লেখক : আফরিন আক্তার অন্তরা
মানুষ বলে – একাকিত্ব সুন্দর। একথাটা আমরা প্রায়ই শুনি। কেউ বলেন, “একা থাকতে পারব”, “একা থাকতে পারলে ভাল হত”, “আমার কাউকে দরকার নেই”, “আমি একা সবকিছু সামলে নিতে পারব”, “অনেক শান্তিতে থাকব, হাসিখুশি থাকব” ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব আসলে বই-পুস্তকেই মানায়, কিংবা মানুষের মুখে মুখে। বাস্তব জীবনে একা থাকাটা ভীষণ কঠিন। যখন গভীর রাত নেমে আসে, তখন সকল কষ্টের বাঁধ ভেঙে অশ্রু হয়ে ঝড়ে পড়ে, মানুষের মন তখন সঙ্গ চায়। ইশ, যদি মনের সব কষ্টগুলো কাউকে বলতে পারতাম। কেউ যদি থাকত, তাহলে মন্দ হত না। আমিও শুনতাম, সেও শুনতো। কষ্টগুলো ভাগাভাগি হয়ে যেত।
২০২৪ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় ৩৫০ জন আত্মহত্যা করেছিল। তাদের মধ্যে ৪০-৬০ শতভাগ মানুষের মধ্যে প্রধান এবং অন্যতম কারণ ছিল নিঃসঙ্গতা। নিঃসঙ্গতার ফলে মানুষের জীবন থমকে দাড়ায়। মানুষ যখন অতি মানসিক চাপে থাকে, তখন তাদের সঙ্গর প্রয়োজন হয়। অথচ সেই সময়ে মানুষের ছায়া দেখাটাও অলীক স্বপ্নের মতে মনে হয়।
মানুষের জীবনে সুখ-দুঃখ দু’টিই বিরাজমান। এবং কথিত আছে, মানুষ নাকি মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে থাকে। কথাটা কিছুটা একপাক্ষিক। সুখের সময় পাশে থাকলেও দুঃখ এলে কেউ পাশে থাকে না। দুঃখ ভাগাভাগি করতে বোধহয় কারও ভালই লাগে না। তাই দুঃখ এলে মানুষ সঙ্গ খোঁজে। সুখের কথা শুনতে এলে মানুষের সময় নষ্ট হয় না। অথচ দুঃখের গল্প শুনতে গেলেই মানুষের সময় ফুরিয়ে যায়। তখন ব্যস্ততা তাদের পিছু ছাড়ে না। তবে দুঃখজনক হলেও আরেকটি সত্য হ’ল, কিছু মানুষের সুখের সময়ও কেউ পাশে থাকে না। তারা হয়ত এই পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান কেউ। কারণ যাদের পাশে কখনও কেউ ছিল না, তাদের কোন আশা থাকে না। আর আশা না থাকলে মানুষ দুঃখ কম পায়। তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, তাদের পাশে কেউ দাঁড়াবে না। তারা একাকিত্বটাকেই তাদের শক্তি বানিয়ে ফেলে। সত্যিকার অর্থে তাদের সঙ্গর প্রয়োজন হয় না। বরং তারাই মানুষের সঙ্গী হন।
একাকিত্বতা কখনই সুন্দর ছিল না। মানুষকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বোধহয় একথার প্রচলন শুরু হয়। এখন আমাদের সবার করণীয় কাজ একটাই – নিঃসঙ্গ মানুষকে সঙ্গ দেওয়া। আমাদের সঙ্গ দেওয়ার ফলে যদি কারও মুহূর্ত সুন্দর হয়, কারও জীবন বেঁচে যায়, তাহলে তো মন্দ নয়। কিছুটা সময় না হয় ব্যয় হবে, কিন্তু কারও জীবন তো বেঁচে যাবে। আর তারা যে শুধু তাদের গল্পই শোনাবে, তা তো নয়। তারা না শুনলেও কেউ না কেউ আপনার গল্প শোনার জন্য বসে রইবে। তখন মানুষের আর কোন আক্ষেপ থাকবে না। কষ্টগুলো এইভাবেই ভাগাভাগি হয়ে যাবে।
লেখক পরিচিতি : আফরিন আক্তার অন্তরা
শিক্ষার্থী