নববর্ষ ১৪৩১: সম্পাদকের কথা

সম্পাদক: রাজীব চক্রবর্তী

১৪৩০ বঙ্গাব্দকে বিদায় দিয়ে আমরা প্রবেশ করলাম ১৪৩১ বঙ্গাব্দে। লেখালেখির সাথে যুক্ত সব অক্ষরকর্মী, পাঠক, শুভানুধ্যায়ীদের জানাই নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

ঠিক এক বছর আগে লেখালেখির তৎকালীন সম্পাদক মাননীয় সম্বিত শুক্লা মহাশয়কে এক গুরুদায়িত্ব অর্পন করা হয়। লেখালেখি যে বৃহত্তর পরিবারের শাখা সেই সববাংলায় ওয়েব সাইটের প্রধান সম্পাদক হিসাবে নিযুক্ত হন সম্বিত শুক্লা। ফলে লেখালেখি নামক এক চলমান সাহিত্য আসরের সম্পাদকের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় আমার কাঁধে। কিছুটা প্রস্তুতিহীন অবস্থায় দায়িত্ব নিলেও এই একবছরে সাধ্যমত চেষ্টা করেছি সাহিত্যের এক মুক্ত অঙ্গন গড়ে তোলার।

এটা আজ প্রতিষ্ঠিত সত্য যে বাংলা ভাষা চর্চার পরিসর দিনে দিনে সঙ্কুচিত হচ্ছে। বহির্বিশ্বের ক্ষেত্রে কিঞ্চিৎ মত পার্থক্য থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়ে দ্বিমত পোষণের অবকাশ প্রায় নেই বললেই চলে। এই পরিস্থিতির পশ্চাতে আছে বিবিধ আর্থ-সামাজিক কারণ। কিছুটা রাজনৈতিক কারণও বর্তমান। কারণ যাই হোক, মাতৃভাষা চর্চায় অবহেলা জাতি সত্ত্বার অপমৃত্যুর পথই তরান্বিত করে। অজুহাত আঁকড়ে ধরার মধ্যে কোনও গৌরব নেই, আছে পলায়নমুখি মানসিকতার পরিচয়।

প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতার বাইরেও থাকে এক সুবৃহৎ জনগোষ্ঠী। যাদের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণে, দৈনন্দিন যাপনে বেঁচে থাকে ভাষা, সংস্কৃতি। তাই ভাল-মন্দের বাইরেও সর্বাগ্রে প্রয়োজন সার্বিক অংশগ্রহণ। সেই লক্ষেই এগিয়ে চলেছে লেখালেখি। ‘মুক্ত চিন্তার উন্মুক্ত মাধ্যম’ – এ শুধু আমাদের ট্যাগ লাইন নয়, এক বিশ্বাসের প্রতিফলন। আমরা বিশ্বাস করি প্রতিটা মানুষের নিজস্ব একটা চিন্তার পরিসর আছে। সেটার প্রকাশ করতে হয়ত সবাই সমানভাবে সক্ষম নন। প্রকাশ ভঙ্গিতে নাই বা থাকুক নান্দনিকতা, মাতৃভাষায় প্রকাশটা কিন্তু জরুরী। তাই তো প্রয়োজন একটা মুক্ত আঙিনার যেখানে ভাষার হাত ধরে হবে ভাবনার নিঃসঙ্কোচ প্রকাশ।

বিগত বছরে নানা ধরণের লেখায় ভরে উঠেছে লেখালেখির সাইট। নবীন প্রবীনের সৃষ্টিতে ভাষা চর্চার এক অভিমুখ তৈরি হয়েছে। সব রচনাই যে সাহিত্যগুন সম্পন্ন হয়েছে তা নয়, কিন্তু বাংলা ভাষা চর্চার সামগ্রিক এক ক্ষেত্র সৃষ্টিতে আমরা সক্ষম হয়েছি।

লেখালেখি সব ধরণের লেখকের নিজেকে মেলে ধরার এক মঞ্চ। তারই মধ্যে সাহিত্যের আস্বাদ দিতে, লিটল ম্যাগাজিনের আঙ্গিকে আমরা প্রকাশ করছি ‘লেখালেখি ওয়েবজিন’। ত্রৈমাসিক এই ওয়েবজিন গত দুই বছর ধরে নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে। যার হাত ধরে তৈরি হচ্ছে এক লেখকগোষ্ঠী। নিয়মিত লেখা দিয়ে তারা সমৃদ্ধ করছেন এই ওয়েবজিনটিকে। আমরা ভরসা পাচ্ছি আরও এগিয়ে চলার।

সবার সহযোগিতায় আমরা বেশ কিছুটা পথ পেরিয়ে এসেছি। আরও অনেক পথ চলা বাকি। আশা রাখি আগামী দিনে আমরা অন্তত একটা বার্ষিক পত্রিকা পুস্তকাকারে প্রকাশ করতে সমর্থ হব। বাংলা সাহিত্যের আসরে নতুন লেখকরা অনেক সময়ই অসহায়। কিভাবে তাঁদের সৃষ্টিকে দুই মলাটের মধ্যে স্থান দেবে তা নিয়ে পথ খুঁজে না পাওয়ায় অনেক ভাল লেখাই ছাপার মুখ দেখতে পায় না। এই বাধা দূর করার চেষ্টায় আমরা শুরু করেছি ‘সববাংলায় প্রকাশনা সহায়তা’। লেখক শুধু তার লেখা নিয়েই ভাববেন, আমরা হাত বাড়িয়ে দেব সেই লেখাকে বই আকারে লেখকের কাছে পৌঁছে দিতে।

লেখালেখি পরিবারের সাথে যারা যুক্ত তাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ থাকাটা অত্যন্ত জরুরী। সেই উদ্দেশ্যে এই বছর আমাদের লক্ষ্য লেখক, পাঠক, শুভানুধ্যায়ীদের নিয়ে নিয়মিত আড্ডার আয়োজন করা। যেখানে সবাই নিজের নিজের সৃষ্টি তুলে ধরবেন সকলের সামনে। পারষ্পরিক মত বিনিময়, আলোচনা, সমালোচনার মাধ্যমে আমরা সমৃদ্ধ হব। নিজেদের উন্নত করে তুলব।

বাংলা ভাষাকে ভালবেসে শুরু হয়েছিল সববাংলায় ওয়েবসাইটের যাত্রা উদ্দেশ্য বাংলায় তথ্য ভান্ডার গড়ে তোলা। সে কাজের পাশাপাশি তাগিদ তৈরি হল সাহিত্য চর্চার। সববাংলায় – এর ছত্রছায়ায় জন্ম নিল লেখালেখি। ভালবাসার যাত্রাপথ ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর গল্পই বারেবারে লেখে। কিন্তু দীর্ঘ পথ চলার ক্ষেত্রে প্রয়োজন সাহচর্যের। যে যুবকরা নিজের সময়, শ্রম, অর্থ দিয়ে এই পথচলাকে মসৃন করেছে তাদের পাশে থাকাটাও আসলে বাংলা ভাষাকে ভালবেসে আঁকড়ে থাকা। তাই আমরা সকলের সহযোগিতার প্রত্যাশী। লেখালেখি পরিবার লেখক, পাঠক কিংবা শুভানুধ্যায়ী হিসেবে আপনাদের পাশে চায়। শুধু লেখা পাঠানোই নয়, অন্যের লেখা পড়ুন ও ভাল লাগলে ছড়িয়ে দিন। অন্যের কাছে ভাল লেখা ছড়িয়ে দেওয়াটাও আমাদের দায়িত্ব। আশা করব আগামী দিনগুলিতে সকলের মিলিত উদ্যোগে লেখালেখি সাফল্যের সাথে পেরিয়ে যাবে দীর্ঘ পথ।

সবাই ভাল থাকুন। নতুন বছর আনন্দময় হোক।


কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক:

প্রকাশ – পয়লা বৈশাখ, ১৪৩১

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।