লেখক : অম্লান ভট্টাচার্য
একে গল্পের মতো মনে নাও হতে পারে কারণ এটি একটি জীবন যুদ্ধের আখ্যান। যুদ্ধের পরিস্থিতির মধ্যে একজন কর্মরত সৈনিক ও বাপ মা মরা মেয়ের কাহিনী।
আফগানিস্তানের একটি অজানা গ্রামের অজানা একটি ছোট মেয়ে আলিয়া বাবা মাকে হারিয়ে চাচা চাচির কাছে বাস করত। আলিয়ার বয়স দশ এগারো হবে। অমানুষ চাচা চাচি আলিয়ার উপর অকথ্য অত্যাচার করত এবং মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে বের করে দিত। এমনি এক সময় এক সেনা অফিসার ওকে উদ্ধার করে নিজের কাছে রাখে। আফগানিস্তানে যুদ্ধরত এক ক্যাপ্টেন অফিসার তার নাম স্কট লি, সে ঠিক করল মেয়েটিকে ওর বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবে। লি ছিল একজন আমেরিকান, ওকে আফগানে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আভ্যন্তরীন যুদ্ধ ঝামেলা বন্ধ করতে, পিস কিপিং ফোর্স হিসেবে।
ক্যাপ্টেন স্কট আফগানিস্তানে এসেছে নিজের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ওকে ওদেশের সরকার যুদ্ধ বন্ধের উদ্দেশ্যে আফগান পাঠায়। পরে অবশ্য স্কটকে দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ আসে, গল্পের ঘটনাটি ঘটে ক্যাপ্টেন স্কটের নিজের দেশে ফেরার আগে ।
মেয়েটির বাবা ও মা গোষ্ঠী সংঘর্ষে সাংঘাতিক ভাবে নিহত হয়, আলিয়া কোনো মতে বেঁচে যায়। আফগানিস্তানে এই ধরনের সংঘর্ষ বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই লেগে থাকে, এতে প্রচুর মানুষ মারা যায় ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়। এখন মেয়েটির থাকার মধ্যে আছে ওর এক দূর সম্পর্কের চাচা ও চাচি।
আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সীমান্তের কাছাকাছি আলিয়াদের গ্রাম।
প্রথমে ক্যাপ্টেন স্কট চেষ্টা করেছিল স্থানীয় কোনো মানুষের সাথে ওকে ওর চাচা চাচির কাছে পাঠিয়ে দিতে, কিন্তু সবকিছু যখন ব্যর্থ হলো তখন ক্যাপ্টেন ঠিক করে সে নিজেই যাবে মেয়েটির চাচা চাচির বাড়ি। এদিকে আলিয়া কিছুতেই ওর চাচার কাছে যেতে চায় না, সে ভাষায় প্রকাশ করতে পারে না তবে আকার ইঙ্গিতে স্কটকে ছাড়তে চায় না। আলিয়াদের বাড়ি যাবার পথে অনেক বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হলো ওদের। বিদেশি সেনা অফিসারকে দেখে স্থানীয় লোকেরা অসহযোগিতা করল, ভুল রাস্তা দেখিয়ে ওদের বিপদে ফেলার চেষ্টা করল। তার উপরে আছে মাটিতে পুঁতে রাখা ল্যান্ড মাইনের ভয়।
শেষ পর্যন্ত মেয়েটি যেখানে থাকে সেই বাড়ি হয়ে ক্যাপ্টেন ও আলিয়া পৌঁছালো চাচা চাচির বাড়িতে। আলিয়াদের বাড়ি বলতে এখন আর কিছুই নেই, শুধু বোঝা যায় এখানে কোনো এক সময় কেউ বা কারা বাস করত। গ্রামের মানুষজন বলতে কেউ আর নেই, দু’য়েক ঘর যা আছে তারা মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে।
মেয়েটিকে ওর চাচা চাচির বাড়িতে রেখে ক্যাপ্টেন তার নিজের বাড়ির খবর নিতে বাড়ির বাইরে বেরোলো। ওর পরিবার থাকে শিকাগোতে, বাড়ি থেকে দুঃখজনক খবর পেল ও যে তার স্ত্রী আর বেঁচে নেই। হঠাৎই হার্ট এ্যাটাকে মারা যায়, স্কটকে তৎক্ষণাৎ খবর দিতে পারেনি বাড়ির লোকজন। প্রায় দিন পনেরো পর ক্যাপ্টেন খবর পেল। পুরো ঘটনা শুনে ক্যাপ্টেনের মনে হলো এই পৃথিবীতে ওর আর কেউ রইল না, কারণ ওদের কোনো সন্তান ছিল না।
তখন ক্যাপ্টেন ফিরে যায় মেয়েটির কাছে। ভাবলো ওকে পেয়ে যদি ওর দুঃখ যদি ভুলে থাকতে পারে। গিয়ে দেখে মেয়েটিকে ওর চাচা চাচি নৃশংস ভাবে বেঁধে রেখেছে মাটিতে পোঁতা একটা কাঠের দন্ডের সাথে। এই দৃশ্য দেখার পর ক্যাপ্টেন আর বিন্দুমাত্র দেরি না করে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরলো, চাচা ও চাচি বাধা বা কিছু বলতে পারলো না আর মেয়েটিও অত্যন্ত খুশি মনে ক্যাপ্টেনকে জড়িয়ে ধরলো।
এরপর গল্পের যবনিকা ঘটে, ক্যাপ্টেন ঠিক করে সে শিকাগোয় তার নিজের বাড়িতে ফিরে যাবে আলিয়াকে সঙ্গে নিয়ে। কারণ আফগানিস্তানে আলিয়া থাকলে হয় সে নিহত হবে বা সঙ্গ দোষে বিপথে চলে যাবে।
এরপর ঘোড়ার গাড়ির উপর নিজে উঠে আলিয়াকে বসিয়ে নিল। আলিয়া স্কটকে জড়িয়ে ধরলো, স্কট ওকে আদর করল। আলিয়া বুঝতে পারলো এই ভালোবাসার মানে। এরপর আস্তে আস্তে ওদের ঘোড়ার গাড়ি পরবর্তী জীবনের দিকে এগিয়ে চললো।
(পরাবাস্তব ও কল্পনার মিশেল এই গল্প, কোনো ব্যক্তি বা ঘটনার সাথে যদি এর মিল থেকে থাকে তবে তা হবে সমাপতন, ধন্যবাদ।)
লেখক পরিচিতি : অম্লান ভট্টাচার্য
অম্লান ভট্টাচার্য, জন্ম ২৫ ডিসেম্বর ১৯৫৭, কলকাতা। স্কুল - ঢাকুরিয়া রামচন্দ্র হাইস্কুল, কলেজ - সেন্টপলস, বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক, কলা বিভাগে স্পেশাল স্নাতক, কারিগরি শিক্ষা, কম্পিউটার ডিপ্লোমা ও টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউটে শিক্ষা গ্রহণ, কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি অবশেষে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ অবসর। এযাবৎ তিনটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত, মূলত কবিতা প্রাধান্য পেয়েছে লেখালেখিতে এবং এই সূত্রে চতুর্থ কাব্যগ্রন্থের প্রকাশ।