I Lost My Body: ফ্যান্টাসি’র জগৎ থেকে বাস্তবতাকে দেখা

লেখক : হৃদয় হক

মুভিটির নাম I Lost My Body, বাংলা করলে দাঁড়ায়, “আমি আমার শরীর হারিয়ে ফেলেছি”। নামটি শুনে মনে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে — “কিভাবে?” এবং “তারপর?”

প্রশ্ন দুটো নিয়ে আলোচনা করার আগে কিছু প্রসঙ্গ বিষয় নিয়ে বলা উচিত বলে মনে হলো। প্রথমত, এটা ছোটদের অ্যানিমেশন মুভি না। এটায় প্রাপ্তবয়স্কদের ব্যাপারস্যাপার আছে এবং প্রাপ্তবয়স্ক বা তরুণদের লক্ষ করেই এই মুভিটি বানানো হয়েছে। রক্তের দেখাও পাওয়া যাবে। দ্বিতীয়ত, এটা ফ্রান্সের। মূল ভাষাও ফ্রেঞ্চ বা ফরাসি। তবে এটার ডাব এবং সাব উভয়ই পাওয়া যায়। যতটুকু মনে পড়ে আমি “অগি অ্যান্ড দ্য ককরোচ” সিরিজের মুভিটি বাদে, আগে অন্যকোনো ফ্রেঞ্চ অ্যানিমেশন মুভি দেখিনি। সে হিসেবে সিরিজের মুভি বাদে এটাই প্রথম এবং ভবিষ্যতে আরো কিছু ফ্রেঞ্চ অ্যানিমেশন মুভি দেখার ইচ্ছে আছে। তৃতীয়ত, এটি Guillaume Laurant এর লেখা Happy Hand বইয়ের ভিত্তিতে বানানো।

মুভিতে দেখা যায় নওফেল নামের এক হতাশাগ্রস্ত পিৎজা ডেলিভারি ছেলেকে, যে এ কাজে ভালো নয়। অর্থাৎ সে ডেলিভারিতে অনেক বার দেরি করে। এভাবে একদিন ডেলিভারি করতে গিয়ে সে গেব্রিয়েল নামের এক মেয়ের সাথে অনেকক্ষণ কাব্যিক কথাবার্তা বলে। কিন্তু লিফট করে উঠতে না পারায় সে মেয়েটিকে দেখতে পারে নি। কিন্তু পরবর্তীতে সে মেয়েটিকে খুঁজে বের করে। অন্যদিকে ল্যাব থেকে একটি কাটা হাত নিজে নিজে পালিয়ে যায়। হাতের একমাত্র উদ্দেশ্য — যার হাত তার নিকট ফিরে যাওয়া। অনেক বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও হাতটি এগিয়ে যায় মূল শরীরের খোঁজে। এ দুই গল্পে কোন মিল আছে কিনা? গল্পের সব চরিত্রের দুটি হাত থাকা সত্বেও এই হাতটি আসলে কার? নওফেল এবং গেব্রিয়েলের সম্পর্ক কিভাবে এবং কতদূর এগোলো এ-সবের জন্য আপনাকে মুভিটি দেখতে হবে।

কিন্তু আমার আলোচনা সবেমাত্র শুরু। আপনি যদি স্পয়লার না চান তাহলে লেখাটি এতটুকু পড়ার জন্য ধন্যবাদ। তবে যদি স্পয়লার, কিছুটা গভীরে গিয়ে অ্যানালাইসিস বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সংক্রান্ত আলোচনা চান, তাহলে আপনাকে স্বাগতম।

মুভির মূল নায়ক নওফেল। ছোট বেলা থেকে তার স্বপ্ন একজন পিয়ানোবাদক এবং নভোচারী হওয়া। কিন্তু গাড়ি দুর্ঘটনায় সে তার বাবা-মা’কে হারায় এবং পরবর্তীতে আত্মীয়ের বাড়িতে ঠাঁই পায়। (তাদের সাথে সম্পর্কও অতোটা ভালো ছিলো না।) সেখানেই সে বেড়ে ওঠে এবং পিৎজা ডেলিভারি বয় হিসেবে তার জীবীকা বেছে নেয়। কিন্তু সেখানেও সমস্যার শেষ নেই। সে অনেক বার ডেলিভারিতে দেরি করে। যার ফলে তাকে প্রচুর কথা শুনতে হয়।

অর্থাৎ আমরা দেখতে পাই এমন একজন ছেলেকে, যে জীবন নিয়ে হতাশ। যার ছোটবেলা আমাদের অন্যান্য সকলের মতো কাটেনি। কেটেছে কষ্টে, হতাশাতে। আর বড়ো হয়ে স্বপ্নপূরণের ব্যার্থতা, যে কাজ করছে সেটা ভালোমতো করতে না পারা সব-মিলিয়ে যে এক পরিস্থিতির জন্ম দেয়, তা থেকে আমরা সহজেই ধরে নিতে পারি — নওফেলের আত্মার মৃত্যু প্রায় ঘটেছে কিংবা বলা যায় আধ-মরা আত্মা। ব্যাপারটি আরো ভালোভাবে উপলব্ধি করা যায় গেব্রিয়েল মেয়েটির সাথে তার প্রথম কথাবার্তার ভেতরে। আবার এদিকে তার হাত কেয়ে যাওয়ার ফলে তা শরীর থেকে আলাদা হয়ে যায়। এই যে আত্মার মৃত্যু এবং হাত আলাদা হয়ে যাওয়া উভয় দিকে বিবেচনা করে মুভিটির নাম, I lost my body সত্যিই অসাধারণ একটি নাম।

নওফেল এবং তার কাটা হাতকে নিয়ে আলোচনায় আমাদের একটা বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন। তা হলো — মুভিটির জনরা ফ্যান্টাসি। কিন্তু ভিন্নভাবে ভাবলে, নওফেলের হাত আসলে তার মনের ভেতরে একটি অবস্থা। তার মনে সে এবং তার হাত দিয়ে আসলে একপ্রকার দ্বিধাদ্বন্দ্ব অনুভব করা যায়। লক্ষ করলেই এটি বুঝবেন। কারণ, নওফেলের বর্তমান জীবনটি আসলে — এইতো যাচ্ছে যেভাবে যাওয়ার যাক, সবকিছুই তার নিয়ন্ত্রণের বাহিরে, সবকিছুর আগে থেকে লেখা আছে ইত্যাদি ধরনের। অন্যদিকে তার যে হাত সেটির একটি চূড়ান্ত লক্ষ আছে। তা হলো তার মূল শরীর বা নওফেলের নিকট ফিরে যাওয়া। ল্যাব থেকে পালিয়ে এ কঠিন যুদ্ধে সে সকল বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে চলে।

এক্ষেত্রে আমাদের যেটি বোঝা প্রয়োজন তা হলো, মূল গল্পটি আসলে হাতে গল্প নয়। মূল গল্পটি আসলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের তথা নওফেলের।

কিন্তু হাত এ গল্পের দ্বিতীয় মূল চরিত্র। চরিত্র বলছি এই কারণে যে, যদিও হাতটি নওফেলের। কিন্তু, গল্পের শুরুতে সহজে সেটি বোঝার উপায় নেই। যদিও নওফেল এবং তার হাতের ফ্ল্যাস ব্যাক বা স্মৃতিচারণ অথবা শুরুতেই নওফেলকে পড়ে থাকে দেখে, তার আশেপাশে রক্ত দেখে এ-সব পর্যবেক্ষণের ফলে আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি যে, হাতটি আসলে নওফেলেরই। কিন্তু গল্পের ঘটনাপ্রবাহে আমাদের সামনে হাতটি হয়ে ওঠে ভিন্ন এক জীবন্ত সত্ত্বা! যা এই মুভিকে নিয়ে যায় অন্যন্য এক মাত্রায়।

একটি কাটা হাত কথা বলতে পারেনা। কিন্তু তা সত্বেও মুভিটায় মনে হবে যেনো হাতটি কথা বলছে, গল্প বলছে, বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে তার অনুভূতির। আপনি অনুভব করবেন তার আলাদা হবার কষ্ট, পিয়ানো দেখা ও শোনার সুখ, বাচ্চার মুখে ডামি দিয়ে শান্ত করাবার দায়িত্ববোধ এমনকি সাদাকালো স্মৃতিচারণের অনুভূতিও যা প্রকাশ করা হয়েছে শব্দের মাধ্যমে, সুরের মাধ্যমে এবং গ্রাফিক্স এর দারুণ সংমিশ্রণে।

হাত, নওফেল এবং তার কাঁটা হাতের সাদাকালো স্মৃতি এরা হলো রূপক। এদের দ্বারা পরিচালনা করা হয়েছে তাদের আগের অবস্থা। মানুষের জীবন আসলে কেমন? জীবনকে অনুভব করা কিংবা জীবনকেই অভিজ্ঞতা হিসেবে নেয়া আসলে কেমন? বিশেষ করে অতীতকে না ভুলে বর্তমানে থাকা অবস্থায় এ-সবের মানে আসলে কি? তারপর আসে সুখ-দুঃখ, ভালোবাসা, কোনোকিছু হারানোর অনুভূতি, হতাশা এসবকিছুই মুভিতে ফোটে ওঠে নিজস্ব উপায়ে। ফ্যান্টাসিতে। বাস্তবের দিকে তাকানোর হয় বাস্তব থেকে বেরিয়ে, ফ্যান্টাসির জগৎ থেকে দেখা হয় বাস্তবতাকে। এই বিষয়টিই মুভিটিকে করে তোলে অন্যন্য।

তবে হাতের ব্যাপারটি সত্যিই দুর্দান্ত। কাঁটা হাতটিকে দেখে হাস্যকর লাগবে না, আবার ক্রিপি বা ছমছমে কিংবা অপ্রাকৃতিক কোনো বিষয়ও মনে হবে না। খুবই স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক ঠেকবে। যেনো হাতটি আসলেই যেভাবে যাওয়ার যাচ্ছে। যেমনটি বাস্তবে এমন কোনো কাঁটা হাতের জীবন থাকলে যেতো।

এই যে মোটা দাগে ফ্যান্টাসি মুভি হওয়া সত্বেও হাতের যুদ্ধ, বিশেষ করে ইদুর এবং পিপড়ার সাথে যুদ্ধ, মূল শরীরের খোঁজে এগিয়ে চলা আবার ঐদিকে নওফেলের সাথে গেব্রিয়েলের ভালোবাসার সম্পর্ক অর্থাৎ একাধারে অ্যাকশন, অ্যাডভেঞ্চার, রোম্যান্স, স্মৃতিচারণ এ-সব সাব-জনরার এক অমূল্য সংমিশ্রণ তাও এতো অল্প সময়ে এবং খুবই স্বভাবিক কিংবা ফ্যান্টাসির জগতে বাস্তবিক ভাবেই তা আলাদা ভাবে উল্লেখ না করলেই নয়।

মুভিটি দুই-তিন বার আপনার আশা-অনুভূতিকে ধোঁকা দিতে পারে। আগে প্রথমটি নিয়ে বলি। আর তা হলো — কাঠের ইগলুতে নওফেলের আসল পরিচয় (সেই যে আসলে ঐ ডেলিভারি বয় এবং বর্তমানে তার আংকেলের সাথে কাঠ নিয়ে কাজ করছে। যে কাজটি সে ঠিক কাজের উদ্দেশ্যে নেয় নি। নিয়েছে গেব্রিয়েলের জন্য।) গেব্রিয়েলকে জানানোর পর গেব্রিয়েল খুশিতে আত্মহারা না হয়ে রেগে যাওয়া বা মর্মাহত হওয়া। এর কারণ হিসেবে গেব্রিয়েলের এই আচরণ এবং আংকেলের অসুস্থতার কথা দ্বারা আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়। তা হলো — কারো জন্য সবকিছু করতে গিয়ে আমাদের নিজেদের কিংবা তার আশেপাশের কাউকে না ঠকানো বা ক্ষতির মুখে ঠেলে না দেয়া কিংবা নিজেই ক্ষতিকর হয়ে না ওঠা।

কিন্তু এখানে আমার একটু খারাপ লাগে। কারণ, ছেলেটার জন্য আসলে এই কাজ সত্যিই ভালো। অন্তত ডেলিভারি থেকে। আর গেব্রিয়েলকে সে সত্যিই ভালোবেসেছিলো। তবে পরিচয় গোপন রেখে এতোদিন কথাবার্তা বলেও তা প্রকাশ না করে সরাসরি ইগলুতে প্রকাশ করাটি বাস্তবতার দিক দিয়ে তাকালে খুব একটা ভালো কিছু নয় বলেই মনে হয়। কিন্তু গেব্রিয়েল মর্মাহত হলেও যে তাকে ত্যাগ করেনি সেটা দেখে ভালো লেগেছে। তার কারণ, সে ছেলেটির বাসায় আবার ফিরে যায় কিন্তু যে বাসাটি ছিলো খালি। তারপরের বিষয়ে একটু পরে ফিরছি। কারণ, এ পর্যায়ে আমাদের অন্য একটি দিকে তাকাতে হবে। সেটি হলো মাছি।

মুভির শুরুতে, হাত ও নওফেলের স্মৃতিতে, নওফেলের জীবনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে, কষ্টকর ঘটনাগুলোতে এমনকি হাত কেঁটে যাওয়ার সময়েও, বিশেষ করে বললে, সেসব ঘটনাগুলিতে যার উপরে আসলে তার কোনোপ্রকার নিয়ন্ত্রণ নেই সেসব জাগায় আমরা একটি মাছিকে দেখতে পাই। এই মাছি দ্বারা এখানে ডেস্টিনি বা নিয়তি বোঝানো হয়েছে।

মুভির এক অংশে নওফেল আর গেব্রিয়েলের সাথে নিয়তি নিয়ে দার্শনিক আলাপচারিতা হয়। তার অংশবিশেষ তুলে ধরছি —

Naoufel: Do you believe in fate? No, seriously.

Gabrielle: That everything is written in advance? That we follow a trajectory?

Naoufel: Yeah

Gabrielle: And that we can’t change anything?

Naoufel : We think that we can, but we can’t. It’s an illusion. Unless we do… Something completely unpredictable and irrational. It’s the only way to conjure the spell for good.

Gabrielle: Something like what?

Naoufel: Something like… I don’t know, anything. Say, You’re walking along, pretended to go one way. But you fake it and go the other way. You sidestep. And bam! You jump onto the crane. Something you would never do, you shouldn’t have done it. But you did it because it was right (or cool), it got you somewhere else and you don’t regret it. Something like that.
…….

Gabrielle: Once you’ve dribbled past fate, what do you do?

Naoufel: You try to keep away from it. You run blindly… and keep your fingers crossed.”

…….

বলা বাহুল্য, গেব্রিয়েল আপসেট বা মর্মাহত হওয়ার পরে নওফেল প্রচুর মদ্যপান করে নেশাগ্রস্থ হয়। আর পরদিন সকালে তা সেরে না উঠলেও সে কাঠের কাজে যায় এবং মাছিটাকে ধরার প্রচেষ্টায় তার হাত কেটে ফেলে। এখানেই মুভির ভেতরে সমান্তরাল দুটো ঘটনা তথা নওফেল এবং কাটা হাতের ঘটনার ছেদ ঘটে।

তবে, কাটা হাতটি পরিশেষে নওফেলকে খুঁজে পায়। কিন্তু, উপরিউক্ত এই ছেদ এবং হাত তার শরীরকে খুঁজে পাওয়ার আগপর্যন্ত, মুভিতে হাতের ঘটনাটি ছিলো বর্তমান এবং নওফেলের ঘটনাটি ছিলো অতীত এবং দুটোই অপেক্ষায় আছে ভবিষ্যতের জন্য। এই যে, বর্তমানের সাথে অতীতের সমান্তরালে চলা এই দিকটিও মুভির বিশেষ একটি দিক।

হাত ফিরে এলো। কিন্তু সেটি আর নওফেলের কাটা অংশের সাথে জুড়ে না। যদিও কয়েক মুহুর্তের জন্য আমাদের মনে হাতটি নওফেলের সাথে জুড়ে যাবে যাবে এমন অনুভূতির জন্ম দেয় কিন্তু সেটি হয় না। এখানে অতিপ্রাকৃত কিছু ঘটে নি। তবে এই অংশকে রূপকরে একটি অর্থ দাড় করানো যায়। তা হলো — নওফেল আসলে এগিয়ে গেছে। তার হাতের তোয়াক্কা না করে, পিছে ফেলে এগিয়ে গেছে সে। এই হাত কেটে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সবই ছিলো নিয়তি।

গেব্রিয়েল যখন নওফেলের বাসায় এলো, নওফেল সেখানে ছিলো না। তবে হাতটি ছিলো। সেটি সুগার-কিউব দ্বারা একটি ছোট ইগলু তৈরি করে। আওয়াজ পেয়ে গেব্রিয়েল রান্নাঘরে গিয়ে তা আবিস্কার করে এবং সেই কাঠের ইগলুর নিকট ফিরে যায় সম্ভব নওফেল সেখানে আছে ভেবে৷ কিন্তু নওফেল সেখানেও ছিলো না। তবে সেখানে পড়েছিলো তার ছোটকালের ট্যাপ-রেকর্ডার। ফেলে যাওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত নওফেল সেখানকার তার পুরাতন রেকর্ড গুলো শুনেই এখানে আসে। যেখানে নেই ক্রেনটি ছিলো। যেখানে ইগলুটি ছিলো এবং তারা দু’জন নিয়নি নিয়ে কথা বলেছিলো।

মনে আছে? নওফেলের নিয়তিকে পালটানোর সেই কথাটি। তার কাঁটা হাত ইতোমধ্যেই তা একবার করেছে। নিচে গাড়িঘোড়া’য় পূর্ণ ব্যাস্ত রাস্তা উঁচু বিল্ডিং থেকে হাতটি ছাতা নিয়ে লাফিয়ে পড়ে। আর বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে পৌঁছে যায় নওফেলের নিকট। কিন্তু এবার নওফেলের পালা। নওফেলের নিয়তিকে ড্রিবল দেবার পালা।

এই অংশে আমরা প্রথমে তাকে দেখে মনে করি, সে বোধহয় আত্মহত্যা করবে। কিন্তু না, সে এটি করার ভান করেছে, ঠিক যেভাবে সে বলেছিলো — Say, You’re walking along, pretended to go one way. But you fake it and go the other way. তারপর যে এক দুঃসাহসিক কাজ করে বসে। আর তা হলো বেশ ভালোই দূরত্ব থেকে ক্রেনের উপরে লাফ দিয়ে ঠিকঠাক মতো পৌঁছানো। যেভাবে যে বলেছিলো — You sidestep. And bam! You jump onto the crane। কেনো? তার উত্তর সেই কথাতেই আছে — you did it because it was right (or cool), it got you somewhere else and you don’t regret it. সম্পূর্ণ কাজটি করার সময় রেকর্ডার অন ছিলো। যেটি গেব্রিয়েল আবিস্কার করে এবং তা শুনে শুনে নওফেলের এই ঘটনাটি কল্পনা করে অনুভব বা উপলব্ধি করে। এ অংশে কাঁটা হাতকে পিছিয়ে বরফের ভেতরে ডুবে বা ঢুকে যেতে দেখা যায়।

লাফ দিয়ে ঠিকঠাক মতো পৌঁছানোর পর নওফেল খুশিতে আত্মহারা হয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে। তারপর সেখানেই অনেকক্ষণ শুয়ে ওপরে তাকিয়ে বরফ পড়া দেখে। কিন্তু এবার মাছিটিকে আর দেখা যায় না। এভাবেই মুক্তভাবে ইতি টানে অ্যানিমেশন মুভিটি। অনেকটা কবিগুরুর ছোট গল্পের ভাবনা নিয়ে, যেমনটি তিনি বলেছেন —

ছোট প্রাণ ছোট ব্যথা ছোট ছোট দুঃখ কথা
নিতান্তই সহজ সরল
সহস্র বিস্মৃতি রাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি
তারি দুচারিটি অশ্রুজল।
নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা
নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ
অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে
শেষ হয়ে হইল না শেষ।

শেষের এই অংশটি থেকে আমরা দুটো গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিতে পারি। প্রথমটি হলো অতীতকে একেবারে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়া। সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে কিংবা জীবনে অনেক কিছু হারিয়ে ফেললেও সেগুলো মেনে নিয়ে আপনাকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। দ্বিতীয়ত যদি হাতাশায় থাকে তাহলে অতীতের ভালো, সেরা কিংবা স্বতঃস্ফূর্ত মুহূর্তগুলো স্মরণ করে তার ভেতরে যে জীবনীশক্তি আছে তা গ্রহণ করে আপনার মৃত বা আধ-মৃত আত্মাকে জাগিয়ে তুলে সামনে এগিয়ে যাওয়া। যেমনটি নওফেল তার ছোটবেলার আত্মার জীবিত মুহুর্ত থেকে গ্রহণ করে সামনে এগিয়ে গেছে। তৃতীয়ত, সবকিছুই যে পূর্বনির্ধারিত নয়, আপনার হাতেও যে অনেক কিছু করার বা পাল্টানোর ক্ষমতা আছে বা আপনার ফ্রি উইলের কথা ভুলে না যাওয়া।

পরিশেষে সে হাতের কিংবা নওফেলের কি হবে? — মুভিটি তা দর্শককে ভাবতে দিয়ে ইতি টেনেছে।


লেখক পরিচিতি : হৃদয় হক
শিক্ষার্থী। সময়ে অসময়ে প্রধানত জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে লেখালেখি করি।

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।