লেখক : রাজীব চক্রবর্ত্তী
ষ্টোর ম্যানেজমেন্টের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ ষ্টক ইস্যু পলিসি। এর জন্য দুটো সর্বাধিক প্রচলিত পদ্ধতি হল ফিফো(ফার্স্ট ইন ফার্স্ট আউট) এবং লিফো(লাস্ট ইন ফার্স্ট আউট)। ফিফো পদ্ধতিতে যে মাল গোডাউনে আগে ঢুকবে সেই মাল আগে বেরোবে বা ইস্যু হবে। অন্যদিকে লিফো পদ্ধতিতে সবথেকে শেষে আসা মাল সবার আগে ইস্যু হয়ে গোডাউন থেকে বেরিয়ে যাবে। ইন্ড্রাষ্ট্রিতে যে কাঁচামাল ব্যবহার হয় তার প্রকৃতির উপর স্টক ইস্যু নীতি নির্ধারণ করা হয়। কাঁচামাল যখন লোহা বা পাথরের মত দ্রব্যাদি যা সহজে নষ্ট হয় না তখন ফিফো পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। আবার গোডাউনে যদি এমন মাল থাকে যার নির্দিষ্ট এক্সপায়ারি ডেট আছে এবং সেই তারিখ খুব কাছে সেক্ষেত্রে কিংবা দ্রুত পচনশীল কোনও দ্রব্যের ক্ষেত্রে প্রায়ই লিফো পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। একজন স্টোর কিপার এইসব বিষয় মাথায় রেখেই গোডাউনে মালের ইন-আউট নিয়ন্ত্রন করেন। দক্ষ স্টোর কিপার আবার দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা অপ্রয়োজনীয় কিংবা মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়া দ্রব্য গোডাউন থেকে যথাসময়ে বের করার দিকেও নজর দেয়।
সহজ ভাষায় বলা স্টোর ম্যানেজমেন্টের জটিল বিষয়গুলি মন দিয়ে শুনছিল হাবু। হঠাত্ ডান হাত তুলে উঠে দাঁড়াল। রাশভারী অধ্যাপক পড়া থামিয়ে বললেন, ইয়েস?
স্যার একটা প্রশ্ন ছিল?
গম্ভীর গলায় স্যার বললেন, বলো।
দেশের ক্ষেত্রে কোন পদ্ধতি নেব স্যার?
চোখ কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন অধ্যাপক। হাবুর প্রশ্নটা বুঝতে চেষ্টা করলেন। কি বুঝলেন কে জানে? কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, দেশের জন্য আলাদা কিছু হয় না। পুরো ব্যাপারটাই ডিপেন্ড করে ইন্ড্রাষ্ট্রিতে কী ধরণের মাল হ্যান্ডেল করা হচ্ছে তার উপর।
হাবু বুঝল স্যার তার প্রশ্ন বুঝতে পারেননি। বিষয়টা পরিস্কার করার জন্য বলল, দেশ যদি অপ্রয়োজনীয় বা নষ্ট হয়ে যাওয়া মানুষে ভরে যায় তাহলে তাড়ানোর জন্য কোন পদ্ধতি নেব স্যার? ফিফো না লিফো?
বয়স্ক অধ্যাপক কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাতের কালো মার্কারটা ছুঁড়ে মারলেন হাবুর দিকে। হাত দিয়ে মাথা বাঁচাতে বাঁচাতে হাবু শুনল মৃদুভাষী অধ্যাপক তারস্বরে চিত্কার করছেন, গেট আউট। গেট আউট ফ্রম মাই ক্লাস।
ঘটনাটা শোনার পর থেকে খুব চিন্তায় আছি। সত্যিই যদি দেশের আরো কিছু মানুষের মনে হাবুর মত প্রশ্ন জাগে তাহলে তারাও কি শুনবে – গেট আউটফ্রম …. বড় সহজ প্রশ্ন কিন্তু উত্তর অজানা।
ছবিঃ রুবাই শুভজিত ঘোষ
লেখক পরিচিতি : রাজীব চক্রবর্ত্তী
জন্ম ১৯৭০ সালের ৩০শে ডিসেম্বর, কলকাতার সিঁথিতে। পেশায় কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারী। দৈনন্দিনতার ক্লান্তি কাটাতেই মূলত: কলম ধরা। বেশ কয়েকটি লিট্ল ম্যাগাজিনে লিখেছেন গল্প, কবিতা। ২০১৭ সালে প্রকাশিত "সংশ্লেষ" নামক গদ্য সংকলনে স্থান পেয়েছে তাঁর মুক্তগদ্য। ঐ একই বছরে সোনারপুর কাব্যমঞ্চ আয়োজিত স্বরচিত কবিতা প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান লাভ করেন তিনি। ২০১৯ সালে প্রকাশিত "অন্য গদ্য" গ্রন্থে স্থান পেয়েছে তাঁর গদ্য। জীবনের বিবিধ অনুভূতি, বাস্তবতাকে ছন্দে বাঁধার প্রয়াসে তাঁর কবিতাচর্চা।
বাহ!
darun!
গদ্য লেখার হাত ভাল ।