লেখক : শিবানী ভট্টাচার্য বন্দ্যোপাধ্যায়
বইয়ের নাম : যুগাচার্য্য মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ
লেখক : ড. রঘুপতি মুখোপাধ্যায়
প্রকাশক : শ্রী সবিতাদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, ড. রবীন্দ্রনাথ কর
সংস্করণ : দ্বিতীয় সংস্করণ, ফেব্রুয়ারি, ২০১২
দৈর্ঘ্য : ৬৪ পাতা
অবয়ব একটাই, কিন্তু রং অনেক – হয়ত খুব সহজ করে বললে এমনটাই বলা যায়। আসলে তাঁর জীবন মহাজীবন। সে জীবনে নানা ধারা, তাই প্রকাশও বহু।
ভারতীয় কৃষ্টি ও আধ্যাত্মিকতার এই মূর্ত প্রতীককে প্রাথমিক পরিচয়ে সারা পৃথিবী চেনে একজন মহান যোগী হিসেবে। আরও স্পষ্ট করে বললে লঘিমাসিদ্ধ মহাযোগী হিসেবে। পরমহংস যোগানন্দ তাঁকে অভিহিত করেছেন ভাদুড়ী মহাশয় হিসেবে। পরমহংস যোগানন্দের লিখিত পৃথিবী বিখ্যাত গ্রন্থ ‘Autobiography of a Yogi’-র সপ্তম অধ্যায়ের ‘The Levitating Saint’ তিনিই। সনন্দলাল ঘোষের লিখিত ‘Mejda’ গ্রন্থের ‘SAINT PSEUDO AND TRUE’ অংশেও এই নগেন্দ্রনাথ ভাদুড়ীর সশ্রদ্ধ উল্লেখ আছে।
১৮৮১ সালে মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ হয় শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসের সঙ্গে। ‘COMPANIONS AND FOLLOWERS OF RAMAKRISHNA’ গ্রন্থটিতে এই সাক্ষাতের এবং মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ ভাদুড়ীর জীবনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা আছে। এছাড়াও মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের জীবনের নানা ঘটনার উল্লেখ আছে শ্রীশ্রীনগেন্দ্র মঠের দ্বিতীয় মোহন্ত ভক্তিপ্রকাশ ব্রহ্মচারীর লেখা – ‘শ্রীশ্রীঠাকুর যুগাচার্য মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের অনুধ্যান’-সহ বিভিন্ন গ্রন্থে। বিভিন্ন উৎসে ছড়িয়ে থাকা এই মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের মহাজীবনকেই একজন গবেষকের দৃষ্টি থেকে একটি মলাটের মধ্যে ধরার চেষ্টা করেছিলেন শ্রীশ্রীনগেন্দ্র মঠের প্রয়াত আচার্য ডঃ রঘুপতি মুখোপাধ্যায়। তারই ফলশ্রুতি ‘যুগাচার্য্য মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ’ নামক গ্রন্থটি।
এই গ্রন্থের সূচনাতে রয়েছে মহর্ষি শ্রীশ্রী নগেন্দ্রনাথের প্রশস্তি এবং তাঁর প্রণাম মন্ত্র। তারপর রয়েছে রঘুপতি মুখোপাধ্যায়ের লিখিত একটি ভূমিকা। এরপর শুরু হয়েছে মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের মহা জীবনের কাহিনি। এই কাহিনির সূচনা পঞ্চম পৃষ্ঠা থেকে এবং সমাপ্তি ২৮ পৃষ্ঠায়। তারপর আছে পঞ্চাশৎ পদাবলী ক্ষণিকা কণিকা শতক, শ্রীশ্রীনগেন্দ্র আবাহন, আরতি এবং মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ লিখিত প্রতিজ্ঞা শতক, প্রার্থনা ইত্যাদি। বলা হয়েছে – “হরিভজনং হি আত্মনো ঘাসঃ” হঠাৎ হরিভজনই আত্মার খাদ্য। নগেন্দ্রনাথ প্রতিমুহূর্তে হরি ভক্তির কথা বলেছেন। তাই নগেন্দ্রনাথের রচিত হরিভক্তিমূলক একটি পরমার্থ সংগীতও এখানে সংযোজিত হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে কিছু চিত্র। এই সবকিছুর মধ্যে দিয়েই ধরার চেষ্টা হয়েছে তাঁর জীবনের এবং কার্যধারার একটা পূর্ণরূপ।
অধ্যাপনার সঙ্গে সংযুক্ত থাকা ডঃ রঘুপতি মুখোপাধ্যায়কে অভিজ্ঞতার যে বৃত্তে স্থিত করেছিল, সেখান থেকে এসেছিল অর্জন, এবং সেই অর্জন প্রকাশ সাফল্য। এই গ্রন্থের বর্ণনা প্রতিমুহূর্তে তা প্রমাণ করে। মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের জীবনের প্রত্যেকটি ঘটনা এবং তাঁর জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা প্রত্যেকটি ঘটনাই এই গ্রন্থে তুলে ধরেছেন ডঃ রঘুপতি মুখোপাধ্যায় স্বল্প পরিসরে। তথ্য প্রচুর, কিন্তু তা কখনও ভারাক্রান্ত করে না।
এই ধরণের গ্রন্থে শ্রদ্ধা, ভক্তি এবং আবেগ স্বাভাবিকভাবেই সরব থাকে, এবং এক্ষেত্রেও তা লক্ষ্য করা যায়। তবুও, এ কথা স্বীকার করতেই হয় যে, এই ধরণের গ্রন্থে যা যা কাঙ্ক্ষিত বা প্রার্থিত থাকে, তা সবই পূরণে সার্থক গ্রন্থকার। সুতরাং ভারতীয় আধ্যাত্মিক গৌরবে যাঁরা নিজেদের গৌরবান্বিত মনে করেন, তাঁদের কাছে এই গ্রন্থটি যে সাদরে পরম মূল্যবান বলে গৃহীত হবার যোগ্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
লেখক পরিচিতি : শিবানী ভট্টাচার্য বন্দ্যোপাধ্যায়
লেখিকার জন্ম হাওড়ার বালিতে। কর্মসূত্রে শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন এবং বিবাহ সূত্রে নদিয়ার রানাঘাটে আসা। প্রতিমুহূর্তের সঙ্গী শাস্ত্র চর্চা, কবিতা লেখা, গ্রন্থ পাঠ, সংগীত চর্চা এবং কিছুটা লেখা লিখির চেষ্টা।