লেখক : সৌরভ দেববর্মণ
এই বসন্তে ফাগুন জমাব। নিজের মুঠোয় আগলে রাখবো বসন্ত। বছরের বিভিন্ন কর্কশ সময়ে ফাগুন ফেরি করব অনিকেতের বিশ্বে। বজ্র-বিদ্যুৎসহ প্রবল বর্ষণের পূর্বাভাস থাকলে সরেজমিনে ক্ষয়ক্ষতি মাপতে বসন্তবৌরি পাখিদের নেতৃত্বে পরিযায়ী পাখিদের পাঠাব। এতো কাছ থেকে পাতা ঝড়ে যাওয়া আবার নতুন পাতায় গাছ ভরে যাওয়ার গল্প ওদের মতো আর কে জানে! যে যার ভিটেয় ফিরে ওরা রূপকথার গল্প শোনাবে সদ্য বরফের চাদর সরা ওদের দেশের অনুর্বর মাটিকে, সন্ত্রস্ত গাছেদের। মাটি গাছ আর পিপড়ের দল সব অবাক হয়ে শুনতে শুনতে ভুলেই যাবে এই পাখিরাই রুক্ষ শীতে ভিটেমাটি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। অনেক শিমুল, পলাশ, বকুল জমিয়ে রাখব মুঠোর ফাগুনে জিইয়ে। হাওয়ায় বারুদের গন্ধ নাকে এলে বোমারু বিমান পাঠানো দেশে সম্পর্কের শৈত্য কাটাতে তাদের দূত করে পাঠাব। বেকারি দুর্নীতি দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি নির্বাচনী প্রহসনে জেরবার মানুষ শুনবে আমার পাঠানো কালাপাখির কুহুরব। উৎসব পাঠাব তাদের শয়নকক্ষে। অকাল বোধনে শিউলি আর টিউলিপ শরৎ বসন্ত ভুলে সর্বকালীন সমনাম নিয়ে হাজির হোক খরা বা খিদের রাজ্যে। নেই রাজ্যের নৈরাজ্যে দোফলা আমের মুকুল সমেত আমগাছ পাঠিয়ে দেওয়ার ভাবনাও আমার মনে কি নেই! এক মাঘে শীত যায়না-র হিংস্র আস্ফালনকে পারলে ফাগুনই পারবে বশ করতে।
সবাই যখন বছরভর সুখ শান্তিতে পরম নিশ্চিন্তে বসন্ত যাপন করবে তখন রুদ্র মে মাসের প্রখর তাপ উপেক্ষা করে, বর্ষার প্রবল বর্ষণকে আনন্দাশ্রু মেনে শরৎ হেমন্তের সব উৎসবকে নিজের মর্মে ঠাঁই দিতে ভুলতে বসা আমিই একদিন লাল গোলাপে বেঁধে তোমার কাছে একটা গানের কলি পাঠাব…
“তুমি বন্ধু কালা পাখি, আমি যেন কী!
বসন্ত কালে তোমায়, বলতে পারিনি”
বহু ভাষাভাষীর এই দেশে ফাগুনই তো ভাষাকে মা ভাবতে শিখিয়েছে। আগুন জ্বালা বা নেভানোর নাম রেখেছে কবিতা। মুঠোর আবির সেই কাব্যমালিকা গাঁথার অক্ষর হতে পারবেনা এ কেমন কথা!
ছোটবেলায় ভাবতাম আগুন জমাবো মুঠিতে। সব সমস্যার সমাধান হয়তো আগুনে, মুঠিতে বা ইনকিলাবের অঙ্গার আত্তীকরণে। ‘নিভন্ত ওই চুল্লিতে’ আজ আগুন বাড়ন্ত। ফাগুনের ওপর তাই এই অজ্ঞতাবাদী আস্থাজ্ঞাপন।
তবে ফাগুন বা আগুন সামলেই রাখতে হয়, কিন্তু কাউকেই কি বেঁধে রাখা যায়!
লেখক পরিচিতি : সৌরভ দেববর্মণ
কর্মসূত্রে নিছক শ্রমিক,
মর্ম সূত্রে লিখি।
এই পৃথিবীর জল বায়ু মাটি
সবকিছুতেই শিখি।