লেখক : শিখা চক্রবর্তী
এই গরমে একটা গল্প খুব মনে পড়ছে। ছোটবেলায় পড়া। দেব সাহিত্য কুটিরের একটা পূজাবার্ষিকী সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। লেখকের নাম, গল্পের নাম বা ওই পূজা বার্ষিকী সংখ্যার নাম আজ আর কিছুই মনে নেই।
কিন্তু গল্পটা মনে আছে। ভুলিনি আজও। এমন কি ছিল তাতে যে এমনি করে মনেরয়ে গেলো! কত গল্পই তো পড়েছি সব-তো মনে পড়ে না। তবু এটা মনে আছে কেন কে জানে! আপনাদের কাছে অনুরোধ যদি আপনাদের কারোর জানা থাকে তাহলে এখানে অবশ্যই জানাবেন।
গল্পটা এরকম,
অনেক দিন আগের কথা। এক রাজ রাণী আর তাঁদের এক রাজকন্যা। রাজার বাড়ির পেছনে ছিল গভীর এক জঙ্গল। একবার গরমের দিনে রাজ্যে ভীষণ জল কষ্ট দেখা দিল। কোথাও জল নেই। নদী, নালা, পুকুর সব শুকিয়ে খাঁ খাঁ করছে। এতদিন ধরে এত জল কষ্টের মধ্যেও কিন্তু রাজবাড়ীতে জলের কোনও অভাব হয়নি। কিন্তু শেষে একদিন তাও হলো। রাজবাড়ীতে সেদিন জল নেই। রাজা চান করবেন বলে খালি গায়ে রেশমি গামছা পরে তৈরি কিন্তু কোনও জল ই যে নেই কোথাও। চান করবেন কি করে, কোথা থেকে জলের ব্যবস্থা হবে এই নিয়ে সবাই ব্যস্ত ও উদ্বিগ্ন। ক্রমশ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেমন গরম ও বাড়তে লাগলো রাজার মাথাও তত গরম হতে থাকল।খালি গায়ে বসে রাজা ঘামতে থাকলেন। রাগে, বিরক্তিতে তাঁর মুখ ভয়ানক হয়ে উঠলো। তাঁর অনুচরেরা অনেক খুঁজেও রাজার চানের জলের জোগাড় করতে পারলো না। শেষে একজন বলল “রাজামশাই, এই প্রাসাদের পেছনে যে জঙ্গল তার মাঝে একটা ছোট ঝর্ণা আছে। আপনি সেখানে গিয়ে স্নান করতে পারেন।” সে কথা শুনে রাজা রাণী ও রাজকন্যা সহ স্নানের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। সেখানে গিয়ে দেখলেন জঙ্গলের মাঝে অনেক উঁচু থেকে একটা তিরতির করে ঝর্নার জল নিচে নেমে আসছে ঠিকই। কিন্তু তার চারদিকে এত ঘন জঙ্গল যে তাকে না কেটে ওখানে পৌঁছোনই সম্ভব নয় তিনি তাঁর লোকেদের আদেশ দিলেন জঙ্গল কেটে ফেলার। কিন্তু আশর্যের ব্যাপার তারা যত জঙ্গল কাটে জঙ্গল সেখানে ততোই আরো ভয়ানক ভাবে বেড়ে ওঠে। এরপর রাজা আর ধৈর্য্য ধরে রাখতে পারলেন না। নিজেই খোলা তলোয়ার হাতে নিয়ে জঙ্গলের গাছে সজোরে মারলেন এক কোপ। কিন্তু তখন হলো কি গাছের একটা ছোট টুকরো ছিটকে এসে রাজার চোখে ঢুকে গেলো। রাজা বাপরে বলে চোখে হাত দিয়ে ওখানেই বসে পড়লেন। চান করা মাথায় উঠলো তাঁর। আহত, অস্নাত ও ঘর্মাক্ত কলেবরে রাজা তাঁর পরিবার সহ রাজপ্রাসাদে ফিরে আসতে বাধ্য হলেন। রাজার অনুচরেরা তাঁকে ধরে ধরে নিয়ে এল। চোখের যন্ত্রনায় তিনি অস্থির তখন। রাজ বৈদ্য এলেন। এসে রাজা কে দেখে ওষুধ দিলেন।কিন্তু তাতে কিছুই হলনা। তারপর আরো অনেক চিকিৎসক এসে তাঁকে দেখে ওষুধ দিলেন। কিন্তু তাতেও কিছু হলো না।রাজার যন্ত্রনা দেখে সব্বাই খুব চিন্তায় পড়ে গেলেন। তখন মন্ত্রী মশাই এর সিদ্ধান্তে রাজ্যে ঢেঁড়া পিটিয়ে ঘোষণা করে দেওয়া হলো যে যে লোক রাজার চোখ ঠিক করে দিতে পারবে তাকে প্রচুর পুরস্কার দেয়া হবে। ঢেঁড়া শুনে অনেকেই এলো পুরস্কারের লোভে কিন্তু কেউ রাজাকে সুস্থ করতে পারল না। এই ভাবে প্রায় তিন চারদিন চলে গেল। রাজার শরীর ক্রমশ আরও খারাপ হতে থাকল। তার সঙ্গে তেমনই প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নামগন্ধ নেই। এমন সময় একদিন রাজবাড়ির ফটকে একটা লোক এসে দ্বরপাল কে বলল “আমি রাজাকে সারিয়ে তুলবো।রাজাকে খবর দাও।” রাজার কাছে খবর যেতে লোকটিকে মন্ত্রী মশাই ভেতরে নিয়ে আসতে বললেন। সে রাজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। সেখানে উপস্থিত সব্বাই মায় রাণী এবং রাজকন্যা ও দেখলেন লোকটাকে। দেখতে রোগা, কালো ঢ্যাঙা, আর
শুঁটকো।কোনোভাবেই তাকে বৈদ্য বা চিকিৎসক বলে মনে হয়না। লোকটা খ্যান খ্যানে স্বরে বলল “আমি রাজাকে একদম সারিয়ে দেবো।বদলে আমি যা চাইবো সেটাই দিতে হবে। “মন্ত্রী বল লেন “কি তোমার চাহিদা।” লোকটা বলল “আমার রাজকন্যা চাই।আর কোনো কিছু আমি নেবো না। কিন্তু রাজাকে একদম ঠিক করে দেব।” শুনে সবাই হতভম্ব হয়ে গেলেন। রাজাকে সুস্থ করাই তখন প্রধান কর্তব্য। অগত্যা খুব মনখারাপ নিয়েই মন্ত্রীমশাই অনুমতি দিলেন। এবার লোকটা রাজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে কি যে করলো কিছু বোঝা গেলনা কিন্তু দেখা গেল যে রাজার চোখ থেকে গাছের সেই চোকলা-টা বেরিয়ে গেছে। রাজা খুব আরামের একটা নি:শ্বাস ছেড়ে “আ!” বলে উঠলেন।
লেখক পরিচিতি : শিখা চক্রবর্তী
শিখা চক্রবর্তী,গৃহবধূ, নিবাস কোন নগর শ্রীরামপুর কলেজের স্নাতক স্বামীর কর্মসূত্রে ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে বসবাস করার সৌভাগ্য এবং তার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় বইপড়ার ভীষণ নেশা ছিল কিন্তু শারীরিক কারণে বর্তমানে তাতে ছেদ পড়েছে। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই একটু ছড়া লেখার অভ্যাস ছিল তারপরে সব বন্ধ ছিল, এতদিন পর কন্যা ও জামাতার উৎসাহে,প্রেরণায় পুনরায় লেখার শুরু দেশকাল বলে একটা ম্যগাজিনে আমার একটা লেখা বেরিয়েছিল ১৯৯৫ এর সময়।