লেখক : সাজ্জাদ হোসাইন শাকিল স্বাধীন
সেদিন অগ্নিঝরা সেই তপ্ত দুপুরের রুদ্র রৌদ্রতাপে পুড়ে
হারিয়ে গিয়েছিলাম বিষণ্ণতার তেপান্তরে।
অতঃপর অনুভূতির অগগন শতাব্দী ধরে স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেছিলাম,
মধ্যাহ্নের প্রখর তেজী অথচ নিঃসঙ্গতার নূরানীতে
নিজেকে আড়াল করে রাখা সূর্যদেবের পানে;
হয়ত আনমনে হাজারবার তার সাথে তুলনাও করেছিলাম নিজেকে।
জানো?
সূর্যদেবের সাথে দূরত্বের পার্থক্যটা আমার অনেক ছিল,
কিন্তু সেদিন বুঝেছিলাম চন্দ্রের থেকে সূর্যের সাথে মিলটা আমার একটু বেশিই।
কারণ—
চন্দ্রের স্নিগ্ধ আলোয় আলোকস্নান করার আকাঙ্ক্ষা সবারই থাকে,
কিন্তু প্রকৃতির প্রয়োজনে মধ্যাহ্নের তেতে ওঠা তেজদীপ্ত রৌদ্রে
রৌদ্রস্নান করার ইচ্ছা কজনেরই বা হয়?
আচ্ছা…?
তোমরা বলো চন্দ্র নাকি খুব একা!
কিন্তু তোমাদের অবচেতন দৃষ্টিরা কি কখনও দেখেছে
চন্দ্রের চতুর্দিকে মিটিমিটি জ্বলতে থাকা অগগন নক্ষত্রগুলো?
কখনও কি দেখেছে?
চন্দ্রদেবের নিত্য সহচরী রোহীনি, অশ্বিনী কিংবা বিশাখার মত তারকা দেবীকে?
হ্যাঁ…
একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখবে
চন্দ্র নিঃস্ব, তবে নিঃসঙ্গ নয়।
অথচ সূর্যদেবের দিকে তাকাও—
গোটা ব্রহ্মান্ডের হৃৎপিণ্ড হয়েও নভঃনীল এই বিস্তৃত অন্তরীক্ষে
যেমন তাকে সময় দেওয়ার মত কেউ নেই,
তেমনই হয়ত ধরিত্রীর বুকের কোন মানবসন্তানেরও
এটা অক্ষিগোচর হওয়ার সামান্যতম কোন অবকাশ নেই।
অথচ দেখবে, পূর্ণিমা তিথিতে অথবা ভরা জোৎস্নায়
মানুষ চন্দ্রবিলাস, জোৎস্নাবিলাস ঠিকই করে!
কেন জানো? এ মানবকুল সৌহার্দ্য নয়, সৌন্দর্যের পূজারী।
তাই আর দশজন কবি, সাহিত্যিক কিংবা দার্শনিকের মত
একাকিত্বের প্রতীক হিসেবে চাঁদকে আমি উপমেয় করব না।
কারণ, অন্ততপক্ষে আমি জানি
ঘোর একাকিত্বের আলোয় নিজেকে লুকিয়ে রাখা সূর্যদেবের মত
চন্দ্র একা নয়! এক বিন্দুও নয়…
আমিও ঠিক তেমনি,
একটা সময় ভেবেছিলাম ঠিক চন্দ্রদেবের মতো
আমার পাশেও অনেক সারথী নক্ষত্র আছে।
কিন্তু স্নিগ্ধ শীতল রজনী আর সুশান্ত প্রভাতের সমাপ্তি শেষে যখন
নিজ আঙিনায় পা রাখলাম দীপ্ত দুপুরের মত হয়ে,
তখন এ সুবিস্তীর্ণ প্রকৃতির কয়েদখানায়
শুধু এবং শুধুমাত্র আমি নিজেকেই আবিষ্কার করলাম।
ঠিক সূর্যদেবের মত—
যার মোহনীয় শান্ত প্রভাত সবার হৃদয়ন্ত হয়,
যার চিরলাবণ্যময় গোধূলি সবার দৃষ্টিকে মুগ্ধতার মায়ায় বন্দী করে;
সেই একই সূর্য যখন সৃষ্টির বিধানে তপ্ত প্রহরের লালিমার আশ্রয় নেয়,
তখন পুরো প্রকৃতির আঙিনা থেকে সেই মুগ্ধ দৃষ্টিরা ক্ষণিকেরই হারিয়ে যায়
বিকল্প মুগ্ধতার সন্ধানে, ফের খুঁজে নেয় নিজেদের উপযুক্ত আশ্রয়।
অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না,
কিন্তু চির বাস্তব বাস্তবতা যখন জীবনের অধ্যায়ে পদার্পণ করল,
তখন না হয় আমিও অবসর নিলাম সৌন্দর্যের মায়াজাল থেকে।
“রাতের সরল স্নিগ্ধ প্রকৃতির কোলে বসে চন্দ্রবিলাস তো সবাই করে,
আমি নাহয় তপ্ত দুপুরের তিক্ত তেপান্তরে বসে সূর্যবিলাস করলাম”!!
লেখক পরিচিতি : সাজ্জাদ হোসাইন শাকিল স্বাধীন
জন্মস্থানঃ বাংলাদেশের সর্বোত্তরের জেলা পঞ্চগড় সদর উপজেলা। পিতাঃ রবিউল ইসলাম (পেশাঃ কৃষক) শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ পঞ্চগড় এ একাদশ শ্রেণীতে মানবিক বিভাগ এ (বর্তমান) । শখঃ গল্প, কবিতা, উপন্যাস এবং যে কোনো সৃষ্টিশীল শিল্পকর্ম

