লেখক : দেবজিত ঘোষ
- সিনেমার নাম: ময়ূরাক্ষী
- পরিচালনা: অতনু ঘোষ
- প্রযোজনা: ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশান প্রোডাকশান
- অভিনয়: সৌমিত্র চ্যাটার্জী, প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জী, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, ইন্দ্রানী হালদার, গার্গী রায়চৌধুরী এবং অন্যান্য সাবলীল শিল্পীরা।
- সময়: ১ ঘণ্টা ৪২ মিনিট
“One day the power of love will overcome the love of power.”
ক্ষমতার পেছনে আমরা সবাই দৌড়ই। বলা ভালো, দৌড়তে খুব ভালোবাসি। কিন্তু ক্ষমতা কি শেষ পর্যন্ত আমাদের মনকে শান্ত করতে পারে ? পারে আমাদের চাওয়া-পাওয়াকে সত্যি মেটাতে ? ক্ষমতার দৌড়ের মোহে আবদ্ধ হয়ে গিয়ে আমরা কি আর ফিরে আসতে পারি আমাদের ফেলে আসা দুনিয়ায় ?
এসব প্রশ্নের কোনটার-ই প্রকৃত উত্তর দেয় না ২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত অতনু ঘোষ পরিচালিত ‘ময়ূরাক্ষী’; কিন্তু এই সিনেমা আপনাকে ভাবাবে আপনার জীবনে ক্ষমতা আর ইচ্ছের একটা নামবিহীন যোগসূত্রকে নিয়ে। আজকের এই দ্রুতগতির তীব্র আধুনিকতা আর আতিশয্যশালী দুনিয়ায় আমরা কে না চাই উচ্চাকাঙ্খী হতে ? নিজের হাতে ক্ষমতা পাওয়া থেকে শুরু করে ‘উঁচু’ জায়গায় পৌঁছনোর দৌড়ে আমরা আজ সবাই মোহাবিষ্ট। কিন্তু এই দৌড়ে নামতে গিয়ে আমরা কি ইচ্ছেদের বাঁচিয়ে রাখতে পারি ? অনুভূতিদের বুকে টেনে নিয়ে আগলে রাখতে পারি ? ময়ূরাক্ষী আমাদের এই সূক্ষ্ম প্রশ্নগুলো নিয়ে ভাবায়।
ছেলে – বাবার সম্পর্ক নিয়ে নির্মিত এই সিনেমায় নেই কোনো দুর্দান্ত ক্লাইম্যাক্স বা কোনো দারুণ রকমের মন মাতানো গান। আছে শুধু আদ্যোপান্ত নিখাদ একটা বাস্তবের জলজ্যান্ত মুহূর্তরা, যেখানে চরিত্র আমরা সবাই। এই মুহূর্তরা সিনেমা থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে নিজেদের আয়নার সামনে দাঁড় করায়। জীবনে আমরা ঠিক কী ভাবছি, কী করছি বা কী করতে চাইছি তাই নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। দৌড়ের ট্র্যাকে নেমে গেলে আবার ফিরে আসাটা সহজ নয়। সময়, সুযোগ, পরিস্থিতি – আমাদের ছাড়তে চায় না। এর ফলে আমরা যে শুধু নিজেরাই হারিয়ে যাই, তাই নয়, আমাদের প্রথম বন্ধু তথা মা-বাবাদেরও হারিয়ে ফেলি। আর এই হারিয়ে ফেলাটা ‘বায়োলজিক্যাল’ নয়, বরং তার থেকেও অনেক বেশি ‘ইমোশনাল’। তাই মন চাইলেও আর ফিরে আসা যায় না।
এই যা সমস্ত সূক্ষ্ম বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো, তাদের সবার সমষ্টিগত প্যাকেজ হলো ময়ূরাক্ষী। প্রায় দু-ঘণ্টার কাছাকাছি এই সিনেমায় হয়ত কোথাও কোথাও মনে হতে পারে যে, দৈর্ঘ্যটা বেশি হয়ে যাচ্ছে কি ? পরক্ষণেই হয়ত আপনাদের এই ধারণা ভেঙেও যেতে পারে। এই কথা এইজন্যই বলা কারণ, কোনও সিনেমার দৈর্ঘ্য তার সাথে খাপ খাচ্ছে কিনা, তা তো একেবারেই সাবজেক্টিভ ব্যাপার। এর পাশাপাশি, সিনেমার রিভিউ দেবার যোগ্যতা আমি রাখি না, তার জন্য সিনেমা নিয়ে যতটা পড়াশোনা দরকার, তার ধারেকাছে আমি নেই। শখে সিনেমা দেখা। তাই শুধু অনুভূতিটা রেখে গেলাম। আরেকটি বিষয়, তাবড় তাবড় রিভিউয়ারদের মতো সিনেমার গল্প অক্ষরে অক্ষরে তুলে দিয়ে সিনেমাটার পোস্টমর্টেম করাটাও খুব অপছন্দ করি। তাই সিনেমার ভেতরের ভাবটাই শুধুমাত্র ব্যক্ত করলাম আপনাদের কাছে, গল্প নয়। যদি জীবনের এই দৌড়ে মাঝে সাঝে একটু ‘ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক’ – এর প্রয়োজন আপনিও অনুভব করেন, তাহলে আপনাকে অনেক অভিনন্দন – ময়ূরাক্ষী আপনার জন্য অপেক্ষা করছে ; আঁকড়ে ধরুন ওকে গিয়ে। দেখবেন, আপনার জীবনের হারিয়ে যাওয়া মূল্যবোধগুলো হয়ত নতুনভাবে আপনাকে ধরা দিতে পারে।
লেখকের কথা : দেবজিত ঘোষ
কবিতা লিখি – সিনেমা দেখি – গান গাই – স্বপ্ন দেখি। নিজের একটা একান্ত জগৎ নির্মাণে সদা সচেষ্ট থাকি। নতুন পরিচয়ে একটু গম্ভীর হই, কিন্তু বন্ধুত্ব গভীর হলে চূড়ান্ত ছ্যাবলামো করা থেকে পিছপা হই না। কষ্ট পেলে ভেঙে পড়ি, একটু কেঁদে আবার মনটাকে ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে পড়ি। আর এই সমস্ত ধূসর – রঙিন অধ্যায়গুলোর মাঝেই দু – এক লাইন মনের কথা লিখে ফেলি।