লেখক : সাহানাজ ইয়াসমিন মুনমুন
শিক্ষা গেলো রসাতলে,তাই শিক্ষা কাঁদছে বসে রাস্তায় পড়ে!শিক্ষার আজ বেহাল দশা, তাই শিক্ষিত বেকাররা আজ যোগ দিয়েছে,ডাকাত দলে! সমাজ গড়ার কারিগর হতে চেয়েছিল তারা, আজ তারাই কিনা অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হলো অবশেষে! বিকৃত করে শিক্ষা ব্যবস্থা,বিক্রীত হচ্ছে শিক্ষা, প্রকৃত মেধার মুকুট কেড়ে,জিতছে ভুয়ো শিক্ষা! ভবিষ্যত ওদের অন্ধকারে,ধুকে ধুকে আজও মরে! শিক্ষিত বেকাররা আজ জীবন জীবিকার তাগিদে, নানান রকম অসৎ ব্যক্তিদের ছত্র ছায়ায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। ইদানিং সেইসব অপ্রীতিকর চিত্র মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদের সামনে এসেছে। আজ সর্বত্র লুট,রাহাজানি,খুন,আতঙ্কবাদ,চুরি ডাকাতি,বেআইনী যতরকম কুকর্মগুলো ঘটছে সেখানেও দেখা যাচ্ছে শিক্ষিত বেকার সমাজের একটা বড় অংশ প্রায় জড়িত রয়েছে!! এটা কি ভাববার মত বিষয় নয়?এসব কি আগামীর জন্য ভয়ংকর একটা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে না? বর্তমান সমাজব্যবস্থা ও সামাজিক পরিকাঠামো দিনের পর দিন যেদিকে এগোচ্ছে তাতে সামনের দিনগুলো যে আরো ভয়ানক হতে চলেছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই! তবুও কি ঘুম ভাঙছে কারো,কোথায় আজ সেইসব চিন্তাশীল,প্রগতিশীল,বুদ্ধিজীবি মানুষগুলো?
যাঁরা এই সমাজের সুচিন্তক নাগরিকের দাবিদার রাখে!
আজ তারা চুপ কেন?
এসব ঘটনাগুলো আজকে সামনে আসছে কেন?যেখানে শুধুমাত্র অসামাজিকরা অজ্ঞরা নয়,সামাজিক শিক্ষিতরাও জড়িয়ে যাচ্ছে! শিক্ষা এবং অশিক্ষার মধ্যে পার্থক্যটাই বা কোথায় থাকল তাহলে?গলদটা ঠিক কোথায়?
মূল বিষয়,বর্তমানে শিক্ষা আছে,চাকরি নেই,শিক্ষিত বেকার আছে তাদের কর্মসংস্থান নেই! যোগ্যতা আছে টাকা নেই,টাকা নেই তাই চাকরি নেই! ক্ষুধা আছে খাদ্যের যোগান নেই এর অবস্থা!
আজকের দিনে শিক্ষিত হওয়ায় শেষ কথা নয়, মেধার ভিত্তিতে মুল্যায়ন নেই! ওদের যোগ্যতা,ডিগ্রি থাকলেও আজকের দিনে একটি চাকরি পেতে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বসে তাদের নাম যতই মেধা তালিকায় উঠে থাকুক তবুও টাকা যার,চাকরি তার!হোক যতই অযোগ্যকেও টাকার জোরে চাকরিটা ঠিকই পেয়ে যায়। যেখানে মেধার বিচার হয় না,যেখানে মেধার কোনো মূল্য দেওয়া হয় না,যেখানে টাকার বিনিময়ে চাকরি মেলে সেখানে তো শিক্ষিত, মেধাবী মধ্যবিত্ত পরিবারের বেকার যুবকরা হতাশার বশবর্তী হয়ে বিপথে যাবেই! সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা তো ভেঙে পড়বেই! এসবের জন্য তাদের উপর দোষ দিতে পারিনা কারন এদের কে বিপথে রীতিমত ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এরা মোটেও দায়ী নয় সেখানে! এর জন্য আসল দায়ী যারা তাদেরকে দায় নিতে হবে। যদিও তারা দায় ঠেলতে জানে কেবল,দায় নিতে কোনোদিন শেখেনি! তারা তো ভোগী,ভক্ষক,শোষক বুঝবে কি করে, বেকারত্বের জ্বালা ! আজ তাদের যন্ত্রণাটা ঠিক কোথায়,তাদের অবস্থানটা আজ কোথায় দাঁড়িয়ে,সেটা বোঝার মত বোধ,বিচার শোষকদের নেই! বাবা মায়েরা তাদের সন্তানদের পড়াতে গিয়ে,তাদের শেষ সম্বল টুকুও বেঁচে দেওয়ার পরও আবার তাদের ছেলে মেয়েদের একটি চাকরি কেনার জন্য আলাদা করে ঘুষের অর্থের যোগান দেবে কি করে?
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড কথাটি গ্রাহ্য হচ্ছে কি আজ? জাতির মেরুদন্ড যেখানে ভেঙে পড়ছে দিনের পর দিন আর যারা দেশ, সমাজ, জাতির নামে বড় বড় ভাষণ দেন জন সমারোহের মাঝে দাঁড়িয়ে তারা আদৌ কি ভাবতে পেরেছে জাতির কথা,দেশের কথা,এই সমাজের কথা? এই লুটের বাজারে যে যার আপন ফয়দা লুটতে ব্যাস্ত! আজ বেকার যুবকরা পথ ভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছে তারা বিপথগামী হচ্ছে,কিন্তু কেন? এর দায় কাদের? তাদেরকে বিপথে ঠেলে দিচ্ছে কারা?উত্তরগুলো কি খুব অজানা? না মোটেও অজানা নয়! এরজন্য দায়ী সকল মুখগুলো আমাদের খুব চেনা কিন্তু তবু আমরা চুপ ! কিন্তু কেন চুপ থাকতে হয় ? এক্ষেত্রে দায়টা কিন্তু তাদের নয় এর জন্য দায়ী আমরা নিজেরাই! কারণ আমাদের চোখ থাকতেও আমরা অন্ধ সেজে বসে থাকি।
খুব স্বাভাবিক ভাবেই উচ্চ শিক্ষিত বেকাররা তাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যত চিন্তা করে,নিজেদের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। তারা যখন চোখের সামনে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে তাদের ভবিষ্যত নিয়ে খেলা করা হচ্ছে,তাদের ভবিষ্যত বলতে আর কিছু অবশিষ্ট নেই, আসলেই সবটা অন্ধকার, তখন তারা ক্রমে নিজেদের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলতে বাধ্য। কষ্ট করে লেখাপড়া শিখেছে,তাদের মধ্যে কতক দরিদ্র পরিবারের সন্তান যারা পড়াশোনা করার জন্য, মানুষের মত মানুষ হওয়ার জন্য দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে তবেই আজ এই জায়গায় পৌঁছেছে! কত স্বপ্ন আশা নিয়ে,একটি সুন্দর ভবিষ্যত পেতে, একটি সুনিশ্চিত জীবন পেতে তারা কত প্রত্যাশিত ছিল!তাদের প্রতি তাদের বাবা মায়েদের আশা আকাঙ্খা ছিল,তাদের সন্তান চাকরী পাবে,তাদের দায় দায়িত্ব নেবে,সংসারের দায়ভার কাঁধে তুলে নেবে!
একদিন তারা নিজেদের সুখ,স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে, এমনকি ঘটি বাটি,ভিটে মাটি টুকু পর্যন্ত বেচে দিতে দুইবার ভাবেননি তারা,কত কষ্ট করেছেন তবু তাদের আশা নিয়ে বেঁচেছেন! কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন আশা আজ হতাশায় পরিণত হয়েছে!আজ তারা নিরাশ, হতাশ হয়ে,তাদের চোখের সামনে তাদের নিজেদের শিক্ষিত,চাকরী যোগ্য ছেলে মেয়েদের অনিশ্চিত ভবিষ্যত দেখছে!কতক বাবা বাবা মা তাদের সন্তানদের নষ্ট হতে দেখছে,বিপথগামী হতে দেখছে!এর দায় কে নেবে? এসবের জন্য দায়টা ঠিক কাদের উপর পড়ে? শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড,ওরাই তো গড়বে দেশ,গড়বে দেশের ভবিষ্যত! ওরাই তো এই সমাজের একেকটা উজ্জ্বল নক্ষত্র যারা এই সমাজকে পথ দেখাবে,যারা সমাজটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে,তাদের শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেবে।যারা তাদের আধুনিক এবং উন্নত প্রগতিশীল চিন্তাধারা দিয়ে দেশকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবে,নতুন নতুন দিশা দেখাবে! আজ যেখানে দাঁড়িয়ে আমরা সকলেই যে বিধ্বংসী ঝড়ের পূর্বাভাস পাচ্ছি,সেখান থেকে অন্তত আঁচ করতে পারছি,সম্মুখে আগত সেই মহা প্রলয়ের দিন খুব নিকটেই রয়েছে! আর বেশীদূরে নয় সেইদিন, যেকোনো সময় আঁচড়ে পড়বে সেই বিধ্বংসী মহা প্রলয় এই সমাজের বুকে!সকলেই প্রস্তুত আছো তো আগত সেইদিনের জন্য? সবটা স্পষ্ট দেখছি তথাপি মুখে কুলু পেতে বসে আছি আহাম্মকের মত! জেনো,এই বালা কিন্তু খুব দ্রুত ছড়ায়,পালাবে তখন কোথায়?যেখানেই যাবে সেখানেই এই রোগ তোমাদের পিছু নেবে,ভেবেছো কি একটিবারও তোমাদের পথ আসলে কোনদিকে থাকবে তখন? পথ খুঁজবে কোথায় সেদিন? নেই তবু কোনো চিন্তা ভাবনা,ভয়!নেই প্রতিরোধ,নেই প্রতিহত করার প্রয়োজন। কি অদ্ভুত! কত নিশ্চিন্তে বড়ই সাড়ম্বরে করে চলেছি জীবন যাপন!হায় আফসোস! আর কবে ফিরবে হুঁশ! হুঁশ যদি আর না কোনোদিন ফেরে,তবে প্রস্তুত থেকো সেদিনের জন্য !
লেখক পরিচিতি : সাহানাজ ইয়াসমিন মুনমুন
সাহানাজ ইয়াসমিন (মুনমুন) পরিচয়। ◆ লেখিকার নাম :- সাহানাজ ইয়াসমিন (মুনমুন)। ◆ বাংলা সাহিত্যের একজন ◆ ভারতীয় নাগরিক ও পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। ◆ জন্ম তারিখ :- ২৩ মে ১৯৮৯ সালে (৮ই জ্যৈষ্ঠ বঙ্গাব্দ) ◆ জন্মস্থান :- পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত মথুরাপুর গ্রাম। ◆ পিতার নাম :- মৃত মুনসাদ আলি (একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন।) ◆ মাতার নাম :- তাহেরা খাতুন (স্বপ্না) (পেশায় একজন আই, সি, ডি, এস কর্মী।) ◆ স্বামীর নাম :- মহ: আজিজুর রহমান ◆ ছেলে ও মেয়ের নাম :- মহ: আসিক ইলাহী (ছেলে) ও আলিশা সিদ্দিকা ফিজা (মেয়ে)।