লেখক : অংশুমান ভট্টাচার্য
অর্ক যখন ব্যাট করতে নামল, বেলঘরিয়া স্পোর্টিং এর অবস্থা তখন একেবারেই ভাল না। দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরুর আধঘন্টার মধ্যেই ফিরে গেছে দলের দুই ওপেনার, স্কোরবোর্ডে রান দেখাচ্ছে মাত্র দশ। অথচ লিগ জিততে হলে এই শেষ ম্যাচটা জিততেই হবে অর্কদের।
সিএবির দ্বিতীয় ডিভিশন লিগের ম্যাচ চলছে জাগরণী ও বেলঘরিয়া স্পোর্টিং-এর মধ্যে, লিগ টেবিলের এক বনাম দুই এর লড়াই। লিগে বেলঘরিয়া স্পোর্টিং এর এবারের উত্থান চমকপ্রদ। মিলন সঙ্ঘ, বেলগাছিয়া অ্যাথলেটিকদের মতো ক্লাবদের হারিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে তারা। নেপথ্যে তাদের দলগত সংহতি এবং ব্যাট হাতে তরুণ তুর্কি অর্ক ভট্টাচার্যের অবিশ্বাস্য ফর্ম। কিন্তু জাগরণীকে হারাতে না পারলে এতদিনের সমস্ত পরিশ্রম বৃথা। জাগরণীর সাথে অর্কদের ক্লাবের এখনও এক পয়েন্টের ব্যবধান। লিগের শেষ ম্যাচটা তাই ‘মাস্ট উইন’ হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্কদের কাছে।
অর্কর কাছে ব্যক্তিগতভাবেও এই ম্যাচের গুরুত্ব অপরিসীম। এমনিতেই পুরো টুর্নামেন্টে অনবদ্য পারফরমেন্সের জন্য বেশ কয়েকটা বড় ক্লাবের কর্তাদের নজর পড়েছে অর্কর উপর। এই ম্যাচে ভাল খেলে ক্লাবকে চ্যাম্পিয়ন করতে পারলে পরের মরসুমে নিশ্চিত বড় কোনও ক্লাবে সুযোগ পাবে সে। এছাড়াও এই ম্যাচটা দেখতে সিএবির একজন নির্বাচকও উপস্থিত আছেন মাঠে, তাঁর সামনে ভাল পারফর্ম করতে পারলে বাংলা দলে ট্রায়ালের জন্য ডাকও পড়তে পারে অর্কর।
অথচ তিনশো নব্বই রান তাড়া করতে নেমে ইনিংসের শুরুটা একেবারেই ভাল হয়নি অর্কদের। জাগরণী শক্তিশালী দল, তাছাড়া ওদের দলের খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতাও বেশি। সকালের সেশনে জাগরণীর দুই ফাস্ট বোলারই ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। মাঠে নেমে অর্ক প্রথম যেই বলের সম্মুখীন হল, অফস্টাম্পের লাইনে পড়ে আউটস্যুইং করে বেরিয়ে গেল। খোঁচা দিতে দিতে কোনমতে বেঁচে গেল অর্ক। জ্যেঠুমণির কথাগুলো মনে পড়ল অর্কর, “জানিস অর্ক, ব্যাটসম্যানের জীবন কিন্তু অনেকটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের মতো। আমাদের জীবনে যেমন প্রত্যেকটা দিন নতুনভাবে শুরু হয়, একজন ব্যাটসম্যানের কাছেও প্রতিটা বলেই নতুনভাবে ইনিংস শুরু হয়। একজন বোলার ওভারে পাঁচটা বল খারাপ করলেও তার কাছে আরও একটা বল, একটা সুযোগ থাকে ভুল শোধরানোর, উইকেট নেওয়ার। ব্যাটসম্যানদের কিন্তু সেই সুযোগ নেই, একবার ভুল হলে বা মনোযোগ একটু সরলেই আউট। ইনিংসের শুরু হোক বা সেট হয়ে যাওয়ার পর হোক, প্রতিটা বলে সমান মনঃসংযোগ রেখে খেলবি সবসময়।”
অর্কর ক্রিকেটার হওয়ার পেছনে ওর জ্যেঠুর অবদান অপরিসীম। খেলাটার প্রতি আগ্রহ গড়ে তোলা হোক, ছোট্ট অর্ককে প্রথমবার ব্যাট কিনে দেওয়া হোক, বা ছুটির দিনে ছোট্ট অর্কর সাথে খেলাই হোক – সবেতেই ছিলেন দিব্যেন্দুবাবু , অর্কর জ্যেঠুমণি। প্রথমবার তার স্থানীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে যাওয়াও জ্যেঠুমণির হাত ধরেই। অফিসের যত কাজই থাক না কেন, অর্কর কোনও গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ থাকলে তার জ্যেঠুমণি মাঠে আসবেই । কিন্তু আজ …
বিজয়কে সাথে নিয়ে পরের দেড় ঘন্টা সময় ক্রিজে কাটিয়ে দিল অর্ক। শুরুর ধাক্কাটা একটু হলেও সামলে নেওয়া গেছে, যদিও রান বেশি ওঠেনি। কিন্তু তাল কাটল লাঞ্চের ঠিক কিছুক্ষণ আগে। জাগরণীর অফস্পিনারকে স্যুইপ করতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে আউট হল বিজয়। লাঞ্চের সময় বেলঘরিয়া স্পোর্টিং এর স্কোর দাঁড়াল তিন উইকেটে সাতাশি রান, অর্ক চব্বিশ নট আউট।
ড্রেসিংরুমে ফিরে অর্ক দেখল কোচ সমরেশ ব্যানার্জি তখনও বকে চলেছেন বিজয়কে, “এত ভাল পার্টনারশিপটা চলছিল, কেন উইকেটটা ছুঁড়ে দিয়ে এলি? ওরা সাইকোলজিক্যাল অ্যাডভান্টেজও পেয়ে গেল। ম্যাচটার গুরুত্ব কি তোকে আলাদা করে বলে দিতে হবে বিজয়?” অর্ক জানে সমরেশ স্যার এমনিতে ঠান্ডা মাথার মানুষ, কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সেট হয়ে গিয়ে বিজয়ের উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসাটা মেনে নিতে পারছেন না কিছুতেই।
“অলোক আর অর্ক – এই দু’জন যদি টি অবধি দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে ম্যাচটা বাঁচানো যেতেও পারে”, কথাটা বলল টিমের কিপার পিন্টুদা।
“জাগরণী অতো সহজে ছেড়ে দেবে ভাবছিস? আর ড্র করে ম্যাচ বাঁচিয়ে লাভটাই বা কী?” সমরেশ স্যারের গলা গম্ভীর।
“ক্রিকেটের মাঠ হোক বা জীবনের ময়দান, মনে রাখবি অসম্ভব বলে কিন্তু কিছুই হয় না। আর তা ছাড়া কথায় বলে Life is uncertain, সেরকম ক্রিকেটও মহান অনিশ্চয়তার খেলা, ভাগ্যের ব্যাপার তো আছেই, কিন্তু তোকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিজের একশো শতাংশ দিয়ে লড়াই করে যেতে হবে।” জ্যেঠুমণির কথাগুলো ভেসে উঠল অর্কর মনে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিতে সমরেশ স্যার ঠিকই বলেছেন, ড্র করে সত্যিই অর্কদের কোনও লাভ নেই, আর তাদের ম্যাচ জেতার আশা ক্ষীণ।
লাঞ্চের পর ক্যাপ্টেন অলোকদার সাথে ব্যাট করতে নামল অর্ক। অর্ক আজ অযথা কোনো ঝুঁকি নিচ্ছে না, ঠাণ্ডা মাথায় মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছে ক্রিজে। টিমের ক্যাপ্টেন অলোক সরকারের সাথে পার্টনারশিপ জমে উঠেছিল অর্কর। ব্যক্তিগত বাহান্ন রানে অলোকদা যখন আউট হল দলের রান তখন একশো বাহাত্তর। ছ’নম্বরে ব্যাট করতে নেমে অলরাউন্ডার সুমন অবশ্য বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারল না অর্ককে। টিমের শেষ প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান পিন্টুদা নামল সাত নম্বরে। চা-বিরতির সময়ে বেলঘরিয়া স্পোর্টিং এর স্কোর পাঁচ উইকেট হারিয়ে দুশো পাঁচ। বাহাত্তর রানে তখনও অপরাজিত অর্ক। ম্যাচ জিততে হলে প্রয়োজন আরও একশো পঁচাশি রান।
চা বিরতিতে ড্রেসিংরুমে ফিরে অর্ক দেখল দলের সবার মুখই গম্ভীর। হাতে প্রায় তিরিশ ওভার বাকি। একটু চালিয়ে খেললে এই টি-টোয়েন্টির যুগে তিরিশ ওভারে একশো পঁচাশি রান তোলা সম্ভব। কিন্তু হাতে উইকেট নেই, ব্যাটসম্যানরা প্রায় সবাই ফিরে এসেছে অর্ক আর পিন্টুদা ছাড়া, বাকিরা সবাই বোলার। একটু আধটু ব্যাট করতে পারলেও ম্যাচ জেতানোর আশা তাদের থেকে করা যায় না। ম্যাচ বাঁচানোর আশাও ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে।
চা-বিরতি শেষে মাঠে নামার মুখে পিন্টুদা অর্ককে বলল, “দু’-তিন ওভার পর থেকে আমি একটু চালিয়ে খেলে ট্রাই করব যদি কিছুটা রান কভার করা যায়। তুই একটা দিক ধরে খেলিস, তোকে কিন্তু শেষ অবধি থাকতে হবে।” অর্ক নিজেও জানে, ম্যাচটা বাঁচাতে হলে শেষ অবধি ওর থাকাটা খুব প্রয়োজন।
দু’ওভার পর থেকেই পিন্টুদার পিঞ্চ হিটিং শুরু হল। বিপক্ষের এক স্পিনারের ওভারে তিনটে ছয় মারল, রেহাই পেল না মিডিয়াম পেসারও। কিন্তু পিন্টুদার এই তাণ্ডব দীর্ঘস্থায়ী হল না। কিছুক্ষণ পর বোলিং পরিবর্তন করল জাগরণী এবং ফাস্ট বোলারের স্লোয়ার বলে ছয় মারতে গিয়ে টাইমিং মিস করে আউট হল পিন্টুদা। দলের রান তখন দুশো পঞ্চান্ন। বাইশ ওভারে আরও একশো পঁয়ত্রিশ রান প্রয়োজন।
দলের শেষ প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানও ফিরে গেছে। অর্ক জানে, এখন সব দায়িত্ব ওর কাঁধে। ম্যাচ বাঁচানোর চেষ্টা করা বৃথা, ড্র করাও হারেরই সমান। জিততে না পারলে এতদিনের ভাল পারফরমেন্স, দলের সবার লড়াই – সব বৃথা হয়ে যাবে।
জ্যেঠুমণি বলত, “জীবন তোকে মোক্ষম সুযোগ একবারই দেবে। পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক, বড় খেলোয়াড়েরা কিন্তু সেটাকেই কাজে লাগায়। সৌরভের কথাই ধর। লর্ডসের স্যাঁতস্যাঁতে পিচ, মেঘলা আবহাওয়া, পুরো সফরে ট্যুর ম্যাচগুলোয় লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাট করা ছেলেটাকে জীবনের প্রথম টেস্টে প্রথম সেশনে তিন নম্বরে ব্যাট করতে পাঠিয়ে বিষাক্ত স্যুইং এর মুখে ঠেলে দিল । এমনিতেই টিমের অনেকে ওকে দলে চায়নি, আর ব্যর্থ হলে তো কেরিয়ারের ইতি ওখানেই। পরিবেশ পরিস্থিতি সবই প্রতিকূলে, তবুও সেঞ্চুরি করে গেল আর ঐ ইনিংসই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওর ভিত গড়ে দিল। আবার দল থেকে বাদ পড়ে ফিরে আসার সময়েও দেখ, দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে খেলতে হল বাউন্সি পিচে, যেই বাউন্সের বিরুদ্ধে দুর্বলতার জন্যই সমালোচিত হতে হল পুরো কেরিয়ার জুড়ে। সেবারও কামব্যাকেই হাফ-সেঞ্চুরি করল। ক্রিকেট হোক বা জীবন, তুই যে কোন পেশাতেই যা, শত বাধাতেও যারা সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারে, তারাই সফল হয়।”
এর আগে একবার এই সুযোগ হাতছাড়া করেছিল অর্ক। অনূর্দ্ধ সতেরো বাংলা দল নির্বাচনের আগে ইন্টার-ডিস্ট্রিক্ট টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচে প্রথম বলেই শূন্য রানে আউট হয়ে ফিরেছিল সে। তাও বিপক্ষের এক পার্ট টাইম স্পিনারের ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে। অথচ স্পিনের বিরুদ্ধে অর্ক বরাবরই খুব ভাল খেলে। বাড়ি ফেরার পর জ্যেঠুমণি তাকে বলেছিল, “কনফিডেন্স আর ওভার কনফিডেন্সের ব্যবধান খুবই সূক্ষ্ম, যেরকম একটু এদিক ওদিক হলেই টাইমিং এর গন্ডগোল হয়, ঠিক সেরকম। আত্মবিশ্বাস না থাকলে কেউ জীবনে বড় হতে পারে না, আবার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস থাকলে তার পতন অনিবার্য। একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে বোলারকে ভয় পাওয়া যেমন উচিত নয়, তেমনি তাকে সম্মান দেওয়াও উচিত। সে তোর বিপক্ষে কোনও আন্তর্জাতিক বোলার থাক বা কোনও অনামী পার্ট টাইম বোলার। আজ তুই সেটাই করলি না, পার্ট টাইম স্পিনার দেখে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে প্রথম বলেই স্টেপ আউট করতে গেলি। বোলারের নাম দেখে নয়, সব সময় বলের মেরিট অনুযায়ী খেলবি অর্ক।”
আজ ফের একবার সুযোগ এসেছে অর্কর সামনে। দলকে চ্যাম্পিয়ন করার সুযোগ, নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ – নিজের সবটুকু দিয়ে শেষ চেষ্টা করবে সে আজ। আট নম্বরে ব্যাট করতে নামা তন্ময়দাকে গিয়ে অর্ক বলল অযথা ঝুঁকি না নিতে, যতটা সম্ভব স্ট্রাইক রোটেট করার চেষ্টা করতে।
পরবর্তী দু’ঘন্টা মাঠের কতিপয় দর্শক এক অবিস্মরণীয় ইনিংসের সাক্ষী থাকল। সেই ইনিংসে আগ্রাসন যেমন আছে, আবার ঠান্ডা মাথায় ডিফেন্সও আছে। কভার ড্রাইভ, স্ট্রেট ড্রাইভ, পুল, কাট, স্যুইপ-এর মতো ক্রিকেটীয় শট আছড়ে পড়ল সমগ্র মাঠ জুড়ে। দিনের শেষ ওভারের তৃতীয় বলে অর্কর ড্রাইভে এক্সট্রা কভারের ওপর দিয়ে গিয়ে বলটা যখন বাউন্ডারি লাইন স্পর্শ করল, স্কোরবোর্ড বলছে বেলঘরিয়া স্পোর্টিং আট উইকেট হারিয়ে তিনশো একানব্বই রান, অর্ক ভট্টাচার্য একশো বিরাশি নট আউট। প্রথমবার দ্বিতীয় ডিভিশন চ্যাম্পিয়ন হল বেলঘরিয়া স্পোর্টিং। ম্যাচের সেরা এবং লিগের সেরা প্লেয়ারের সম্মান পেল অর্ক। সতীর্থদের কাঁধে করে ড্রেসিংরুমে ফেরার পর সমরেশ স্যার এগিয়ে এসে পিঠ চাপড়ে দিয়ে বললেন, “আমার নিজের চোখে দেখা অন্যতম সেরা ইনিংস, অবিশ্বাস্য। তুই সত্যিই বিরল প্রতিভা অর্ক, তোর মতো ছাত্র পেয়ে আমি গর্বিত।”
রাতে বাড়ি ফিরে ড্রয়িংরুমে টাঙানো জ্যেঠুমণির ছবিটার দিয়ে এগিয়ে গেল অর্ক। স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ছবিটার দিকে। তার জ্যেঠুমণি স্বপ্ন দেখত অর্ক একদিন ভারতের হয়ে খেলবে। আর পাঁচটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মত প্রথমে অর্কর মা বাবাও চাননি ছেলে পড়াশোনা ফেলে সারাদিন ক্রিকেট নিয়ে মেতে থাকুক, জ্যেঠুমণিই বুঝিয়েছিল তাদের। অর্কর বাবাকে দিব্যেন্দুবাবু বুঝিয়েছিলেন, “অর্কর মধ্যে প্রতিভা আছে। আর ছোট থেকেই ক্রিকেটই ওর ধ্যান-জ্ঞান। মন থেকে যেটা ভালবাসে, সেটা না করে বাধ্য হয়ে কোন কিছু করলে ও কোনদিন জীবনে বড় হতে পারবে না। ওকে ক্রিকেটটা নিজের মত খেলতে দে, দেখিস ও একদিন ইন্ডিয়ার হয়ে খেলবেই।”
কিছু বছর আগে জ্যেঠুমণির হার্টে ব্লকেজ ধরা পড়ল। তড়িঘড়ি পেসমেকার না বসালে জীবন বাঁচানো মুশকিল বলে দিলেন ডাক্তাররা। হাসপাতালে যাওয়ার সময়ে হাসতে হাসতে জ্যেঠুমণি অর্ককে বলেছিল, “কঠিন পিচ আছে, কিন্তু চিন্তা করিস না, ঠিক জিতে ফিরব। মনে রাখিস জীবনও কিন্তু ক্রিকেটের মতোই। নন-স্ট্রাইকার এন্ডে কতজন আসবে যাবে, কেউই কিন্তু সর্বক্ষণ থাকবে না। কেউ অল্পক্ষণ থাকবে, কেউ একটু বেশিক্ষণ, কিন্তু চিরস্থায়ী হবে না। এভাবেই আমাদের নিজের জীবনটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, যেরকম এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় মাঠে নিজেদের ইনিংস। প্র্যাকটিসটা ছাড়িস না।”
সেই লড়াই অবশ্য জিতেই ফিরেছিল জ্যেঠুমণি। কিন্তু দু’বছর আগে করোনার বিষাক্ত স্যুইং আর সামলাতে পারেনি, জীবনের ক্রিজ ছেড়ে চিরদিনের মতো বিদায় নিতে হয়েছিল জ্যেঠুমণিকে।
অর্ক জানে না সে কোনদিন ভারতের হয়ে খেলে জ্যেঠুমণির স্বপ্নপূরণ করতে পারবে কিনা। কিন্তু আজ তার মনে আর কোন খেদ নেই, আজ মাঠে সে কোন ভুল করেনি, নিজের একশো শতাংশ দিয়ে এসেছে। জ্যেঠুমণির ছবির দিকে অর্ক নিজের মনেই বলে ওঠে, “আজ কিন্তু আমি সুযোগ হাতছাড়া করিনি জ্যেঠুমণি।”
লেখক পরিচিতি : অংশুমান ভট্টাচার্য
পেশায় ইঞ্জিনিয়র, বিভিন্ন ম্যাগাজিনে লেখেন।