খুশির সীমা

লেখক : রামকৃষ্ণ জানা

হাওড়া স্টেশন এ গত কাল গেছি মেদিনীপুর যাব বলে, কত নাম্বার প্ল্যাটফর্ম এ দেবে সেটা জানার জন্য বড় স্কিন এর সামনে দাঁড়িয়ে আছি, এমনি তেই হাওড়া স্টেশন-এ ভিড় থাকে তার ওপর এখন পুজোর জন্য চাপ অনেক বেশি, পা রাখার জায়গা নেই , চারিদিকে বড্ডো ব্যস্ততা সাথে গভীর হট্টগোল,  এর সাথে তো আছেই কুলিদের বড় বড় সব কাঠের গাড়ি, যার কোন ব্রেক ই নেই এখানে ওখানে গুঁতো দিয়ে চলে যায়। সে যাই হোক আসল কথায় আসি, আমি সময়ের বেশ কিছু আগেই চলে গেছি টিকিট কেটে, আর ট্রেনটা ঢুকতে লেট করেছে বলে তখনো প্ল্যাটফর্ম টা কনফার্ম হয়নি কারণ ট্রেন ঢোকেনি তখনো অগত্যা দাঁড়িয়ে আছি এদিক ওদিক দেখছি লোকজনের ব্যস্ততা। কিছুক্ষন পরে আমার সামনে এক ভদ্রলোক আর সাথে একজন বাচ্ছা এসে দাঁড়ালেন। এদিক ওদিক তাকিয়ে যেন কাউকে খুঁজছেন মনে হলো,  কিছুক্ষন পরে একটা ফোন এলো উনার মোবাইলে যদিও সেটা কি প্যাড মোবাইল ছিল,  সাথে সাথে উনি ফোন টা রিসিভ করে ই বলছেন আমি পাস থেকে লক্ষ্য করছিলাম ওনাকে,  ফোনটা ধরেই উনি বললেন আমি স্টেশন এ নেমে গেছি, ওই যে ট্রেনের সামনে যেখানে নামলাম ওখানে একটা দোকান আছে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছি,  আরো বলেন তুমি চলে এসো এখানে, তখন বুঝলাম উনি নতুন এসেছেন আর এমন করে কোন দিন এই ভিড়ে কেউ খুঁজে ই পাবে না উনাকে, আমি তাই পাস থেকে অযাচিত ভাবে বলে দিলাম বলুন বারো নাম্বার প্ল্যাটফর্ম এর সামনে দাঁড়িয়ে আছি  না হলে উনি খুঁজে পাবেন না। আর উনি ফোন এ সেটাই বললেন আর ফোন টা রেখে দিলেন, ওনার পিঠে একটা ব্যাগ, হাতে একটা ব্যাগ বাচ্ছা ছেলে টার পিঠে একটা ব্যাগ ছিল। ফোন এ কথা  শেষ হতেই জিজ্ঞাসা করলাম কোথায় যাবেন? উনি বললেন কলকাতা আমার সালা নিতে আসছে। আগে কোন দিন আসিনি এই প্রথম ছেলে কে নিয়ে ঠাকুর দেখতে  এসেছি, বলেই একগাল নির্মল হাসি  দিলেন। আর বললেন শালা একটা হোটেলে কাজ করে খুব করে ডেকেছিল, ঘরে ওর মা আছে ওকে আনলে আমার বৃদ্ধ মা অসুস্থ তাকে দেখার কেউ থাকবে না তাই ছেলে কে নিয়েই চলে এলাম। সব শুনে আমার মন টা আনন্দে ভরে গেল, কেউ আনন্দে প্রথম বার কলকাতায় পুজো দেখবে। আসলে সবার সব সময় সব কিছু সাধ্য বা কপালে থাকে না, হয়তো উনার স্ত্রী অনেক টা মন খারাপ করবেন কিন্তু ছেলের কলকাতা তে পুজো দেখায় তাঁর ও মন টা ভরে উঠবে হয়তো। ওনাদের পুজো টা সুখেই কাটুক এই প্রার্থনা করি মা দুর্গার চরণে, আরো কিছু কথা হয়তো হতো কিন্তু আমার ট্রেন এর ঘোষণা হয়ে গেল ভিড় হবে তাই আমাকে যেতে হলো।


লেখক পরিচিতি : রামকৃষ্ণ জানা
বাংলা ভালো লাগে আর জীবন জুড়ে জীবনানন্দ প্রেম বাস্তবতার উপকাহিনী রঙিন ধূসর জীবন ।

One comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

রুচিশীল ও বিষয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য ক্লিক করুন এখানে

sobbanglay forum