অনেক বদলে গেছিস তুই

লেখক : অর্দ্ধেন্দু গায়েন

সোনারপুর স্টেশনের এক নম্বর প্লাটফর্মে উঠতেই মুখোমুখি দেখা হয়ে গেল দেবাদৃতার সঙ্গে। চোখে চোখ পড়তেই প্রথমে থমকে দাঁড়িয়ে গেলাম দু’জনেই। ‘কেমন আছিস?’ ছ্যাৎ করে উঠল বুকের ভেতরটা ওর কথা শুনে। ‘ভালো’–কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে উত্তর দিলাম আমি। সকালের নরম আলোয় ভেজা ওর সমস্ত শরীর। হরিণীর মত টানা টানা দুটি চোখের উপর ঝুলছে লক্স কাটা ঘন কালো চুল। কয়েক মুহূর্তের কথোপকথনে আমি স্থবির হয়ে গেলাম। মেয়েকে স্কুলে ছাড়তে এসেছিল দেবাদৃতা। জীবনের মধ্য গগনে এসেও ওর সৌন্দর্য এতোটুকু ম্লান হয়নি, বরং আরো বৃদ্ধি পেয়েছে ওর ঐ সম্পত্তির সীমানা। এতগুলো বছর পর আবারও আমাদের পুরানো স্মৃতিগুলো নামতে চাইছে ওর বন্ধনহীন, বে-লাগাম চুলের গভীরে।

বহুদিন আগের স্বপ্নগুলো আমার সম্মুখে আছড়ে পড়ে। অযত্নে,অবহেলায় ওদের হারিয়ে যাওয়ার পথ এতদিন রুদ্ধ ছিল। সবুজ ঘাস ঠেলে এবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে ওরা। আমার ব্যস্ততার পালে হাওয়া দিয়ে দেবাদৃতা বলে ওঠে– “আচ্ছা, এতদিন পর দেখা হল কোথাও একটু বসা যায় না?” মরমে মরে যেতে ইচ্ছে করলো আমার। এতদিন যে কথা আমি বলতে পারিনি, সেই কথা দেবাদৃতার মুখে শুনেও আমি আমার কর্তব্যের প্রতি অবহেলা করতে পারিনি। ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার হুইসেল বেজে উঠলো।অফিসে সময়মতো পৌঁছাতে এই ট্রেনটাই ধরতে হবে আমাকে। অগত্যা ছুটে গিয়ে উঠতে হলো গাড়ির শেষ বগিতে। চলন্ত ট্রেনের মধ্যে দাঁড়িয়ে আমার জন্য দেবাদৃতার চোখে এত গভীর প্রেম এই প্রথমবার উপলব্ধি করলাম আমি।


লেখক পরিচিতি : অর্দ্ধেন্দু গায়েন
জন্ম উত্তর চব্বিশ পরগনার যোগেশগঞ্জের মাধবকাটী গ্রামে।পেশায় সরকারী চাকুরী হলেও নেশা পড়াশোনা , ইচ্ছে হলেই লেখা-সে কবিতা, ছোটগল্প, অণুগল্প, প্রবন্ধ যা কিছু হতে পারে, অবসরে বাগান করা,ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের সঙ্গে খেলা ইত্যাদি।তবে সব পরিচয়ের সমাপ্তি ঘটে সৃষ্টিতে --পাঠক যেভাবে চিনবেন আমি সেভাবেই থেকে যাবো।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

লেখা আহ্বান - বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন

দীপায়ন