লেখক: রুবাই শুভজিৎ ঘোষ
- সিনেমার নাম: অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল
- পরিচালনা: করণ জোহার
- প্রযোজনা: ধর্মা প্রোডাকশানস
- অভিনয়: রণবীর কাপুর, অনুস্কা শর্মা, ঐশ্বর্য রাই বচ্চন, ফাওয়াদ খান এবং অন্যান্য সাবলীল শিল্পীরা।
- সময়: ২ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট
করণ জোহর পরিচালিত “অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল” এর জন্য প্রথম থেকেই ছিল দর্শকদের অপেক্ষা। হবে নাই বা কেন? করণ জোহারের সিনেমা মানেই তো আধুনিকতা, বিদেশের দুর্দান্ত লোকেশানে শুট, পারিবারিক প্রেম বা বন্ধুত্ব এবং প্রেমের গল্প, সুপারস্টার কাস্টিং, দারুণ গান। আর সিনেমায় কে নেই? রনবীর কাপুর, অনুস্কা শর্মা, ঐশ্বর্য রায় বচ্চন এবং ফাওয়াদ খান। সিনেমার গানগুলো ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়। এবার আমরা আসছি সিনেমার কথায়।
শুরুতে আমরা দেখি অয়ন(রনবীর) একজন বড় গায়ক এবং তার একটি ইন্তারভিউ এর মাধ্যমে শুরু হয় সিনেমা। তাকে করা রিপোর্টারের একটি প্রশ্ন থেকে সে চলে যায় অতীতে। আমরা দেখি একটি বারে তার সাথে আলিজা(অনুস্কা)-এর আলাপ। সেইটুকু আলাপেই তাদের বন্ধুত্ব। এখানে মনে হতে পারে এত তাড়াতাড়ি কি বন্ধুত্ব হয়? কিন্তু কিছু সম্পর্ক থাকে যেগুলো আমাদের হাতে না, ওপর থেকে তৈরি হয়েই আসে। এখানে অয়ন আর আলিজা যেন তাই। ওইটুকু সময়ে তাদের আলাপই তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের বাকি গল্পটুকু লিখে দেয় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আস্তে আস্তে জটিল হয়ে পড়ে তাদের সেই বন্ধুত্ব। অয়ন বাবার কোম্পানির দেখাশুনো করলেও সে গায়ক হতে চায়। কিন্তু আলিজাকে যখন সে গান শোনায় তখন আলিজা অয়নকে বলে আসল ব্যাথা না পেলে গান সেইরকম হয় না। অয়নের গলায় সে ব্যাথা নেই, সে ব্যাথা কি তা আলিজা জানে। এগোতে থাকে তাদের বন্ধুত্ব। অয়ন আস্তে আস্তে আলিজাকে ভালবেসে ফেলে। এমন সময় আলিজার জীবনে ফিরে আসে তার পুরনো প্রেম আলি (ফাওয়াদ খান)। আলিজা আর অয়নের ঘুরতে যাবার পথেই দেখা হয় তার সাথে। এই আলিই আলিজার সেই ব্যাথা। আলিজা বলে আলি তার জীবনে ফিরে আসে সে সেটা চায়নি। তাই অয়ন আলিজাকে তার কাছ থেকে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু আলিজাই অয়নের কাছ থেকে চলে যায় দূরে। সে আলির সাথে চলে আসে ভারতে। এমনকি অয়নকে তার বিয়েতে আসতে বলে। কারণ তাদের এ বিয়েতে আলিজার বাড়ি থেকে মত ছিল না। তাই আলিজার দিক থেকে আসবার কেউ নেই। অয়ন তার খুব ভালো বন্ধু, তাকে তাই বিয়েতে আসতে অনুরোধ করে। অয়ন আসে, কিন্তু সে কিছুতেই আলিজা আর আলিকে একসাথে দেখে খুশি হয় না। অবশেষে আলিজার বলা সেই প্রেমের ব্যাথা অনুভব করে সে। সেই ব্যাথা থেকে বেরিয়ে আসে গান, সত্যিকারের গান। এখানে এসে একবার মনে হয় এ কি তাহলে রকস্টারের মতই আরেকটা গল্প? আমার অন্তত তাই মনে হয়েছিল। ভুল ভাঙল কিছুক্ষণ পর। এটা রকস্টারের গল্প নয়, কারণ করণ জোহর যে সেরকরম গল্প বানান না। আসলে অয়ন আলিজাকে এতটাই ভালবেসে ফেলেছে সে তাকে ছাড়া আর থাকতে পারে না। কিন্তু আলিজা তাকে বন্ধুর মত চায়। শুরু থেকেই তাকে বন্ধুর মত চায়। এই সমস্যায় অনেক ছেলেই পড়েছে। তারা বুঝতে পারেনি তাদের মধ্যে কি নেই যা মেয়েটা চায় না। অয়ন চরিত্রটি একেবারে তাই। সে কিছুতেই বুঝতে পারে না, গোটা সিনেমা জুড়ে সে বুঝতে পারে না কি কম আছে তার মধ্যে যার জন্য আলিজা তাকে প্রেমিক হিসাবে পেতে চায় না। কিন্তু আলিজার কাছে সে প্রেমের চেয়েও বড়। এটা শুধু কথা না এবং এখানেই একটা চ্যালেঞ্জ ছিল গল্পকার হিসাবে করণ জোহারের। সেটা আলিজার চরিত্রের মধ্যে দিয়ে তিনি মিটিয়েছেন। আলিজা নিজের যে যুক্তিগুলো এনেছে, যে উদাহরণ গুলো দিয়েছে সেগুলো তাদের পরিস্থিতিতে সত্যিই প্রমাণ করে আলিজা কোনও ন্যাকা মেয়ের মত অয়নকে “ফ্রেন্ডজোন” করেনি, বরং তাকে অন্যরকম ভেবে ভালবাসতে চেয়েছে। আলিজার চরিত্রে অনুস্কা শর্মা একেবারে মানানসই। অয়নের চরিত্রে যেমন মানানসই রনবীর কাপুর। যেন তাদের জন্যই লেখা হয়েছে এই দুটো চরিত্র। দুজনেই একেবারে চরিত্র দুটোকে ফুটিয়ে তুলেছে দুর্দান্ত ভাবে। আলির চরিত্রে ফাওয়াদ খানের অভিনয় নিঃসন্দেহে ভালো। কিন্তু এই চরিত্রতায় সেই খুব দরকারি তা একদমই নয়।
একসময় গল্পে আসে সাবা (ঐশ্বর্য রায় বচ্চন)। সিনেমায় তার উপস্থিতি অনেকটা স্বপ্নের মত। সাবার নিজের কথাতেই, “ম্যায় কিসি কি জরুরত নেহি, খোয়াইশ বাননা চাহতি হু!” সাবার চরিত্রে ঐশ্বর্য রায় বচ্চন ছাড়া অন্য কাউকে ভাবাই যায় না। লুক থেকে শুরু করে কথাবার্তা একেবারে গল্পের প্রয়োজনে যেমন ঠিক তেমন ভাবে নিজেকে বানিয়ে নিয়েছেন বচ্চন পরিবারের বউমা। যতটুকু সময় তার উপস্থিতি, তাতেই দর্শক তার প্রেমে পড়বেন, পড়তে বাধ্য হবেন। কিন্তু সে যে অধরা। অয়নকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে সে চলে যায় স্বপ্নের মতই। একটি ক্যামিও চরিত্রে শাহরুখ খান। তার একতরফা প্রেমের নীতিকে প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গল্প থেকে চলে যায় সে। এরপরের ঘটনা অনেক। গল্প যখন প্রায় শেষ মনে হবে, তখন গল্পে আসে একটা টুইস্ট। সেটা দেখতে হবে হলে গিয়েই। কারণ সিনেমাটা সত্যিই হলে গিয়ে দেখবার মত। তাহলেই প্রত্যেকের পরিশ্রম বুঝতে পার আমরা।
লেখকের কথা: রুবাই শুভজিৎ ঘোষ
লেখকের জন্ম পশ্চিমবাংলায়। পেশায় একটি বহুজাতিক সংস্থার তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। নেশায় লেখক এবং পরিচালক। বাঙালির জনপ্রিয় ওয়েবসাইট সববাংলায় এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। কবিতা থেকে শুরু করে গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, চিত্রনাট্য সবকিছুই লিখতে ভালবাসেন। লিটিল ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক বিভিন্ন ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখেছেন। স্রোত থেকে প্রকাশিত তাঁর কবিতার সংকলন দৃষ্টি এবং বালিঘড়ি। এছাড়া তথ্যচিত্র, শর্ট ফিল্ম বা অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ভিডিও পরিচালনা করেন। ধর্ম এবং বিজ্ঞান তাঁর প্রিয় বিষয়। ভ্রমণ তাঁর অন্যতম শখ। অন্যান্য শখের মধ্যে রয়েছে স্কেচ, ফটোগ্রাফি, ছবি ডিজাইন করা।