এক রাজকন্যার গল্প ( শেষ পর্ব )

লেখক : শিখা চক্রবর্তী

আর এই একটা বড়ি দিচ্ছি। এটা এখনই খেয়ে নাও। এতে তুমি পক্ষিরাজ ঘোড়ার মতো দৌড়াতে পারবে। কেউ আটকাতে পারবে না। কিন্তু মনে থাকে যেন কোনোমতেই পেছন ফিরে চেও না। চাইলে আর বাড়ি ফিরতে পারবেনা। তোমায় সবাই মিলে খেয়ে ফেলবে। আশা করি বুঝেছ আমি কি বলছি। নাও আর দেরি কোরো না। বেরিয়ে পড়।” রাজকন্যা কঙ্কালকে ধন্যবাদ জানিয়ে, তার কথা মতো বড়িটা খেয়ে খিড়কির দরজা দিয়ে বেরিয়ে পড়লেন এবং সেই জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ করলেন।
সেখানে প্রবেশ করে রাজকন্যা প্রথম থেকেই একেবারে ঘোড়ার মতন দৌড়াতে শুরু করলেন। কোনও ঢিলেমি দিলেন না বা গতি কে শ্লথ করলেন না। একটু যাবার পরেই পেছন থেকে নানারকম চিৎকার তাঁর কানে আসতে লাগলো। আবার কখনো হাসি কখনো কান্না। রাজকন্যা ফিরে চাও, ভালো চাও তো আর এগিও না। এইরকম অনেক কিছু কথা তাঁর কানে আসতে লাগলো। কিন্তু সে সবে তিনি কোনও কান দিলেন না। এক মনে রামের নাম জপ করতে করতে আর বাবা মায়ের কথা মনে করতে তিনি ছুটতে থাকলেন।

ইতিমধ্যে সেই শয়তান টা বাড়ি ফিরে রাজকন্যার ঘরে ঢুকে দেখতে পেল যে তিনি নেই। অমনি সে কঙ্কালটা কে গিয়ে ধমক দিয়ে বলল সে কোথায়? দেখতে পাচ্ছিনা কেন,? কঙ্কাল বললো আমি কি করে বলবো ? আমি তো এই সদর দরজায় ঠায় দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছি। আমাকে এড়িয়ে যাবে কোথায়? লোকটা তখন সারা বাড়ি খুঁজে এসে বল্লো . “বাড়ির মধ্যে কোথাও নেই। খিড়কির দোর টা খোলা তার মানে এখন দিয়েই পালিয়েছে। দেখাচ্ছি মজা।” এই বলেই সে তখুনি ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে পড়লো রাজকন্যাকে ধরবে বলে। ওদিকে রাজকন্যা তখন পক্ষিরাজের মতো ছুটে চলেছেন। কখনো পায়ে কাঁটা ফুটে রক্ত বেরোচ্ছে, কখনো হিংস্র জন্তু সামনে চলে আসছে। আর তার সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে সেই নানারকম ভয় দেখানো চিৎকার , আর্তনাদ বা বিভৎস কিছু দৃশ্য তাঁকে ক্রমাগত বাধা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোন কিছুতেই তিনি ভয় পাচ্ছেন না
একভাবে দৌড়ে চলেছেন। একসময় কানে তাঁর একটা শন শন আওয়াজ এল। তিনি বুঝলেন তাঁর পেছনে কেউ বাতাসে ভর দিয়ে উড়ে আসছে। তাঁর পিছু নিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে রাজকন্যা তাঁর ছোটা র গতি আরও বাড়িয়ে দিলেন। একটু পরেই আওয়াজ টা যেন একটু দূরে হয়েগেছে বলে মনে হলো তাঁর।
তারপরেই তিনি অবাক হয়ে দেখলেন সেই ঘন জঙ্গল যেন ক্রমে পাতলা হয়ে আসছে। গাছ পালার ফাঁক দিয়ে এক সময় রাজবাড়ী টা তাঁর চোখে পড়লো। আনন্দে তিনি লাফিয়ে উঠলেন।দেখতে দেখতে বাড়িটা র একেবারে সামনে চলে এসে ফটকের মধ্যে প্রবেশ করে তিনি বলে উঠলেন ” বাবা মা।”রাজা ও রাণী তখন ছাদে ছিলেন।রাজকন্যার গলা শুনে সঙ্গে সঙ্গে নিচে এসেছোখের সামনে মেয়েকে দেখে তাঁরা দুজনে তাকে জড়িয়ে ধরলেন। রাজ কন্যা বলে উঠলো “এক্ষুনি গো শালা থেকে দুটো গরু বা মোষ ফটকের বাইরে রাখার ব্যবস্থা করো। একদম দেরি কোরও না। এক্ষুনি কর।” তখুনি রাজার আদেশে তাঁর লোকেরা ফটকের বাইরে দুটো মোষ রেখে এল। রাজা ও রানী রাজকন্যাকে নিয়ে ছাদে উঠলেন। তাঁরা অবাক হয়ে দেখলেন সেই কদাকার লোকটা ফটকের সামনে এসে আর কোনদিকে না তাকিয়ে মোষ দুটো নিজের ঘাড়ের দুপাশে ঝুলিয়ে গাঁক গাঁক শব্দ করে একটা মোষের ঠ্যাং চিবোতে চিবোতে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে গেল। রাজা রানী ও রাজকন্যা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন।
গল্পটা এ খানেই শেষ ।।

সমাপ্ত


আগের ও পরের পর্বের লিঙ্ক<< এক রাজকন্যার গল্প (পর্ব-২)

লেখক পরিচিতি : শিখা চক্রবর্তী
শিখা চক্রবর্তী,গৃহবধূ, নিবাস কোন নগর শ্রীরামপুর কলেজের স্নাতক স্বামীর কর্মসূত্রে ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে বসবাস করার সৌভাগ্য এবং তার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় বইপড়ার ভীষণ নেশা ছিল কিন্তু শারীরিক কারণে বর্তমানে তাতে ছেদ পড়েছে। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই একটু ছড়া লেখার অভ্যাস ছিল তারপরে সব বন্ধ ছিল, এতদিন পর কন্যা ও জামাতার উৎসাহে,প্রেরণায় পুনরায় লেখার শুরু দেশকাল বলে একটা ম্যগাজিনে আমার একটা লেখা বেরিয়েছিল ১৯৯৫ এর সময়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

রুচিশীল ও বিষয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য ক্লিক করুন এখানে

sobbanglay forum