লেখক : রুবাই শুভজিৎ ঘোষ
- সিনেমার নাম: পরমাণু
- পরিচালনা: অভিষেক শর্মা
- প্রযোজনা: জি-স্টুডিও, জেএ এন্টারটেইনমেন্ট এবং কেওয়াইটিএ প্রোডাকশানস
- অভিনয়: জন আব্রাহাম, বোমান ইরানি এবং অন্যান্য সাবলীল শিল্পীরা।
- সময়: ২ ঘণ্টা ৯ মিনিট
১৯৯৮ সালের ভারতের পরমাণু পরীক্ষার ঐতিহাসিক সাফল্য নিয়ে এই সিনেমাটি নিঃসন্দেহে দেখবার মত। এর আগে এই ঘটনা নিয়ে সিনেমা হয়নি। সেই দিক থেকে সিনেমাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এবং এক লাইনে বলতে হলে অবশ্যই দেখবার মত একটি সিনেমা।
সিনেমার ৮০% সত্য ঘটনা ২০% কল্পনা। পোখরান পরীক্ষার সাথে জড়িত এপিজে আব্দুল কালাম প্রমুখ বিভিন্ন ব্যক্তিত্বদের সিনেমায় পালটে ফেলা হয়েছে, কিন্তু গল্পের মূল ঘটনা পুরোপুরি বাস্তব। পোখরান নিউক্লিয়ার পরীক্ষার দুটো গুরুত্বপূর্ণ দিক আছে। এবং সেই দুটো দিক নিয়েই সিনেমার গল্প, যা থেকে সিনেমাটা কখনই বিচ্যুত হয়নি। এক, এই পরীক্ষাটি ভারতকে বিশ্বের দরবারে যথেষ্ট পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে। তাই এটা একটা দেশাত্মবোধক সিনেমা বটে। দুই, আমেরিকার সিআইএ পোখরানের ওপর তার বেশ কয়েকটা স্যাটেলাইট দিয়ে নজর রাখছিল যাতে ভারত পরমাণু পরীক্ষাতে সফল না হয়। সেই নজর পেরিয়েও কিভাবে ভারত পরীক্ষাটি করেছিল এবং কিভাবে সিআইএ-এর প্ল্যান তাঁরা বানচাল করে দিয়েছিল সেই নিয়ে এগোয় সিনেমার গল্প। এই যে সিআইএ-এর সাথে লুকোচুরি, এটা দারুন ভাবে সিনেমার সাসপেন্স তৈরি করে এবং এই সাসপেন্সটাকে দারুন সিনেমাটিকভাবে দেখানো হয়েছে। সিআইএ-এর সঙ্গে আইএসআই কেও দেখানো হয়েছে। কিভাবে দু পক্ষের এজেন্ট পোখরানে এর ওপর নজর রাখছিল। দেখানো হয়েছে কিভাবে তাঁদের নজরদারি এড়িয়ে ভারত পোখরান নিউক্লিয়ার পরীক্ষা সম্পূর্ণ করে। এটা দেখাতে গিয়েও সিনেমাটা কোনভাবেই অ্যান্টি-আমেরিকান বা অ্যান্টি-পাকিস্তান সিনেমা হয়ে যায়নি। কারণ এখানে আমেরিকা বা পাকিস্তানকে ভিলেন বানিয়ে কিছু দেখানো হয়নি। দেখানো হয়েছে ভারতের সাফল্য।
দ্বিতীয় আসছি সিনেমার এডিটিং নিয়ে। আগেই বলেছি সিনেমার বহু অংশ কাল্পনিক হলেও মূল গল্প কিন্তু বাস্তব থেকেই নেওয়া। আর সিনেমাটিকে বাস্তবসম্পন্ন করে তুলতে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী বা আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটন এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক বাক্তিদের ভিডিও ক্লিপ গুলোকে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তা প্রশংসনীয়। এবং এ কারণেই আলাদাভাবে এডিটিং-এর কথা বললাম। সিনেমার ভিজ্যুয়াল এফেক্ট গুলোও বেশ সুন্দর। স্যাটেলাইট-এর দৃশ্য থেকে পরীক্ষাশেষে ভূমিকম্প দেখানো এই সমস্ত ভিজ্যুয়াল এফেক্টগুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এবার গল্পের চিত্রনাট্যের অন্য দিকটায় আসি। পুরো গল্পটাই আবর্তিত হয়েছে জন আব্রাহাম অভিনীত আসওয়ান্ত রানা চরিত্রটির সাথে। সিনেমার গতিপথ ঠিক রাখতে একটা চরিত্রের চোখ দিয়ে গল্পটা বলা অবশ্যই ভালো কথা, তাতে বিভ্রান্তি কমে, গল্প একটা পথ ধরে এগোয়। কিন্তু আসওয়ান্তের চোখ দিয়ে দেখাই শুধু নয়, গল্পটাও তাঁরই হয়ে গেছে, চিত্রনাট্যটাও। এখানে পোখরান পরীক্ষাটি এমনভাবে দেখানো হয়েছে যেন এটা শুধু তাঁরই স্বপ্ন এবং গল্পটাও তাঁর স্বপ্নপুরনের গল্প বলছে। আমি বলবো না পুরোটাই তার গল্প, কিন্তু যেখানে এই পরীক্ষাটি ছিল দেশের বিজ্ঞানী, আর্মিদের মিলিত একটি প্রচেষ্টা, সেখানে একা একজনের কাঁধে সবকিছু চাপিয়ে তাঁকে হিরো বানানোর এই পুরানো বলিউড স্টাইলটা আমার ব্যাক্তিগতভাবে ভালো লাগেনি। সঙ্গে আরেকটি বিষয় হল আর্মি বা র (RAW) এদের বীরত্বের কথা দেখাতে গিয়ে যেন ভারতীয় পুলিশের গুরুত্ব না কমে সেটাও দেখতে হবে। কিন্তু একটা পুলিশ স্টেশনে একটা ছোট সিনে পুলিশের ইমেজটাকে অন্যভাবে দেখানো হয়েছে।
তবে এগুলো মোটেই সিনেমাটা দেখার পথে বাধা নয়। এরকম বিষয় নিয়ে যে সিনেমা হচ্ছে, এটাই বড় কথা এবং আগামী দিনেও এইরকম বিষয় নিয়ে সিনেমা হোক, এটাই আশা রাখি।
লেখক পরিচিতি : রুবাই শুভজিৎ ঘোষ
লেখকের জন্ম পশ্চিমবাংলায়। পেশায় একটি বহুজাতিক সংস্থার তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। নেশায় লেখক এবং পরিচালক। বাঙালির জনপ্রিয় ওয়েবসাইট সববাংলায় এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। কবিতা থেকে শুরু করে গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, চিত্রনাট্য সবকিছুই লিখতে ভালবাসেন। লিটিল ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক বিভিন্ন ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখেছেন। স্রোত থেকে প্রকাশিত তাঁর কবিতার সংকলন দৃষ্টি এবং বালিঘড়ি। এছাড়া তথ্যচিত্র, শর্ট ফিল্ম বা অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ভিডিও পরিচালনা করেন। ধর্ম এবং বিজ্ঞান তাঁর প্রিয় বিষয়। ভ্রমণ তাঁর অন্যতম শখ। অন্যান্য শখের মধ্যে রয়েছে স্কেচ, ফটোগ্রাফি, ছবি ডিজাইন করা।