লেখক : অর্পিতা
সন্ধ্যা পার করে ফুটপাতে দাঁড়িয়েছিল তিয়াসা। অগোছালোভাবে ঝুরো চুলগুলো ওর কপালে এসে পড়ছিল, ল্যাম্পপোস্টের হলদেটে আলো তিয়াসাকে আলোকস্নাতা করে তুলছিল।
দেবাঞ্জনের কোনও মেসেজ এল না আজও! ফেসবুকীয় আলাপগুলো সচারাচর তিয়াসা এড়িয়ে চলে। কিন্তু কিছু মুহূর্তে যোগাযোগগুলো হয়ে ওঠে, আর একটা মোহ জড়িয়ে পড়ে সবটুকু ঘিরে। আলাপ, টুকরো কথা, ছেঁড়া স্মৃতির আদান প্রদান – এমনই চলছিল। তারপর হঠাৎ একদিন অফলাইন। ফোন নম্বরও তো নেওয়া হয়নি।
তিয়াসার চোখ জ্বালা করতে থাকে।
বাবান দ্রুত পা চালায় লাইব্রেরির মাঠের দিকে। মোড়ের মাথায় বাঁশ বাঁধা প্রায় শেষের দিকে, দুর্গাপুজোর বেশি দিন বাকী নেই। তিয়াসার কী যে হয়েছে, ভাল করে কথাও বলে না আজকাল। কলেজে ওঠার পর থেকে অনেক বদলে গেছে তিয়াসা। ফ্রক পরা দুই বেণীর তিয়াসা আজকাল কেমন যেন রহস্যময়ী হয়ে উঠেছে। ছোটবেলার বন্ধু তিয়াসার জন্য একটি নদী কিনবে ভেবেছে বাবান!
কড়িকাঠের দিকে তাকিয়ে শুয়েছিল দেবাঞ্জন। মেয়েটা নিশ্চয়ই খুব রাগ করছে, অভিমান করছে ওর উপর। করুক, তবুও ও আর মেয়েটাকে মেসেজ করবে না। বিয়াল্লিশ বছরের জীবন একাই কেটে গেল, বাকী জীবনটাও এমনই কাটবে। একটা ছদ্মপরিচয়ে মজার ছলেই কথা বলেছিল তিয়াসার সঙ্গে, বুঝতে দেয়নি সে কলেজ পড়ুয়া নয়। অবশ্য মেয়েটির সঙ্গে কথা বলতে বলতে দেবাঞ্জন যেন সত্যিই কলেজে পড়া ছেলেটা হয়ে উঠেছিল! এই মিথ্যা জালের সংসারে আর খেলতে চায় না সে। তাই সে মিথ্যে পরিচয় থেকে ছুটি নিয়েছে।
“তিয়াসা…।”
তিয়াসা কান্নাটুকু চাপে, “কী হ’ল, তুই এখানে!”
“কেন, আসতে নেই?”
তিয়াসার চিবুক ধরে মুখটা তোলে বাবান, “তুই কাঁদছিস! চল বাড়ি চল।”
অনেকক্ষণ ধরে আটকে রাখা জলটুকু তিয়াসার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে, “আমি রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি বাবান!”
বাবান মুঠো শক্ত করে, ইচ্ছে করে তিয়াসার হাতটা ধরে ফেলতে। কিন্তু আজ যেন তিয়াসা তার ছোটবেলার বন্ধু নয়, ও নদী হয়ে উঠেছে!
লেখক পরিচিতি : অর্পিতা
পরিচয়হীনতাই আমার পরিচয়।
খুব সাধারণ কথায় মনের আবেগ কে ফোটানো হয়েছে । ভালো লাগলো ছবিটা
ধন্যবাদ অর্ণববাবু
Khub sundor. Concise & Compact. Agami te aro porar asha roilo.
Khub sundor hoyeche ❤️ ছোট্ট সংলাপে হাজার বক্তব্য ❤️❤️❤️