লেখক : সিদ্ধার্থ দাশগুপ্ত
১
স্ট্রেচার নামছে কাঠের সিঁড়ি দিয়ে। ছোকরা ছেলেটা গজগজ করছে।
“বয়স্ক মানুষ রে, কেলো না করে দেয়। স্ট্রেচার তখন আবার ধোও রে, ডেটল ঢালো রে। মনে আছে সেই লিচুবাগানের বুড়োটা?”
আরেকজন হাসছিল। বলল, “তুই পুলিশের চাকরি নিয়ে নে। এসব মেথরদের কাজ তোর মত রাজার ব্যাটাদের মানায়? লম্বা আছিস। ডাঁটসে দাঁড়াবি ক্রসিংয়ে আর ফাইন নিবি। খিস্তি করবি, তুইতোকারি করবি সব ড্রাইভারদের, বাবুদের…”
কার্যত অবশ্য সে সব কিছুই হল না। যে বয়স্ক বৃদ্ধাকে নামানো হল, তিনি আধো অচেতন ছিলেন বটে, কিন্তু কাপড়জামা স্ট্রেচার পরিষ্কারই থাকল। লালবাজারের এই পুরনো আমলের বাড়ির কাঠের সিঁড়ি দিয়ে নামানো হল যখন তাঁকে, একবারই শুধু তিনি একটু চঞ্চল হলেন। একতলায় সারিসারি লেটারবক্সগুলো পেরনোর সময় তিনি সচকিত হয়ে আঙ্গুল তুলে দেখালেন।
একটি মাঝবয়েসী লোক পেছনেই নামছিলেন। তিনি বললেন, “কী বলছ পিসী? সব ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তা একদম…”
“চিঠি… চিঠি…”
“কী?”
“কাগজের কোন… ছোট্ট…”
২
অ্যাম্বুলেন্স চলছে সাইরেন বাজিয়ে। তিনি ছুটছেন রাস্তা দিয়ে। আজকের নয়, কুড়ির মণিদীপা। দু’ বিনুনি। বুকে বইখাতা। শৈল স্যারের টিউশন সেরে ফিরছে।
“মণি, অ্যাই মণি, দাঁড়া… মণি…”
মণি দাঁড়ায়? আগেরদিন থামিয়ে কোথায় নিয়ে গেছিল তাকে শৈবালদা? এখনো ভয়ে বুক কাঁপছে মণির। সিঁড়ির অন্ধকারে লেটারবক্সগুলোর সামনে যখন শৈবালদা তাকে সাপটে ধরে, বিভাজিকায় মুখ ঘষে, বৃন্তে ছোট ছোট কামড় দেয়, তখন একরকম ভয় লাগে। আর এই ভয় অন্যরকম, একদম আলাদা।
“মণি পড়ে যাবি। অমন করিস না। ঠিক আছে। আর যেতে হবে না, দম বোঝা গেছে।”
কী পাজির ধাড়ি। হা হা করে হাসছে। পালাতে পালাতেও মণি শুনল শয়তানটা আবার বলছেও, “সবুজ পাতা।”
ছাই সবুজ পাতা। লেটার বক্সে যেদিন সবুজ পাতা থাকবে, সেদিন নাকি থিওরি ক্লাস! কচুর থিওরি। ঢাল নেই, তরোয়াল নেই, কাস্তে-কোদাল হাতে সব আসবে নাকি? আর ঘিরে নেবে কলকাতা শহর? ওসব চীনে হয়। এদেশে হয় নাকি?
ছোকরা খিক খিক করে হাসছে। ড্রাইভার মুখ ঘুরিয়ে তাকাল।
“বুড়িটা হাসছে দেখ খোকনদা। ভগবান এসেছে মনে হয়। এ সময়ে আসে তো।”
মণি তখন ভোরবেলা লেটারবক্স খুলেছে। সবুজ বটের পাতা। থিওরি ক্লাসে না যাই, পাতাটার গায়ে শৈবালদার ছোঁয়া আছে তো। মুখে চোখে তাই ছোঁয়াল কিশোরী মণি। গুপ্ত সুখ। বলে বোঝানো যায়?
৩
বৃদ্ধা এখন অসাড়। অ্যাম্বুলেন্সে আসতে আসতে মনে হয় আরেকটা স্ট্রোক হয়ে গেছে। মুখ দিয়ে দুধের মত ফেনা তুলছেন। ভাইপো হাতে পায়ে ধরে এক একজন ডাক্তার ডেকে আনছেন। ডাক্তার দেখছেন, আবার চলেও যাচ্ছেন। অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে অবশ্য। বেড নেই, ইমারজেন্সির স্ট্রেচারে শোয়ানো আছেন মণিদীপা। সরকারী কলেজে পড়িয়েছেন। সংসারী হননি, সঞ্চয় করেননি। উপরন্তু টাকা জলের মত ব্যয় করেছেন নানা কাজে। নার্সিংহোম কি প্রাইভেটে যেতে ইতস্তত করছেন ভাইপো।
কোণে একজন ভদ্রলোক লাফিয়ে উঠলেন। এম ডি না? আরে সর্বনাশ! এম ডিই তো। মিনিটপাঁচেকের মধ্যেই কলেজ প্রাক্তনীদের গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ল মেসেজ। এম ডি ক্রিটিকালি ইল। বেড মিলছে না। কাছেপিঠের পাঁচ-ছ’জন বেরিয়ে পড়ল অফিস থেকে। একজন হেভিওয়েট প্রাক্তনী হুইলচেয়ারে আটক বলে বেরোতে পারলেন না, কিন্তু ফোন লাগালেন ঠিক ঠিক সব জায়গায়। এম ডির জলবৎ তরলং পড়ানো তাঁর নিজের আত্মজীবনীর একটি অংশ।
বেড পাওয়া গেল। ঘরঘর আওয়াজ তুলতে তুলতে স্টাফেরা স্ট্রেচার নিয়ে চলল হাসপাতালের ভিতর রাস্তা দিয়ে। ভাইপো ভাবলেন এই ঝাঁকুনিতে না পিসীর আরেকটা স্ট্রোক হয়। প্রাক্তনী ভদ্রলোক মনিদীপার মাথার তলায় হাত পেতে পাশে পাশে চললেন। লোহার উদোম স্ট্রেচার। মাথা ঠুকে যাবার ভয় আছেই।
মণিও আওয়াজ শুনছে। তবে চেঁচানির। বাবার মোটা গলা, মায়ের মিহি গলা। চেঁচাক, যত পারে চেঁচাক। সে কানে তুলো গুঁজেছে। সে বিয়ে করবে না কিছুতেই। আর ওই চর্বির পিপেটাকে? বাবার ব্যবসায় কে টাকা ঢালে, সে তার লক্ষ্মীশ্রী দেখে টাকা ঢালে? তার বাড়ির ওই চর্বির পিপেকে গলায় ঝোলাতে হবে? সে এই লালবাজারের কাঠের সিঁড়িতে সারা জীবন আইবুড়ো থাকার পর ভূত হয়ে ঘুরে বেড়াবে, তবু সে একজনকে ছাড়া…
সবুজ পাতার নির্দেশ এলেও মণি মিটিংয়ে গেল না নানা ভয়ের জন্য। কিন্তু শৈবালদার সাথে তো দেখা করাই যায়। তিনটে বাড়ি পরেই তো থাকে। রাতের অন্ধকারে লোহার সিঁড়ি বেয়ে পুরনো বাড়ির ছাতে দুজনে। আবার কোণে টেনে নিয়ে গেছে বদমাইশটা। হাত, ঠোঁট সবই চলছে। তবু তারই মধ্যে…
“আমায় ছেড়ে যাবি না বল, কখনও যাবি না?”
“তুমি এই খুনোখুনির দল কবে ছাড়বে? তুমিই তো আমায় ছেড়ে চললে…”
“এটা খুনোখুনি? এটা সমাজ গড়া। নতুন ভারত, নতুন সমাজ গড়া। থিওরিটিকাল ক্লাসগুলোয় অন্তত আয়। নইলে বুঝবি কী করে?”
“ওই ব্রেনওয়াশের মধ্যে আমি নেই। ওই চশমাপরা রোগা লোকটা…”
“চুপ চুপ। উনি কে জানিস?”
শরীর এলিয়ে দিয়েছে বাড়ি ফিরে। মা তো মা’ই। ঠিক বুঝে যায়। “প্রেসিডেন্সিতে পড়ে না? গায়ত্রীদির ছেলে তো!”
আর লুকিয়ে কাঁহাতক রাখা যায়। বাকি কথাও বেরিয়ে পড়ে।
“কী সর্বনাশ। পার্টি তো ভেঙ্গে গেছে। শুনেছি ওরা নর্থ বেঙ্গলের গণ্ডগোলটাকে ইস্যু করে এগোচ্ছে।”
“কী হবে মা?” ভ্যা করে কেঁদে ফেলে মণি। মা অসহায় ভাবে গায়ে হাত বোলায় অন্ধকারে।
“তা তোকে যখন চায়, তোর তো জোর আছে, বোঝা তুই।”
বোঝাবে কী? নিজের মনই তো দোলাচলে তখন। ব্যাগে লুকনো বই, প্যামফ্লেট, ম্যাপ।
“মা! ও মা। কী করব মা?”
“মা? ও মা। মা?”
জুনিয়র ডাক্তারটির মুহুর্মুহু ডাকেও নিঃসাড় হয়ে রইলেন মণিদীপা। তার সিনিয়র বললেন, “ছেড়ে দাও। ভাইটালস আর ফলিং।”
স্ট্রেচার ছুটছে ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটের দিকে। ততক্ষণে মণিদীপার কলেজের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের একটা দল চলে এসেছে। অনেকেরই চোখে জল। ওই ধারালো মস্তিষ্ক, ওই প্রাঞ্জল করে বোঝানো অর্গ্যানিক কেমিস্ট্রি, ওই প্রাণখোলা হাসি। পরপর দুটো স্ট্রোক, কী হবে এবারে?
লিফট উঠছে। তিনতলায় সি সি ইউ। মণিও উঠছে সিঁড়ি দিয়ে, আণ্ডার কন্সট্রাকশন বিল্ডিং। আজকে মণি এসেছে কৌতূহলে। হাতে তুলে নিয়েছে এই প্রথম।
দম… দন… দন…। হাত কাঁপছে না আর।
“তুই তো ন্যাচারাল রে! আমার চেয়ে শতগুণে বেটার।” পিস্তল সরিয়ে রেখে আবার শয়তানির ছক করছে। মণি পিছলে বেরিয়ে যেতে যেতে শুনল, হাসতে হাসতে বলছে, “কথা দিয়েছিস। কাল মিটিং…”
আবার সবুজ পাতা লেটারবক্সে। এবার মণি যাবে। ক’দিন খুব মুক্তাঞ্চলের থিওরি শুনছে শৈবালদার মুখে। মিটিংয়ে ব্যাপারটা বোঝা দরকার। কোন কিছু জলের মত না বুঝলে মণির চলে না আবার। ওই চশমাপরা ডিগডিগে লোকটাই কি বোঝাবে? লোকটার চোখদুটো কেমন ধকধক করে। তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে কিন্তু।
কলকাতা মুক্তাঞ্চল হবে?
৪
এন্টালিতে পুলিশের ভ্যানে বোমা…যদুবাবুর বাজার ক্রসিংয়ে কনস্টেবল হরিদাস পাত্র খুন…
শৈবালদা ফেরার। বাড়ি তছনছ করে গেল পুলিশ। মা একদিন খোঁজ নিতে গেল, মা’কে অপমান করে তাড়িয়ে দিল ওরা। সে নাকি খারাপ মেয়ে, ট্যাঙ্কের ধারে টেনে নিয়ে যায়। শৈবালদের খুব উঁচু বংশ, তাদের যোগ্য হতে হয়, ইত্যাদি। মণির খুব মন খারাপ, তার থেকেও বেশি হল ভয়। বুড়ো বামপন্থীরা সাধু সেজেছে। পুলিশ আর গুণ্ডারা নেমে পড়েছে ময়দানে। নকশাল তো বটেই, লাল পার্টি দেখলেই মারো।
দুপুর বারোটা, ডক্টরস মিট। কেউ আশা দিচ্ছেন না। বায়োপ্যাপ কাজ দিচ্ছে না, ভেন্টিলেশন চালু করা হয়েছে। একটু জ্ঞান এসেছিল।
“উনি কি বটানি পড়াতেন”
“না তো। কেমিস্ট্রি।”
“গাছের পাতা… সবুজ পাতা… লেটারবক্স, এইসব ঘোরের মধ্যে…”
ডক্টরস মিটের পর প্রাক্তনীরা আপডেট দিলেন। “আওয়ার এম ডি ইজ ইন কোমা। ডক্টরস ওয়েটিং ফর মিরাকল। লেট আস প্রে ফর ইট।” সাথে ছবি। চির হাস্যময়ী মণিদীপা দত্ত। হাতে প্লাস্টিকের থ্রি ডি কার্বন অ্যাটমের মডেল। সবার মাথায় যতক্ষণ না ঢুকছে, ততক্ষণ কিছুতেই পরের চ্যাপ্টারে যাবেন না। হেভিওয়েট প্রাক্তনী ছলছল চোখে দেখছেন। তাঁর বহুলপঠিত আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, মণিদীপা ম্যাম ছিলেন ক্ষয়িষ্ণু শিক্ষাব্যবস্থার উপর তীব্র কশাঘাত। ক্লাসের সবাই পড়া বুঝবে, তিনি পরীক্ষা নেবেন, তারপর নেক্সট সাবজেক্ট ধরবেন। গোটা কলেজের কেমিস্ট্রি মুখস্থ করার অভ্যেস ছুটিয়ে দিয়েছিলেন। শি ওয়াজ বিয়ন্ড টাইম, ওয়ে অ্যাহেড। আমি তাঁর কাছে শিখেছি নিষ্ঠা, সততা, ভালবাসা।
মণিদীপা পড়েছিলেন আর হাসতে হাসতে বলেছিলেন, “বাব্বা! তুই ক্লাসে কি বদমাইশি করতিস। তুই এত গভীর ভাবে সবকিছু ভাবতিস, মনেই হত না। আর এইসব সততা, নিষ্ঠা আর আর…”
“… ভালবাসা।” বাড়ি ফিরে মণিদীপা লেখাটা অনেক বার পড়েছিলেন। ভেবেছিলেন ছেলেটা ভালবাসা বলতে কি মমতা বুঝিয়েছে? স্নেহ, মায়া বলতে চেয়েছে? মণি কি ভালবাসে? এই সত্তরের আশেপাশের মণিদীপা রাস্তায় বেরোলে দুটো কুকুর, তিনটে বেড়াল, দুটো ভিখারি, একটা পাগল পিছু নেবেই। জানে বকুনির সাথে কিছু না কিছু জুটবেই। সেই কি ভালবাসা? নিজের ভিতর কিছু অন্য মানুষদের নিয়ে নেওয়া। তারপর একটু একটু করে তাদেরকে বাড়তে দেওয়া?
লোকটা ফেরার। তবু মাঝে মাঝে বটপাতা কে ফেলে যায়। হয়ত বলে গেছে দলের কোন ছেলেকে। মণি আর যায় না। সে মা’কে কথা দিয়েছে আর মিটিংয়ে যাবে না। তার রোগা ভোগা মা, লোভী ব্যবসায়ী বাবার অত্যাচারে অনাচারে চুপসে থাকা মা। তার কিছু হলে মা তিনতলা থেকে ঝাঁপ মারবে। ভাইবোন নেই আর, মায়ের তো সেইই একমাত্র অবলম্বন। তবু মণি ভোরবেলা একতলায় নেমে লেটারবক্স দেখে, বটপাতার ঘ্রাণ নেয়। আর একদিন তা করতে গিয়েই পেয়ে যায় ছোট্ট চিঠিটা। কাগজের ছেঁড়া টুকরো। সেই গোটা গোটা অক্ষরে লেখা, “ক্রিশ্চান বেরিয়াল, পাঁচটা।”
বুকে অসহ্য দুপদুপানি, আর কী যে ভয়। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, বারংবার বাথরুম যেতে হচ্ছে। ভয় কি শুধু পুলিশের? নেকড়েরা ঘুরে বেড়াচ্ছে যে। এই তো পরশু এপিস্কপাল চার্চের সামনে নাড়িভুঁড়ি বার হয়ে একটা ছেলে পড়ে ছিল। ওই অবস্থায় নাকি সে হেসেছে, জল চেয়ে খেয়েছে।
ওকেও যদি ঘিরে নেয়? নেকড়েরা?
৫
কলেজে বেরনো বারণ, এমন চারপাশের খুনোখুনি। মণি টুক করে কেটে পড়ল মা’কে লুকিয়ে। পাঁচটা বাজতে পাঁচ। একটা কবরে চাবর চাবর মাটি ফেলা চলছিল। সে দল থেকেই একজন ছিটকে বেরিয়ে এসে হাত ধরেছে। দূরে সরে এসেছে অন্য কবরের আড়ালে। মণি ভয়ে কেঁদে ফেলেছে।
“তোমার বাবার পয়সা আছে। আমেরিকা যাও, জার্মানি যাও, পালাও…”
ভয় পায় না। শুধু হাসে। “আরেকটু দেখে নিই। আর ক’টা কাজ…”
“নিকুচি করেছে তোমার কাজের…”
সন্ধ্যে ঝুপ করে নেমে আসে শেষ নভেম্বরের। তখনো মাথা ঠোকাঠুকি চলছে। কোন বিকার নেই। লোকটা পাল্টে গেছে। কাছে টানা নেই। অসহিষ্ণু আদর নেই। চোখে কী যেন জ্বলছে। সেই রোগা ডিগডিগে চশমাপরা নেতার মত। আর কিছু করার নেই মণি বুঝল। মণি ফিরবে, ঠিক এমন সময়…
শৈবালদা দৌড় দিল। ওরা ঘিরে ফেলেছে। গুলির আওয়াজ। মণি পাথর। শৈবালদা পাঁচিলের কাছে এসে গেছে। মণি দৌড় শুরু করল। পাঁচিলে উঠে পড়েছে একটা পুলিশ। মণি ঝাঁপিয়ে পড়ল। এক হ্যাঁচকায় পুলিশটাকে মাটিতে পেড়ে ফেলেছে। শৈবালদা না বলত, “তোর গায়ে প্রায় আমার সমান জোর। কী খাস মণি?”
পরের পুলিশটা পাঁচিলের গায়ে উঠছে। মণি আবার ঝাঁপাল।
“মণি ই ই ই…” বাবা যে। সর্বনাশ। চিঠিটা টেবিলে ফেলে এসেছিল। “মণি ইইই…”
তিনজন ঘিরে নিয়েছে তাকে। না। মণি মরতে দেবে না শৈবালদাকে। প্রাণ থাকতে না। দুটো কনস্টেবলকে গায়ের জোরে শুইয়ে ফেলেছে মাটিতে। তিন নম্বর বন্দুকের কুঁদো চালালো। এতক্ষণে অন্ধকার নেমে এল মণিদীপার। শেষ কথাটা কি বলেছিল শৈবালদা? পালানোর আগে?
“তৈরি থাকিস! নিয়ে যাব। চিঠি পাবি। লেটারবক্স…”
দলটা গান গাইতে গাইতে চলেছে শ্মশানে । মণিদীপা রবিঠাকুরে ডুবে থাকতেন। রসায়ন আর রবি তাঁর জীবন ছিল। লক আপে সীমাহীন অত্যাচার তাঁর জীবনের কোন ভালবাসা কেড়ে নিতে পারেনি। আর তাঁর জীবনে ছিল এক অন্তহীন অপেক্ষা। শৈবাল আসেনি। ধরা পড়েছিল কি না জানা নেই। আর কোন চিঠিও আসেনি। শুধু সেই অপেক্ষার সাক্ষী হয়ে ভাঙা শ্রীহীন লেটারবক্সটা দাঁড়িয়ে রয়েছে কাঠের সিঁড়িটার পাশে।
ওই যে।
লেখক পরিচিতি : সিদ্ধার্থ দাশগুপ্ত
মূলত ঐতিহাসিক গল্প বা উপন্যাস লিখি। ২০১৮ থেকে। মলাট, চর্যা, কল্পবিশ্ব তে প্রকাশিত হয়েছে।