লেখক: রুবাই শুভজিৎ ঘোষ
মাল্টিন্যাশানাল আই টি কোম্পানিগুলোর এই একটা সুবিধের কথা মানতেই হবে। ভাষা-ধর্ম-জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এখানে কাজ করি একসাথে, এবং এই মেলামেশাটা অন্যান্য চাকরির তুলনায় অনেকটাই বেশি। আর মেলামেশা যত বেশি হয়, মনের সঙ্কীর্ণতাটা হয় তত কম। কাজ আটঘন্টা, বারোঘন্টা বা চব্বিশঘন্টা যতক্ষণই করাক না কেন এই কোম্পানিগুলো, অনেক টাকা, উচ্চমানের জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়া ছাড়াও সব মানুষের প্রতি এই যে অভিন্নভাব পোষণ করাটাও শেখায়, সেটা কিন্তু উপরি পাওনা। সত্যি কথা বলতে আই টি কিন্তু আলাদা জগৎ একটা সম্পূর্ণ, একটা রূপকথার জগৎ। এখানে সবকিছুই যেন সহজলভ্য। একবার চাকরিটা শুধু পেতে হয়, তারপর জীবন চলতে থাকে অন্য একটা ছন্দে। অন্য এক রূপকথার জগতে, বাস্তব থেকে যেটা অনেক দূরে। প্রচুর মাইনে থেকে জীবনযাপনের অভ্যাসটা পাল্টে যায় নিজে থেকেই। বিভিন্ন আলাদা আলাদা মানুষের সাথে মেলামেশায় ভেঙে যায় মনের সংকীর্ণতা। এমনকি বিদেশ যাওয়ার প্রচুর সুযোগ থাকায় অন্য দেশের মানুষের সাথেও মেলামেশার সুযোগ বাড়ে, মনের গণ্ডী আরও বিস্তীর্ণ হয়। যদি বিদেশও যাওয়া না হয় প্রথম কয়েক বছরে, তাহলেও দেশকে তো সহজেই জানা যায় অফিসেরই ছোট্ট একটা ঘরে। কারণ এই কোম্পানিগুলোর প্রতিটা শাখাতেই অন্যান্য রাজ্যের কর্মী থাকে প্রচুর। সেইরকমই একটা মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানির কলকাতা শাখাতে আমার সাথে আলাপ উত্তরপশ্চিম ভারতের যামিনীর।
আমি যামিনী বললেও ওর উচ্চারণে কিন্তু ইয়ামিনী। আমি অবশ্য ওকে যামিনী বলেই ডাকতাম। কখনও কখনও ও বিরক্ত হত। ওকে বিরক্ত করতে ভালই লাগত আমার। মেয়েটা খুব বদরাগী আর ছটফটে। আর বকবক করে প্রচণ্ড। সব সময় মুখে কথার ফুলঝুরি। সব সময় যার মুখে কথা থাকে, তার বেশির ভাগ কথাই কিন্তু বাজে বকা হয়। যামিনীও তার ব্যতিক্রম ছিল না। তবে ওর বাজে বকাও ভালো লাগত আমার। আর তাছাড়া ও বাজে বকত বলেই না সেই কথার সূত্র ধরে ওকে রাগাতে পারতাম আমরা। কিন্তু ও মন থেকে ছিল একদম খাঁটি মেয়ে। মনের রঙ ছিল একদম সাদা, আর গায়ের রঙ ঠিক তার উল্টো। একেবারে নামের সঙ্গে যেন মিল। তবে সে রঙ কিন্তু অমাবস্যার রঙ নয়। যামিনীর রঙটা ছিল উজ্জ্বল নক্ষত্রখচিত রাতের মত। আর ও যখন হাসত, তখন মনে হত রাতের আকাশে চাঁদের একটা কলা ফুটেছে যেন।
এই যামিনীকে দেখে, ওর সাথে মিশে কবে যে ওকে ভাল লেগে গেছিল, সেই দিনটা আমার মনে নেই। কিন্তু কথাটা কখনই জানানো হয়নি ওকে। আসলে ব্যাপারটা ওর দিক থেকে তো ঠিক বুঝে উঠতে পারতাম না। সবার সাথেই যেন একইরকম ভাবে মিশত। আমার সাথে ওর মেলামেশাটা বেশি কিনা, তাও নির্ণয় করতে পারতাম না, কারণ অফিসে তো আলাদাভাবে গুরুত্ব পেতাম না কোনও, একসাথে অনেকজনের দল ছিল আমাদের। তার মধ্যেই যা কথাবার্তা। তবে বাড়ি ফিরে অনেকরাত অবধি ওর সাথে ফোনের মেসেজে বা চ্যাটে কথা হত। অবশ্য মেসেজ বা চ্যাট তো একই সময় একাধিক জনের সাথেও করা যায়। তাই আমার সাথে অফিসের বাইরে ওইটুকু কথা থেকেও এটা প্রমাণ করা যায় না যে আমার প্রতি ওর আলাদা আবেগ ছিল। কিন্তু আমি বিশ্বাস করতাম ছিল। ওর সাথে যা কথা আমার হত, আমি মনে করতাম সেগুলো ও শুধু আমার সাথেই আলোচনা করত। ঐ বিশ্বাসটুকুই ছিল আমার সম্বল। আর ঐ সম্বল নিয়ে থাকতে কিন্তু খারাপ লাগত না, বেশ ভালই লাগত। যামিনীর ঐ একটুকরো চাঁদ যতক্ষণ থাকত, ততক্ষণ দারুণ লাগত।
কিন্তু একদিন যামিনীর সেই চাঁদের টুকরোখানি দেখলাম ঢাকা পড়ে গেছে বিষণ্ণতায়। আই টি কোম্পানিগুলোতে টাকাও যেমন, কাজের চাপও কিন্তু তেমনই। আর ঐ সময়টা কাজের বেশ ভালই চাপ চলছিল। তাই যামিনীর বিষণ্ণতার কারণ হিসাবে অন্যেরা হয়ত কাজের চাপকেই ধরে নিয়েছিল, তাই হয়ত কেউই আলাদাভাবে ওকে জিজ্ঞেস করেনি ওর বিষণ্ণতার কারণ। তার ওপর কাজের চাপে প্রত্যেকের অবস্থাই বেশ করুণ। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল ওর মুখের ঐ বিষণ্ণভাব যেন অন্য কারণে। আমি ওকে জিজ্ঞেস করতে জবাব দেয়নি সেভাবে। আস্তে আস্তে কিছুদিনের মধ্যেই ওর স্বভাবে পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম। ওর মধ্যে সেই ছটফটে ভাব আর ছিল না। ওকে রাগালেও আগের মত রাগ করছে না আর। বকবকানিও কম হয়ে গেছে অনেক। অফিসের কাজের চাপটা কমেনি, তাই অন্যেরা হয়ত খেয়াল করেনি। কিন্তু আমি জানতাম ওর ওই পরিবর্তন সম্পূর্ণ আভ্যন্তরীণ, সম্পূর্ণই ব্যক্তিগত। অফিসে চা কফি খাবার জন্য আলাদা একটা জায়গা আছে। কাজের থেকে বিরতি নিয়ে এখানে এসে অনেকেই চা কফি খায়। কেউ কেউ আবার বাড়ি থেকে আনা টিফিন নিয়েও এখানে বসে খায়। একদিন সেখানে যামিনী এলে কফির কাপে চুমুক লাগাতে লাগাতে জিজ্ঞেস করলাম হিন্দিতে, “কি হয়েছে?”
আমাদের মধ্যে সমস্ত কথা হিন্দিতেই হত। আমার সামনের টেবিলটায় কফির কাপ রেখে যামিনী বসল, “কি আবার হবে?”
কিন্তু আমি তো জানতাম ওর কিছু একটা হয়েছেই, এবং ওর চোখমুখ বলছিল সেটা আমাকে ও বলতে চাইছিল, কিন্তু কোনও অদৃশ্য বাধায় সেটা বলতে পারছিল না। অজান্তেই আমার হাতটা কখন যামিনীর হাতের ওপর উঠে গেছিল খেয়াল হয়নি। যামিনী দ্রুতগতিতে ওর হাতটা সরিয়ে নিতে খেয়াল হল। তবে আমাদের হাতের এই ছোঁয়াটুকুই ওর মধ্যে যা পরিবর্তন করার করে দিয়েছিল। সেই পরিবর্তনটা ওর চেহারাতেও ধরা পড়ছিল স্পষ্ট, আর সেটা ও লুকোতে চাইলেও লুকোতে পারছিল না। ততক্ষণে ওর মনের অদৃশ্য বাধাটা কেটে যাচ্ছিল। তারপর ও মৃদু আর আবেগপ্রবণ স্বরে আমায় বলল, “কবে আমায় বলবে তুমি?”
আমার মধ্যে কেমন একটা ভয় দেখা দিল। আমি যাকে ইংরাজিতে বলে নার্ভাস হওয়া, সেরকম হয়ে গেলাম। কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম ওকে, “কি?”
যামিনীর মধ্যে ওর পূর্ব উজ্জ্বলতা ফিরে আসতে থাকল ধীরে ধীরে। আমার চোখে চোখ রেখে ও বলল, “তোমার মনের কথা।”
এমন সময় ওর ফোনটা বেজে উঠল।
“এক্সকিউজ মি!” বলে ফোনটা নিয়ে উঠে গেল ও। ওর কফির কাপটা রাখা রইল টেবিলের ওপর। সেই কাপে আমি চুমুক লাগালাম একটা।
কফির কাপ হাতে বেশ আনন্দের সাথে বসে ছিলাম আমি। আগের ঘটনার পর কেটে গেছে প্রায় মাস দেড়েক। অফিসের কাজের চাপ শেষ হতেই আমাদের অফিসের কর্মীবন্ধুরা মিলে ঘুরতে এসেছিলাম গ্রামে, আমাদেরই এক কর্মীবন্ধু আস্তিনের দাদুর গ্রামে। মাটির বাড়ি, খড়ের চাল ছেড়ে এখনও এখানের বাড়িগুলো পাকা হয়নি। আস্তিনের দাদু মারা গেছেন অনেকদিন আগেই। ওর পরিবারের কেউই সেখানে থাকে না, তখনও থাকত না। কিন্তু ওদের অনেক জমি আছে ওখানে। আমরা যখন ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করছিলাম কোথায় খাঁটি গ্রাম আছে, তখন আস্তিনই ওখানকার সন্ধান দিয়েছিল। অবশ্য আস্তিন আগেই বলে দিয়েছিল শহরের বেশিরভাগ সুবিধা ওখানে আশা করা উচিত না, আমরাও করিনি। বরং মাটির বাড়ি শুনে যাকে বলে অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধ পেয়েছিলাম। আসলে আমাদের মত শহুরে ছেলেমেয়েরা গ্রাম তো সেভাবে দেখিনি, তাই আমাদের কাছে এটা অ্যাডভেঞ্চার। মাটির বাড়ি ওখানের মানুষ তাদের মাথা গোঁজার জায়গা হিসাবে বানিয়েছে, কারণ পাকা বাড়ির আর্থিক সামর্থ্য তাদের নেই। আর আমাদের শহরে এইরকম কাঁচা বাড়ি নেই বলে ওটা আমাদের কাছে অ্যাডভেঞ্চার, ঠিক যেমন ঐ গ্রামের মানুষগুলোই শহরে এলে তাদের কাছে উঁচু উঁচু বিল্ডিংগুলো, কলকাতার সাধারণ রাস্তাঘাটগুলোই অ্যাডভেঞ্চারের মত লাগে। আসলে যে কেউই তার বেড়ে ওঠা পরিবেশের থেকে অন্য পরিবেশে দুদিন থাকলেই সেটা তার কাছে অ্যাডভেঞ্চারের মত লাগে। যামিনীর বাড়িও শুনেছিলাম উত্তরপশ্চিম ভারতের এক গ্রামে, কিন্তু কখনও যাইনি আমি সেখানে। তবে সেদিন ওখানে বসেই কেন জানি না মনে হচ্ছিল আমরা যেন যামিনীর গ্রামেই এসেছি। কফির কাপে চুমুক লাগাতে লাগাতে ওর আসারই অপেক্ষা করছিলাম আমি।
আমার প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে যামিনী এলো। চাঁদটা সেদিন বেশ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল আকাশে। তার জ্যোৎস্নার আলো আমাদের উঠোনের ওই পেছন দিকটায় আলো আঁধারির পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। সে পরিবেশ না দেখলে অনুভব করার নয়। এমন সময় যামিনী এলো আমার কাছে। সমস্ত শরীরে জ্যোৎস্না মেখে যামিনী এলো আমার কাছে। সত্যি বলছি, ওকে আমি কল্পনাই করিনি কখনও এমন বেশে। আমায় ও টেনে নিল মাটির ঘরের পেছন দিকে। আমার হাত টেনে নিয়ে ওর জ্যোৎস্না ধোয়া শরীরে রাখল। আমি অবশ হয়ে যাচ্ছিলাম যেন, নাহলে ওকে মানা করলাম না কেন একবারও? মানছি গ্রামে আস্তিনের বাড়ির গণ্ডীর মধ্যে গ্রামের কোনও মানুষ ঢুকতো না, কিন্তু আমাদের কেউই যদি আমাদের ওভাবে দেখে ফেলত? আসলে তখন যেন স্বপ্নের মধ্যে ছিলাম আমি। হয়ত জ্ঞান হারাচ্ছিলাম আস্তে আস্তে। ঘরের ঐ পেছন দিকটায় পাতা খড়ের বিছানায় ও রাখল ওর জ্যোৎস্না মাখা শরীর। ওর শরীরে শরীর রাখলাম আমি, হারিয়ে গেলাম যামিনীর অন্ধকারে।
দুদিন পরে অফিস ফিরলাম আমরা। মনে আমার আলাদারকম তৃপ্তি। আই টি-এর জীবন দিয়েছে সবকিছুই, যা দেয়নি তা আমায় সেই রাতে দিয়েছিল যামিনী। কাজে মন সেভাবে বসছিল না। মনটা যাকে বলে উড়ুউড়ু। তবু অফিসে মেইলগুলো দেখতেই হয়। কোনও জরুরী মেইল এসেছে কিনা দেখতে গিয়ে যামিনীর মেইলটা পেলাম। আমি অন্তত দুবার মেইলটা প্রথম থেকে শেষ অবধি পড়লাম, কিন্তু বিশ্বাস হল না আমার। পরের মাসে যামিনীর বিয়ে। নিমন্ত্রণ পত্রের ইলেক্ট্রনিক ডকুমেন্ট অফিসের সকলকে ও মেইল করেছিল। অফিসের অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে আমিও সেই নিমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। যাকে ইংরেজিতে বলে শকড্, কয়েক মুহূর্তের জন্য আমি সেটাই হয়ে গেলাম। তারপর উঠে চলে এলাম যামিনীর ডেস্কে। আমার আগমনে আমার দিকে মুখ ঘুরে তাকালোনা পর্যন্ত। কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকেই তাকিয়ে বলল আমায়, “বলো!”
ততক্ষণে অন্যান্য কয়েকজনও এসেছিল ওর ডেস্কে, ওকে “কংগ্রাচুলেশনস” জানিয়ে চলে গেল তারা। প্রচণ্ড অপমানিত বোধ করে আমিও ওকে “কংগ্রাচুলেশনস” জানিয়ে পা বাড়ালাম নিজের ডেস্কে যাবার জন্য। ও মুখ তুলে চেয়ে দেখল আমায়, চোখদুটো কেন জানি না চিকচিক করছিল ওর।
আসলে এই কল্পনার জগতে বাস করতে করতে ভুলেই গেছিলাম আমাদের বাস্তব জগতটার কথা। কল্পনার জগতটা সুন্দর হলেও বাস্তবটাতো নয়। কল্পনার জগতটায় মানুষে মানুষে বিভেদ না থাকলেও বাস্তবে তো আছে। তাই কল্পনার এই জগতটায় আমি আর যামিনী যেভাবে ইচ্ছা মেলামেশা করতে পারি, বাস্তবে সেটা সম্ভব নয়। বাস্তবে তাই আমাদের প্রেমেরও কোনও পরিণতি নেই। পরিণতি নেই অবশ্য বলা যায় না, বলা উচিত সে পরিণতি ভয়াবহ। যামিনীর বাবা ওদের গ্রামের একজন প্রভাবশালী পুরুষ। মেয়ে অন্য ভাষার, অন্য জাতির ছেলেকে বিয়ে করবে, সেটা তিনি কিছুতেই মেনে নেবেন না, যামিনীর গ্রামের মাথারাও সেটা মেনে নেবে না। যামিনী সেটা জানে। তবু কল্পনার এই জগতে থাকতে থাকতে বাস্তবকে অনেকটাই ভুলে গেছিল যামিনী, ভুলে গেছিলাম আমিও। যামিনীর খেয়াল হল যখন ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেল ওর মতের বিরুদ্ধেই। তাই জন্যই বিষণ্ণ ছিল ও। আর আমার কথা? আমারও বাড়িতে সহজে এ সম্পর্ক মেনে নিত বলে মনে হয় না। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও ওর শিক্ষিত মন ওর বাড়ির, ওর গ্রামের, এই সমাজের এই অত্যাচার চুপ করে মেনে নিতে পারেনি। তাই তো বিয়ের কিছুদিন পরে আমার কাছে সমর্পণ করেছিল নিজেকে, উন্মুক্ত আকাশের নীচে। আমার থেকে নিতে চেয়েছিল আমার অংশ, সেই অংশকে রাখতে চেয়েছিল আমার স্মৃতিস্বরূপ। যামিনীর সাথে এটুকুই আমার শেষ কথা হয়েছিল। সেদিন প্রথম ওকে কাঁদতে দেখেছিলাম আমি। সেই ছটফটে মেয়েটা আমার বুকে মাথা রেখে কাঁদছিল। ওর চোখের জলে, আমার বুকের কাছের জামাটাই শুধু নয়, ভেসে যাচ্ছিল বুকের ভেতরটাই। কিন্তু ওর যুক্তিই মেনে নিয়ে ওকে আর আপন করার জেদ করিনি আমি। আমাদের সমাজের তৈরি করা এই মিথ্যে দেওয়ালের দুদিকে চলে গেলাম আমরা দুজনে। বিয়ের পর ও কলকাতা ছেড়ে একেবারেই চলে গেল। ওর সঙ্গে আমার কোনও যোগাযোগ থাকল না। আমি জানতেও পারলাম না ও আমার অংশকে পেয়েছে কিনা। জানবার চেষ্টাও করিনি আর, তাতে কারও ভালো হত না। ওকে যে আমি দুঃখ দিতে চাইনি, ওকে নিয়ে আমিও দুঃখ পেতে চাইনি। তাই জ্যোৎস্নায় স্নান করা যামিনীকে মনে করে আমি আনন্দ পাই, সত্যিই আনন্দ পাই।
ছবি – লেখক
লেখকের কথা: রুবাই শুভজিৎ ঘোষ
লেখকের জন্ম পশ্চিমবাংলায়। পেশায় একটি বহুজাতিক সংস্থার তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। নেশায় লেখক এবং পরিচালক। বাঙালির জনপ্রিয় ওয়েবসাইট সববাংলায় এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। কবিতা থেকে শুরু করে গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, চিত্রনাট্য সবকিছুই লিখতে ভালবাসেন। লিটিল ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক বিভিন্ন ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখেছেন। স্রোত থেকে প্রকাশিত তাঁর কবিতার সংকলন দৃষ্টি এবং বালিঘড়ি। এছাড়া তথ্যচিত্র, শর্ট ফিল্ম বা অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ভিডিও পরিচালনা করেন। ধর্ম এবং বিজ্ঞান তাঁর প্রিয় বিষয়। ভ্রমণ তাঁর অন্যতম শখ। অন্যান্য শখের মধ্যে রয়েছে স্কেচ, ফটোগ্রাফি, ছবি ডিজাইন করা।
মন ছুঁয়ে গেল
ভালোবাসার জন্যে বোধহয় সবটা করা যায়। আমার লেখকের কাছে একটাই প্রশ্ন ভালোবাসাই যদি ছিল তাহলে লড়াই করবার মতো মনবল কেন রইল না???
প্ৰথমেই ধন্যবাদ জানাই সময় নিয়ে গল্পটি পড়বার জন্য। এই গল্পটির মধ্যে আমি সমাজের একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে চেয়েছি। সব ভালোবাসাই পরিণতি পায় না। আমার উদ্দেশ্য শুধুই ভালবাসার জয়জয়কার করা হয়, কিছু হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা, তা যে কারণেই হোক, তাদেরকেও নিয়ে লেখা।