ট্রিপ

লেখক : রাজীব চক্রবর্ত্তী

দু’মাস হয়ে গেল। আর মাস সাতেক সময়। ডাক্তারবাবু বলেছেন হাজার তিরিশেক টাকা রেডি রাখতে। মানে মাসে প্রায় হাজার পাঁচেক টাকা। দিনে দেড়শো থেকে দুশো টাকা বেশি কামাতে হবে।
“লাইন এসে গেছে। গাড়ি আগে কর বুম্বা।”
লাইন ম্যানেজার ইউনিয়নের কুচো নেতার চিৎকারে চিন্তার জাল ছিঁড়ে যায় বুম্বার। যাত্রী তুলে অটো চালাতে চালাতে নিজের মনেই বলে, “এটাই লাস্ট ট্রিপ। দীপা না খেয়ে বসে থাকবে।”

খাওয়া দাওয়ার পরে দীপাকে কাছে টেনে নিয়ে ওর পেটে হাত বোলাতে বোলাতে বুম্বা বলে, “ডাক্তার নাগের সাথে কথা হয়েছে। বললেন, মিউনিসিপাল হাসপাতালে যেরকম চেকআপ হচ্ছে হোক। শুধু মাঝে মাঝে হাসপাতালের প্রেস্ক্রিপশানটা ওঁকে দেখিয়ে নিলেই হবে। বিশেষ কিছুর প্রয়োজন হ’লে ডাক্তার নাগ বলে দেবেন। আমি ডাক্তারবাবুর সাথে কথা বলেছি। তোমার ডেলিভারি ডাক্তার নাগের নার্সিং হোমেই হবে।”
“সে তো অনেক টাকার ধাক্কা। কোথা থেকে পাবে?” দীপার গলায় চিন্তার সুর।
“সে সব তোমায় চিন্তা করতে হবে না। আমার প্ল্যানিং হয়ে গেছে। তুমি শুধু এই ক’টা মাস আনন্দে থাকো। ডাক্তারবাবু বলেছেন, তোমায় আনন্দে রাখতে। সুস্থ বাচ্চার জন্ম দেওয়ার জন্য পুষ্টিকর খাবার, বিশ্রাম আর মনের আনন্দ খুবই প্রয়োজন।”
“টাকা কোথা থেকে আসবে? ধার করবে নিশ্চয়ই। কী দরকার! আশেপাশের সব মেয়েদের ডেলিভারি তো মিউনিসিপ্যালিটির হাসপাতালেই হয়।”
বুম্বা আবেগমথিত হয়ে ওঠে। দীপাকে আরও কাছে টেনে নিয়ে বলে, “আমাকে ভালবেসে সবার অমতে বিয়ে করলে। তোমায় সামান্য স্বাচ্ছন্দ্যটুকুও দিতে পারলাম না। আমাদের সন্তানের জন্ম দেওয়ার সময় তোমার কোনও কষ্ট হোক আমি চাই না।”
দীপা দুষ্টুমি মেশানো স্বরে বলে, “সবই বুঝলাম। কিন্তু টাকা কোথা থেকে …”
দীপার ঠোঁটে হাত দিয়ে থামিয়ে দেয় বুম্বা। “ওসব নিয়ে তুমি ভেবো না। দিনে আপ-ডাউন মিলে চারটে ট্রিপ এক্সট্রা মারলেই টাকা উঠে আসবে।”
“মারলেই! এটা কী ধরণের ভাষা বুম্বা? আগে তো তুমি এভাবে কথা বলতে না।” দীপার গলায় বিরক্তি।
“সরি।” দীপার হাত ধরে বলে বুম্বা, “কলেজে কোনওদিন আমাকে এইভাবে বলতে শুনেছ? সারাদিন স্ট্যাণ্ডে এইসব ভাষা শুনে শুনে নিজের অজান্তে আমার ভাষাও বদলে যাচ্ছে। বিশ্বাস করো, আমি নিজেও সচেতনভাবে এই ভাষায় কথা বলতে চাই না।”
চুপ করে দীপার দিকে চেয়ে থাকে বুম্বা। কত স্বপ্ন ছিল! পড়াশুনায় তো খারাপ ছিল না। ভেবেছিল গ্র্যাজুয়েশনের পরে চাকরির চেষ্টার সাথে সাথে অ্যাকাউণ্টসের একটা প্রফেশনাল কোর্স করবে। কিন্তু হ’ল না। বাবার হঠাৎ মৃত্যু সব ওলটপালট করে দিল। অনেক চেষ্টা করেও একটা ঠিকঠাক চাকরি জোগাড় করতে পারল না। এদিকে সংসারের চাপ। বাধ্য হয়ে রোজগারের রাস্তা দেখতেই হ’ল বুম্বাকে।
“কী ভাবছ?”
দীপার কথায় হুঁশ ফেরে বুম্বার। মুখে কষ্টের হাসি ছড়িয়ে বলে, “ভেবেছিলাম চাকরি করে তোমায় নিয়ে সংসার করব। তার বদলে তুমি এখন অটোওয়ালার বউ।”
দীপা বুম্বার চুলে হাত বুলিয়ে বলে, “চুরি-চামারি করছ না, নেতাদের চামচাগিরি কিংবা সিণ্ডিকেটের দালালির পয়সাতে তোমার সংসার চলছে না। খেটে রোজগার করছ। কোনও কাজ ছোট হয় না।”
“তাও…”
বুম্বাকে থামিয়ে দীপা বলে, “পয়সা রোজগার তো বেঁচে থাকার জন্য। যে টাকা তুমি অটো চালিয়ে রোজগার করো, সেই টাকার চাকরি করার জন্য লোককে কত পরিশ্রম করতে হয় জানো? সকাল থেকে রাত অবধি দৌঁড়তে হয়। তার থেকে এটা অনেক ভাল।”
“তা ঠিকই বলেছ। দুপুরে বাড়িতে খেয়ে একটু ঘুমিয়েও নেওয়া যায়,” হাসতে হাসতে বলে বুম্বা।
“অনেক বকবক করেছ। এবার একটু বিশ্রাম করো। আবার বিকেল হ’লেই তো অটো নিয়ে বেরোতে হবে।”

বিকেলে অটো নিয়ে স্ট্যাণ্ডের দিকে যেতে যেতে বুম্বা ভাবে, “কাল থেকে একটু আগে আগে বেরোতে হবে। সকাল-বিকেল দু’বেলা এক ঘণ্টা করে আগে গাড়ি লাগালেই এক্সট্রা চারটে ট্রিপ হয়ে যাবে। অনেক হয়েছে নিয়ম মানা। মাঝরাস্তায় ফ্লাইং ছয় নম্বর প্যাসেঞ্জার পেলেও এখন থেকে ছাড়ব না।”
প্রায় বছর চারেক হ’ল এই রুটে অটো চালাচ্ছে বুম্বা। ষ্টেশন থেকে বড় রাস্তার মোড় মাত্র দু’কিমি রাস্তা হ’লেও প্যাসেঞ্জার ভালই হয়। স্ট্যাণ্ডে এসে খুব একটা অপেক্ষা করতে হয় না। সকাল-সন্ধ্যে তো মানুষের লাইন ষ্টেশন চত্বর ছাড়িয়ে রাস্তায় গিয়ে নামে। বড় রাস্তা থেকে ষ্টেশনে আসা মানুষের সংখ্যা অফিস টাইমে একটু বেশি হ’লেও দিনের বাকি সময় মোটামুটি একই থাকে। পনের মিনিটের মধ্যেই লাইন এসে যায়। তবে দিন দিন অটোর সংখ্যা বাড়ছে। ইউনিয়নের নেতাগুলো টাকা নিয়ে একের পর এক অটো নামিয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশের লাইসেন্স নেই। ফলে ট্রিপের সংখ্যা কমছে। তার উপর চ্যাংড়াগুলোর মুখের ভাষারও ঠিক নেই। উদ্ধত, বেপরোয়া ছেলেগুলোকে নেতারাও প্রশ্রয় দেয়। ভাল না লাগলেও পার্টির মিটিং, মিছিলে যেতেই হয় বাধ্য হয়ে। কিন্তু বুম্বারা পার্টির কাজে লাগে না। ঐ গেঁজেল চ্যাংড়া অটোওয়ালারাই পার্টির শক্তি। মাঠ, রাস্তা, ভোটের বাক্স … সব ভরাতে ওদের চাই। পুরনো আর নতুনের বিরোধ এখন চাপা থাকলেও যেকোনও দিন প্রকাশ্যে চলে আসবে।

পরের দিন থেকেই বুম্বার রুটিন বদলে গেল। সকাল আটটার মধ্যেই এখন স্ট্যাণ্ডে গাড়ি নিয়ে হাজির হয়ে যায়। আবার বিকেলে পাঁচটা বাজতে না বাজতেই বেরিয়ে পড়ে অটো নিয়ে। তার কাছে পাখির চোখ এখন দিনে দুশো টাকা বেশি রোজগার। কিন্তু ট্রিপ বাড়ানোর জন্য বেপরোয়া অটো চালানোর পক্ষপাতী নয় সে। তবে একটু বেনিয়ম করে এখন। মাঝ রাস্তায় ফ্লাইং ছয় নম্বর প্যাসেঞ্জার পেলে আজকাল ডানদিকে তুলে নেয়। নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দেয়, “কত লোকে কতভাবে অন্যকে ঠকিয়ে সংসার চালাচ্ছে। সেসবের কাছে এ তো কিছুই নয়।”
দিনের শেষে আয়ের হিসাব করতে বসে মাঝে মাঝে নিজের উপরই রাগ হয় বুম্বার। কিন্তু তার হাতেও যে কিছু ছিল না। ভেবেছিল বেশ কয়েক বছর অটো চালিয়ে কিছু পয়সা জমিয়ে তারপর দীপাকে বিয়ে করবে। কিন্তু দু’বছর যেতে না যাতেই বিয়ে করতে হ’ল। নাহলে দীপার অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যেত। সে অটো চালিয়ে যা আয় করত, তাতে বেশ চলে যাচ্ছিল। দীপা মানিয়ে নিয়ে সুন্দর করে সংসার গুছিয়ে নিয়েছিল। এত তাড়াতাড়ি বাবা হওয়ার ইচ্ছে তার ছিল না। কিন্তু দীপা কিছুতেই প্রথম সন্তান নষ্ট করতে রাজি হ’ল না। বুম্বাও দীপার সিদ্ধান্তকে মেনে নিল। এই বাড়তি খরচটাকে সে বোঝা মনে করে না। আসলে দীপার জন্য কিছু করতে পারলে বুম্বা নিজেকে সফল বলে মনে করে।

নির্দিষ্ট গতির বাইরে বুম্বা কখনই যায় না। আর সন্ধ্যেবেলা একের পর এক অটোর ক্রমাগত আসাযাওয়া তাকে আরও সতর্ক করে তোলে। কিন্তু দিনকয়েক হ’ল সে দেখছে চ্যাংড়া ড্রাইভারগুলো প্রয়োজনের থেকে বেশি জোরে গাড়ি চালিয়ে পেছন থেকে এসে ওভারটেক করছে। উদ্দেশ্য একটাই – স্ট্যাণ্ডে আগে পৌঁছনো। এইভাবে প্রতি ট্রিপে একটা-দু’টো অটোকে ওভারটেক করলে লাইন এগোতে এগোতে দিনের শেষে কয়েকটা ট্রিপ বাড়তি হয়ে যায়। এটা বুম্বার ভাল লাগে না। দু’টো বাড়তি পয়সার জন্য ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালানো তার নাপসন্দ। এখন তার টাকার দরকার। তাই সে বাড়তি ট্রিপের খোঁজে স্ট্যাণ্ডে থাকার সময় বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু বেপরোয়া চালকরা ওভারটেক করে তাকে পিছিয়ে দিয়ে সমস্যায় ফেলছে। ক্রমে স্ট্যাণ্ডে থাকার সময় বেড়েই চলেছে। কাল তো বাড়ি ফিরতে রাত এগারোটা বেজে গিয়েছিল। দীপা অনুযোগের সুরে বলেছিল, “এখন বেশি সময় তোমার আমার কাছে থাকা দরকার।”
বুম্বা ঠিক করল সাড়ে ন’টার পরে আর স্ট্যাণ্ডে থাকবে না। নিজের নীতি থেকে সরে সে কাউকে ওভারটেক করবে না ঠিকই, কিন্তু তাকে টপকেও কাউকে যেতে দেবে না। রাস্তার যা অবস্থা, তাতে নিজের মত করে গাড়ি চালানোটাও দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। রাস্তার অবস্থা খারাপ, কিন্তু সারানোর উদ্যোগ নেই। রেল বলে, “অতটা রাস্তা আমাদের নয়।” মিউনিসিপ্যালিটি বলে, “ওটা রেলের রাস্তা, দায়িত্ব ওদের।” এই ঠেলাঠেলিতে রাস্তায় গর্ত বেড়েই চলেছে।

রাস্তার সবগুলো আলো ঠিকমত জ্বলছে না। আধো অন্ধকারে গর্ত বাঁচিয়ে ষ্টেশন থেকে বড় রাস্তার দিকে চলেছে বুম্বা। দু’চোখ ঘুরছে হেঁটে যাওয়া মানুষদের দিকে। বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করছে কোনও ফ্লাইং প্যাসেঞ্জার আছে কিনা। হঠাৎ ডানদিকের লুকিং গ্লাসে চোখ পড়ল। পেছন থেকে জোরে ছুটে আসছে একটা অটো। ঘাড়ের কাছে এসে জোরে হর্ণ দিল। বুম্বা চোয়াল শক্ত করে গতি বাড়াল। কিছুতেই ওভারটেক করতে দেবে না। সামনে রাস্তার মাঝখানে একটা বেশ বড় গর্ত। ডানদিক দিয়ে কাটালে পেছন থেকে আসা গাড়িটার সাথে ধাক্কা লাগতে পারে। বাঁ দিক দিয়ে কাটালে অনেকটা বাঁকাতে হবে। রাস্তার দিয়ে কয়েকজন হেঁটেও যাচ্ছে। গর্তটাকে পাশ কাটিয়ে মানুষ বাঁচিয়ে বেরোতে হবে। ডানদিকের অটোটাকেও বেরোতে দেওয়া যাবে না। এইসব ভাবতে ভাবতে বাঁদিকে গাড়ি বাঁকাল বুম্বা। রাস্তার ধার দিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে যাওয়া একজন মহিলা হঠাৎ থামল। বুম্বা স্পিড অ্যাডজাস্ট করার জন্য হাল্কা ব্রেক মেরে ডানদিকে কাটিয়ে অটো ছুটিয়ে দিল বড় রাস্তার দিকে। তার বাঁ পাশে বাইরের দিকে বসে থাকা ভদ্রলোক উদ্বিগ্ন হয়ে বলল, “এ হে! ভদ্রমহিলা পড়ে গেলেন।

বাড়ি ফিরে বুম্বা ভাবল, ভদ্রমহিলা পড়ে গেলেন কেন? ধাক্কা তো লাগেনি। সে তো অভিজ্ঞ হাতে কাটিয়ে বেরিয়ে এসেছে। তার কোনও দোষ নেই ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিল। দীপাকে বলল, “ভাত বাড়ো। তাড়াতাড়ি ঘুমোতে হবে। কাল সকালে উঠেই হাসপাতালে যেতে হবে।”

দীপাকে বাড়ি পৌঁছে বুম্বা ডাঃ নাগের নার্সিংহোমের দিকে হাঁটা লাগাল। ডাক্তারবাবুর কথা মত হাসপাতালের প্রেস্ক্রিপশানটা দেখিয়ে জেনে নেবে সব ঠিক আছে কিনা। জরুরী অপারেশান না থাকলে ডাঃ নাগ বেলা এগারোটা অবধি নার্সিংহোমে আউটডোর পেশেণ্ট দেখেন। বুম্বা ভাবল, এগারোটার মধ্যে কাজ সেরে বাড়ি ফিরবে। চান খাওয়া সেরে অটো নিয়ে বেরোবে। সকালের কামাই পোষানোর জন্য দুপুরে আর বাড়ি ফিরবে না, একবারে রাতে।
তিনতলা নার্সিংহোমের দোতলায় উঠে এল বুম্বা। নিচে রিসেপশান আর ওয়েটিং লাউঞ্জ। তিনতলায় পেশেন্ট ওয়ার্ড। দোতলার একদিকে অপারেশান থিয়েটার, অন্যদিকে ডাক্তারবাবুর চেম্বার। অভ্যেসের বশে চেম্বারের দিকে ঘুরতেই দেখে সহকারী মেয়েটি বাইরে বেরিয়ে এসেছে। গত তিনমাস ধরে বেশ কয়েকবার আসায় বুম্বাকে চিনে গেছে। বুম্বাকে দেখে বলল, “ডাক্তারবাবু ওটিতে। অপেক্ষা করতে হবে।”
ওটির সামনে রাখা চেয়ারে একজন যুবক বসে। বয়সে বুম্বার থেকে সামান্য বড় হবে। বুম্বা ছেলেটার পাশে গিয়ে বসল। মুখ দেখে মনে হ’ল খুব চিন্তায় আছে। নিশ্চয়ই ওর বাড়ির কারও অপারেশান হচ্ছে। কীভাবে কথা শুরু করবে ভাবছে। একটু দ্বিধাগ্রস্থ স্বরে বলল, “আপনার বাড়ির কারও …”
বুম্বাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “হ্যাঁ। আমার স্ত্রীর। কী হবে কে জানে?”
“চিন্তা করবেন না। সব ভালমত হয়ে যাবে। ডাক্তারবাবুর খুব ভাল হাত।”
“সে তো জানি। সাধারণ ডেলিভারি কেস হ’লে অত চিন্তা হত না। কিন্তু মা আর বাচ্চা দুজনেই যে রিস্কে।”
“দুজনেই রিস্কে?” বুম্বার গলায় বিস্ময়।
বুম্বার কথার উত্তরে যুবক বলল, গতকাল সন্ধ্যের কিছু পরে তার স্ত্রী ষ্টেশন থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। ডাক্তারবাবু বলেছেন ঝাঁকুনিতে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। তাই অটোয় না চড়ে পাঁচ মাসের গর্ভবতী রোজকার মত রাস্তার ধার দিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। দুই অটোর রেষারেষিতে হঠাৎ একটা প্রায় তার গায়ের উপর এসে পড়ে। ভয় পেয়ে পিছিয়ে নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে ভদ্রমহিলা রাস্তার উপর পড়ে যান।
এইটুকু শুনেই বুম্বার মনে আলোড়ন শুরু হ’ল। একটা কথাই মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে – “মহিলা পড়ে গেলেন!” যুবকের আর কোনও কথাই যেন তার কানে ঢুকছে না। তবুও বিক্ষিপ্তভাবে টুকরো টুকরো শব্দ তাকে বিদ্ধ করতে থাকল – পেটে যন্ত্রণা … ব্লিডিং … নার্সিং হোম … ইউ এস জি … প্ল্যাসেন্টাল অ্যাবরাপশান … অপারেশান …
ওটির দরজা খুলে গেল, ডাক্তারবাবু বেরিয়ে এলেন। যুবক এগিয়ে গেল ডাক্তারবাবুর দিকে। বুম্বা অপরাধীর মত মুখ করে তাকিয়ে রইল। ডাক্তারবাবু যুবকের কাঁধে হাত রেখে বললেন, “মা এখন আউট অফ ডেঞ্জার।”
“আর বাচ্চা?” যুবকের প্রশ্নে “সরি” বলে ডাক্তারবাবু চেম্বারের দিকে হাঁটা দিলেন।

বুম্বার পক্ষে আর নার্সিংহোমে থাকা সম্ভব হ’ল না। নিজেকে খুনী মনে হ’ল। সে এখন কীভাবে দীপার সামনে দাঁড়াবে? উদভ্রান্তের মত হাঁটতে হাঁটতে অনুতাপে দগ্ধ বুম্বার কেবলই মনে হতে লাগল, কয়েকটা বাড়তি ট্রিপের জন্য একটা প্রাণ জীবনের ট্রিপই শুরু করতে পারল না!


লেখক পরিচিতি : রাজীব চক্রবর্ত্তী
জন্ম ১৯৭০ সালের ৩০শে ডিসেম্বর, কলকাতার সিঁথিতে। পেশায় কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারী। দৈনন্দিনতার ক্লান্তি কাটাতেই মূলত: কলম ধরা। বেশ কয়েকটি লিট্ল ম্যাগাজিনে লিখেছেন গল্প, কবিতা। ২০১৭ সালে প্রকাশিত "সংশ্লেষ" নামক গদ্য সংকলনে স্থান পেয়েছে তাঁর মুক্তগদ্য। ঐ একই বছরে সোনারপুর কাব্যমঞ্চ আয়োজিত স্বরচিত কবিতা প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান লাভ করেন তিনি। ২০১৯ সালে প্রকাশিত "অন্য গদ্য" গ্রন্থে স্থান পেয়েছে তাঁর গদ্য। জীবনের বিবিধ অনুভূতি, বাস্তবতাকে ছন্দে বাঁধার প্রয়াসে তাঁর কবিতাচর্চা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

মাসিক দীপায়ন প্রতিযোগিতা

মাসিক দীপায়ন পুরস্কার pop up