লেখক : অতনু সাঁপুই
বিয়াস,
অনেক বছর পর আজ লিখছি তোমায়। এ চিঠি কেন? না। সত্যিই জানি না। শুধু জানি, অনেক কিছু হুড়মুড়িয়ে মনে পড়ে যায়, শিউলি ঝরে পড়ার বেলায়। এই যেমন এখন। মনে পড়ে যাচ্ছে, অনেক বছর আগের সেই ষষ্ঠী সকাল। পঞ্চমীর রাতভর উল্লাসের রেশ তখনও আমার চোখে ঘুম হয়ে জড়িয়ে। ক্লাবঘরের সামনে থেকে শোরগোল শুনে এগিয়ে গিয়েছিলাম। দেখলাম, গাছের গায়ে টিউব লাইট বাঁধার পর বেরিয়ে থাকা একটা বেহায়া তার, আঁকড়ে ধরেছিল তোমার নতুন কেনা ওড়না। সামলাতে গিয়ে পায়ে লেগে টব পড়ে ভেঙে… সে এক কান্ড। জানি, এখন সে দিনের সেই কান্ড ভেবে খুব হাসছো। সেদিনও হাসির একটা ফোয়ারা তোমার চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছিল। বাবলু, বুড়ো, পিকলু, টুবাই এমন কি এই সে দিনের একরত্তি পিঙ্কিও খিকখিক করে হাসছিল তোমার করুণ রূপ দেখে। শুধু আমিই…. শারদপ্রাতে তোমায় প্রথম দেখে আমি হাসতেও ভুলে গিয়েছিলাম বিয়াস। নাম না জানা অচেনা একটা কারও জন্য কিছুটা মায়া, মন কেমন আর নাকের ওপর জমে থাকা কযেকটা ঘামের দানা আমার সেই প্রথম.. কোনমতে জটলা থেকে বার করে আনার পর আমাদের সেই প্রথম আলাপ।- “আমি বিয়াস। নতুন এসেছি। আপনি কি এ পাড়াতেই থাকেন?”
সকাল গড়িয়ে দুপুর পেরিয়ে বিকেল ..ঢাক-কাঁসি-মন্ত্র-বোধন…হ্যালো টেস্টিং ছাপিয়ে আমার চারপাশে কাশফুলে ভর করে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটাই নাম। বিয়াস.. বিয়াস … বিয়াস। মানতেই হবে, তোমার বন্ধুভাগ্য খুব ভাল। আমি তোমার মতো অত তাড়াতাড়ি বন্ধু পাতাতে পারি না। পারি না বন্ধু হতে। দুপুরের পর থেকেই দেখা গেল, তোমার অনেক বন্ধু জুটে গেছে। আর তাদের
নিয়ে গোল করে চেয়ার পেতে দিব্যি আড্ডা জুড়ে দিয়েছো। কেমন যেন হল বুকের ভিতরটা। ছেলেবেলায় একবার ক্যাপ পিস্তলের রিল হারিয়ে গিয়েছিল আমার.. একেবারে এক বান্ডিল। তখন যেমন কষ্ট হয়েছিল.. অনেকটা সেই রকম..। কোথায় ভেবেছিলাম, আমিই হবো, এ পাড়ায় তোমার এক এবং একমাত্র গাইড। সে আর হল কই! তবে ভালও লাগছিল, যখন আড়চোখে নিয়মিত এ পাশ ওপাশ তাকাচ্ছিলে .. মনে মনে ভাবতে শুরু করে দিয়েছিলাম, তুমি নিশ্চয়ই আমায় খুঁজছো। ঠিক বুঝতে পারছিলাম, আমার মধ্যবিত্ত সরকারি আবাসনের নোনা ধরা দেওয়াল..
রেলিং-এ মেলে দেওয়া ঘর মোছার ন্যাতা বা মোড়ের ঘেয়ো কুকুরটাও আমার ভাল লাগতে শুরু করেছে..সব কিছুর মধ্যে ভাল লাগা খুঁজে পাচ্ছি তখন.. বেশ বুঝতে পারছিলাম, এবার থেকে পুজোটা …. এবারের পুজোটা একটু অন্য রকম হতে চলেছে।
সেই ভালো লাগার ওম বুকে লুকিয়ে অনেক বছর পর আজ আরও এক ষষ্ঠী।
ভাল আছো তো বিয়াস? আমাদের যে ভাল থাকারই কথা ছিল।
শুভ ষষ্ঠী।।
—————————————-
লেখক পরিচিতি : সংবাদমাধ্যমে ১৯ বছর কাটিয়ে ফেলা মামুলি ছাত্র। নিরন্তর পাক খেতে থাকা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলা শহুরে ফকির। ফ্যাতাড়ু না হতে পারার আক্ষেপ নিয়ে যার অহর্নিশ যাপন। রোজ রোজ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খুঁজতে চাওয়া বোকাসোকা ছাপোষা.. “যা দেখি, সেটাই সত্যি? নাকি রাষ্ট্র যা দেখাতে চায়, আসলে অভ্যস্থ চোখে আমরা তাইই দেখি? যা সত্য, তা যে সত্য তা বুঝবে কেমনে? “
ভীষণ ভালো লাগল৷
দারুণ।