লেখক: ইচ্ছেমৃত্যু
তখন কতই বা বয়স – চোদ্দো বা ষোল! কিশোরী কিশোরকে প্রশ্ন করল – ‘তুই ‘ন হন্যতে’ পড়েছিস?’
‘হ্যাঁ, পড়েছি; কেন?’
‘ওই জায়গাটা পড়েছিস… ওই যে ঠোঁটে দাগ?’
‘কোন জায়গাটা?’
‘বইটা বের কর… ৭১ নম্বর পাতা…’
কিশোরী নিজেই ছেলেটির বইয়ের আলমারী থেকে বইটি বের করে খুলে ধরে ৭১ নম্বর পাতা… তারপর আঙুল রেখে বলে এই জায়গাটা পড়…
“ “…ওদের নতুন বিয়ে হয়েছে, কিন্তু মুখে তো কোনো দাগ দেখতে পাই না।”
আমি তো অবাক – “বিয়ে হওয়া তো আর জলবসন্ত হওয়া নয়, মুখে দাগ হবে কেন?”
ও হাসছে। মুখ টিপে টিপে হাসছে – “আমাদের দেশে হয়। কি রকম দাগ হয়, তুমি দেখতে চাও?”
“হ্যাঁ-”
ও দু’হাত বাড়িয়ে আমায় ধরল। আমার মুখের উপর উষ্ণ চাপ অনুভব করলাম – তীক্ষ্ণ এবং মধুর – একটু পর ও আমায় ছেড়ে দিল, “আয়নায় দেখো -”
আমি উঠে দেওয়ালে টাঙান ওর আয়নাটায় মুখ দেখে চমকে উঠলাম।
নিচের ঠোঁটের ঠিক মাঝখানে গোল ছোট্ট কালো একটা দাগ – স্পষ্ট এবং উগ্র।…”
পড়া শেষ হলে স্বাভাবিক কৌতূহলবশত কিশোরটি বলে, ‘করে দেখা…’ ‘আমাদের হবে না। ওরা খুব ফরসা তো তাই…’
এর বেশ কিছু বছর পরের কথা। কিশোরীর – তখন যুবতী, বিয়ে হয়ে যায় কিশোরের পাশের বাড়ির এক দাদার সাথে। ফুলশয্যার পরের দিন – আত্মীয়-কুটুম্ব কিছু টুকটাক পড়ে আছে; সেই কিশোর যে এখন বেকার যুবক, দাদার বিয়ের আত্মীয়দের জলখাবারের আয়োজনে ব্যস্ত। ‘এই সৈকত, তোর বৌদিকে ডেকেও ব্রেকফাস্টটা করিয়ে দিস’।
সৈকত বৌদিকে ঘরের ভিতরে ডাকতে যায় – ‘বৌদি চল, খেয়ে নেবে। দাদার হুকুম…’
‘কিরে তুই আমাকে বৌদি বলবি নাকি!’
বৌদির মানে সেই কিশোর বেলার বান্ধবীর মুখের দিকে তাকায় সৈকত; চোখে পড়ে ‘নিচের ঠোঁটের ঠিক মাঝখানে গোল ছোট্ট কালো একটা দাগ – স্পষ্ট এবং উগ্র’… চোখ নামিয়ে নিয়ে সৈকত মৃদু গলায় বলে, ‘এখন তুই ওদের মত ফর্সা হয়ে গেছিস, না?’
লেখকের কথা: ইচ্ছেমৃত্যু
জন্ম বর্ধমানের বর্ধিষ্ণু গ্রামে। পেশায় নরম তারের কারিগর আর নেশায় – রীতিমত নেশাড়ু, কী যে নেই তাতে – টুকটাক পড়াশোনা, ইচ্ছে হলে লেখা – সে কবিতা, গল্প, রম্যরচনা, নিবন্ধ যা কিছু হতে পারে, ছবি তোলা, বাগান করা এবং ইত্যাদি। তবে সব পরিচয় এসে শেষ হয় সৃষ্টিতে – পাঠক যেভাবে চিনবেন চিনে নেবেন।