লেখক : মিজানুর রহমান সেখ
বর্তমান যুগে বিজ্ঞাপনের সুবাদে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শব্দটি কম বেশি সকলেরই পরিচিত। আমাদের দেহে বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় বিপাক ক্রিয়ার ফলে উপজাত বস্তু হিসাবে ফ্রি র্যাডিকেল বা মুক্ত-মূলক উৎপন্ন হয়। এগুলো সময় মত শরীর থেকে নির্গত না করলে বিভিন্ন কোষে নানা রকম ক্ষতিসাধন করে, একে এক কথায় অক্সিডেটিভ স্ট্রেস (oxidative stress) বলে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর প্রধান কাজ হল এই ফ্রি র্যাডিকেলগুলি শরীর থেকে বের করে দেওয়া । সেজন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্টকে ঝাড়ুদার বা “free-radical scavengers” বলা হয়।
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস(oxidative stress) এর কারণ অনেক রকম হতে পারে, যেমন- কোষের মাইটোকন্ড্রিয়ার কাজ করার ফলে, অতিরিক্ত ব্যায়াম বা পরিশ্রম, ধূমপান, ট্রান্স ফ্যাট ও কৃত্রিম প্রসে্সড খাদ্যগ্রহণ, বিকিরণ ও প্রাকৃতিক দূষণ, কেমোথেরাপি জাতীয় চিকিৎসা, আহত হলে বা আঘাত পেয়ে পেশির প্রদাহ হলে ইত্যাদি। এই সমস্ত কারণে কোষের ক্ষতি হয় । তার জন্য শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত মুক্ত কপার ও আয়রণ আয়ন নির্গত হয়। এর সাথেই সংক্রমণ কমানোর জন্য ফাগোসাইট (phagocytes) নামক এক প্রকার শ্বেত রক্ত কণিকা সক্রিয় হয়। ফ্রি র্যাডিকেল উৎপাদনকারী উৎসেচকের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। ইলেকট্রন পরিবহন শৃঙ্খলে (electron transport chains) ব্যাঘাত ঘটে। এই সবগুলোই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ঘটায়। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ক্যান্সার, অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস( atherosclerosis), স্ট্রোক, পারকিনসন্স রোগ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া, দৃষ্টি শক্তি ক্ষীণ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি নানা রোগকে ডেকে আনতে পারে।
নিয়মিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করলে একদিকে যেমন শরীর সতেজ থাকে তেমনই বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিকে দূরে রাখা সম্ভব। প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম দু প্রকার উৎস থেকেই
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। উদ্ভিদ থেকে পাওয়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্টকে ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট বলে। আমাদের শরীরও কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (endogenous antioxidants) তৈরি করতে পারে। তবে মূলত ভিটামিন- ই, সি ও বিটাক্যারোটিন এবং জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, তামা, লোহা ইত্যাদি খনিজ আমাদের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রূপে কাজ করে। এরা সম্মিলিতভাবে নিম্ন লিখিত দায়িত্ব পালন করে,
- দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে ও নানা অসুখ থেকে চোখকে রক্ষা করে।
- দেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা বা immune system ঠিক রাখে।
- বার্ধক্যজনিত অসুখ প্রতিরোধ করে ও বার্ধক্য বিলম্বিত করে।
- ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
- LDL ও কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
- HDL বাড়ায় এবং রক্তচাপ স্থির রাখে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর উৎস
- ভিটামিন সি – সাইট্রাস ফল যেমন- কমলা লেবু, পাতি লেবু, মুসাম্বি এছাড়া পেয়ারা, গুজবেরি, অঙ্কুরিত ডাল ইত্যাদি ভিটামিন সি এর উৎস।
- ভিটামিন ই – দানাশস্য, দানাশস্য থেকে উৎপাদিত খাদ্য, তৈলবীজ,বাদাম ইত্যাদি থেকে ভিটামিন ই পাওয়া যায়।
- বি-ক্যারোটিন- সবুজ শাকসবজি, পাকা হলুদ ফল,কুমড়ো,তরমুজ,গাজর,পাকা পেপে,পাকা আম হলো বিটা ক্যারোটিনের উত্তম উৎস।
- সেলেনিয়াম ও জিঙ্ক– মাংস, সি ফুড, দানা শস্য।
- তামা– অয়েস্টার, যকৃৎ, মাশরুম,বাদাম,চকোলেট।
- লোহা– মাংস, যকৃৎ, সবুজ শাক সবজি, দানা শস্য, মিটেলস এবং ডাল।
সুস্থ্ শরীর ও নীরোগ জীবন সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। প্রাত্যহিক খাদ্য তালিকায় এই সমস্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাদ্য রাখা ভীষণ জরুরী।
তথ্য সুত্রঃ
১) https://www.medicalnewstoday.com/articles/301506#types.
২) পৃ -১৩৭, খাদ্য ও পুষ্টি, ড. সুনীতি ঘোষ চট্টোপাধ্যায় ও ড. নারায়ণী বসু
লেখক পরিচিতি : মিজানুর রহমান সেখ
মিজানুর পেশায় শিক্ষক এবং একজন সমাজসেবক। বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার জন্যই মূলত লেখালিখি। লেখক পদার্থবিদ্যা ও শিক্ষাবিজ্ঞানে মাস্টার্স।