অলিম্পাস মন্স (Olympus Mons) সৌরজগতের সর্ববৃহৎ আগ্নেয়গিরি

লেখক : মুহাম্মদ আস্রাফুল আলম সোহেল

সূর্য থেকে চতুর্থ দূরবর্তী গ্রহ হচ্ছে মঙ্গল। এটি বুধ গ্রহের পরেই সৌরজগতের দ্বিতীয়-ক্ষুদ্রতম গ্রহ। রোমানদের রণদেবতা মার্স এর নামানুসারে মঙ্গল গ্রহের নামকরণ করা হয়েছে। পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতার আঁতুড়ঘর মেসোপটেমিয়ার দক্ষিণাংশের প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতার জনগণ মঙ্গল গ্রহকে যুদ্ধ, প্লেগ রোগ এবং মৃত্যু দেবতা নেরগাল (Nergal) এর মতো মনে করতেন। এছাড়া মঙ্গল গ্রহকে বাংলাসহ বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় হিন্দু গ্রহদেবতা মঙ্গল হিসেবে গণ্য করতেন। ইতালীয় পদার্থবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ এবং দার্শনিক গ্যালিলিও গ্যালিলি ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে সর্বপ্রথম মঙ্গল গ্রহটি আবিষ্কার করেন । বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে, এক সময় মঙ্গল গ্রহে পানির প্রাচুর্য ছিল। মঙ্গল গ্রহ শিলাময়। মঙ্গলের পৃষ্ঠ মূলত আগ্নেয়গিরিজাত শিলা (Basalt) এবং এর কেন্দ্রভাগ লৌহ-সালফার (Iron sulphide) দ্বারা গঠিত যা অনেকাংশে তরল ও চারদিকে Silicate দ্বারা ঘিরে আছে। মঙ্গল গ্রহে কোনো অভ্যন্তরীণ চৌম্বকক্ষেত্র নেই। এ গ্রহে চারটি ঋতু বিদ্যমান। মঙ্গল গ্রহের পাতলা বায়ুমণ্ডলে রয়েছে শতকরা ৯৫ ভাগ কার্বন ডাই অক্সাইড, শতকরা ৩ ভাগ নাইট্রোজেন, শতকরা ১.৬ ভাগ আর্গন এবং বাকী অংশ অক্সিজেন ও পানি। হিমায়িত কার্বন ডাই অক্সাইড এবং বরফের কারণে মঙ্গল গ্রহের মেরু বরফাচ্ছাদিত। গ্রহটির পৃষ্ঠতলে Ferric oxide এর আধিক্যের কারণে এটি রক্তিম দেখায়। তাই মঙ্গল গ্রহটি ”লাল গ্রহ” (Red Planet) নামে পরিচিত। মঙ্গল গ্রহে রয়েছে সর্ববৃহৎ ও গভীর গিরিখাত Valles Marineris, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের জ্বালামুখ Airi-0 এবং মহাসাগর Sinus Meridiani। কিছুদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নৌ-পরিচালন ও মহাকাশ প্রশাসন (NASA) এর Mars Perseverance Rover এক সময়কার একটি উত্তাল নদীর প্রমাণ পেয়েছে যেটি প্রাচীনকালে মঙ্গল গ্রহে প্রবাহিত হতো। মঙ্গল গ্রহের Phobos এবং Deimos নামক দুটি চাঁদ বা প্রাকৃতিক উপগ্রহ রয়েছে।

১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রের জ্যোতির্বিজ্ঞানী Asaph Hall III মঙ্গল গ্রহের ক্ষুদ্রাকার এ চাঁদ দুটি আবিষ্কার করেন। পৃথিবীর পর মঙ্গলই হচ্ছে একমাত্র গ্রহ যেখানে পানির চিহ্ন এবং প্রাণের সম্ভাবনা রয়েছে। মঙ্গল গ্রহে বেশ কয়েকটি দৈত্যাকার আগ্নেয়গিরি রয়েছে। অলিম্পাস মন্স (Olympus Mons বা Mount Olympus Mons) শুধুমাত্র মঙ্গল গ্রহেরই নয়, এটি সৌরজগতের সর্ববৃহৎ-সর্বোচ্চ পর্বত এবং আগ্নেয়গিরি। এ পর্বতটির (পাহাড়ের মতো) শৃঙ্গ নেই কিন্তু এর রয়েছে অগ্ন্যুৎপাতের এক জ্বালামুখ, যেখান থেকে ভয়ঙ্কর অগ্ন্যুৎপাত হয়। চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে লাভা এবং ছাই। আগ্নেয়গিরি থেকে আগ্নেয়শিলা ছিটকে বেরিয়ে মহাজাগতিক রশ্মির সংস্পর্শে ধূমকেতুর রূপ নেয়। এ ধূমকেতুই মঙ্গল গ্রহ থেকে লাভা এবং আগ্নেয় পাথর বয়ে আনছে আমাদের সবুজ গ্রহ পৃথিবীতে  বিশাল ঢালু অলিম্পাস মন্স আগ্নেয়গিরিটি মঙ্গল গ্রহের বৃহত্তম আগ্নেয়গিরি অঞ্চল Tharsis Montes এর সাথে যুক্ত এবং এটি সর্বশেষ বিস্ফোরিত হয়েছিল প্রায় ২৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে । থার্সিস স্ফীতি (Tharsis Bulge) এলাকায় অবস্থিত প্রধান আগ্নেয়গিরিগুলো যেমন: Olympus Mons, Ascraeus Mons, Pavonis Mons এবং Arsia Mons ইত্যাদি । বৃহত্তম আগ্নেয়গিরিটি হচ্ছে অলিম্পাস মন্স। এদের মধ্যে কয়েকটি আগ্নেয়গিরি লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বিস্ফোরিত হয়নি। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে দানব অলিম্পাস মন্স পর্বতটি অ্যালবেডো (Albedo) বৈশিষ্ট্যের কারণে Nix Olympica Mountain (Olympic Snow) বা অলিম্পাসের তুষার হিসেবে পরিচিত এবং এর আধুনিক নাম হচ্ছে অলিম্পাস মন্স (অলিম্পাস পর্বত)। NASA এর মেরিনার প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে Mariner 9 রোবোটিক মহাকাশযান মঙ্গল গ্রহে অনুসন্ধানের সময় এ পর্বতটি আবিস্কার করে। উল্লেখ্য যে: ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল এয়ার ফোর্স স্টেশন LC-36B থেকে Mariner 9 মহাকাশযানটি মঙ্গল গ্রহের দিকে উৎক্ষেপণ করা হয় এবং একই বছরের ১৪ই নভেম্বর এটি মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে পৌঁছেছিল যেটি প্রথম মহাকাশযান অন্য একটি গ্রহকে প্রদক্ষিণ করে । Mars Orbiter Laser Altimeter (MOLA) দ্বারা পরিমাপ করা পর্বত তথাপি আগ্নেয়গিরিটির উচ্চতা ২১.৯ কিলোমিটার (১৩.৬ মাইল বা ৭২০০০ ফুট) এবং প্রশস্ত প্রায় ৬০০ কিলোমিটার (৩৭০ মাইল) । পর্বতটি মঙ্গল গ্রহের পশ্চিম গোলার্ধে Tharsis স্ফীতির উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত থেকে ১৮° ৩৯′ উত্তর ২২৬° ১২′ পূর্ব কেন্দ্রিক এবং এর পশ্চিম অংশ অ্যামাজোনিস চতুর্ভুজ (MC-8) ও কেন্দ্রীয়-পূর্ব অংশ সংলগ্ন Tharsis চতুর্ভুজে (MC-9) রয়েছে। অলিম্পাস মন্স পর্বতের ১৫.৬ কিলোমিটার (৯.৭ মাইল) ব্যাসের একটি কার্জোক অগ্নিমুখ বা গর্ত (Karzok crater) (১৮° ২৫′ উত্তর ২২৮° ০৫′ পূর্ব) এবং ১০.৪ কিলোমিটার (৬.৫ মাইল) ব্যাসের অপর একটি পাংবোচে অগ্নিমুখ বা গর্ত (Pangboche crater) (১৭° ১০′ উত্তর ২২৬° ২৫′ পূর্ব) রয়েছে। এগুলো মঙ্গলগ্রহের উল্কাপিণ্ডের সবচেয়ে প্রাচুর্য শ্রেণী Shergottite এর বেশ কয়েকটি সন্দেহজনক উৎস এলাকা হিসেবে উল্লেখযোগ্য। পর্বতটি এতোই বড় যে তার প্রান্তে জটিল কাঠামো থাকার কারণে এর উচ্চতা পরিমাপ করা খুবই কঠিন। অলিম্পাস মন্স মঙ্গল গ্রহের Global datum থেকে ২১ কিলোমিটার (১৩ মাইল) উপরে দাঁড়িয়ে আছে যা পাহাড়ের পাদদেশ থেকে উত্তর-পশ্চিম প্রান্তের শিখর পর্যন্ত। Amazonis Planitia এর সমভূমি থেকে উত্তর-পশ্চিমে ১০০০ কিলোমিটার (৬২০ মাইল) এবং চূড়া পর্যন্ত মোট উচ্চতার পরিবর্তন ২৬ কিলোমিটার (১৬ মাইল)। পর্বতের চূড়ায় ছয়টি বিশাল আকৃতির আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ বা ধ্বসিত গর্ত (Nested caldera) রয়েছে যা ৬০ কিলোমিটার (৩৭ মাইল) × ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল) জুড়ে এবং ৩.২ কিলোমিটার (২.০ মাইল) গভীর পর্যন্ত একটি অনিয়মিত নিম্নচাপ তৈরি করে। পর্বত বা আগ্নেয়গিরির বাইরের প্রান্তটি ৮ কিলোমিটার (৫.০ মাইল) লম্বা এক দুরারোহ পর্বতগাত্র (Escarpment) নিয়ে গঠিত (যদিও অস্পষ্ট যে ঐ স্থানে লাভা প্রবাহ হয়)। এ আগ্নেয়গিরি থেকে গড়িয়ে পড়া লাভা অনেক দূরে প্রবাহিত হওয়ার কারণে পাহাড়ের নিচের অংশটি চারপাশে বহুদূর পর্যন্ত দিগন্ত বিস্তৃত এক বিশাল সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে । আগ্নেয়গিরির আশপাশের কোনো কোনো জমিতে অনেকাংশ জুড়ে অসংখ্য অদ্ভুত ভাঁজ সৃষ্টি করেছে। মঙ্গলের ঢালু আগ্নেয়গিরিগুলোর মধ্যে এটি একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য যা বিশাল পার্শ্ববর্তী ভূমিধসের কারণে তৈরি হয়ে থাকতে পারে । মঙ্গল গ্রহের ভূত্বক (Crust) পৃথিবীর মতো সচল নয় । পৃথিবীর তুলনায় মঙ্গল গ্রহের ভূত্বক একটি স্থির বা নিশ্চল হটস্পটের (Stationary hotspot) উপর স্থির থাকে এবং ভূত্বকীয় ফলক (Plate) যখন হটস্পটের উপর দিয়ে চলাচল করে তখন নতুন নতুন আগ্নেয়গিরির উৎপত্তি হয়ে পুরোনো আগ্নেয়গিরিগুলো বিলুপ্তির দিকে ধাবিত হয় । সম্ভবত মঙ্গল গ্রহে মোবাইল টেকটোনিক প্লেটের (Mobile tectonic plates) অভাবের কারণে ভূত্বক স্থির থাকে। গ্রহটির ভূত্বক বা উপরিতলের একই জায়গাতে গলিত শিলা বা ম্যাগমা পর্যায়ক্রমে নিঃসরণ করতে থাকে এবং ধীরে ধীরে এ সঞ্চিত লাভা থেকেই জন্ম নেয় এক একটি সুবিশাল আগ্নেয়গিরি। একটি আগ্নেয়গিরি বিশাল উচ্চতায় না পৌঁছানো পর্যন্ত লাভা নির্গত করতে পারে । হয়তো, এ বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্যের কারণেই অলিম্পাস মন্স পর্বতের এমন অসাধারণ আকৃতি। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে, কোটি কোটি বছর আগে অলিম্পাস মন্স আগ্নেয়গিরির অতিরিক্ত তাপমাত্রায় উত্তপ্ত লাভার গরমে এক সময় মঙ্গল গ্রহে বরফের যে স্তর ছিল তার একটি অংশ গলে গিয়ে ভূমিধ্বস সৃষ্টি করে। অলিম্পাস মন্স পর্বতের আকার এবং অগভীর ঢালের কারণে মঙ্গল পৃষ্ঠে দাঁড়িয়ে থাকা একজন পর্যবেক্ষক এটির সম্পূর্ণ পার্শ্বচিত্র বা নকশা দেখতে অক্ষম হবেন, এমনকি অনেক দূর থেকেও। মঙ্গল গ্রহের বক্রতা এবং পর্বতটি নিজেই এমন একটি সংক্ষিপ্ত দৃশ্যকে অস্পষ্ট করবে। একইভাবে, চূড়ার কাছাকাছি একজন পর্যবেক্ষক খুব উঁচু পাহাড়ে দাঁড়ানোর বিষয়ে অজ্ঞাত থাকবেন, কারণ পর্বতের ঢাল দিগন্তের বাইরে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে প্রসারিত হবে। অলিম্পাস মন্স পর্বত শীর্ষে সাধারণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ হচ্ছে ৭২ প্যাসকেল যেখানে গড়ে মঙ্গল পৃষ্ঠের চাপ ৬০০ প্যাসকেলের শতকরা প্রায় ১২ ভাগ। অপরদিকে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এভারেস্ট পর্বত (Mount Everest) চূড়ায় যেখানে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ প্রায় ৩২০০০ প্যাসকেল বা পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠের চাপের শতকরা প্রায় ৩২ ভাগ। তা সত্ত্বেও, উচ্চ-ঊর্ধ্বতায় অরোগ্রাফিক মেঘগুলো (Orographic clouds) প্রায়শই অলিম্পাস মন্স শিখর বা সর্বোচ্চ সীমার (Olympus Mons summit) উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং বায়ুবাহিত মঙ্গল ধূলিকণা এখনো বিদ্যমান। যদিও গড়ে মঙ্গল পৃষ্ঠের বায়ুমণ্ডলীয় চাপ পৃথিবীর এক শতাংশেরও কম। মঙ্গলে অনেক কম মাধ্যাকর্ষণের কারণে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বৃদ্ধি পায়। মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডল বিস্তৃত এবং পৃথিবীর মতো তীব্রভাবে উচ্চতার সাথে ঘনত্বে নেমে আসে না। অলিম্পাস মন্স পর্বতটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এভারেস্ট পর্বতের উচ্চতার প্রায় আড়াই গুণ। এছাড়া প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধীন হাওয়াই দ্বীপের সুপ্ত আগ্নেয়গিরি মাউনা কেয়ার (Mauna Kea) সমুদ্র তলদেশের ভিত্তি থেকে এর উচ্চতার দ্বিগুণের একটু বেশি। তবে ধারণা করা হয়, বৃহত্তম গ্রহাণু ভেস্তা এর পৃষ্ঠে Rheasilvia নামক এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও প্রভাবশালী গর্ত রয়েছে যেটি অলিম্পাস মন্স পর্বতের চেয়েও উঁচু এবং বর্তমানে সৌরজগতে আবিষ্কৃত সবচেয়ে উচ্চ পর্বত। এছাড়া আলবা মন্স (Alba Mons বা Alba Patera বা Arcadia Ring নামেও পরিচিত) হচ্ছে মঙ্গল গ্রহের উত্তর Tharsis অঞ্চলে অবস্থিত সর্ববৃহৎ আগ্নেয়গিরি যেটি অলিম্পাস মন্স পর্বতের উচ্চতার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। আলবা মন্স এমন একটি অনন্য আগ্নেয়গিরির কাঠামো যার কোনো সমকক্ষ পৃথিবীতে বা মঙ্গল গ্রহের অন্য কোথাও নেই। যাই হোক, অলিম্পাস মন্স পর্বতটি মঙ্গল গ্রহের হেস্পেরিয়ান যুগে (Hesperian epoch) (৩.৫ বিলিয়ন বছর থেকে ১.৮ বিলিয়ন বছর পূর্ব পর্যন্ত) গঠিত হয়েছিল এবং আমাজনীয় অঞ্চলে অগ্ন্যুৎপাত অব্যাহত ছিল। অলিম্পাস মন্সের আয়তন প্রায় ৩০০০০০ বর্গ কিলোমিটার (১২০০০০ বর্গ মাইল) যেটি ইতালি, ফিলিপাইন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য অ্যারিজোনার মতোই এক বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এ পর্বতটি ৭০ কিলোমিটার (৪৩ মাইল) পুরু লিথোস্ফিয়ার (Lithosphere) দ্বারা সমর্থিত এবং এর গঠন শতকরা প্রায় ৪৪ ভাগ সিলিকেট, শতকরা ১৭.৫ ভাগ আয়রন অক্সাইড, শতকরা ৭ ভাগ অ্যালুমিনিয়াম, শতকরা ৭ ভাগ সালফার ডাই অক্সাইড, শতকরা ৬ ভাগ ম্যাগনেসিয়াম এবং শতকরা ৬ ভাগ ক্যালসিয়াম। যেহেতু, মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠটি মূলত ব্যাসাল্ট (Basalt) এবং অন্যান্য ম্যাফিক (Mafic) শিলা দ্বারা গঠিত হওয়ার কারণে ধীরে ধীরে বা নিম্ন সান্দ্রতা লাভা (Viscosity lava) প্রবাহের ফলে সবেগে উৎক্ষিপ্ত বা বিস্ফোরিত হতে পারে এবং গ্রহের পৃষ্ঠ নিম্ন নতিমাত্রার দিকে নিয়ে যাবে। অলিম্পাস মন্স আগ্নেয়গিরিতে সঞ্চিত লাভার পরিমাণ পৃথিবীর বৃহত্তম জীবন্ত আগ্নেয়গিরি মাউনা লোয়া (Mauna Loa) থেকেও প্রায় ১০০ গুণ বেশি । অলিম্পাস মন্স আংশিকভাবে Olympus Mons Aureole নামে পরিচিত স্বতন্ত্র খাঁজকাটা বা ঢেউতোলা ভূখণ্ডের একটি অঞ্চল দ্বারা বেষ্টিত। এ অঞ্চলটি (Aureole) কয়েকটি বড় Lobe নিয়ে গঠিত। পৃথিবীর তুলনায় মঙ্গল গ্রহে মাধ্যাকর্ষণ হ্রাসের কারণে ভূত্বক থেকে উঠে আসা ম্যাগমা’র উচ্ছলতা কম এবং ম্যাগমা কক্ষগুলোকে পৃথিবীতে পাওয়া কক্ষ বা প্রকোষ্ঠগুলোর চেয়ে অনেক বড় ও গভীর বলে মনে করা হয়। অলিম্পাস মন্স পর্বতের পার্শ্বদেশগুলো (Flank) অসংখ্য লাভা প্রবাহ এবং নালা দ্বারা গঠিত। অনেক প্রবাহের প্রান্ত বরাবর উঁচু পাড় বা বাঁধ বা স্তর রয়েছে। বাইরের প্রান্তগুলো গলিত প্রবাহিত লাভার একটি কেন্দ্রীয় খাদ ছেড়ে শীতল এবং শক্ত হয়ে যায়। অলিম্পাস মন্সের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে লাভা প্রবাহের বয়স ১১৫ মিলিয়ন বছর (Mya) থেকে মাত্র ২ মিলিয়ন বছর (Mya) পর্যন্ত। ধারণা করা হয়, পর্বত অঞ্চলে এখনো আগ্নেয়গিরি সক্রিয় থাকতে পারে যদিও খুব শান্ত এবং অনিয়মিত চলন বা প্রথায় (Episodic fashion)। বিশাল আকৃতির এ পর্বত বা আগ্নেয়গিরির শিখরে থাকা যৌগিক বা দুর্বোধ্য জ্বালামুখটি (Caldera complex) কমপক্ষে ছয়টি অধিক্রমণ জ্বালামুখ এবং জ্বালামুখের অংশ দিয়ে তৈরি। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পর ভূপৃষ্ঠের ম্যাগমা প্রকোষ্ঠের অবক্ষয় এবং প্রত্যাহারের পর ছাদ ধসে পড়ে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ তৈরি হয়। এভাবে প্রতিটি বৃহদাকার জ্বালামুখ পাহাড়ে আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপের একটি পৃথক স্পন্দনকে প্রতিনিধিত্ব করে । তাই, সবচেয়ে বৃহৎ এবং প্রাচীনতম এ জ্বালামুখ অংশটি একটি একক ও বৃহত্তম লাভা হ্রদ হিসেবে গঠিত বলে মনে হয়। বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে, অলিম্পাস মন্স পর্বতের বিশাল জ্বালামুখের সাথে যুক্ত ম্যাগমা প্রকোষ্ঠটি জ্বালামুখের তল থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার (১০৫০০০ ফুট) গভীরতায় অবস্থিত । জ্বালামুখের মেঝেতে গর্তের আকার কম্পাঙ্ক বা স্পন্দনহারের বিতরণ (Crater size-frequency distribution) প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন বছর (Mya) থেকে ১৫০ মিলিয়ন বছর (Mya) পর্যন্ত জ্বালামুখের বয়সের পরিসীমা নির্দেশ করে। সবগুলো জ্বালামুখই সম্ভবত একে অপরের ১০০ মিলিয়ন বছরের মধ্যে গঠিত হয়েছিল। অলিম্পাস মন্স পর্বতটি গাঠনিক ও ভূসংস্থানিকভাবে অপ্রতিসম এবং এটি মঙ্গল গ্রহের অন্যতম ধুলোময় অঞ্চলে দাঁড়িয়ে আছে ।


লেখক পরিচিতি : মুহাম্মদ আস্রাফুল আলম সোহেল
ফার্মাসিস্ট

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

রুচিশীল ও বিষয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য ক্লিক করুন এখানে

sobbanglay forum