পর্দার ওপারে

লেখক : প্রসূন রায় চৌধুরী

সকাল থেকেই ছটফট করছেন মিহিরবাবু। নাতির কাছে আবদার – একবার তাঁর প্রাণের সিনেমা হলের সামনে যেতে চান। নিজের পায়ে এখন আর খুব বেশী হাঁটাচলা করতে পারেন না, লাঠিই তাঁর একমাত্র সঙ্গী।

রিক্সায় পৌঁছে নামতে গিয়েই হোঁচট, ভেঙে গেল চশমা। ঝাপসা চোখে দেখলেন, হাতুড়ির ঘায়ে জর্জরিত দেওয়াল, ইঁট ধসে পড়ছে। নিজের স্বপ্ন চোখের সামনে ভেঙে পড়ছে, ভগ্নদশায় পরিণত হয়েছিল বহু আগেই। মাল্টিপ্লেক্সের রমরমায় হল চালাতে নাভিশ্বাস উঠেছিল। মনে পড়ে গেল সেইসব সোনালি দিন – প্রথম শোয়ের ভিড়, টিকিট ব্ল্যাক, এলাকার কত যুবক-যুবতীর প্রেমের সাক্ষী এই হল।
পাশে দাঁড়ানো নাতি একসময় চিৎকার করে উঠল, “দাদু, ওরা হলের খোদাই করা নামটা ভাঙছে।”
সরলা। মিহিরবাবুর স্ত্রীর নামেই নামাঙ্কিত হলটি। চশমা ভেঙে বোধহয় ভালই হয়েছে। মিহিরবাবু মুখ ফিরিয়ে নিলেন।

ফিরতি পথ ধরলেন, অপরপ্রান্তে মাল্টিপ্লেক্সের ঝাঁ চকচকে কাঁচের দেওয়ালে রোদের আলো পড়ে ঠিকরে বেরোচ্ছে, চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে মিহিরবাবুর। ভিড়, কোলাহল, নতুনের আড়ম্বর – সবই যেন কালের নিয়মে ধ্বনিত নতুন অধ্যায়ের সূচনা। পাশের রক্তদান শিবিরে তখন মাইকে বাজছে,
“চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়
আজিকে যে রাজাধিরাজ কাল সে ভিক্ষা চায়।”


লেখক পরিচিতি : প্রসূন রায় চৌধুরী
লেখালেখি আমার ভালোলাগা, শব্দেই খুঁজি পাই অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। পেশায় প্রযুক্তির দুনিয়ায় থাকলেও, ছন্দ, গল্প আর অক্ষরের খেলাই টানে সবচেয়ে বেশি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।