ভিক্ষুকের জীবিকা পরিবর্তন

লেখক : অমিতাভ প্রামাণিক

আমি শিয়ালদহ মেন শাখার নিত্যযাত্রী, গত পনের বছর ধরে চাকুরীর সূত্রে ঐ লাইনের ট্রেনে যাতায়াত করছি। ট্রেনের বেশকিছু নিত্যযাত্রী, হকার, এমনকি ভিক্ষুকদেরও মুখ চেনা হয়ে গিয়েছে আমার। ভিক্ষুকদের মধ্যে একজন ছিল মাধাই, পনের-ষোল বছর বয়স থেকে দেখছি আমি ওকে। ও ছিল জন্মান্ধ, ব্যারাকপুর থেকে দমদমের মধ্যে ট্রেনে ভিক্ষা করত। দেখতে দেখতে মাধাইকে বড় হতে দেখি, জীবনসঙ্গীও খুঁজে পায় সে, এবং একটি কন্যাসন্তানও হয়। স্বামী-স্ত্রী অন্ধ হ’লেও বাচ্চাটি ছিল সুনয়না। স্ত্রী-বাচ্চাকে নিয়ে মাধাই ট্রেনে-ট্রেনে ভিক্ষা করত। বর্তমানে দেখছি ভিক্ষুকেরাও তাদের জীবিকা পরিবর্তন করছে, এখন অনেকেই হাত পেতে ভিক্ষা নেয় না। কেউ ধূপকাঠি বিক্রি করে, কেউ চকলেট, কাউকে আবার হাতে মাইক নিয়ে গান গাইতে দেখি। প্রতিদিন এই গান শুনতে শুনতে এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে, যে আজকাল দূর থেকে গানের কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারি আমাদের কামরায় কে গান গাইতে গাইতে এগিয়ে আসছে। একদিন এক নতুন কণ্ঠ কানে এল, ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি – একি! আজ আমি কাকে দেখছি? মাধাই আজ গলায় স্পিকার হাতে মাইক নিয়ে এগিয়ে আসছে কিশোরকণ্ঠী হয়ে। বেসুরো গলায় গান গাইতে দেখে প্রথমে আমি অবাকই হলাম। পরে ভাবলাম, স্ত্রী-বাচ্চাকে নিয়ে হাত পেতে মাধাই সংসার চালাতে পারছে না হয়ত, তাই আজ তাকে জীবিকা পরিবর্তন করতে হয়েছে। পরিস্থিতির চাপে আজ ভিক্ষুকেরাও জীবিকা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে।


লেখক পরিচিতি : অমিতাভ প্রামাণিক
Librarian, R.I.O. Medical College, Kolkata 700073

One comment

  1. Ratan Chakraborty

    এই অভিজ্ঞতা লেখার জন্য ধন্যবাদ।ভিক্ষুকরা যদি হাত পেতে পয়সা বা খাবার না নিয়ে নিজেরা উদ্যোগী হয়ে কিছু আয় করার মতো কোনও নৈতিক পথ বেছে নিতে সমর্থ হয় তবে তাকে সাধ্য মতো সহ্যোগিতা করা ভিক্ষে দেওয়ার চেয়ে স্বস্তিকর।
    রতন চক্রবর্তী।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

মাসিক দীপায়ন প্রতিযোগিতা

মাসিক দীপায়ন পুরস্কার pop up