শিক্ষা ব্যবস্থা

লেখক : মেহেদী হাছান জুবের

আমার এই ছুটো জ্ঞানে কিছু কথা মাথায় আসল। জানিনা, কথাগুলো যৌক্তিক কিনা, তা আপনারাই বিচার করবেন। এই কথাগুলো বললে হয়ত অনেক শিক্ষক আমার উপর রাগও করতে পারেন, তবে সবাই না। আমার পরিচিত ও অনেক শিক্ষক আছেন, যাঁদের আমি অনেক ভালবাসি এবং সম্মান করি। শিক্ষা একটি জাতির মেরুদণ্ড, আর শিক্ষক সেই মেরুদণ্ডের কারিগর। আমাদের সমাজে বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক হ’ল— সরকারি শিক্ষক/অধ্যাপকদের দ্বারা বাণিজ্যিকভাবে প্রাইভেটে কোচিং করানো। এই প্রথাটি কতটা নৈতিক, এবং এর সঙ্গে যুক্ত অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবগুলো কী কী, তা নিয়েই কিছু ভাবনা তুলে ধরা হ’ল।

১. প্রাইভেট কোচিং এবং নৈতিকতার প্রশ্ন:

​সুযোগের অসমতা: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরাই প্রাইভেটে পড়ানোর সুযোগ পান। এর প্রধান কারণ হ’ল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাঁদের পরিচিতি এবং সুনাম। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হ’লেও এর ফলে একটি অর্থনৈতিক বৈষম্য তৈরি হয়।
​টাকার প্রতি লোভ এবং আবেগের নিয়ন্ত্রণ: যদি একজন শিক্ষক অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের নেশায় পড়ে যান, তবে তা একসময় লোভে পরিণত হতে পারে। একবার এই লোভের জন্ম হ’লে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের আকাঙ্ক্ষা থেকে শিক্ষক তখন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ব্যাচ পড়াতে শুরু করেন।
​ক্লাসে মনোযোগের অভাব: যখন কোন শিক্ষক প্রাইভেট কোচিংয়ে বেশি সময় দেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের সরকারি ক্লাসে মনোযোগ কমে আসতে পারে। তাঁদের কাছে ক্লাসের চেয়ে প্রাইভেট ব্যাচগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এর ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা, যারা শুধুমাত্র ক্লাসের উপর নির্ভরশীল, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

​২. শিক্ষকদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য:

​টাকা উপার্জনের তাড়নায় অনেক শিক্ষক স্কুলের সময় শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একের পর এক প্রাইভেট ব্যাচ পড়ানো শুরু করেন। এর ফলে তাঁদের শারীরিক যত্নের সুযোগ কমে যায় এবং তাঁরা প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে পারেন না। অত্যধিক কাজের চাপ একসময় অভ্যাসে পরিণত হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে তাঁদের স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাদানের গুণগত মানকে প্রভাবিত করে।

​৩. শিক্ষিত বেকার যুবকদের সুযোগ:

​বেকারত্ব দূরীকরণ: আমাদের দেশে অসংখ্য উচ্চশিক্ষিত যুবক কর্মসংস্থানের অভাবে ভুগছেন। সরকারি শিক্ষকদের প্রাইভেটে পড়ানো বন্ধ হ’লে এই শিক্ষিত বেকার যুবকরা কোচিং বা প্রাইভেটে পড়ানোর সুযোগ পাবেন। এর ফলে তাদের আর্থিক সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে এবং বেকারত্ব কিছুটা হলেও দূর হবে।
​অর্থনৈতিক ভারসাম্য: শিক্ষকদের বেতন, ভাতা ও অন্যান্য উপার্জনের সুযোগ থাকে। অন্যদিকে, বেকার যুবকদের আয়ের একমাত্র পথ হতে পারে এই শিক্ষাদান। তাই এই সুযোগটি তাদের জন্য ছেড়ে দেওয়া একটি ন্যায্য অর্থনৈতিক পদক্ষেপ হতে পারে।

৪. ক্লাসে মনোযোগ এবং শিক্ষকের বিশ্রাম:

​যদি সরকারি শিক্ষকদের প্রাইভেটে পড়ানোর সুযোগ না থাকে, তবে তার দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক ফল হতে পারে:

​ক্লাসে মনোযোগ বৃদ্ধি: শিক্ষকরা তখন তাঁদের প্রধান দায়িত্ব— সরকারি ক্লাসে শিক্ষাদানে আরও বেশি মনোযোগী হবেন। কারণ, তাঁদের তখন অতিরিক্ত উপার্জনের তাগিদ থাকবে না। তাঁদের পারফরম্যান্স ও সুনাম তখন সম্পূর্ণরূপে ক্লাসের ফলাফলের উপর নির্ভরশীল হবে।
​বিশ্রাম ও প্রস্তুতি: প্রাইভেটের ব্যাচ পড়ানোর চিন্তা না থাকায়, শিক্ষকরা ক্লাস শেষে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে পারবেন এবং পরের দিনের ক্লাসের জন্য ভালভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবেন। এটি সামগ্রিকভাবে শিক্ষাদানের মান উন্নত করতে সাহায্য করবে।


লেখক পরিচিতি : মেহেদী হাছান জুবের
মেহেদী হাছান জুবের। বয়স 20,পুলিশ সদস্য, বাসা:সিলেট

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

মাসিক দীপায়ন প্রতিযোগিতা

মাসিক দীপায়ন পুরস্কার pop up