তিনটি কবিতা

লেখক : এস. আজাদ (সেখ মহঃ সানি আজাদ)

১ ঘুমের দেশ

এক এক দিন পৃথিবীর সব আলস্য
জড়িয়ে ধরে আদর করে,
অনন্ত ঘুম আসে দু’চোখ জুড়ে;

আবার, এক এক দিন মনে হয়;
বর্ধমান স্টেশন দিয়ে যত ট্রেন যায়,
উঠে পড়ি সবগুলোতে;
যাত্রাপথ মেপে নেমে পড়ি তোমার গন্তব্যে;
যেখানে কাঁচা ধানের গন্ধ মেখে — চড়াই,
খেলা করে হেমন্তের নরম বিকেলে,
যেখানে রাত্রির আঁধারে কব্জি ডুবালে;
ছোঁয়া যায় আলো।
যেখানে আকাশ চুমো খায় মাটির অধরে,

এক এক দিন মনে হয়,
বাতাসের ডানা নিয়ে উড়ে যাই
অসীমের দিকে,
যেখানে শান্তিতে ঘুমায় পূর্বজ সভ্যতা।

২ চলে যাবো

তোমারই ইচ্ছাতে,
তোমাকে দেওয়া কথা রাখতে,
ঠিক চলে যাব — দেখো,
অনেক — অনেক দূর,
কোনো এক নক্ষত্রের ঠিকানায়।

শুধু, অনুমতি দাও
আরও একটুখানি সময়
শুধু, লিখে যেতে চাই —
আরও কিছু কথা,
যে কথা, এখনও লেখেনি কেউ,
যে ছবি, হয়নি আঁকা অক্ষরে অক্ষরে।

পৃথিবীর ঢের, ঢের মহাকাব্য আছে,
তবুও তোমার উদ্বিগ্ন চোখের কোণে,
হালকা কাজল রেখা — গোল কালো টিপ একখানা,
অপরাজিতায় ছোপানো শাড়ি — অঙ্গের মনোহারী,
জানানো আছে যে বাকি।

৩ ছুঁতে চায় ঈশ্বর

তোমাকে ছুঁতে চাওয়া কবিতারা —
না ছুঁতে পারার অভিমানে,
জ্যোৎস্নালোকিত রাত ভরেছে
গভীর আঁধারে।

শ্রাবণ রাতে পথবাতি থেকে — 
ঝরে পড়া রূপোর কনা — 
সোনা হয়ে ছড়িয়ে পড়ে দিগদিগন্তে।
খালের অভিমান আজ আটলান্টিক হয়ে —
ছড়িয়ে পড়েছে বিছানায়।
কনুইয়ে-কনুইয়ে মেরুবিন্দুর ব্যবধান,
মাঝখানে শুধু অভ্যাস হয়ে যাওয়া অভিমান।

তোমাকে ছুঁতে চাওয়ার ইচ্ছাটা —
ছোট হতে হতে মিলে গেছে আজ,
ছুঁতে না পারার বেদনাতে।
চোখের শ্রাবণে — ধুয়ে যাক অঞ্জন রেখা,
ধুয়ে যাক — গাছের পাতায় জমানো,
ব্যথা-অভিমান শুধুই কবিতাতে।


লেখক পরিচিতি : এস. আজাদ (সেখ মহঃ সানি আজাদ)
লেখক পরিচিতি : জন্ম : ১৯৮৩। পেশা : মাধ্যমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষক। নেশা : বই পড়া, বেড়ানো। কাটোয়া কলেজ পড়তে পড়তে সম্পাদনা করেছেন মাসিক দেয়াল পত্রিকা 'প্রগত'। ছাপার অক্ষরে তিন বছর সম্পাদনা করেছেন ত্রৈমাসিক লিটিল ম্যাগাজিন 'প্রগত'। বর্ধমান থেকে প্রকাশিত লিটিল ম্যাগাজিন 'ফরিয়াদ' পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সহ-সম্পাদক। জীবনানন্দের কবিতা পড়ে কবিতার প্রতি প্রেম। কবিতা লেখার নেশায় পেয়েছিল সুদূর অতীতে ছাত্রাবস্থায়। পরে বুঝেছেন ‘সকলেই কবি নয় কেউ কেউ কবি’। মাঝখানে দীর্ঘ বিরতির পর আবার শুরু করেছেন সাহিত্য চর্চা। এখন মূলত ছোট গল্প ও অনু গল্প লেখেন দু-একটা কবিতা ও লেখেন কখনো কখনো, প্রবন্ধ মাঝে মধ্যে। অজ গ্রামের দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান। বাবা একজন প্রান্তিক চাষী। পড়াশোনার পাশাপাশি করেছেন শ্রমসাধ্য কৃষি কাজ। জীবন কে দেখেছেন একেবারে ভিতর থেকে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।