লেখক : সুমন বিপ্লব
দেশের নাম আনন্দনগর। রাজার নাম আনন্দ। রাজা তার নিজের নামে দেশের নামকরণ করেছেন। তবে দেশের নাম আনন্দনগর ছিল না, রাজার আনন্দ ছিল না। এই পরিবর্তনের একটি কারণ আছে, যা আজ সবার কাছে বলতে চাই। দেশের নাম ছিল দুঃখপুর, তখন রাজা ছিলেন বিরাজ। তখন রাজ্যে শুধু দুঃখ লেগেই ছিল। আনন্দ ক্ষমতায় এলে মানুষের আর কোন দুঃখ নেই। তাই দেশের নাম বদল হয়েছে আনন্দনগর। রাজা আনন্দ ক্ষমতায় এসে সমস্ত জনগণকে একদিন ডাকলেন। বললেন,
“প্রিয় দেশবাসী, আমাদের দেশে অভাব আর দুঃখ লেগেই আছে। আপনারা দুঃখ চান, না সুখ চান?”
“আমরা সুখ চাই।”
“তাহলে আমি যা বলব আমার কথা আপনাদের শুনতে হবে।”
“হ্যাঁ শুনব।”
“আমি আজ থেকে সাধারণ মানুষ। কখনও রাজপোশাক পরব না, সবার মত পোশাক পরব। রাজপ্রাসাদে থাকব না, সাধারণ ঘরে থাকবো। রাজসিংহাসনে বসব না, মাটিতেই বসব। আমাদের মৌলিক সমস্যা, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, ও চিকিৎসা। আজ দেশের দিকে যদি তাকাই, আমাদের খাদ্যের অভাব, সব মানুষ তিনবেলা খেতে পায় না, সব মানুষের প্রয়োজন মত ভাল পোশাক নেই, থাকার ঘর নেই সবার। ছাত্ররা স্কুলে যাচ্ছে, কিন্তু শিখতে পারছেনা। ভাল ডাক্তার নেই। যারা আছে, তারাও ঠিকমত চিকিৎসা করে না। নানা অভিযোগ শোনা যায়। ঘুষ ও দুর্নীতি আজ সারা দেশে। আমি সবকিছুর পরিবর্তন করতে চাই। আপনারা আমাকে সাহায্য করবেন। কি, করবেন না?”
“জী করব।”
“আজ থেকে দেশের নাম হবে ‘আনন্দনগর’।”
“শুধুমাত্র শিক্ষক থাকবেন। আপনাদের সাথে কথা বলব।”
সমস্ত জনগণ চলে গেল। কিছু মানুষ বসে রইল।
“আপনারা শিক্ষক, কাছে আসুন। আপনাদের সবারই জানা আছে ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’। তাহলে আজ আমাদের দেশে শিক্ষার অবস্থা এতটা খারাপ কেন?”
“কোন রাজা শিক্ষার পরিবর্তন চায়নি।”
“কেন?”
“কারণ সাধারণ মানুষ লেখাপড়া শিখলে তাদের পর্যায়ে চলে যাবে।”
“আপনাদের ইচ্ছে হয়নি, আপনারা যা অর্জন করেছেন, তা ছাত্রছাত্রীদের দান করতে?”
“হ্যাঁ, কিন্তু সে সুযোগ নেই।”
“কেন?”
“কারণ ১০০ ছাত্রকে ১ জন শিক্ষক ৪০ মিনিটে কি করে শেখাবে?”
“ঠিকই বলেছেন। কখনও সম্ভব নয়।”
“অথচ আমাদের বলা হয়েছে শ্রেণিবদল করতে হবে। সরকারের কথায় আমরা আদর্শ বিসর্জন দিয়েছি।”
“কিভাবে ?”
“ছাত্ররা খাতা ভরছে, অথচ মাথা তাদের খালি।”
“খাতা ভরছে কি করে?”
“উপর থেকে নির্দেশ আসে একে অন্যের খাতা দেখবে। পরীক্ষায় না পারলে শিক্ষকরা বলে দেবে।”
“যাতে সবাই পাস করতে পারে?”
“জী।”
“আমি সব সরকারের উল্টোদিকে চলতে চাই। এখন আপনারা কি আমাকে সহযোগিতা করবেন?”
“অবশ্যই করব। আমরা তো চাই আমাদের অর্জিত জ্ঞান ছাত্রছাত্রীদের দান করতে। এখন বলুন আমাদের কি প্রয়োজন ?”
“প্রথমেই ৫০ জন ছাত্রের জন্য একটি বিদ্যালয়, পর্যাপ্ত শিক্ষক, এবং একটি শিক্ষানীতি।”
“সব হবে। আপনারা আপনাদের মাঝ থেকে দু’জন শিক্ষামন্ত্রী, দু’জন শিক্ষাসচিব নির্বাচন করে দেন। আজ থেকে ভোটব্যবস্থা বন্ধ। ভোটে দাঁড়ায় যতসব দুর্নীতিবাজ টাকাওয়ালা ব্যক্তিরা, যারা ভোটের পূর্বরাতে সাধারণ মানুষদের টাকা দিয়ে ভোট কেনে।”
“জী, আপনি ঠিক বলেছেন।”
“আজ থেকে রাজনীতি বন্ধ। নীতি এবং আদর্শ দিয়ে দেশকে কিভাবে উন্নত করা যায়, সেই চিন্তা সবার থাকতে হবে। আপনারা যোগ্য ৪ জনের নাম পাঠাবেন। অযোগ্য প্রমাণ হলে তাদের জেলে পাঠানো হবে। এতদিন অযোগ্য লোক ক্ষমতায় এসেছে, যার জন্য শিক্ষার আজ চরম দুরবস্থা। এখন যোগ্য ব্যক্তি ক্ষমতায় আসার সুযোগ পাবে।”
রাজা আনন্দ পরদিন সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী – মোটকথা সব বাহিনী নিয়ে বসলেন। সবাই রাজাকে দেখে তো অবাক। অতি সাধারণ মানুষ।
“আপনারা দেশের জাতীয় সম্পদ। আপনাদের উপর দেশরক্ষা করার দায়িত্ব। কিন্তু আজ দেশে সর্বত্র অন্যায় চলছে কেন?”
একজন পুলিশ অফিসার উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “আমরা অনেক অন্যায়কারীকে হাতেনাতে ধরি। কিছুক্ষণের মধ্যে কোন মন্ত্রী বা এমপি এসে বলে, ‘এসব আমার শালার। শালার মাল ছেড়ে দাও, আর বকশিশ দিচ্ছে, ওটা নিয়ে কেটে পড়। বেশি বাড়াবাড়ি কর না।’ আমাদের হাত বাঁধা।”
“এখন থেকে ভোটের মাধ্যমে আর এমপি বা মন্ত্রী নির্বাচন হবে না। যোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।”
“আমরা সীমান্ত এলাকায় অনেক চোরাই মাল ধরি। ঐ উপর থেকে ফোন আসে। মাল ছেড়ে দিতে হয়।”
“দেশকে শালা-দুলাভাইয়ের কাছ থেকে বাঁচাতে চাই। আপনারা আমাকে সহযোগিতা করবেন। কি, করবেন না?”
“অবশ্যই করব।”
“আমাদের দেশে সুখ আর আনন্দ থাকবে, দুঃখ থাকবে না। এবারে সেনাবাহিনী ছাড়া সবাই আসুন।”
সেনাবাহিনীর দিকে ফিরে রাজা আনন্দ বললেন,
“আপনারা দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ। কারণ আপনারা দক্ষতা লাভের সুযোগ পেয়ে থাকেন, যা অন্য পেশায় কেউ পায় না। আমি আপনাদের কাছে বিশেষ সহযোগিতা কামনা করছি। যদি সহযোগিতা করেন, তাহলে আমার ইচ্ছের কথা আপনাদের কাছে বলতে পারি।”
“আমরা অবশ্যই আপনাকে সহযোগিতা করব।”
“শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। আমরা সবাই জানি শিক্ষার জন্য কোন রাজা কখনও চেষ্টা করেনি। শুধু ছাত্র নিয়ে বাণিজ্য করে গিয়েছে। ছাত্রতালিকা দেখিয়ে বিদেশ থেকে সাহায্য এনে সবাই লুটে নিয়েছে।”
“আমরা জানি, কিন্তু কিছুই করতে পারিনি।”
“আজ আমাদের দেশের মানুষের পরিচয় হয়েছে চোর, অলস, ও দুর্নীতিবাজ। আমরা এ পরিচয় মুছে দিতে চাই। এখন আপনাদের সহযোগিতা চাই।”
“আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করব। কি করতে হবে?”
“৫০ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য পাড়ায়/মহল্লায় একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করব। সেখানে আপনাদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করতে চাই। শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে যোগ্য হয়ে গড়ে উঠতে পারবে। আপনারা শিক্ষক হিসেবে থাকবেন। গ্রামে মহল্লায় কোন প্রকার অন্যায় থাকবেনা। আপনাদের ভয়ে কেউ অন্যায় করবে না। অবশেষে একদিন অন্যায় করতে ভুলে যাবে।”
“ঠিক বলেছেন, তাই হবে। আপনি বিদ্যালয় ও সেনা ব্যরাক তৈরি করুন।”
“আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিটি মহল্লায়/গ্রামে একটি বিদ্যালয় ও ব্যরাক স্থাপন হয়ে যাবে। আপনারা ১০ জনের একটি করে গ্রুপের তালিকা করে আমার কাছে জমা দেবেন। মনে রাখবেন, এ দেশ আপনার, আমার, সবার।”
রাজা আনন্দ দেশের সমস্ত কৃষকদের একত্রিত করলেন। বলেন,
“প্রিয় ভাইয়েরা, মৌলিক সমস্যাগুলির প্রধান সমস্যা খাদ্য। এটা আপনারা উৎপাদন করেন। উৎপাদন করতে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়, প্রখর রোদে কাজ করতে হয়, শীতের সকালেও কাঁপতে কাঁপতে মাঠে যেতে হয়। অথচ আপনাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না। কখনও বন্যায় সমস্ত ফসল নষ্ট হয়ে যায়, খরায় পুড়ে যায়। যাদের জমি, তাদের কোন সমস্যা হয় না, আপনারা সমস্যায় পড়েন। জমির মালিক বা রাজারা আপনাদের কথা ভাবেনি, যার জন্য আপনারা নানা সমস্যায় আছেন। আপনাদের পেটে ভাত নেই, পরনে ভাল কাপড় নেই, থাকার ঘর নেই, চিকিৎসার সুযোগ নেই, আপনাদের সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। এখন আপনাদের জন্য কৃষিযন্ত্র আবিষ্কার করব। প্রতি গ্রামে একটি করে কৃষি অফিস থাকবে। আপনারা আমাকে সহযোগিতা করবেন। কি, করবেন না ?
“অবশ্যই করব। কি করতে হবে আমাদের বলুন ?”
“আপনারা আপনাদের ভাগ্যের পরিবর্তন চান না ?”
“আমরা তো চাই। কিন্তু কোন রাজা চায়নি কখনও।”
“আমি কোন রাজা নই। আপনাদের মতো সাধারণ মানুষ।”
“আপনার মত কেউ কখনও আমাদের পাশে আসেনি।”
“এসেছে তাদের চামচারা, তাই তো।”
“জী।”
“তারা খাজনা নেওয়ার জন্য করছে অত্যাচার।”
“জী।”
“ছোটবেলায় দাদা ও বাবাকে দেখেছি। যারা খাজনা দিতে পারেনি, চামচারা ধরে আনছে, তারা ইচ্ছে মত মারছে। তখন মনে ভাবতাম, আমি যখন ক্ষমতায় আসব, ওদের বিপরীত দিকে চলব।”
“আপনি মহান।”
“আমি অতি সাধারণ। সৃষ্টিকে ভালবাসি। আপনারা আমাকে সহযোগিতা করলে আমি আমাদের দেশটাকে আনন্দনগর তৈরি করব।”
“আপনি যা বলবেন তা আমরা শুনব। রাজাদের কথা শুনার জন্যই আমাদের জন্ম।”
“আমার কথা আলাদা।”
“সব রাজারা বলে, নেতারা ভোটের সময় বলে। আমরা তো পরে হয়ে যাই দাবার গুটি। আমাদের ব্যবহার করে কোটি কোটি ডলার এনে রাজার চামচারা হয়ে যায় রাঘববোয়াল, আমরা থেকে যাই পুঁটি।”
“কাজ দিয়ে প্রমাণ করব। এখন আপনারা দুইজন দক্ষ সৎ কৃষক দিন, যাদের আমি মন্ত্রী ও সচিব করব।”
“কৃষকদের কোন উচ্চ ডিগ্রী নেই। আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়, পান্তা আনতে নুন ফুরায়। লেখাপড়ার খরচ কোথায় পাব? শিক্ষা নেতা-রাজাদের জন্য।”
“আমি জানি। ছোটবেলা থেকে সব অনিয়ম দেখে আসছি। ডিগ্রীর দরকার নেই, দক্ষতা থাকতে হবে। এতকাল যে কৃষিমন্ত্রী হয়েছে, সে কখনও মাঠে কাজ করেনি। আমার কাছে ডিগ্রীর কোন মূল্য নেই। যে যত দক্ষ, তার মান তত বেশি। আমি সব রাজার উল্টো পথে চলতে চাই। আনন্দনগরে আর কেউ অদক্ষ থাকবে না। অদক্ষ মানুষ পরিবার ও দেশের আপদ-বিপদ আনা ছাড়া আর কোন কিছু করতে পারে না। দেশের সব দক্ষ মানুষ ধরে ধরে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। আপনারা সবচেয়ে বেশি। আপনাদের ভোটে এমপি-মন্ত্রী হয়েছে, অথচ আপনাদের ভাগ্যপরিবর্তন কখনও করা হয়নি। এবার থেকে হবে।”
রাজা আনন্দের নির্দেশে সারা দেশে ১ লাখ বিদ্যালয় স্থাপন করা হল। প্রতিটা বিদ্যালয়ের পাশে সৈনিকদের ব্যারাক তৈরী করা হল। আগে ছিল ১০ হাজার শিক্ষক। ৯০ হাজার সৈনিককে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করা হল। একই দিনে সব বিদ্যালয় উদ্বোধন করলেন রাজা। রাজা মনে করেন, দেশের মানুষ যদি সবাই প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়, তাহলে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে খুব সুবিধা হবে। তিনি মনে করেন, অদক্ষ হাজার মানুষ থেকে ১ জন দক্ষ মানুষ শ্রেষ্ঠতর। তাঁর স্বপ্ন, নিজেদের শিক্ষিত ও দক্ষ জাতি হিসাবে গড়ে তুলবেন। তাঁর একটাই জেদ, কোন দেশ যাতে বলতে না পারে ওরা চোর, দুর্নীতিবাজ, ও অলস।
রাজা ছদ্মবেশে সারা দেশে ঘুরতে থাকলেন। আজ এ বিদ্যালয়, কাল ও বিদ্যালয় যেতে তাকলেন। সবাইকে বোঝাতে থাকলেন, দেশটা আমাদের সবার। আসুন সবাই মিলে দুর্নীতিমুক্ত একটি দেশ তৈরী করি। শুধু বিদ্যালয় নয়, ছোটবেলা থেকে যেসব অফিসে দুর্নীতি করতে দেখেছেন, তিনি সেই সব অফিসে সাহস বুকে একাই চলে যান। সবার সাথে রাজার মত নয়, বন্ধুর মত আচারণ করে সবাইকে সততার জালে আবদ্ধ করতে থাকেন। যারা দুর্নীতি করে, তাদের মনে কখনও সুখ-শান্তি থাকে না। থাকে শুধু ভয় আর অপরাধবোধ। অনেকেই জানে শেষ পরিণতি খারাপ। তবুও লোভের মোহে পড়ে একের পর এক অন্যায় করে চলে। যে যখন দুর্নীতি ছেড়ে দিচ্ছে, তখন মনের মাঝে সুখ-শান্তি এসে হৃদয় জুড়িয়ে যাচ্ছে। মনে মনে ভাবছে, এত সুখ-শান্তি থেকে কেন জীবনটাকে ভুল পথে নিয়ে গিয়েছিলাম? এখন সবাই লজ্জা পাচ্ছে। সৈনিক মানুষের পাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থেকে শিক্ষাকতার মত মহৎ পেশায় নিয়োজিত। কোন অন্যায়কারী অন্যায় করতে সাহস পাচ্ছে না। দিন দিন অন্যায় করা ভুলে যাচ্ছে। সৎ থাকায় কত যে আনন্দ, দেশের জনগণ তা উপলব্ধি করতে পারছে।
রাজা আনন্দ একটি গাছতলায় বসে তাঁর দেশের রাজকার্য পরিচালনা করছেন। এমন সময় কিছু লোক এসে বলল,
“আমরা উকিল ও বিচারক। আমরা আজ বেকার।”
“কেন?”
“কেউ আর মামলা নিয়ে যায় না। অন্যায় ভুলে যাচ্ছে।”
“আপনারা চান না অন্যায়মুক্ত দেশ?”
“অবশ্যই চাই। কিন্তু আমাদের আয়ের উপায় কি?”
“আপনাদের পরিবারের তালিকা দিয়ে যান। রাজকোষ থেকে ঘরে ঘরে রেশন যাবে। আপনারা ভাল ইংরেজী জানেন। এখন প্রযুক্তি শিক্ষা গ্রহণ করুন। সরকারীভাবে বিভিন্ন দেশে চাকরীর ব্যবস্থা করা হবে। আমরা যখন উপরে উঠছি, আর নিচে নামতে চাই না। আজ বিশ্বের অনেক দেশ, যারা এক সময় আমাদের দুর্নীতিবাজ বলত, আজ তারা আমাদের প্রকৃত বন্ধু রূপে গ্রহণ করছে।”
“আপনি ঠিক বলেছেন। দিন দিন বিশ্বে আমাদের সম্মান বাড়ছে। সবই আপনার জন্য। আপনার বাপ-দাদারা এমনটা কখনও চান নি। তাঁরা দুর্নীতিবাজদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন।”
“তাই তো তারা বানিয়েছিল টাকার পাহাড়, দেশে বিদেশে আলিশান বাড়ি। আমার কোন অ্যাকাউন্টই নেই। এই কুঁড়েঘরে থাকি, মাদুর আমার আসন, এই গাছতলা আমার রাজকার্যালয়। আমি আপনাদের একজন গোলাম মাত্র। যখনই কোন সমস্যায় পড়বেন, আমার কাছে চলে আসবেন।”
“আপনার মত রাজা আজ পৃথিবীতে দারকার। তাহলেই সারা পৃথিবী হবে শান্তিময়। আমরা আসি।”
“আমারা কারখানার মালিক। আমরা আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য এসেছি।”
“আমি আপনাদের জন্য কি এমন করলাম? আমি তো আপনাদের চিনিও না, কখনও দেখা হয়েছে বলে মনে হয় না। কোন ভুল হচ্ছে মনে হয়।”
“ভুল আগে করেছি, এখন সঠিক করছি।”
“মানে, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”
“কোটি কোটি টাকা থাকা সত্ত্বেও যা পাই নি, এখন শত শত পাচ্ছি।”
“কি পাচ্ছেন ?”
“শান্তি।”
“তাতে আমার অবদান কি ?”
“আমরা খাদ্যে ভেজাল মেশাতাম। টাকার পাহাড় বানিয়েছি, কিন্তু শান্তি পাই নি।”
“কেন?”
“কখন পুলিশ আসে, সেই ভয়ে। তাছাড়া অনেক দিন খবরে দেখেছি, ভেজাল খাবার খেয়ে মানুষের অনেক ক্ষতি হয়েছে। কষ্ট লেগেছে, কিন্তু লোভের কারণে ভেজাল দেওয়া বন্ধ করতে পারিনি।”
“এখন অবস্থা কি ?”
“এখন সঠিক মত চলছি। কোন ভয় নেই।”
“কিন্তু লাভ কম হচ্ছে, তাই তো? মাল তৈরী করুন, বিদেশে রপ্তানীর ব্যবস্থা করা হবে। শ্রমিকদের বেতন কম দেবেন না।”
“জী।”
“আগের রাজারা রাজকোষ থেকে ইচ্ছে মত খরচ করছে, দেশেবিদেশে বানিয়ে বাড়ি করছে বিলাসিতা। আমি আমি তাদের মত হতে পারিনি। কখনও হতে পারব না। সততা আমার পুঁজি।”
“শুধু আপনার জন্য আমাদের দেশ দুর্নীতিমুক্ত দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে। আপনার মত ভাল রাজা পৃথিবীর সবদেশে আসুক। পৃথিবী হোক শান্তিময়।”
লেখক পরিচিতি : সুমন বিপ্লব
সুমন বিপ্লব, শাহ্পুর, ডুমুরিয়া, খুলনা।