আয়নায় নিজেকে দেখা

লেখক : এন. হক

সত্য চিরদিনই প্রকাশ্য, আর মিথ্যে অহেতুক লুকানো আয়না, যা বের করলেই চেহারাটা দেখা যায় ।আচ্ছা তোমরা বলতো ফেসবুকের নামটা “ফেকবুক” হলেই ভালো হতো কিনা? আমরা কজনায় জীবনের সত্যি সত্যি ঘটনাগুলি পোস্ট করি বা তুলে ধরি? শুধুই গৎ বাঁধা একটু হাসি বা সেলফি!! তাকিয়ে দেখো অধিকাংশ হাসির নীচেই চাপা কান্না অথবা ক্ষুদ্ধ আক্রোশ! যা ফেকবুকে হাসি মাখিয়ে সুগন্ধ ছড়াচ্ছে!! আদতেই কি আমরা এতটাই রঙ্গিন ফ্রেমে বন্দী?

যেমনটা দেখা যায় এখনকার বিয়ের অনুষ্ঠানের ফটোসেশন গুলোতে । কনেতো একেবারে পেশাজীবী মডেলদের মতো একের পর এক পোজ দিয়েই চলেছে! যেন তার পছন্দ বা অপছন্দগুলো ক্যামেরাম্যানের হাতে বন্দী। তার নিজস্ব কোন রুচি বা পোজ যেন থাকতে নেই, যেন তার কোন সৃজনশীলতার ছাপ থাকবে না তার বিয়ের এ্যালবামে!
অনেকে আবার এতেই ধন্য! কি করার!!! সামাজিক রীতির কলের গাড়ী যেদিকে ছুটবে আমাদেরও সেই ষ্টেশনেরই টিকেট কাটতে হবে বৈকি।
খেয়াল করে দেখ এই ফেকবুককেই অনেকে একমাত্র অবলম্বন বানিয়ে এগিয়ে চলছে। অনেক সময়ে আবার একে অন্যের প্রতি টেঁটা (আমার আঞ্চলিক ভাষায় বললাম) ছোঁড়ার কাজেও ব্যবহার করছে যদিও ইচ্ছে করলেই এই মাধ্যমটিকে অনেক দৃষ্টান্তমূলক কাজে আমরা ব্যবহার করতে পারি (যদি সদিচ্ছা থাকে)।
তবে, আমরা অধিকাংশই অন্যের দূর্গন্ধ ছড়াতে ভালোবাসি। তাই যখনই সুযোগ পাই তখনই বাম হাতটা অন্যের অনিষ্টে দিয়েই রাখি। জীবনটা সংক্ষিপ্ত জেনেও ভালো কিছু করার দিকে আমাদের আগ্রহ নিতান্তই ক্ষীণ।
আমি ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করি কেউ আমার আপনভূবনে হস্তক্ষেপ করুক! আমার নিজস্ব জগতটা একান্তই আমার। সেখানে আমি নিজ হাতে আহ্বান না জানালে কেউ প্রবেশ করুক তা আমার পছন্দ নয়।

আমি জানি আমাদের সবারই অন্যের জীবন নিয়ে আলোচনাতেই বেশী আগ্রহ। আমার কেন জানিনা ছোটবেলা থেকেই এ জাতীয় আগ্রহ একেবারেই ছিলো না। এটাকে কি আল্লাহ্ ‘র আশীর্বাদ বলবো নাকি আমার স্বাতন্ত্র্যে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব জানি না। শুধু এটুকুই বুঝি মানুষ ফেরেশতা হয়ে জন্মায় না। প্রত্যেকের চরিত্রেই ভুল ত্রুটি ও ভালো মন্দ থাকতেই পারে।
যদি একান্তই ভুলের দিক বেশী হয় তবে তার পরিবারকেই আগে তা শোধরানোর জন্য এগিয়ে আসা উচিত। অনেক ক্ষেত্রে আমরা হয়তো ভালো করে না জেনেই সেই মানুষটাকে নিয়ে রচনা লিখতে শুরু করে দেই, আসলেই তা কতটুকু সত্য বা মিথ্যা না জেনে পরচর্চায় সামিল হয়ে যাচ্ছি বা যাই।
যতটা সময় অন্যের চিন্তায় ব্যয় হয়ে যায় ততটা সময় যদি সমাজ বা দারিদ্র্যতার উন্নয়নে কাটাই তাহলে হয়তো পৃথিবীটাই অন্যরকম সৌন্দর্যমন্ডিত হয়ে যেত। আমরা সহ্যই করতে পারি না কেউ কোনদিক দিয়ে উন্নতি করে ফেলুক! যেভাবেই হোক পিছন থেকে তার পা টেনেহিচড়ে তাকে নামাতেই হবে! কেন এ মানসিকতা? কেন এ হিংস্রতা?
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা মুখে সুন্দর সুন্দর কথা বলছেন অথচ কার্যতঃ কূটবুদ্ধি চালনায় হস্তসিদ্ধ প্রমাণিত হচ্ছেন!!
কি শিখবে তাদের কাছ থেকে পরবর্তী প্রজন্মরা ?? তখন এ ভুল পরিচালনার দায়ভার কি তারা পরকাল থেকে নিবেন?? তা হয়তো তড়িৎ গতিতে সম্ভব নয়। কিন্তু মুরুব্বীদের বলতে শুনেছি পিতা-মাতার অপকর্মের ফল নাকি বংশধরেরা অনেকদিন টেনে নিয়ে যায়! জানিনা এর সত্য-মিথ্যা।
শুধু বুঝি যখন আপন মুখগুলো চোখের সামনে অস্পষ্ট হয়ে যায় তখন আর উইন্ডোলিন দিয়ে মুছলেও স্পষ্ট হয়ে উঠে না। তবুও ব্যর্থ চেষ্টা!! কখনো কি ভেবেছ তোমার ডান হাতটা দিয়ে তুমি কিছু করতে পারছো না? অথবা তোমার ঠোঁট দুটো দিয়ে আর কথা বলতে পারছো না!! কি সাংঘাতিক বিশ্বাসঘাতকতা! নিজ অঙ্গ – সেই থেমে গেল, তো অন্য কিছু আর ভাবার ফুরসত কই?


লেখক পরিচিতি : এন. হক
এন. হক, বনলতা আবাসিক এলাকা, ০১৫৫২৩১৯২৭৩

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

লেখা আহ্বান - বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন