তিলোত্তমা

কবি: কৌস্তভ দত্ত


প্রাণবন্ত চঞ্চল মেয়েটা আজ যেন কেমন
বড্ডো চুপচাপ হয়ে গেছে।
আজ সে আর হাসে না, ছোটে না,
গলা জড়িয়ে ধরে অভিমানী চোখে কাঁদে না।
সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে সাহেব যখন এসেছিলো তার কাছে —
তখন সে বাচ্চা মেয়ে,
তবুও সাহেব প্রেমে পড়লো তার,
তার মিষ্টি হাসি আর ডাগর ডাগর চোখ
সাহেবকে বেঁধে নিলো নিজের সাথে।
এক অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল মেয়েটার,
সব্বাইকে আপন করে নেয় এক লহমায়।
কিশোরীর খোলস ছেড়ে আজ সে যুবতী।
তবুও, তার মায়াবী চোখ দুটো বড্ডো প্রেম জাগায়।
সেই মেয়ে আজ মনমরা।
কলকাতা আজ ঘরবন্দি,
ঘরবন্দি থাকতে থাকতে কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে সে,
অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছে মেয়েটা।
কলকাতা আজ চুপচাপ।
কলকাতা আজ ছোটে না, চেঁচায় না, হাঁকাহাঁকি করে না,
ভিড় ট্রেনে ঠ্যালাঠ্যালি করে বাড়ি ফেরে না,
বাসে ঝুলে অফিস যায় না, ঝগড়া করে না,
ভিক্টোরিয়ার মাঠে হাতে হাত ধরে প্রেম করে না,
প্রেমিকের সাথে আইসক্রিম খায় না,
চারটে ঠোঁট নিবিড় প্রেমে এক হয় না।
কলকাতা আজ বৃষ্টিতে ভেজে না, রোদে ঘামে না।
ছটফটে মেয়েটা কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে।
খিদিরপুরের পায়রাগুলো কিংবা ময়দানের ভেড়াগুলো
কোনোদিনও দেখেনি তাকে এইভাবে,
তারা অবাকভাবে চেয়ে থাকে।
ফাঁকা মল্লিকঘাটের চাতাল কিংবা হ্যারিসন রোডের ট্রামলাইন,
শ্যামবাজারের ৫ মাথার মোড়, হাজারার ক্রসিং
অধীর অপেক্ষায় বসে আছে তার জন্য।
২, ২, ৭০০, ৮০০, সংখ্যাটা রোজ বাড়ছে
কলকাতা রোজ কাঁদছে —
তবে মনুমেন্টটা জানে —
মেয়েটা উঠতে জানে, ঘুরে দাঁড়াতে জানে
জাদুঘরটা সাক্ষী তার বহু লড়াইয়ের।


লেখক পরিচিতি: কৌস্তভ দত্ত
১৯৯১ সালে জন্ম, মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিক, বোড়াল হাই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এর অধীনস্থ নেতাজি নগর ডে কলেজ থেকে ভূগোলে স্নাতক, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ। পেশায় গৃহশিক্ষক। কলেজ জীবন থেকে কবিতা লেখা শুরু।

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

4 Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।