল,
তাকে সস্নেহে জড়িয়ে নেয় মৌন সহপাঠী বুক।
ছায়া তার খাঁজে খাঁজে রাখে সে জাতিস্মর সম্বল,
ভাঙনের পন্থায় জুড়ে উড্ডীন হতে পারা সুখ।
বিক্ষোভ শিথিল হয়ে ঝুলে থাকে দেবদারু ডালে,
স্বপ্নের দাউদাউ জ্বলে যায় প্রতিশ্রুতির খড়ে।
মরা ব্যাঙের বিলম্বিত লাফ উঠে আসে কপালে-
ধোঁয়াটে বনিবনা দিকে দিকে মিথ্যুক ঘর গড়ে।
উদাসীন এই শামিয়ানা, লেলিয়ে রাখা চলনে
ভিক্ষের ঝুলি থেকে পড়ে যায় ইঁদুরে-কাটা চাল।
আরোপিত সুখে কেউ আর কর্মঠ নই দেহ মনে,
আগামীতে কুমীর আনতে নিজেরাই কাটি খাল।
জীবনেই অভিশাপ হয়ে আছে মুহূর্তের মোহ,
শূন্যের বিরুদ্ধে মৃত পাখি কবে আর রাখে দ্রোহ?
৫.
প্রহরা
ক্রমে খোরাক ফুরিয়ে পড়ে থাকে প্রাণলতা হিম,
দোলায়িত খোলসের নীচে শেষ সূর্যের প্রণয়।
প্রেম সেই ভিটে, আজো জ্বেলে রাখে আশার পিদিম-
রক্তের চিতায় ঠেস দিয়ে চাঁদ দ্যাখে তার ক্ষয়।
কাম্য উজানের দিকে দুর্বহ আজ প্রদেয় নতি,
ধারালো নেমে আসে জড়ুল চিহ্নে ছোবলের ধ্বস।
দ্বিধাবোধে আজ স্বীকার করি কৃত কর্মের ক্ষতি,
বেসামাল ভোগে হীন পড়ে থাকে চর্চিত রম্বস।
বিকেল ত্বরান্বিত হয়ে যায় ধীরে স্নায়ুর তীরে,
কুণ্ঠিত আলো কিছু ছুঁয়ে থাকে আশ্রয়ী লহমায়।
বিয়োগের প্রতিফলন কাঁপে দুর্বল ক্ষণ চিরে-
পাটাতন থেকে জল লাফিয়ে জলে সমাধি চায়।
জন্মের বিপরীতে ছায়া রেখে মৃত্যু সেই প্রহরা,
মাছরাঙা তার অন্তিম ঝাঁপে পায় জলের খরা।
লেখক পরিচিতি : ড: বিশ্বজিৎ বাউনা
জন্ম ১৯৮৬। পশ্চিম মেদিনীপুরে। পিংলায়। পড়াশোনায় চিরদিনই মেধাবী। ২০০২-এ মাধ্যমিকে ৫৪ তম স্থান অধিকার করেছিলেন। ২০১০-এ বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ (ফার্স্ট ক্লাস সিলভার মেডেলিস্ট)। বি.এড., পিএইচডি। ইউজিসি নেট ও ওয়েস্ট বেঙ্গল সেট কোয়ালিফায়েড। পেশায় এইচ এস শিক্ষক। ২০১১ থেকে শিক্ষকতা করছেন ঘাটালের গৌরা সোনামুই কেবিএ শিক্ষায়তনে। বিভিন্ন জার্নালে গবেষণামূলক প্রবন্ধের পাশাপাশি মূলত কবিতা লেখেন। গল্পও লেখেন। পেয়েছেন 'দ্বৈরথ সাহিত্য সম্মান', 'চূনী কোটাল স্মৃতি সম্মান', 'বিভূতিভূষণ স্মৃতি পুরস্কার' ও 'কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচী স্মৃতি পুরস্কার'।
খুব ভাল লেখা!
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি 💕💕।
Bhalo lage porte..anubhav korte ..amake anek basto thakte hoi ..tabuo somoi kore apnar lekha ami pori ..karon ami anando pai ..God bless you
Really it’s my pleasure to know that my words touch you within. Everyone is busy in this world to pursue his/her personal matter. In the midst of this, you feel urged to read and very happy to know that my thought-provoking writing is at least able to satisfy your artistic zeal. Thanks again.
পাঁচটি কবিতাই বেশ চমৎকার। বুনন অসাধারণ। কবির বহুমুখী ভাবনা মন ছুঁয়ে গেল।
এভাবেই সমস্ত কবিতার পাশে থাকুন 💕💕।
কবিতা গুলি পড়ে বেশ ভালো লাগল।আপনার লেখা সবসময়ই আলাদা মাত্রার হয়। অতুলনীয়।।👏
এই উপলব্ধিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি 🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏।
অসাধারণ লাগলো কবিতা গুলি।
আন্তরিক ধন্যবাদ ও ভালোবাসা জানাচ্ছি 🙏🙏🙏🙏🙏🙏।
লেখার গাঁথুনি মন ছুঁয়ে গেল। বিষয়বস্তুকে খুবই সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কবির আরো লেখা পড়তে চাই। দারুন দারুন।
এ আমার প্রাপ্তি। এভাবেই কবিতার পাশে থাকুন। নতুন নতুন কবির কবিতা পড়ুন।
খুব ভালো থাকুন 💕💕
যেন পূর্ণিমার স্নিগ্ধ জ্যোতি, শুধু চেয়ে রই আর মুগ্ধ হই।সময়ের নৌকাখানি চলে গেছে দূরে আর আমি, আপনার শব্দ ভেলায় বসে আছি বিভোর হয়ে।ও জাদুকর এমনি করে ঘোরাও তোমার জাদুর কলম ছড়ি।
আপনার অনুভবী কথাগুলো আমার মন ছুঁয়ে গেল। এমন সুন্দর করে মনের অভিব্যক্তি কয়জনই বা প্রকাশ করতে পারে। নমস্কার জানাই।