লেখক: রতন চক্রবর্তী
প্রণব মুখোপাধ্যায় মনেপ্রাণে বাঙালি ছিলেন, নেতা ছিলেন সমদর্শী সর্বভারতীয়। তবে সর্বত্যাগী সাধুনেতা তিনি নন। বরং নিজ স্বার্থ, দলীয় স্বার্থ, জোট রাজনীতির পর্বে জোটের বাস্তবতার স্বার্থে তিনি আপাদমস্তক নিমজ্জিত ছিলেন। কিন্তু এর কোনো স্বার্থের সঙ্গে দেশের স্বার্থের বিনিময় করেননি। জনতাকে সংগঠিত করে দেশের কাজে উদ্দীপ্ত করতে, আন্দোলনে প্রণোদিত করতে যিনি পারেন তিনিই নেতা। নেতা শব্দটির এই অর্থ কিন্তু রাজনীতিবিদ প্রণব বা অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিং বা রাজনীতির তত্ত্ব আওড়ানো প্রকাশ কারাত সহ সিংহভাগ “নেতা”র ক্ষেত্রে মানায় না। আসলে নেতা শব্দের এই ক্লাসিকাল সংজ্ঞা কালের নিয়মে নতুন বাস্তবতায় বদলে গিয়েছে বহু আগেই। এখন রাষ্ট্র, দল, সংগঠনের ক্ষমতা বৃত্তে পৌঁছে যাবার স্কিলকেই নেতৃত্বের প্রধান লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করাই বাস্তব সম্মত। যেহেতু জটিল উৎপাদন সম্পর্ক সংগঠন ও রাজনীতির উপরি কাঠামোর বিপুল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে তাই নেতৃত্বর মধ্যেও জব ডিভিশন বা স্পেশালাইজেশন জরুরি হয়ে পড়েছে। এক এক ধরনের কাজের জন্য এক এক ধরনের নেতা উঠে আসছে। এর ফলে কিছু নেপো যেমন দই মারার সুযোগ পাচ্ছে তেমনি অল্প কিছু সংখ্যক নানা জবে একই সংগে দক্ষ, বিজ্ঞ, সৃজনশীল আপন স্বার্থসহ বা নির্বিশেষ ব্যক্তি, দেশ ও দশের কাজে এগিয়ে আসার পরিসর পাচ্ছে। প্রণব মুখোপাধ্যায় এই গোত্রের নেতা, জননেতা নন—রাজনীতির কূটনীতিক বিদ্যায় পারদর্শী দক্ষতম হাতেগোনা দু-একজন নেতার মধ্যে অগ্রগণ্য। তিনি ভাষিক পরিচয়, জাত-বর্ণের পরিচয়, সংস্কৃতির আঞ্চলিক ঐতিহ্যগত পরিচয়, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক পরিচয় অক্ষুণ্ণ রেখেই ভারতীয়তার মতবহুত্বকে ধারণ করে তার প্রতি ভারতীয়দের মান্যতা আনার নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁর রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের আদর্শ কায়মনোবাক্যেই মেনেই রাষ্ট্রপতি পদে আরোহণের আগে পর্যন্ত। প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের শীর্ষভাগের প্রায় অবিভাজ্য অংশে দীর্ঘ অবস্থানে থেকেও তিনি পশ্চিমবঙ্গের জন্য কতটুকু করেছেন? এর জবাবে বলা যায়, তিনি তাঁর সমস্ত ব্যক্তিগত অবস্থানকে অক্ষুণ্ণ রেখেই গোটা দেশের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করতে চেয়েছেন সামগ্রিকভাবে। সবিশেষ দৃষ্টি দিয়ে নিজের রাজ্যকে এক্সট্রা বেনিফিট দিয়ে রাজ্যে জনপ্রিয় হতে চাননি। এখানেই তিনি সংবিধান-গ্রাহ্য নেতা। নানা প্রদেশ থেকে নির্বাচিত রেলমন্ত্রীদের চেয়ে এখানেই তিনি ভারতীয় হয়ে বিশিষ্ট বাঙালির মর্যাদায় ভূষিত হওয়ার যোগ্য নেতা।
রাজনীতির অঙ্গনে প্রণব মুখোপাধ্যায় শুধুই আরোহী হয়ে থাকতে পারেননি তাঁর গোটা রাজনৈতিক কালপর্বে। অবরোহের অভিজ্ঞতাও তার হয়েছিল। ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির নিধনের সংবাদ সরকারিভাবে ঘোষিত হওয়ার অনেক আগেই গোটা বিশ্বে একটা খবর চুঁইয়ে যায় যে, পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন ইন্দিরা মন্ত্রিসভার কার্যত দ্বিতীয় ব্যক্তি প্রণব মুখোপাধ্যায়। এমনকি প্রণববাবুর পূর্ণাঙ্গ পরিচয়ও প্রচারিত হয়। মন্ত্রিসভায় প্রণববাবু ইন্দিরাজির প্রিয়তম সহকর্মী হয়ে ওঠায় দলে তাঁর কিছু অসূয়াক্লিষ্ট বিরোধী চক্রও তৈরি হয়েছিল। দিল্লিতে কর্মরত তখনকার বিশিষ্ট কয়েকজন সাংবাদিক ব্যক্তিগত পর্যায়ে তখন বলেছিলেন, ওই খবর লিকের পিছনে প্রণব বিরোধী চক্রের হাত ছিল। একটি দূতাবাসের সহযোগিতায় তারা এটা করেছিল। পরে এরাই রাষ্ট্রপতি জৈল সিংকে বোঝায় যে কংগ্রেসে কেওস রুখতে রাজীব গান্ধিকে প্রধানমন্ত্রীর শপথবাক্য পাঠ করানো হোক। এই কারণেই ইন্দিরার মৃত্যুসংবাদ প্রচারে বিলম্ব করা হয়েছিল। কারণ রাজীব পশ্চিমবঙ্গে মেদিনীপুরে সভা করছিলেন। তাঁকে দিল্লিতে উড়িয়ে আনা হয়। দেশ তখন জ্বলছে। তখন কে-ই বা ভেবেছিল, সেই সঙ্গে প্রণববাবুর ভাগ্যেও আগুনের আঁচ লেগেছে। প্রণবের উচ্চাকাঙ্ক্ষার কল্পিত (?) এক বিবরণ রাজীবের কাছে ব্যাখ্যাত হয় তাঁর বিরোধীচক্রের দ্বারা। “রাজা কর্ণেন পশ্যতি” সূত্র ধরে প্রধানমন্ত্রী রাজীব প্রথম সুযোগেই প্রণবকে কোর্টের বাইরে ফেলে দেন নির্বাচনের পর। কেউ কেউ মনে করেন, রাজীবের পরবর্তী কালের বিখ্যাত উক্তি “ক্ষমতার অলিন্দের দালাল” এর উদ্দিষ্ট ব্যক্তি হলেন প্রণব। এর পরের ইতিহাস সকলের জানা। রাজীব যে ভুল করেছিলেন তাঁর আংশিক সমাধান রাজীব করেছেন দলে প্রণবকে এনে, মন্ত্রিত্ব দিয়ে। অনেক পরে রাজীব ঘরণী প্রণবের প্রতি আস্থা দেখালেও কোথাও একটা খিঁচ যেন ছিল। কোনো কোনো মহলের মতে, রাজীব পূর্ণত প্রণবকে আস্থার মধ্যে নেননি বলেই বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিল সোনিয়ার। অথচ তিনি তাঁর মেধা ও প্রজ্ঞায় বুঝেছিলেন, কংগ্রেসে প্রণব অপরিহার্য সম্পদ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি আকস্মিক ভাবে মনমোহনকে বেছে নেন। আহত হন প্রণব। যার ছায়া প্রণব স্পষ্ট করেন কিছু আচরণে, অবসরের কিছু আগে থেকে, অবসরের পরেও। এখানেই দেখা যায়, প্রণব মুখোপাধ্যায় অন্যদের মতোই দোষেগুণে মানুষ, যিনি উচ্চাকাঙ্ক্ষার সমাধিতে দাঁড়িয়ে হতাশ এবং কিছু পরিমাণ অসূয়াগ্রস্তও বোধহয়।
দেশে একদলীয় নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ভোগের দিন যে শেষ হয়ে আসছে সেটা সম্ভবত কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে প্রণববাবুই প্রথম অনুভব করতে পেরেছিলেন। তিনি নিজে সর্বপ্রথম সংসদীয় রাজনীতিতে আসেন কংগ্রেসে ভাঙনের ফলে সৃষ্ট বাংলা কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে ১৯৬৯ সালে। এই রাজ্যে একটানা কংগ্রেসের শাসনে প্রথম ছেদ পড়েছিল ১৯৬৭ সালে। যুক্ত ফ্রন্টের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন বাংলা কংগ্রেসের অজয় মুখার্জি। প্রণববাবু সেই দলেই ছিলেন প্রথম থেকে। পরে অবশ্য ওই দল কংগ্রেসে অবলুপ্ত হয় ১৯৭১ এ। ওই পর্বে পশ্চিমবঙ্গে প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি, সুব্রত মুখার্জি প্রমুখ তরুণ কংগ্রেস কর্মীরা কংগ্রেস পুনর্গঠনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন। কেন্দ্রে কংগ্রেসের ইন্দিরাগান্ধি মন্ত্রিসভায় খুবই গুরুত্ব পেতেন সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। তিনিই প্রণববাবুকে তরুণ নেতাদের কাছে মান্যতা এনে দেন। সেই হিসেবে ইন্দিরা নয়, সিদ্ধার্থের হাত ধরেই প্রণববাবুর কংগ্রেসে প্রতিষ্ঠার সূত্রপাত। রাজ্যসভার সদস্য তো আগেই হয়েছিলেন অজয় মুখার্জি, সুশীল ধারাদের আশীর্বাদ পেয়ে। এঁরাও কংগ্রেসের একদা মান্য নেতা ছিলেন। প্রণববাবুর বাবা কামদাকিঙ্করও ছিলেন কংগ্রেস ও পরে বাংলা কংগ্রেসের নেতা। প্রণব সম্ভবত গত শতকের ছয়ের দশকের শেষ ভাগ থেকে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় বুঝতে পেরেছিলেন দেশের রাজনীতি বাঁক ফেরাবার পর্বে ঢুকছে। একদলীয় ব্যবস্থার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত থাকবে না। তাঁর প্রথম রাজনৈতিক জীবনের এই সম্ভাব্য উপলব্ধিই তাঁকে অন্য দলের, বিশেষত কংগ্রেসের স্বাভাবিক মিত্র যারা হতে পারে বা সাধারণ কর্মসূচিগত ঐক্য যে দলগুলির সংগে সম্ভব, তাদের নেতাদের ব্যক্তিগত আস্থায় নিজেকে নিয়ে আসার প্রচেষ্টার দিকে নিয়ে গিয়েছিল। পরে দেখা যায়, তিনি হয়ে উঠছেন অন্যান্য দলের সঙ্গে যোগাযোগে কংগ্রেসের বিশ্বস্ত সেতু। এই দৌত্যকর্মের অভিজ্ঞতা তিনি অর্জন করেছিলেন বিদেশমন্ত্রী বা আই এম এফ, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রভৃতি নানা আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থার বোর্ড অব গভর্নরস হিসেবে।
রাজীব গান্ধি প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইন্দিরার মন্ত্রিসভা নিয়েই কাজ শুরু করেন। কিন্তু কয়েক মাস পর ভোটে কংগ্রেসের বিপুলতম সাফল্য দেখে তিনি নিজেকেই তার প্রধান কারিগর মনে করতে থাকেন। আসলে তো তা মোটেই সত্য নয়। কারণ তিনি তখন কংগ্রেসের সংগঠন বা দেশবাসীর চাহিদা ও আবেগের সংগে সবে পরিচিত হচ্ছিলেন। আসলে নিহত ইন্দিরা, জীবিত ইন্দিরার চেয়ে অনেক বেশি শক্তি নিয়ে লোকের মনে দেবীর আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। ‘৭১ এর ভারত- বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তানের যুদ্ধে বিজয়িনী ইন্দিরার লৌকিক দেবী ভাবমূর্তি মৃত্যুর পর তখন অলৌকিকতায় পরিণত। ভোটে তারই প্রতিফলন পড়েছিল। অথচ নতুন মন্ত্রিসভা করতে গিয়ে রাজীব কান ভারিতে বিভ্রান্ত হয়ে প্রণব মুখার্জির সুপ্ত আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিপক্ষ মনে করলেন। ইন্দিরার বিশ্বস্ততম অনুগামীকে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দিলেন না। ক্ষোভে প্রণব ভুল পথে পা বাড়ালেন। অর্থমন্ত্রী থাকার সুবাদে তিনি বিগ মনোপলির ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। পুঁজির শিরোমণিরা জানত, ইন্দিরার প্রধান সহযোগী তিনি। তারা প্রণববাবুকে আস্থার মধ্যে রেখেছিল। প্রণববাবুও আম্বানি সহ সেরা পুঁজিপতিদের সাধ্যমতো কনসেশন দিতেন। এটা বামপন্থীরা ভালোভাবে নেয়নি। অনেকেই এর পিছনে দেয়া- নেয়ার সম্পর্ক অনুমান করত। রাজীবের কাছে পরিত্যক্ত হয়ে প্রণব নতুন দল খুলেছিলেন কি তার পুঁজিপতি বন্ধুদের পুরানো মদত বা নতুন দলকে তারা সাহায্য করবে এই ভরসায়? প্রশ্নটি অমীমাংসিত। প্রণববাবু স্বাভাবিক কারণেই তাঁর রচনায় এর আভাস দেননি। উত্তরকালে প্রণব কংগ্রেসে এসেছিলেন রাজীবের হাত ধরেই, এ আই সি সি-র অর্থনৈতিক সেলের উপদেষ্টা হিসেবে এবং পরে মন্ত্রী হয়ে। নেহরু-গান্ধি পরিবারের কার্যকরী নেতৃত্বহীন কংগ্রেসে তিনি নরসীমা রাওয়ের মন্ত্রিসভায় প্রথমে ঠাঁই পাননি। পেয়েছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান পদ। পরে নরসীমা রাও জল মেপে নিয়ে তাঁকে মন্ত্রিসভায় নেন। এই প্রাজ্ঞপুরুষ বুঝতে পেরেছিলেন, শীর্ষ পুঁজিপতিদের কাছের মানুষ মন্ত্রিসভায় থাকা জরুরি। তাছাড়া অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সংস্কার জরুরি হয়ে উঠছে বিদ্যমান বিশ্ব পরিস্থিতির দিক থেকেও। একাজে যোগ্য ভূমিকা প্রণবই নিতে পারেন।
প্রণববাবুর রাজনৈতিক গতি বিচার করলে দেখা যায় তার গতি সব সময় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুমুখী। রাজীব নিহত হওয়ার পর তিনি সোনিয়ার সংগে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক রাখলেও ঘনিষ্ঠ বৃত্তে যাননি। তিনি বুঝেছিলেন এই ভদ্রমহিলা আপাতত রাজনীতির প্রত্যক্ষ গণ্ডীর মধ্যে আসবেন না। প্রণববাবু এবার নরসীমা এবং সীতারাম কেশরীর দিকে মনোযোগ দেন। এতেও কিছু হার্ডেল পার হতে হয়েছে তাঁকে। কারণ ইন্দিরার আমলে যারা অসূয়াক্লিষ্ট ছিল তারা তখনও সক্রিয়। কিন্তু তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা ও লেগে থাকার ক্ষমতা (নতুন দলপর্ব বাদে) তাঁকে বার বার জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছে। বলা হয়, সীতারামকে সভাপতি করার প্রস্তাবের রচয়িতাও তিনি আবার তাঁকে বিদায় দিয়ে সোনিয়াকে সভাপতি করার প্রস্তাবের পাঠও তাঁর! সোনিয়া তাঁকে সম্পূর্ণ বিমুখ করেননি আবার পূর্ণ সহয়তাও দেননি।
এটা অস্বীকার করা যাবে না যে, ইউপিএ গড়ার অন্যতম সেরা কারিগর তিনিই। এর আগে কংগ্রেসকে একচেটিয়া শাসনের স্বপ্ন থেকে মুখ ঘুরিয়ে সমঝোতা, সম্ভব হলে ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে জোট গঠনের বাস্তবতা বোঝাতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। তিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরুর অভিজ্ঞতায় এটা শিখেছিলেন, রাজনীতির সম্ভাবনার শিল্পে যুক্তফ্রন্ট ক্রমান্বয়ে প্রাসঙ্গিক হবে। এবার তিনি এবিষয়ে হাতে কলমে কাজ শুরু করার সুযোগ করে নিলেন। একথা বললে বাড়িয়ে বলা হবে না যে, সমন্বয় সাধনের এমন দক্ষতা তাঁর সমকালে এমনভাবে আর কোনো নেতা অর্জন করতে পারেননি। কেউ কেউ ভাবতেও পারে যে, অমিত শাহরা প্রণববাবুকে মডেল করে নিজেদের মতো ছাঁচে ঢালাই করে নিয়েছে!
সোনিয়া এ সত্ত্বেও তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম ইউপিএ-তে এমনকি ইউপিএ দ্বিতীয় পর্বেও সুযোগ দেননি। কেউ কেউ মনে করে, দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের প্রধান করে প্রণবকে এনে মনমোহন সিংকে যদি বছর তিনেক পরেই রাষ্ট্রপতি পদে ভাবা হত তবে কংগ্রেস এত বিপর্যয়ের মধ্যে এখন পড়ত না। তবে এ গবেষণার একটা গোড়ায় গলদ রয়েছে বলে মনে হয়। কারণ এটা করলে নিপাট ভদ্রলোক ও বিশ্বনন্দিত অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিং-এর অযোগ্যতার অলীক প্রচার মান্যতা পেত। তাছাড়া দ্বিতীয় ইউপিএ ধ্বংস করার জন্য যে গ্লোবাল প্ল্যানিং এর আভাস এখন পাওয়া যাচ্ছে, যেভাবে গোয়েবলসীয় কায়দায় মিথ্যাকে সত্য করে তোলার সংগঠিত ষড়যন্ত্র রূপ দেওয়া হয়েছে, তাকে রুখে দিতে কংগ্রেসের যে জনমুখী ও আন্দোলনমুখী সংগঠন প্রয়োজন ছিল তা তৈরি করার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না প্রণবের। এ বিষয় নিয়ে কোনোদিন চর্চাও তিনি করেননি। এ নিয়ে সোনিয়া বা কংগ্রেস দলে উৎসাহ, উদ্দীপনা সৃষ্টির অনুঘটক হওয়ার যোগ্যতা অন্য নেতাদের মতো প্রণবেরও ছিল না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী না হতে পারার যন্ত্রণা তাঁকে এমনভাবে ভিতর থেকে ক্ষত বিক্ষত করেছে যে অন্তিম পর্বে তিনি কেমন জানি তাঁর আচরণে একটা বিদ্বিষ্ট মনোভাব প্রকাশ করছিলেন।
প্রণববাবুর সমসাময়িক অন্তত তিনজন সাংসদ বন্ধু ও বেশ কয়েকজন স্বদল-বিরোধী দলের নেতা এবং সাংবাদিকের কথা ও লেখা থেকে জানা যায়, দৈনিক ধর্মাচরণ ও যাপনের সময়টুকু বাদ দিয়ে আর সমস্ত সময়টাই ছিল তাঁর কাজের সময়। আর এই সময়ের মধ্যে এক পঞ্চমাংশ সময় তিনি বরাদ্দ রাখতেন পড়াশোনার কাজে। সর্বগ্রাসী পাঠক ছিলেন তিনি। সাহিত্য সৃজনমূলক পাঠ তাঁর আবেগ সজীব রাখত। আর রাষ্ট্রতত্ত্ব, দর্শন, ইতিহাস, অর্থনৈতিক বিষয়ের পাঠে তিনি তাঁর যুক্তির সমর্থন খুঁজতেন, আবেগকে প্রশমিত করতেন। ১৯৬৯ সালে রাজ্যসভার সাংসদ হওয়ার পর তিনি রাজন্যভাতা বিলোপ নিয়ে যে ভাষণ দেন তার প্রস্তুতিতে সহযোগিতা নিয়েছিলেন সিপিআই নেতা ভূপেশ গুপ্তর। কমিউনিস্ট মহলে চালু আছে, ইন্দিরা গান্ধির বিশিষ্ট বন্ধু ভূপেশবাবু নিজে প্রণবের ভাষণ শোনার পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে। এই ভাষণটি ইন্দিরার মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। উত্তর জীবন নির্মাণে যা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রাথমিক মূলধন বলা যায়। সেই শুরুর সাংসদ জীবনে কংগ্রেস পর্ব আরম্ভ হওয়ার পর, পৃথক পার্টি গঠনের অভিমানযোগ বাদ দিলে, কংগ্রেস দলের নেতা বা মন্ত্রী হিসেবে ২০১২ পর্যন্ত তিনি কংগ্রেসের নীতি ও কর্মসূচিতে অবিচল ছিলেন সাফল্য বা বেদনা নিয়েও। কিন্তু কংগ্রেসের বা ইউপিএ-র মনোনীত রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর কেবল আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁর কংগ্রেসের সংগে সম্পর্কের ছেদ ঘটেনি, মানসিক ব্যবধানও দুস্তর করতে শুরু করেন তিনি। রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও তিনি একই মনোভাব বজায় রাখেন। তাঁর জ্ঞানত হোক বা অজ্ঞানত তাঁর কিছু আচরণ ও বক্তব্য কংগ্রেসের বিপন্ন দশাকে আরও গভীর করে।
এর বীজ পুঁতেছিলেন রাজীব গান্ধি তাঁকে অচ্ছুৎ করে দিয়ে। অবশ্য প্রণববাবুর মনোভূমির উদগ্র উচ্চাকাঙ্ক্ষা বীজবপনের জমিকে তৈরি করে রেখেছিল। সোনিয়া গান্ধি একে নির্মূল করার দু’দফার সুযোগ অগ্রাহ্য করেন প্রথম ও দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার গঠনকালে। প্রধানমন্ত্রীত্বের “ন্যায্য দাবি” উপেক্ষিত হওয়ায় বিষবৃক্ষ সম্ভবত সজীব হতে থাকে। কেউ কেউ মনে করেন, প্রণব মুখোপাধ্যায় কেবল ইন্দিরা পর্যন্ত কংগ্রেসের প্রতি মনেপ্রাণে দায়বদ্ধ ছিলেন। সোনিয়ার নেতৃত্বে তিনি ছিলেন কেবল ক্ষমতার প্রতি দায়বদ্ধ! আবার কেউ কেউ মনে করেন, প্রণব মতাদর্শের দিক থেকে নেহরু ঘরানায় যথেষ্ট আস্থাশীল ছিলেন না বিশেষত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। তিনি ছিলেন বৃহৎ পুঁজির পৃষ্ঠপোষক। বাজার অর্থনীতির ব্যাপকতায় মর্কিন পন্থায় বিশ্বাসী। এই দুই কারণের সঙ্গে আবার তাঁর সম্পর্কে হিন্দুয়ানির পরাকাষ্ঠায় বাড়িতে নিজ হাতে, এমনকি রাষ্ট্রপতি হয়েও, দুর্গাপূজা করাকে আভিযোগ হিসেবে দায়ের করেন কেউ কেউ। এই প্রসঙ্গে সোমনাথ মন্দির পুনরায় সংস্কার-নির্মাণের সময় রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদের উপস্থিতির কারণে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে নেহরুর সমালোচনার উল্লেখ করেন তারা। এই অংশের যুক্তি, এসব কারণেই সোনিয়া প্রণবকে প্রধানমন্ত্রী করেননি। অবশ্য অপর একটি অংশের তর্ক, তাই যদি হবে, তবে নেহরু মডেলের সংস্কার মনমোহনের হাতে অনুমোদিত হয় কী করে এবং রাহুল নিজে হিন্দুত্ব জাহির করতে গোত্র আউড়ে পুজোয় বসে শিব ভক্ত সাজলে সোনিয়ার আপত্তি ওঠেনা কেন? আসলে রাজীবের সংশয়ী মনোভাব সোনিয়াকে প্রভাবিত করেছিল বলেই মনে করে এই অংশ। কোনো অংশই অবশ্য মনমোহনের কর্মদক্ষতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে না (এই অংশগুলি মূলত কংগ্রেসের অনুকূল শক্তি)। তবে মনমোহন যে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করার মানুষ নন সে সম্পর্কে সবাই একমত। প্রণবকে কেন বাছাই করা হয়নি সেই বিষয়টির জবাব দলের অধিকারেই আটকে আছে।
প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি হবার পর তথাকথিত নিরপেক্ষতার নামে, কংগ্রেসের সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আদর্শ থেকেও, কেন নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে আরএসএস -এর হেডকোয়ার্টারের আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন সেটা এক বিস্ময়। সরাসরি বলতে হলে বলা উচিত, বঞ্চনাবোধের কারণেই এই বিরোধাভাস! তিনি জানতেন যে, এই আমন্ত্রণ গ্রহণ কংগ্রেসকে ভয়ংকর অস্বস্তিতে ফেলবে। অবশ্য তিনি সেখানে যে ভাষণ দেন তা ভারতীয় সংস্কৃতি ও ভারতীয় সংবিধানের আদর্শে প্রণোদিত বহুমত মান্যতার সহনশীলতা ও ধর্মনিরপেক্ষতায় আধারিত। এই ভাষণ সংঘ বা বিজেপির পক্ষে গ্রহণ বা প্রকাশ্যে বর্জন করা ছিল অসম্ভব ব্যাপার। এখানেই প্রণব মুখোপাধ্যায় অনন্য কুশলী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পরিচয় বিধৃত রাখেন। কিন্তু কংগ্রেসকে শুধু নয়, দেশের সব ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে দুঃসহ বিপন্নতায় ঠেলে দিয়ে তিনি সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও উগ্র হিন্দুত্ববাদের প্রচারক, স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে সম্পর্ক রহিত কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার স্মারকে পুষ্পার্ঘ্য চড়িয়ে মন্তব্য লেখেন, ভারতমাতার সুসন্তান!! এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উষ্মাসূচক প্রকাশ্য মন্তব্য করেছিলেন প্রণবকন্যাও। তাঁর এই আচরণে কার্যতই আরএসএস এর তখনকার এমনকি এখনকার কর্মকাণ্ড একপ্রকার বৈধতা পেয়ে যায়। এতে সোনিয়া-রাহুল প্রাধান্যের কংগ্রেসের যে নিদারুণ ক্ষতি হয় তা বোধকরি গোটা কংগ্রেস দলকেই অসন্তুষ্ট করেছিল। ক্ষুব্ধ হয়েছিল ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি। তাদের আন্দোলন এতে দুর্বল হয়েছিল নৈতিকভাবে। শক্তি পেয়েছিল বিজেপি-র প্রচারকদের উদ্ভট বাক্যবন্ধ “তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতা”। গান্ধিজি, নেহরু, পটেল, আজাদ, আম্বেদকরদের ধর্মনিরপেক্ষতার নির্মাণ এভাবে আহত করতে পারেনি আর কেউ। এটা কেন করেছিলেন প্রণবজি তাঁর ব্যাখ্যা তিনি দিয়ে যাননি। কেউ কেউ মনে করেন, রাজীব-সোনিয়ার প্রতি সঞ্চিত ক্রোধ এভাবেই তিনি উগরে দিতে চেয়েছিলেন রাহুলের ভবিষ্যতের পথে কাঁটা ফেলতে। এমনকি রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি একটি অনুষ্ঠানে বাঙালি প্রধানমন্ত্রী দেখার যে অভিলাষ প্রকাশ করেছিলেন তার পিছনেও তাঁর একই অভিপ্রায় কাজ করেছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে অকংগ্রেস,অবিজেপি জোট গঠনের জন্য ২০১৯ এর নির্বাচনে ঝাঁপিয়েছিলেন (যার তখনকার সম্ভাব্য শরিকরা এখন মোদিজির সহযাত্রী) তা লক্ষ্য করে কেউ কেউ প্রণবের বাঙালি প্রধানমন্ত্রী দেখার অভিলাষের কার্যকারণ যোগ দেখতে পেয়ে মন্তব্য করেছিলেন, এ অভিলাষ কেবল রাহুলকে ঠেকাতে বিরোধী জোট ভণ্ডুল করার জন্যই। অবশ্য এই ধারার সমালোচকরা বুঝতে পারেনি যে রাহুলের একগুঁয়ে মনোভাবই জোট গঠন এমনকি দলের একদল নেতাকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট ছিল। এজন্য প্রণববাবুর অভিলাষের প্রয়োজন ছিল অকিঞ্চিৎকর।
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সুদীর্ঘ গৌরবময় রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের তুলনায় এসব সমালোচনা তুচ্ছ বলেই ইতিহাস গণ্য করবে। কেননা সব মানুষই দোষেগুণে তৈরি হয়। মানুষের অপূর্ণতার ফলে পূর্ণতার অভিলাষ নিয়ে যেসব দেবদেবীর সৃষ্টি, তাঁরাও কি ত্রুটির ঊর্ধ্বে উঠতে পেরেছেন কেউ? এমনকি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রকল্পিত নির্মীয়মাণ মন্দিরের অধীশ্বর শ্রীরামচন্দ্র স্বয়ং এর ব্যতিক্রম নন। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে আরএসএস যতই মার্গদর্শকের বিয়োগ ব্যথায় কাতর হোক তিনি দোষেগুণে কংগ্রেস নেতা হিসেবেই অন্যতম জাতীয় নেতা রূপে জনতার স্মৃতিতে থাকবেন বহুদিন, ইতিহাসে বহুকাল।
লেখকের কথা: রতন চক্রবর্তী
অর্ধশতক সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। দৈনিক, সাপ্তাহিক বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় চাকরির পাশাপাশি কাজ করেছেন বিদেশি দূতাবাসের কলকাতা তথ্য দপ্তরে। তথ্যচিত্র পরিচালনা করেছেন। লিখেছেন ছোট গল্প, নাটক চিত্রনাট্যও। মার্কসীয় দর্শনে বিশ্বাসী।
জন রিডের টেন ডেজ দ্যাট স্যুক দ্য ওয়ার্ল্ড নামে রুশবিপ্লবের দশ দিনের কাহিনি নিয়ে বিশ্বখ্যাত রিপোর্টাজ গ্রন্থ অবলম্বন করে লিখেছেন নাটক অভ্যুত্থান যা ৭৪ জন কুশীলব নিয়ে অভিনীত হয়।
খুব ভালো লাগলো… Nirapekkha দৃষ্টি তে রতন চক্রবর্তী র এই লেখা তাঁর অসামান্য mananshilata র পরিচায়ক
সৌরভ রায়, কুশমন্ডি, দক্ষিণ দিনাজপুর
অনেক অজানা তথ্য জানতে পারলাম।
ভালো থাকবেন
প্রনাম জানবেন।
বাহ! অনবদ্য… লেখাটা পড়ে যতটা জ্ঞান আরোহন করলাম, তার থেকেও বেশি উপলব্ধি করলাম একটি বাস্তব সত্যি কথা। মানুষের মৃত্যু হলেই তিনি দেবতা হয়ে যান না, মানুষই থাকেন। কারও মৃত্যুর পরে “তাঁর সব ভালো ছিল” বলার যে পরম্পরা চলে আসছে তা সর্বৈব ঠিক নয়। কোনও ব্যাক্তির মৃত্যুর পরেও তাঁর ঠিক-ভুল সমস্ত সিদ্ধান্তকে সততার সঙ্গে বলার শিক্ষা দিলেন আপনি।
খুব ভালো লেখা।
নিশা সাহারায়
জাতীয় রাজনীতির এক বর্ণময় চরিত্রের এমন নির্মোহ চিত্র অংকন এক সামগ্রিক দৃষ্টিভংগির পরিচয়।জড়তা কটিয়ে স্পষ্ট কথা, লেখক তার জ্ঞানবুদ্ধি মতো তুলে ধরে নতুন ম্যল্যায়নের পথ দেখাবার চেষ্টা করেছেন।সহমত না হলেও এ বিশ্লেষণ অগ্রাহ্য করা যাবে না।
আপনার এই লেখায় ভারতীয় রাজনীতির এক জীবন্ত অধ্যায় ফুটে উঠেছে। সাংবাদিকতার হাতে খড়ি আপনার কাছে। আপনার লেখা সম্পর্কে তাই এরচেয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করার ধৃষ্টতা আমার নেই।
খুবই ভালো একটা লেখা। ধন্যবাদ লেখককে…🙏
এ শতাব্দীর ” চাণক্য ” কিন্তু সেকালের চাণক্য হতে পারলেন না রাজনীতির বর্তমান রঙ্গমঞ্চে।
এখনকার শকুনি , এখনকার দূর্যোধনেরা সকলেই সুপরিকল্পিতভাবে সংগঠিত। আমার মতন সাধারণ
মানুষের অনেকেই যারা এই প্রতিবেদনের ইতিহাসের পুঙ্খানুপুন্যতা সম্পর্কে অবহিত নন , তারা, বিশেষতঃ বাঙালি ভেবে যারা আত্মগরীমায় ডগমগ , দূঃখিত হবেন বা ভয়ানক ক্রোধান্বিত হবেন।
আমার সংগ্রহশালার মর্যাদা বৃদ্ধি পেলো ।
এক ঝলকে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বর্ণময় সামগ্রিক রাজনৈতিক জীবনের চালচিত্র জানতে এই ‘প্রণবনামা’ অসাধারণ। আর প্রণববাবুর মত ব্যক্তিত্বের মনের বিশ্লেষণ যেভাবে করেছেন তাও বিশেষ শিক্ষণীয়। এক কথায়, ‘জীবন্ত দলিল’।
আপনার এই লেখা থেকে আজ আবার অনেক কিছু শিখলাম। অল্পদিন হলেও আপনার কাছে কাজ করতে পারার সুযোগ পাওয়ায় আমি কৃতার্থ।
প্রখর স্মৃতিধর একজন হিন্দু বাঙালি রাজনিতিকের রাষ্ট্রপতিত্বে
অবশ্যই গর্বিত। রাজনিতির টানাপরানে একজন বাঙালি প্রধাণ
মন্ত্রীকে না দেখতে পারার জন্য ব্যাথিত। রাজনিতির ব্যাপারে খুব
সীমিত জ্ঞান সত্ত্বেও একথা বলতে পারি মানুষ হিসাবে একজন
বিদগ্ধ পন্ডিত, জ্ঞানী, বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান, প্রচন্ড ধীশক্তি ধর মানুষ।
প্রধাণ মন্ত্রী না হতে পারায় জীবনের অপূর্ণ আশা নিয়েই চলে গেছেন। এ কথা বলার কারন হিসাবে বলছি ওনার সঙ্গে দেড় –
দুঘন্টা সামনা সামনি কথা বলার সুযোগের জন্য।
সাংবাদিক রতন চক্রবর্তীর বর্ণময় সবিস্তার লেখা চমৎকৃত ও
আকর্ষনীয়। আমার মত অজ্ঞ লোককে অনেক চিছু জানতে
শেখায়।
অসাধারণ। খুউউউব ভালো লাগলো
প্রণববাবুর মত বর্ণময় চরিত্রের প্রায় সমস্ত আঙ্গিক এ লেখায় আলোচিত হয়েছে। যাকে বলা যায় comprehensive report, এ লেখাও সেই জাতের। তবে এত বড় মাপের এক নেতা হওয়া সত্ত্বেও তিনি কেন বাঙালি জীবনে অপরিহার্য হয়ে ওঠেননি এবং কেনই বা জননেতা হয়ে উঠতে পারেননি, সেই প্রশ্নের উত্তর এই প্রবন্ধে মিললে ভাল লাগত।
মৃত্যু কাউকে মহান করে না। এমন নির্মোহ মূল্যায়নের প্রয়োজন ছিল।
মালবিকা ভট্টাচার্য
লেখা সুখপাঠ্য। কিন্তু, কিছু কিছু কিন্তু আছে। প্রণব মুখার্জির সব গুণ সত্ত্বেও নিজের টা ১৬ আনার উপর ১৮ আনা বুঝে নেওয়ার অভ্যেস কি সত্যিই বড়ো নেতার যোগ্যতার একটা মাপকাঠি হয়ে গেছে? জানিনা। জানতে চাই।
অনেক অজানা তথ্য পেলাম।
রতন চক্রবর্তীর মতোই লেখা। তবে প্রণববাবু প্রধানমন্ত্রী হলে ভারতীয় অর্থনীতিতে কতটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ত , রতনদার কাছ থেকে সেই আলোচনার অপেক্ষায় থাকছি।
এতদিন জানতাম রতনে রতন চেনে। লেখাটি পড়ে জানলাম রতনে ব্রহ্মও চেনে। লেখায় ভূপেষ গুপ্তের এর উল্লেখ ভালো লাগলো।
গুনমুগ্ধকারী।
Lekhata porlam … Valo laglo dada
Pranab babu k chilen, kamon chilen, ki korechilen r korar sujog peyeo ki ki korenni tar ekti niropekkho dolil ei lekha. Pranabnama tai rastroneta Pranab mukherjeer sposto o jotharto mullayon. Ei lekha rajnoitok bislesok o rajnitir chorcha koren jara tader kache ottonto guruttopurno nothi. Ratan da k ank dhonnobad. Valo thakben. Ro likhben.
রাজনীতি বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের বিষয়ে আগ্রহ আমার বরাবরই কম কিন্তু বর্তমান সময়ে রাজনীতি থেকে একদম বিচ্ছিন্ন থাকাও সম্ভব না। বিশেষত এই বিষয়ে লেখা পড়লে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই লেখকের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ প্রাধান্য পায়।তবে এই লেখাটি ব্যতিক্রম।নিরপক্ষে ভাবে প্রণববাবুর মত এক সর্বভারতীয় নেতাকে তুলে ধরা হয়েছে।তাই পড়ে ভালো লাগল।
অল্প কথায় প্রণববাবুর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সব দিক তুলে ধরেছেন। এত সুন্দর আলোচনা ইদানিং খুব কম চোখে পড়ে। আপনাকে ধন্যবাদ।