অদ্ভুতুড়ে

লেখক : সমীর মন্ডল

“লাল মাটির দেশ” পুরুলিয়াতে এই নিয়ে বার ছয়েক তো হবেই। ঠিক হলো হাওড়া থেকে রূপসী বাংলা এক্সপ্রেসে পুরুুুলিয়া ও পরে সেখান থেকে গাড়িতে ‘কয়রাবেড়া ইকো অ্যাডভেঞ্চার রিসর্ট’। প্রতিবারের মতো এবারের ভ্রমন সূচিতেও রয়েছে অযোধ্যা পাহাড়, পাখি পাহাড়, বামনী ঝরনা, টুরগা ঝরনা, টুরগা ড্যাম্, পি.পি.এস.পি. পাওয়ার প্রজেক্ট, ওসুলপুর ডুংরী। এছাড়াও রয়েছে জয়চন্ডী পাহাড় এমনকি কাশীপুর রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ অবধি পর্যন্ত। তবে এসব তো ছিল আছে এমনকি থাকবেও খালি যা অদূরে ভবিষ্যতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে তা হলো বেগুনকোদর রেলস্টেশনটি। পুরুলিয়া ভ্রমন পথে যা অন্যতম আকর্ষণ। স্থানীয় মানুষজন থেকে শুরু করে পর্যটকদের কাছেও যার পরিচিতি ভুতুড়ে রেলস্টেশন নামে। তাকে ঘিরে অলৌকিক ঘটনার যেন শেষ নেই। এসবের অবশ্য কতটা বৈজ্ঞানিক যুক্তি ও বাস্তবতা আছে তা নিয়ে আজও সংশয় রয়ে গেছে। গোধূলি অতিক্রম করে সন্ধ্যা আসতে তখনও বেশ কিছু সময় বাকি আছে, ট্রেনের দ্রুত গতির শব্দে ঘুম ভাঙার পর হঠাৎ কানে এলো মিনিট দশেকের মধ্যেই ট্রেন বেগুনকোদর অতিক্রম করবে। ইতিমধ্যেই ধূসর মাটিতে লাল রং এসে মিশেছে। ঘুমের ঘোর কোনভাবে কাটিয়ে, অতি উৎসাহে অপেক্ষা করতে থাকলাম। ট্রেনের গোটা কামড়াতে এখন শুধু একটাই প্রসঙ্গ; বেগুনকোদর কি সত্যিই ভুতুড়ে রেলস্টেশন! কেউ কেউ আবার এই সমস্ত কিছু থেকে নিজেকে আড়াল করার নিছক প্রচেষ্টায় ব্যস্ত।তারা মনেপ্রাণে ভুতুড়ে রেলস্টেশনের যৌক্তিকতা যাচাই করে নিতে চায় ঠিকই কিন্তু কোথাও যেন ভয়টাকে এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি; তাই এবারের মতো সেগুড়ে বালি। অবশেষে নানান যৌক্তিক-অযৌক্তিক গল্পে ছেদ টেনে ট্রেন বেগুনকোদর স্টেশন ছুঁয়েছে। জানালার ফাঁকে চোখ রেখে এখন শুধু চেষ্টা যতটা সম্ভব দৃষ্টিবন্দী হয় আরকি।অযোধ্যা পাহাড়ের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা জনমানবহীন স্টেশনটি যেন আপন মহিমায় ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে সবাইকে মুগ্ধ করতে প্রস্তুত। এক লহমায় তাকে ঘিরে রটিত সমস্ত অলৌকিক ঘটনা যেন ভ্রান্ত মনে হতে লাগলো। সবকিছুকে উপেক্ষা করে তখন মাথাচাড়া দিচ্ছে একটাই প্রশ্ন; তাহলে কি এতদিন যা শুনে এসেছি সবই ভুল নাকি এই নিস্তধ্বতা মৃত্যুপুরীর অশনী সংকেত! অদ্ভুতুড়ে ক্রিয়াকলাপে কিছুটা বাড়তি অক্সিজেন জুগিয়ে সংশয়টা যেন থেকেই গেল। এই দ্বন্দ্ব দোলাচলতায় মন তখনও ব্যতিব্যস্ত, ইতিমধ্যেই ট্রেন বেগুনকোদর অতিক্রম করেছে। সমস্ত ট্রেনের কামরা আবার হাজারও লৌকিক-অলৌকিক শিশির ভেজা গল্পে জমে উঠতে লাগলো; গন্তব্য পুরুলিয়া যে।


লেখক পরিচিতি : সমীর মন্ডল
আমি সমীর মন্ডল, আমি আশুতোষ কলেজের প্রানীবিদ্যা বিভাগের একজন ছাত্র। আমি লিখতে খুবই ভালবাসি। আমি ছোটোগল্প ও কবিতা লিখি। আমার বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

লেখা আহ্বান - বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন