লেখক : সুমন বিপ্লব
তখন ছিল সকাল দশটা। কাজল আহমেদ তার ভাইজী রোদেলা রহমানকে পড়াচ্ছে। সে মনোযোগ দিয়ে পড়ছে না। কাজল তাকে বলল, “শোন আম্মু, সব ছাত্র ইচ্ছে করলে সেরা ছাত্র হতে পারে।”
“কী ভাবে?”
“সেই ঘটনা আমি এবার তোমাকে বলব।”
“তোমাকে কে বলেছিল?”
“আমার বাবা। আমি তখন হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছি। পড়ার প্রতি অবহেলা ছিল তোমারই মত। একদিন তোমার দাদা এসে বললেন, ‘শোন, আমি তখন হাইস্কুলে পড়তাম। আমাদের সাথে একটা ছেলে পড়ত, সে কোনদিন পড়ে আসত না। প্রতিদিন স্যারের কাছে অপমানিত হত, কিন্তু সেটা তার গায়ে লাগত না। আমরা তাকে নিয়ে তামাশা করতাম, কিন্তু তার কোন অনুশোচনা হত না। একদিন প্রধান শিক্ষক বললেন তাকে, ‘তুমি তোমার সব বই নিয়ে এদিকে এস।’ ছাত্রটা আসার সাথে বললেন, ‘এই বেঞ্চের উপরে উঠে দাঁড়াও। এক হাতে বই নাও, অন্য হাত দিয়ে কান ধর। আমার সাথে বল, আমি যদি পড়া করে আসতে পারি, তাহলে বিদ্যালয়ে আসব। আর যদি না পারি, তাহলে আর কোনদিন বিদ্যালয়ে আসব না। এখন তুমি বাড়ি যাও।’
ছেলেটা কয়েকদিন আর বিদ্যালয়ে এল না। বাড়িতেও তাকে পাওয়া গেল না। আমরা ধারণা করলাম, সে হয়ত অপমান সহ্য করতে না পেরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে। প্রায় পনের দিন পর আবার একদিন সে বিদ্যালয়ে এল, এবং সব স্যারের পড়া ঠিক মত পারতে থাকল। আমরা সবাই অবাক হয়ে গেলাম। এটা কী করে সম্ভব হচ্ছে? আমরা কোন কিছু বুঝতে পারলাম না। একসময় প্রধান শিক্ষক শ্রেণিতে এলেন এবং বললেন, ‘তুমি আবার কেন এসেছ?’
সে বলল, ‘আজ সব শিক্ষকের পড়া পারছি।’
‘বল কি? সব বই নিয়ে এদিকে এস তো।’
সে সব বই নিয়ে স্যারের কাছে গেল। তিনি সব পড়া ধরলেন। সে সব উত্তর দিল। স্যার বললেন, ‘তোমার পরিবর্তনের রহস্য কি আমাদের বল।’
‘আমি বিদ্যালয় থেকে বাড়ি যাই। তারপর খুব ভাবতে থাকি। হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি এল। আমাদের ঘরের পিছনে একটি গর্ত করলাম। সেখানে সব বই নিয়ে প্রবেশ করলাম। মা কে বললাম, আমি ওখানে বসেই পড়ব। যদি পড়া শিখতে পারি তাহলে এখান থেকে উঠব, নয়ত এখানেই মরব। কেউ এলে যেন বলে দেয় আমি বাড়িতে নেই। আমি মনোযোগ সহকারে পড়তে পড়তে সব বই শিখে ফেলি।’
স্যার তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। এরপর প্রত্যেক শ্রেণিতে সে প্রথম স্থান অধিকার করত। একসময় সে বিদ্যালয়ের সবার সেরা ছাত্র হয়ে যায়।’
তাই আম্মু তোমাকে বলছি, তুমি একটু মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা কর। তোমার স্বপ্ন, তোমার বাবার স্বপ্ন, তোমার মায়ের স্বপ্ন পূরণ কর।”
লেখক পরিচিতি : সুমন বিপ্লব
সুমন বিপ্লব, শাহ্পুর, ডুমুরিয়া, খুলনা।