চুপ-শৈশব: সেফটিপিন

লেখক: স্বাগতা আচার্য্য

জামায় বোতাম থাক বা চেন, সেফটিপিন ছাড়া বড্ড বেমানান। অবিশ্যি একপা মোরাম মেখে বাটি ভত্তি মুড়ি গোগ্রাসে গিলে মুখে শেষ গ্রাসটুক নিয়েই ছুটতে হত যে ! খুবই কড়া নিয়ম ছিল সীতাহরণের! দলে ভাগ হবার আগে উপস্থিত হতেই হত। সেখানে মাকে ডেকে বোতাম আটকানো মানেই খেলার দল থেকে স্বেচ্ছাবসর সেদিনের মত। কারন তেনার কাছে ইস্কুলের ইতিহাস,পড়া দেবার, মার খাওয়ার ইতিহাস (এটা অবিশ্যি মুখ ফসকে কোনো পাগলেও বলত না☺☺) আওড়াতে হত। তাতেও শেষরক্ষা নেই ! এই গুরুমন্ত্র শুনতেই হত, ‘আজ তোর বাবা আসুক বাড়ি।’ উঁহু এখনও শেষ হয়নি ! তারপর আসতো সেই দুর্বাশার অভিশাপ, ‘আজ সন্ধেটা দিয়ে দিবি, আমার কাজ আছে !’ এর চেয়ে তো বনবাসে যাওয়া শান্তি ! তাই না বলুন !
তারচে মায়ের চোখ লেগে আসা ঘুম না ভাঙিয়ে বইদপ্তর গাছে টাঙিয়ে চুপিসারে রাহুর খিদে মিটিয়ে (হাতধোয়া মহাপাপ!) জামায় মহার্ঘ পিন আটকে নিলেই কেল্লাফতে ! সবচে বড় ব্যাপার হল জামা হতেই হত ঢলঢলে, আর অলংকারবর্জিত। তবে ফুলটুল থাকলে নিজেরাই সার্জারি করে বাদ দিয়ে দিতাম, মা উড়নচন্ডী বলে কয়েক ঘা চড়ালেও আমরাই ফুল ফল বিহীন সেফটিপিন লাগানো জামার সৌন্দর্য খুঁজে পেতাম (জাত শিল্পী তো তাই, মা কি আর কদর বুঝবে?)। সত্যিই। মাঠে বুড়ি ছুঁয়ে দিলে সব হারানোর যন্ত্রণা নিয়ে চুপ করে বসে থাকা বড্ড কষ্টের! পাশের ঝাউবনের দিকে চেয়ে থাকলে মনে হত এই মাঠ পেরলেই হয়তো সেই না দেখা সমুদ্র!! আসলে কারও কাছে সমুদ্রের গপ্প শুনে মনে গেঁথেই ছিল ঝাউবন পেরোলেই সমুদ্র। আমি হাঁটুতে মুখ গুঁজে ঠিক দেখতাম জলের হুটোপুটি,আর চুল বেয়ে আসা ঘাম ধুয়ে দিত সেফটিপিনের ক্লান্তি…!

সত্যিই, এখনো নিজেকে মেপে যথাযথ করে তুলতে পারলাম কই? সেই ঢলঢলে বেমানান সেফটিপিন-জীবন কাটিয়ে যাচ্ছি !!!


ছবি: প্রণবশ্রী হাজরা


লেখকের কথা: স্বাগতা আচার্য্য
নেশায় -আবোলতাবোল পাঠিকা। পেশায় -সেবিকা। নিবাস -পূর্ব মেদিনীপুর।
লেখকের ভাষায় – “যা ভাবি লেখা আসে তার সিকি; হইচই মার্কা মনন। এলোমেলো বুনন। গুণ খুব একটা নেই। কেউ লেখা চাইলে ধড়ফড় করে কেমন। ভুল ক্রুটি নিজগুনে ক্ষমা করে দেবেন। জানাবেন অকপটে। পরের বার শুধরে দেবার আশায় আছি।”

3 Comments

  1. পীযূষ কান্তি দাস

    আসলে আমাদের শৈশব ছিল রঙিন।আজকের মতো মুঠোফোনে বন্দী ছিলনা আমরা ছুটেছি, খেলেছি পুকুরে ঝাঁপিয়েছি আবার পড়াশুনা সেটাও করেছি।তবে ইঁদুর দৌড়ে সামিল হই নি কোন দিন।হারিয়ে যাওয়া সেই দিন গুলোর কথা ভাবি আর দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

লেখা আহ্বান - বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন