এক উন্নত সভ্যতার অপমৃত্যু

লেখক: অভি সেখ

ইসলাম ধর্ম সংগঠিত হওয়ার কয়েক দশকের মধ্যেই এমন একটা সময় এসেছিলো যে সময়টাকে পৃথিবীর ইতিহাসে “The Golden age of Islam” বলা হয়। অষ্টম শতাব্দী থেকে চতুর্দশ শতাব্দী – এই সময়কালে ইসলাম ধর্ম পৃথিবীকে অনেক কিছু দিয়েছে। নতুন নতুন আবিষ্কার, অনেক অজানা তথ্যের সন্ধান যা মানব সভ্যতা এবং বিজ্ঞানকে অনেক এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। সেই সমস্ত আবিষ্কার এই একটা ছোট প্রবন্ধে লেখা সম্ভব নয় তাই কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের কথা বলছি সংক্ষেপে।

Algebra যা এসেছে আরবি শব্দ Al-jabr থেকে (“Reunion of broken parts and bone-settings”)। Alchemy সেটাও এসেছে আরবি শব্দ al-kīmiyā থেকে এবং আমরা আজ আকাশের যে সব নক্ষত্র গুলোর নাম জানি তাদেরও অধিকাংশ নাম আরবি ভাষায়। আমাদের সকলের খুবই পরিচিত একটা শব্দ এলগোরিদম যেটার জন্য আজ সমস্ত কম্পিউটার সফটওয়ার চলছে সেটাও এসেছে আরবি নাম Al-Khwarizmi থেকে (Muḥammad ibn Mūsā al-Khwārizmī, Arabized as al-Khwarizmi and formerly Latinized as Algorithmi, was a Persian polymath who produced works in mathematics, astronomy, and geography. Around 820 CE he was appointed as the astronomer and head of the library of the House of Wisdom in Baghdad)।

কিন্তু বর্তমানে ইসলামিক দেশগুলো ঠিক কী পরিস্থিতিতে আছে আর তাদের দেশের সমস্যাগুলো কী আমরা আজ দেখতে পাচ্ছি। এই সময় পৃথিবীতে প্রায় ৫৭টি ইসলামিক দেশ আছে, তারা সবাই মিলে বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং নতুন কিছু আবিষ্কারের জন্য মাত্র 1% যোগদান করতে সক্ষম। আগেই বললাম মুসলিম দেশগুলো একসময় বিজ্ঞান এবং নতুন নতুন আবিষ্কারের দিক থেকে পুরো পৃথিবীতে কতটা এগিয়ে ছিল। কিন্তু আজকের এই বিজ্ঞান আর টেকনোলজির যুগে পুরো পৃথিবীতে ওই ৫৭টি দেশ মিলিয়ে বিজ্ঞানচর্চা এবং নতুন কিছু আবিষ্কারের জন্য যে পরিমান তথ্য প্রদান করে তা শুধুমাত্র ভারত এবং স্পেন এই দুটো দেশের সমান…!

কী এমন ঘটেছিল মানব সভ্যতার ইতিহাসে যে একটা এত বড় আর উন্নত সভ্যতা আজ এতটা পিছিয়ে গেল? আজ আর পাঁচটা মানুষের মত অনেক শিক্ষিত মুসলিমও এই প্রশ্নটি করে থাকেন।
তবে এর উত্তর লুকিয়ে আছে একাদশ শতাব্দীতে।
হজরত মোহাম্মদ সাঃ এর মৃত্যুর পর ইসলামিক সাম্রাজ্য চলে যায় “রসিদ উন খলিফত” (Rashidun Caliphate 632–661) এর অধীনে। খলিফত (“Caliphate”) হল একটা মুসলিম সাম্রাজ্য যা একজন খলিফা (caliph) মানে একজন লিডারের শাসনের অধীনে থাকবে। “রসিদ উন খলিফত” এর পর এল উমায়াদ খলিফত (Umayyad Caliphate 661–750)। এটা ছিল ইসলামিক ইতিহাসের দ্বিতীয় খলিফত যা এখনকার সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে অবস্থিত ছিল। তারপর উমায়াদকে যুদ্ধে হারিয়ে ক্ষমতায় এল আব্বাসিদ খলিফত ( Abbasid Caliphate 750–1258) যা এখনকার ইরাকের রাজধানী বাগদাদে অবস্থিত।

এই উমায়দ এবং আব্বাসিদ রাজবংশের শাসনকালেই বিজ্ঞান, মৌলিক রিসার্চ আর শিল্পের বিকাশ হতে থাকে এবং আগামী কয়েক দশক পর্যন্ত এভাবেই বাড়তে থাকে, এটাই ছিল “The Islamic Golden Age” বা স্বর্ণযুগ। এই সময়কালটিকে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিভিন্ন গ্রন্থে খুবই সুন্দর ভাবে বর্ণনা করেছেন কীভাবে বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগার গড়ে উঠেছিল আর বাগদাদে ছিল “The House Of Wisdom” – এখানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিজ্ঞ মানুষেরা আসতেন এবং নিজেদের জ্ঞান এবং রিসার্চ এখানে এসে ব্যাখ্যা করতেন এবং জ্ঞান বিনিময় করতেন একে অপরের সাথে, যেগুলো আরবি ভাষায় ট্রান্সলেট করে আলাদা আলাদা বইয়ের মধ্যে নথিভুক্ত করে রাখা হত। আমরা ইতিহাসে অনেকবার লক্ষ্য করেছি যখনি একটা সভ্যতা বিজ্ঞান, শিল্প এবং স্বাধীন গবেষণাকে গুরুত্ব দেয় সেই সভ্যতার বিকাশ এবং উন্নতি হতে থাকে, আর যখনি সেসব বিষয়গুলোকে থামিয়ে দেওয়া হয় তার ফল হয় একদমই বিপরীত।

ঠিক এরকমই কিছু ঘটেছিলো ইসলাম ধর্মের ইতিহাসেও, যা ইসলামিক স্বর্ণযুগকে ধ্বংস করে দিয়েছে সম্পূর্ণ ভাবে।
ইমাম গাজ্জালী (Abu Hamid Al Gazali) সেই সময়কার একজন প্রভাবশালী লিডার ছিলেন। ১০৫৮ খ্রিস্টাব্দে ইরানের জন্ম গ্রহণ করেন। শুরুতে তিনি সেই সময়ের ভিত্তিতে সেখানকার সভ্যতা এবং ধর্মীয় রীতিগুলোকে একত্রিত করে কিছু বই লিখলেন। সেখানে তিনি কিছু নিয়ম কানুন লিখলেন যে সঠিক ভাবে ইসলামকে মানতে হলে ঠিক কী কী করা উচিত এবং একজন ভালো মুসলিম হতে হলে কী কী কাজ করতে হবে ইত্যাদি, এবং সেই জ্ঞান প্রচার করতে শুরু করলেন। তাঁর লেখা বইগুলির মধ্যে যে দুটি বই তখনকার সমাজে সবথেকে বেশি প্রভাব ফেলেছিল সেই বই দুটি হল:
প্রথম বই “The Rival Of The Religious Sciences” – এই বইটির অনেক গুলো ভাগ আছে। যেগুলোর মধ্যে তিনি লিখেছেন কীভাবে ইবাদত (প্রার্থনা) করতে হবে, কীভাবে দৈনন্দিন জীবন কাটাতে হবে,কী কী করলে মৃত্যুর পর স্বর্গ পাওয়া যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এই পর্যন্ত সব ঠিক চলছিল, সমস্যা শুরু হল ঠিক এর পর থেকেই।
দ্বিতীয় বইটির নাম হল – “Incoherence Of The Philosophers”। এই সেই বই যেটা ইসলামের মত একটা বিজ্ঞান ভিত্তিক এবং এত বড় সভ্যতার সমস্ত লজিককে ভেঙে ফেলল পুরোপুরি, যে কারনে আজও এই সভ্যতা গোঁড়ামির অন্ধকার থেকে বেরোতে পারছে না।

এই বইটি মূলত বড় বড় দার্শনিকদের বিরুদ্ধে লেখা যেখানে তিনি লিখেছেন এই যে – দার্শনিক এবং অন্যান্য ধর্মগুরুরা যে বলছেন সমাজের উন্নতির জন্য যা কিছু উপকারী এবং ভালো সেগুলো সব ভালো আর সমাজের জন্য যেগুলো ক্ষতিকর সেগুলো খারাপ – দার্শনিকদের এই মতবাদ সম্পূর্ণ রূপে ভুল। কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ সেটা বুদ্ধি এবং যুক্তিবাদ দিয়ে বোঝা সম্ভবই নয়, ঠিক ভুল শুধুমাত্র ধর্মীয় গ্রন্থ কোরান আর হাদিস থেকেই পাওয়া সম্ভব। যেটা করলে আমরা জান্নাতে (স্বর্গ) যেতে পারবো সেটাই ঠিক, যেটা করলে জাহান্নামে (নরকে) যাবো সেটাই ভুল, এখানে যুক্তিবাদের কোনো জায়গা নেই, তবে হ্যাঁ এটা ঠিক যে যুক্তিবাদ অবশ্যই কোরান হাদিস এবং বিপ্লবকে সমৰ্থন করে। এই বইটিতে তিনি আরো লিখেছেন প্রাচীন দার্শনিক প্লেটো, এরিস্টটল, সক্রেটিস এরা মুসলিম ছিলেন না, এঁরা মূর্তিপূজা করতেন, কাফের ছিলেন তাই এঁদের মতবাদে বিশ্বাস করলে আমাদের ইসলামিক সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে হবে। আর সেই সমস্ত দার্শনিক যাঁরা ইসলাম ধর্মের অন্তর্গত ছিলেন যেমন – ইবনে সিনা ( Avicenna জন্ম 980- মৃত্যু 1037) এবং আল্ ফারাবী (Abu Nasr Al-Farabi জন্ম 872- মৃত্যু950), যাঁরা এরিস্টটল সহ অন্যান দার্শনিকদের মতবাদে বিশ্বাস করতেন, ইমাম গাজ্জালীর মতে তাঁরা মুসলিম সমাজে থেকেও সেই সমস্ত ইউরোপীয় দার্শনিকদের মতবাদগুলোকে ইসলামিক সংস্কৃতির সাথে জুড়ে ইসলাম সমাজ আর আর ইসলামের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে, মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে, ধর্মের অপমান করছে।

দার্শনিকরা Cause and effect এ বিশ্বাস করতেন কিন্তু তাঁর মতে এটাও একটা ভুল ধারণা, তাঁর মতে পৃথিবীতে যা কিছু ঘটনা ঘটছে তা শুধু মাত্র আল্লাহ করাচ্ছেন তাঁর নির্দেশ ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়। এই কথাটা বোঝানোর জন্য যে যুক্তি এই বইয়ে লিখেছেন সেটা হল এরকম – “যদি আমরা এক বস্তা তুলোতে আগুন ধরিয়ে দিই তাহলে আমরা দেখবো সেটা পুড়ে যাবে, আমরা ভাববো আগুনের জন্য সব পুড়ে গেল কিন্তু এটা আসলে আমাদের ভুল ধারণা, সত্যিটা হল আল্লাহ চেয়েছেন তাই এটা পুড়ছে প্রত্যেকবার, এবার হতে পারে আমরা দেখছি তুলো আগুনের জন্য পুড়ছে কিন্ত আল্লাহ চাইলে বিনা আগুনেও তুলো পুড়ে যাবে, আবার আল্লাহ চাইলে হাজারবার আগুন লাগালেও তুলো পুড়বে না। এখানে আগুনটা জরুরি নয়, জরুরি হল আল্লাহর ইচ্ছে। একজন ক্ষুধার্ত মানুষের খাবার না খেলেও তার পেট ভরে যেতে পারে আল্লাহ চাইলে, একটা লোকের গলা কেটে দিলেও এটা বাধ্যতামূলক নয় সে মরে যাবেই, আল্লাহ চাইলে সে বেঁচে থাকতেও পারে।”
তিনি আরো বলেছেন নাম্বারের হেরফের করা, অর্থাৎ যেটা আমরা অংক করার সময় হামেশাই করে থাকি, সেটা করার কোনো মানেই হয় না, সেটা অযৌক্তিক, সেটা মানুষকে কোনো ভাবেই আল্লাহকে খুঁজতে বা তার উপাসনা করতে সাহায্য করে না তাই ওটার কোনো গুরুত্ব নেই। অর্থাৎ এখানে এক কথায় স্পষ্ট হচ্ছে যে তাঁর মতে বৈজ্ঞানিক আর গাণিতিক অগ্রগতি যা একসময় ইসলামকে স্বর্ণযুগ দেখিয়েছিল সেগুলোর থেকে ধার্মিক জ্ঞান অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

সেই সময় ইমাম-গাজ্জালীর এই সমস্ত মতবাদগুলো ভীষণভাবে পলিটিকাল এবং কালচারাল সাপোর্ট পায়, কোনো পলিটিকাল সাপোর্ট ছাড়া শুধু একটা মানুষের পক্ষে এতবড় পরিবর্তন আনা কখনোই সম্ভব হতো না। তাই সেইসময় তাঁকে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট করেছিল সদ্য ক্ষমতায় আসা সেলজুক এম্পায়ার (Seljuk empire 990–1063) এর মন্ত্রী নিজাম আল মুল্ক (Nizam Al mulk জন্ম 1018 – মৃত্যু 1092) যিনি মন্ত্রী হওয়ার আগে একজন ইসলামিক স্কলার ছিলেন। এই সেই ব্যক্তি যাকে অনেক অংশে দায়ী করা যেতে পারে ইসলামিক গোল্ডেন এজ শেষ করার জন্য।
সেলজুকরা ততদিনে আব্বাসিদ সাম্রাজ্যের বিভিন্ন শহর ধীরে ধীরে দখল করতে শুরু করছে, সেইসময় (1250 খ্রিস্টাব্দে) নিজাম আল মুল্ক সেখানকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে পাল্টাতে শুরু করে দেয়। আগেই বললাম আব্বাসিদ ডাইনেস্টিতে বিজ্ঞান এবং ধর্ম দুটোরই গুরুত্ব ছিল। তারা বিশ্বাস করত ধর্মকে সময়ের সাথে আপডেট করা দরকার তার সাথে বিজ্ঞান এবং টেকনোলজিকেও উন্নত করাটা খুব জরুরি। গোল্ডেন এজ অফ ইসলাম সেই বিচার ধারারই ফল ছিল। কিন্তু নিজাম আল মুল্ক ধর্ম এবং বিজ্ঞানকে একসাথে শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে ঢুকিয়ে দিল যেখানে ধর্ম শিক্ষার একটা বিরাট অংশ হয়ে উঠল, যা ইতিহাসে ‘দ্য নিজামিয়া সিস্টেম’ নামে পরিচিত। আর সেই শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মের প্রভাব এতটাই তীব্র ছিল যে বিভিন্ন রিসার্চ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ভাবনা এবং আবিষ্কার করার যে শিক্ষা ব্যবস্থা এতকাল চলে এসেছে সেটা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে গেল পুরোপুরি। আর ততদিনে ইসলামিক রাজ্যগুলোর মধ্যে সেলজুগ সাম্রাজ্য সবচেয়ে বড় এবং প্রচুর শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল আর গৃহযুদ্ধ এড়াতে আব্বাসিদ রাজাকে রাজত্ব সামলাতে হয়েছিল, তাঁর কোন ক্ষমতা ছিল না, সব ক্ষমতা ছিল তাঁর মন্ত্রী নিজাম আল মুল্ক এর হাতে। ফলে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ধার্মিক শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে উঠল এবং ধর্মীয় পড়াশোনার গুরুত্ব বাড়তে থাকলো, ফলে বিজ্ঞান চর্চা এবং নতুন কিছু আবিষ্কার করার ব্যপারে উৎসাহী শিক্ষার্থীর পরিমাণ কমতে থাকলো ধীরে ধীরে, শুধু শিক্ষার একমাত্র বিষয়বস্তু হিসাবে ধর্ম আর শুধু ধর্মই পরে রইলো।

এবার আপনারা অনেকেই ভাবছেন এমন টা করার কারন কী ছিল…?
আসলে সেইসময় বেড়ে ওঠা শিয়া মুসলিমদের সম্প্রদায়কে কমজোর করে পুরোপুরি মিটিয়ে ফেলার জন্যই এসব করা হয়েছিল সেটা বললে খুব একটা ভুল হবে না, এটা ছিল একটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, ঠিক তেমনই যেমন আজকের দিনে সামান্য কয়েকটা ভোটের জন্য কিছু অসাধু নেতা মন্ত্রী হিন্দু মুসলিমের মধ্যে ঝামেলা লাগিয়ে থাকেন। আর এই নিজামিয়া সিস্টেম প্রায় চারশো বছর চলেছিল যা ইসলাম সম্প্রদায়ের ভিতরে কট্টর মনোভাবের সৃষ্টি করে। বাইরের কোনো জ্ঞান নেওয়া, স্বাধীন ভাবে ভাবনা চিন্তা করা, সেই সময় থেকেই গুরুতর অপরাধের মত হয়ে যায় কারণ এই সিস্টেম অনুযায়ী মহাবিশ্বের সমস্ত জ্ঞান ধর্মীয় গ্রন্থগুলোতেই লেখা আছে, সাধারণ মানুষ এতই তুচ্ছ যে ধর্মীয় বাণী নিয়ে কোনো প্রশ্ন বা সন্দেহ প্রকাশ করার অধিকার তাঁদের নেই, এইসমস্ত ভাবনাচিন্তাগুলোর জন্যই ইসলামে অপর ধর্ম এবং সভ্যতার প্রতি সম্মান কমতে শুরু হয়, এবং ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বাড়তে থাকে, আর এমন কট্টর চিন্তা ধারাগুলো একটা সভ্যতার অবনতির জন্য যথেষ্ট ছিল।

আমাদের ভারতের ইতিহাসেও যদি দেখি আকবর আর ঔরংজেব এর রাজত্বে এই তফাৎটা লক্ষ্য করা যায় খুব ভালো ভাবে। আকবরের সময় জ্ঞান, বিজ্ঞান, আর আর্টকে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল ধর্মীয় হিংসা ছিল না আর তাঁর সেনাপতি বীরবল ছিলেন জাতে হিন্দু, তাঁর এই চিন্তাধারা মোগল সাম্রাজ্যকে উন্নতির চরমে নিয়ে যায়, কিন্তু ঔরংজেব ক্ষমতায় এসেই আগে সমস্ত রকম আর্ট, আর বিজ্ঞান চর্চা বন্ধ করিয়ে দেয়, নিজের রাজত্বের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য জোর পূর্বক ধর্মান্তরিত করানো থেকে শুরু করে ধর্মীয় কট্টরতা কোনোটায় বাকি রাখেননি, যা মোগল সাম্রাজ্যের পতনের শুরুর কারণগুলোর মধ্যে একটা।
শুধু ইসলাম নয় যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন ধর্মে বিভিন্ন সভ্যতায় শাসকশ্রেণী নিজেএ প্রয়োজন মত ধর্মকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের সময়কালে নিজেদের মনের মত করে রাজত্ব করেছে এবং তার ফল ভোগ করতে হয়েছে পরের প্রজন্মদের। সে গল্প আবার অন্য কোনো দিন হবে অন্য কোনো প্রবন্ধে….

তবে এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আজ আমরা সেই একই লড়াইয়ের কাঠের পুতুল হয়ে শাসক শ্রেণীর হাতে ব্যবহৃত হচ্ছি। তাই আজ কাজ নেই, অর্থনীতি নেই, কোটি কোটি মানুষের মাথায় ছাদ নেই, নেই পেটে ভাত তবুও সোশ্যাল মিডিয়া আর খবরের চ্যানেলে আমাদের তর্কের মূল বিষয় বস্তু ওখানে মন্দির হবে না কি মসজিদ…


তথ্যসুত্র:
1. https://en.m.wikipedia.org/wiki/Islamic_Golden_Age
2. http://world-history-education-resources.com/islamic-golden-age/islamic-golden-leaders-age.html


শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

9 Comments

  1. অজ্ঞাতনামা কেউ একজন

    দারুণ লেখা। অনেক অজানা তথ্য জানলাম। এগিয়ে চল আরও।এই লেখনীর জন্য ধন্যবাদ অভি শেখ।
    “মানুষের ভালো হোক”

  2. আশুতোষ

    দারুণ লেখা। অনেক অজানা তথ্য জানলাম। এগিয়ে চল আরও।এই লেখনীর জন্য ধন্যবাদ অভি শেখ।
    “মানুষের ভালো হোক”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।