কাফকা: সমাধানহীন প্রশ্ন

লেখক: শমিতকুমার দাস

(১)

পৃথিবীর অধিকাংশ সাহিত্য আরামকেদারায় শুয়ে পড়ার। একফাঁকে আরামে চোখও বুজে আসতে পারে। মগজের বালাই বাদ দিয়ে লেখকের হাত ধরে এগোনো আর শেষ হলে ভুলে যাওয়া। আর একধরণের লেখা আছে যেগুলো শিরদাঁড়া সোজা করে পড়তে হয়, বুঝে বুঝে এগোতে হয় এবং শেষে প্রাপ্তির স্বাদ মনকে পূর্ণ করে। আর তৃতীয় ধরণের সাহিত্য আমাদের যাবতীয় আরামকে দুমড়ে মুচড়ে এক দিশাহীন অনিশ্চয়তা বোধের সামনে দাঁড় করায়। মগজ ও মনন একই সঙ্গে জারিত হয় গভীর বিশ্লেষণে, লেখক রাস্তাটুকু ধরিয়ে নিজে সরে দাঁড়ান আর পাঠক এক সংকটের অনুভূতি নিয়ে ক্রমশ খু্ঁজতে থাকে পরিত্রাণের উপায় এবং পায় না। অথচ এড়িয়েও যেতে পারে না। তার মনের মধ্যে নিত্য ক্রিয়া অবিরাম বহমান থাকে। বলা বাহুল্য এই ধরণের কথাসাহিত্য বিশ্বসংসারে অপ্রতুল।

ফ্রানৎস কাফকা, আজ ৩রা জুলাই যিনি পূর্ণ করলেন জন্মের ১৩৭বছর এবং আর মাত্র ৪ বছর দূরে তাঁর মৃত্যুশতবার্ষিকী। এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা অনায়াসে অনুভব করি কাফকা যে পৃথিবীর কথা বলে গেছেন, লিখে গেছেন, তার প্রায় কোনো বদল হয় নি। এক সংকটময় অস্তিত্ব নিয়ে মানুষ বেঁচে আছে, যেখানে সে নিজেই জানে না তার প্রকৃত পরিচয় কী। কীভাবে সে প্রতিষ্ঠা করবে নিজের সেই পরিচয়। এক মহাশক্তিমান অথচ অদৃশ্য সত্তার কাছে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছিল যোসেফ কে বা গ্রেগর সামসা, তা আজও অন্যরূপে বিরাজমান। আর এখানেই কাফকা আমাদের মেধার কাছে প্রশ্ন রাখেন, রেখে আসছেন তাঁর কালজয়ী সাহিত্যগুলো প্রকাশের পর থেকেই, তাঁর পাঠকেরা হাতড়ে চলেছেন রাস্তা এবং পৌঁছতে পারছেন না কোথাও, পারা সম্ভব নয় বলেই। যতদিন না মানুষ নতুন করে নিজেকে গড়বে, পাল্টাবে পৃথিবী, ততদিন কাফকা এক মননদীপ্ত অমোঘ প্রশ্ন হয়ে থেকে যাবেন পাঠকের কাছে।

কাফকার জন্মের সময়টাই ইওরোপে আপাত শান্তির আড়ালে অস্ত্র শানানোর যুগ। ভিয়েনা সম্মেলনের পরে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দাঁত-নখ আপাতত গুটিয়ে রাখলেও আবহাওয়া ভারি হয়ে আছে যে কোনো সময় এক অনিবার্য ভাঙনের অপেক্ষায়। এক চেক-ইহুদী পরিবারে কাফকার জন্ম প্রাগে, যে প্রাগ তখন অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যবাদের কবলে শ্বাস নিচ্ছে। এই পরিস্থিতি চলবে ১৯১৪ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ফেটে পড়ার আগে অবধি। সুতরাং অনুমান করাই যায় এই অবস্থায় কোনো সচেতন মানুষের পক্ষে ললিত সাহিত্য রচনা সম্ভব ছিল না। কাফকা এই দুর্বিষহ সময়কে ধরছেন অস্তিত্বের সংকটের মোচনে। কিন্তু শুধুমাত্র ইওরোপের রাজনৈতিক-সামাজিক সংকটই নয়, ঘরের মধ্যে পরিবারের ভেতরেও তৈরি হয়েছিল এক একাকী শিশুর দিনযাপনের অসহনীয় পরিবেশ, যার মূলে ছিলেন ফ্রানৎস-এর বাবা হারমেইন কাফকা।

হারমেইন প্রথমজীবনে ছিলেন ফেরিওয়ালা, নানা জিনিস ফেরি করতেন। সেখান থেকে নিজের বুদ্ধি ও খানিকটা কাপড়-ব্যবসায়ী শ্বশুরের সহায়তায় গড়ে তোলেন কাপড়ের দোকান, যেখানে কর্মীসংখ্যা ছিল ১৫ জন। ফ্রানৎস-এর মা জুলি কাফকাও ব্যস্ত থাকতেন ব্যবসা নিয়ে। যার ফলে কাফকার শৈশব অতিবাহিত হয় নিঃসঙ্গতায় গৃহপরিচারকদের তত্ত্বাবধানে। বাবা হারমেইনের সঙ্গে ফ্রানৎস-এর যে শ্রদ্ধা ও ভয়ের সম্পর্ক তার সূচনা, আমরা অনুমান করতে পারি, এখান থেকেই। অথচ ফ্রানৎস-এর জীবনীকার স্ট্যানলি কর্নফোল্ড হারমেইনকে একজন লোভী ও স্বার্থপর ব্যবসায়ী বললেও ফ্রানৎস নিজে বলেছেন তাঁর বাবা ছিলেন শক্তি, জ্ঞান, মেধা, সহনশীলতা ও আচরণে পরিপূর্ণ কাফকা।

অথচ বাবার প্রবল ব্যক্তিত্ব যে ফ্রানৎসকে করে দিচ্ছিল কোনঠাসা, তুলে দিচ্ছিল অদৃশ্য দেওয়াল তাঁর চারপাশে, তা বোঝা যায় যখন আমরা পড়ি বাবাকে লেখা এবং পোস্ট না করা ১০০পাতার বিখ্যাত চিঠি (Brief an den Vater)। স্বৈরাচারী ও লোভী এক মানুষের বিরুদ্ধে ফ্রানৎস-এর অভিযোগ যেন অসহায় বেদনায় ভাষা পেয়েছে চিঠির অক্ষরে। আর আমরা বুঝতে পারি অপরাধের প্রকরণ যা তাঁর লেখার মূল বিষয় হয়ে উঠেছে ক্রমশ, শিখে নিচ্ছেন পরিবার থেকেই। আরও স্পষ্ট হয় এই মনোভাব ‘বিচারের রায়’ নামক ছোটগল্পে, যেখানে বিনা অপরাধে পিতা পুত্রকে জলে ডুবে মরতে বলে এবং পুত্রও কাল্পনিক অপরাধ স্বীকার করে ঝাঁপ দেয় জলে। পারিবারিক স্বৈরাচার কীভাবে ফ্রানৎস-এর মনে স্থায়ী হয়ে বসেছিল, নড়িয়ে দিয়েছিল অস্তিত্বের ভিত্তিমূল তা-ও প্রকাশিত হয় এমনসব লেখায়।

এইসময় চেকোশ্লাভাকিয়ায় চেক ভাষাকে সমাজে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হত না। তা ছিল অশিক্ষিত, দরিদ্র মানুষের ভাষা। কদর ছিল উচ্চমানের জার্মান ভাষার, অনেকটা এখন আমাদের দেশের ইংরেজি ভাষার মতো বা তার চেয়েও বেশি। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবেই আত্মশ্লাঘাময় হারমেইন পুত্রকে জার্মান শেখার স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। বন্ধু গ্যুস্তাভ জানুচ জানিয়েছেন সাংস্কৃতিকভাবে ইহুদী-চেক কাফকার জার্মান উচ্চারণে ছিল স্পষ্ট চেক প্রভাব। কতটা আশ্চর্যের বিষয়, যিনি তাঁর যাবতীয় লেখা লিখে গেলেন জার্মান ভাষায়, যাঁর লেখা পাল্টে দিল বিশ্বসাহিত্যধারা, তুলনা হতে থাকল জার্মান ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক টোমাস মান-এর সঙ্গে, তিনি কি না পরিষ্কার জার্মান উচ্চারণ করতে পারতেন না? না কি চাইতেন না? এও কি একধরণের স্ববিরোধ?

কাফকা ছোটবেলাতেই মুখোমুখি হলেন আরও দুটি ভয়ংকর অভিজ্ঞতার। ছোটো দুই ভাই জর্জ এবং হাইনরিখের মৃত্যুর কী প্রভাব পড়েছিল কাফকার মনে, জানা যায় না, অনুমান করা যায় অস্পষ্ট হলেও, যে অদৃশ্য অথচ প্রবল শক্তির সামনে নিজেকে অসহায় মনে করেছেন তিনি, তার সূচনা সেখানেই হয়তো বা।

ছোটবেলা থেকেই ভঙ্গুর স্বাস্থ্য কাফকা, একের পর এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি কাফকা। রসায়নে আনন্দ না পেয়ে সাহিত্য ও ভাষাতত্ত্ব পড়ার ইচ্ছা ও আকর্ষণ কাটিয়ে চলে যান আইন পড়তে। জার্মানিতে তখন আইনে ডিগ্রীলাভ ছিল একটা প্রবণতা এবং কাফকা কোনোদিনই স্বাধীন আইনব্যবসায় নামেন নি। ১৯০২ খ্রীষ্টাব্দে চার্লস বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার সময়ই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় ম্যাক্স ব্রডের, যাঁর কাছে আমাদের, কাফকা পাঠকদের অন্তহীন ঋণ। আইন পাশ করে কাফকা অপরাধ সংক্রান্ত মামলায় শিক্ষানবীশি করে ১৯০৩ খ্রীষ্টাব্দে ইতালীয় বিমা দপ্তরে এবং ১৯০৮ খ্রীষ্টাব্দে আধাসরকারী কর্মচারীদের দুর্ঘটনার বিমা অফিসে যোগ দেন। এই আইন পাঠ ও কাজের মধ্যেই নিহিত আছে কাফকার রচনায় বারবার উঠে আসা ব্যক্তির অস্তিত্ব সংকটের মূলসূত্র। জীবনের আবেগ-অনুভূতি নিরপেক্ষ আইন ব্যক্তি মানুষের বিপরীতে যেন দাঁড়িয়ে!

এই বিমার কাজের সূত্রেই কাফকার সঙ্গে পরিচয় হয় বার্লিন ডিপার্টমেন্ট স্টোরের ম্যানেজার এবং তুখোড় ব্যবসায়ী এক জার্মান তরুণীর সঙ্গে ১৯১২ খ্রীষ্টাব্দে। ফেলিসে বাউয়ের, যিনি তাঁকে লেখা কাফকার প্রায় পাঁচশো চিঠি সযত্নে রক্ষা করেছিলেন, যা আমাদের জানতে সাহায্য করে কাফকার মানসিকতা, তাঁর সাহিত্যের চাবিকাঠি অনেকক্ষেত্রেই যে চিঠিগুলির মধ্যে নিহিত। ফেলিসেকে বিয়ে করতে বদ্ধপরিকর কাফকা বাড়ি ভাড়া করা, ফার্নিচার কেনা ইত্যাদি প্রস্তুতির পরেও , ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ও সত্তার কাফকা তাঁকে বিয়ে করতে পারলেন না নিজের যৌন-অসামর্থ্যের প্রবল অনুভূতির কারণে। ছিল ভগ্নস্বাস্থ্যর কারণে মেয়েটির ওপর বোঝা হয়ে চেপে বসার দুশ্চিন্তা। তার ওপর কাফকার প্রবল অধ্যাত্মিক অনুভূতির সঙ্গেও যে তরুণীটি মানিয়ে নিতে পারছেন না, একথা অনুভব করেছিলেন কাফকা। এই দ্বন্দ্ব বারবার ফিরে ফিরে এসেছে কাফকার জীবনে বা বলা যায় তাঁর সাহিত্যর শিকড় প্রোথিত এই আত্মবলহীনতায়। ১৯১২ থেকে ১৯২০ স্বল্পকালীন এই সময়ে আরও তিনজন — জুলি ভোরিজেক, গ্রেটে ব্লক, মিলেনা জেসেঙ্কা — কাফকার জীবনে এসেছেন এবং চলে গেছেন। এঁদের মধ্যে মিলেনার সঙ্গে কাফকার সম্পর্ক আবারও গভীরতায় পৌঁছলেও বিয়ে করেন নি তাঁকেও। জীবনের শেষ কয়েক বছরে নিবিড় ভালোবাসলেন পোলদেশীয় ইহুদী মেয়ে ডোরা ডাইমন্টকে। বিয়ের অনুমতি চাইলেন তাঁর বাবার কাছে। কিন্তু….

কাফকার এই প্রেমিকাদের মধ্যে ফেলিসে ছাড়া সকলেই ইহুদী, শুধু মিলেনা ছিলেন চেক। ইহুদীদের প্রতি জাতিসত্তার কারণেই টান ছিল প্রবল তাঁর। অন্তিম অসুস্থতার সময়েও তিনি ইহুদী নির্দেশাবলীর বক্তৃতায় উপস্থিত থাকতেন নিয়মিত, সাওনীয় আন্দোলন ও প্যালেস্টাইনে ইহুদী উপনিবেশের বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন নিরন্তর, নিজেও চলে যেতে চেয়েছিলেন প্যালেস্টাইনে। ডায়রিতে নিজের সম্পর্কে লেখেন, ‘He was not a religious Jew, but a repentant one, seeking conversion’। প্রসঙ্গত বলা যায় জুলি ভোরজেক, মিলেনা জেসেঙ্কা, গ্রেটে ব্লক তিনজনই নিহত হন আউশউইৎস-এর নির্মম গ্যাসচেম্বারে ১৯৪৪ খ্রীষ্টাব্দে। ডোরার সঙ্গেও বিয়ের ইচ্ছে তাঁর পূর্ণ হয় নি, কারণ ততদিনে কাফকার বুকে যক্ষ্মা রোগের জীবাণুরা অঙ্কুরের পাখা মেলতে শুর করেছে!

(২)

Dearest Max, my last request: Everything I leave behind me (that is in the bookcases, chest of drawers, writing table, both at home and in the office, or wherever anything may have got to, whatever you happen to find), in the way of notebooks, manuscripts, letters, my own and other people’s sketches and so on, is to be burned unread and to the last page as well as all writings of mine or notes which either you may have or other people, from whom you are to beg them in my name. Letters which are not handed over to you should at least be faithfully burned by those who have them.
Yours
FRANZ KAFKA

এটা বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত চিঠিগুলোর অন্যতম। কারণ এমন অভিনব অনুরোধ বিশ্বের আর কোনো লেখক কোনো বন্ধুকে সম্ভবত করে যান নি। কাফকার লেখার টেবিলে অজস্র কাগজপত্রর স্তূপের নিচে ছিল ম্যাক্স ব্রডকে লেখা এই চিঠি ভাঁজ করা অবস্থায়। আরও অনুসন্ধানে আবিষ্কৃত হল হলদে হয়ে যাওয়া আরও পুরনো বিবর্ণ এক কাগজের টুকরো, যেখানে পেন্সিলে লেখা —

Dear Max, perhaps this time I shan’t recover, pneumonia is likely enough after the month of pulmonary fever I have had, and not even my setting it down in writing will keep it off, although there’s some power even in that.
Just in case, then, this is my last will concerning all I have written:
Of all my writings the only books that count are these: The Judgement, The Stoker, Metamorphosis, Penal Colony, Country doctor, and the short story: Hunger Artists. (The few copies that exist of the Meditation can be left; I don’t want to give anyone the trouble of pulping them, but there’s to be no reprinting.) When I say that these five books and the short story count, I don’t mean that I want them to be printed again and handed down to posterity; on the contrary, should they disappear altogether that would be what I want. only, since they do exist, I don’t mind anyone’s keeping them if he wants to.
But everything else of mine that I have written (printed in magazines or newspapers, written in manuscripts or letters) without exception, so far as it can be got hold of, or begged from the addressees (the most of these you know, the main ones are. . . and be sure not to forget the note-books. . . has) all without exception and preferably unread (though I don’t mind you looking into it, but I would much prefer that you didn’t, and in any case no one else is to look at it) – all this, without exception, is to be burned, and that you should do it as soon as possible is what I beg of you.
Franz

এখানে আরও পরিষ্কার ভাবে মনের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন কাফকা। এমনকী ম্যাক্স ব্রড ছাড়া আর কাউকে উঁকি মারার অধিকার পর্যন্ত দিচ্ছেন না এবং ব্রডও সেটা না করলেই তিনি খুশি হবেন।

কিন্তু কেন এই মনোভাব? এমন তো নয় যে কাফকা নিজের লেখা প্রকাশ্যে আনতে চাইতেন না, বরং উল্টোটাই, তিনি লিখতে আনন্দ পেতেন, জীবনের শেষ তিনমাস অসুস্থ শরীরেও দিনে কয়েকঘন্টা করে লিখেছেন, আর আনন্দও পেতেন সেই লেখা বন্ধুদের পড়ে শোনাতে। জীবিতকালেই তাঁর বেশ কিছু লেখা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত। প্রকাশ পেয়েছে কয়েকটি গ্রন্থও । তারপরেও ব্রডের প্রতি এই নির্দেশ যেন দুর্বোধ্য প্রহেলিকা। যদিও কারও কারও অভিমত নিজের লেখার অন্তঃসারশূন্যতার পরিচয় পেয়েই কাফকা এমন কথা বলেছিলেন। কিন্তু এ নিছক বিদ্বেষপ্রসূত উক্তি ছাড়া আর কিছু নয়, কাফকার পাঠকরা আজ তা জানেন।

আসলে যেটা মনে হয় নিজের পরিবার সম্পর্কে যে বিচ্ছিন্নতাবোধ জন্ম নিয়েছিল শৈশবে, পরিণত বয়সে, ইহুদী হওয়ার কারণে সমাজে যে দূরত্ব তিনি অনুভব করেছেন, নিজের যৌন-ক্ষমতা সম্পর্কে অনিশ্চয়তাবোধ এবং সর্বোপরি ভগ্নস্বাস্থ্য ও শেষে দুরারোগ্য ব্যাধি তাঁকে আত্মনিগ্রহের খাদের ধারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল, যার চরম প্রকাশ নিজের সৃষ্টিকে সমূলে ধ্বংসের ইচ্ছা।

কাফকা যে সমস্ত অপ্রকাশিত রচনা পুড়িয়ে ফেলতে বলেছিলেন, তার মধ্যে ছিল The Trial (Der Prozess), The Castle (Das Schloss)-এর মতো উপন্যাস। আজ কাফকার মন ও মননের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরিচয়বাহী এই লেখাগুলো ধ্বংসের আগুন থেকে বেঁচে এসে আমাদের সামনে খুলে দেয় এক অন্য জগতের দরজা। ম্যাক্স ব্রডের কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতা পরিমাপহীন,বন্ধুর শেষ নির্দেশ না পালনের অসামান্য ইচ্ছায়।

(৩)

এই পৃথিবীকে কাফকা দেখেছেন শূন্যবাদের দৃষ্টিতে। উঠেছে তাঁর মনে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন, উত্তরহীন। ব্যক্তিজীবনের দুঃসহ অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে যাচ্ছে সমষ্টিজীবনে আর তাকে তিনি ছুঁতে চাইছেন গাঢ় অনুভবে। তাঁর মধ্যে কাজ করছে যুক্তি, অস্তিত্বর যুক্তি এবং তাকে তিনি পাচ্ছেন না কোথাও। আইনের ছাত্র এবং বিমা-আইনের কর্মী কাফকা প্রতিমুহূর্তে অনুভব করছেন ব্যক্তিমানুষের ও আইনের দুর্লঙ্ঘ্য ব্যবধান। যেখানে নিজস্ব পরিচয় প্রতিষ্ঠায় মানুষ কোনোভাবেই যেন সফলতায় পৌঁছতে পারে না। তাঁর রচনায় বিমূর্ত কল্পনা আর মানবজীবনের জটিলতা একাকার হয়ে যায়। তাকে গেঁথে তুলেছেন তিনি এক সরল ও স্পষ্ট ভাষায়। প্রতিটা শব্দ চয়ন করেছেন বিবেচনা করে। রিলকে বা প্রুস্তের যে ব্যাপক অভিজ্ঞতা, কাফকা তার অভাব পূরণ করে নিচ্ছেন নিখুঁত শব্দপ্রয়োগে, আর বাক্য – বিশেষত উপবাক্যর নিশ্ছিদ্র ব্যবহারে। আসলে কাফকা মনে করতেন লেখার সময় লেখকের হাত আশ্রয় করে মিথ্যেকে এবং সেই মিথ্যে যাতে কখনোই তাঁর রচনাকে ঘিরে না ফেলে, সে বিষয়ে সচেতন কাফকা, কবিতায় যে ভাবে শব্দ ব্যবহার হয়, প্রায় সেইভাবে শব্দ খুঁজে আনছেন, যা অমোঘ ও অনুভববেদ্য। যেখানে সামান্যতম পরিবর্তনও সম্ভব নয়।

কিন্তু এতো গেল গঠনগত দিক। কাফকার রচনারীতি অবশ্যই কাফকার বক্তব্যর সমূহ সঞ্চালক। কিন্তু এতে তাঁর একটা দিক বোঝা যায়। সমগ্র কাফকাকে (কাফকাকে শুধু কেন, কোনো রচয়িতাকেই) নিছক রচনারীতিতে ধরা যায় না, যেতে হয় আরও গভীর গূঢ়সঞ্চারী অভিযানে। এবং সেখানে গিয়ে আমরা দেখি কাফকার সাহিত্যের মানুষগুলোকে, খুবই সামান্য সাধারণ মানুষ, তুচ্ছ মানুষ তারা আমার আপনার মত, যাদের কোনো রূপরেখা কোথাও, কোনো মনেই চিরস্থায়ী নয়। তাই কাফকা তাঁদের চিহ্নিত করেন মাত্র একটি শব্দে–‘কে'(K)। মূল জার্মানে ‘কা’। তারপর অনন্তশূন্য। অর্থাৎ আর কোনো পরিচয়-চিহ্ন তার নেই। সেই ‘কে’ – যে ফিরে ফিরে আসে কাফকার দুটি অমোঘ রচনায়– The Trial এবং The Castle-এ।

The Trial বা বাংলায় যাকে আমরা ‘বিচার’ নামে অভিহিত করতে পারি, তার মূল চরিত্র যোষেফ কে এক সুন্দর সকালে উঠে দেখে কোনো অজ্ঞাত কারণে সে হয়েছে গ্রেপ্তার। এবং কারণটা অজ্ঞাতই থেকে যায় কে এবং পাঠকের কাছে শেষপর্যন্ত। যোষেফ তার অপরাধ কখনোই জানতে পারে না। লেখক বুঝি বলতে চান মানুষ যেন জন্ম থেকেই বন্দী আর ক্রমাগত তার বিচার চলছে এক অদৃশ্য বিচারালয়ে। কাফকার ভাষায় ‘Where was the judge whom he has never seen? Where was the High Court, to which he had never presented?’ নির্মম ও নিরপেক্ষভাবে কাফকা লিখে যান মানুষের এই অজ্ঞাত অথচ অনিবার্য ললাট-লিখন।

এই যোষেফ কে ফিরে আসে দুর্গ (The Castle) উপন্যাসে এক সামান্য জমি-জরিপকারের চরিত্র হয়ে। তার বাইরে সে পরিচয়হীন এক ব্যক্তিতে পরিণত হয়। কেমন পরিচয়হীন? সে মনে করে দুর্গে চাকরি করতে তাকে আদেশ দেওয়া হয়েছে। অথচ এক শীতের রাত্রে যখন সে দুর্গে ঢুকতে চায় তখন তাকে ঢুকতেই দেওয়া হয় না। প্রথমে তাকে অস্বীকার করা হয় এবং পরে দ্বিধাগ্রস্তভাবে স্বীকার করা হয় দুর্গে কারও আসার কথা আছে। সে-ই যে যোষেফ সে কথা সে কোনোভাবেই প্রতিপন্ন করতে পারে না এবং দুর্গের ভেতর থেকে আদেশ আসে তাকে কোনোভাবেই দুর্গে ঢুকতে না দেওয়ার। দুর্গবাসীরা অভিযোগ করে প্রবঞ্চনা করে কে ভগবানের দুর্গের অধিবাসী হতে চাইছে। এই যে নিজেকে প্রতিপন্ন করতে না পারা, এটা আধুনিক মানুষের এক ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন। আজকের ভারতের দিকে তাকালে এই দুঃস্বপ্ন আরো বাস্তব মনে হবে, যেখানে মানুষের কোনো পরিচয়পত্রই স্বীকৃতি পায় না!

‘আমি কে?’ এই মৌল প্রশ্ন কাফকার উপন্যাসে, গল্পে বারবার এসেছে। এ ঠিক সংস্কৃতর ‘আত্মানং বিদ্ধি’ নয়। এই দার্শনিকতার বাইরে অস্তির দার্শনিকতায় তা চলে যায়। সংস্কৃতয় বলা হচ্ছে নিজেকে জানতে দেশ কাল নিরপেক্ষভাবে। আর কাফকা বলছেন মানুষ যে দেশ ও কালে সমুপস্থিত সেখানেই তার অস্তিত্ব অস্বীকৃত হলে বারবার, সে দাঁড়াবে কোথায়? পৃথিবীতে মানুষের স্থান কোথায় ভাবতে গিয়ে কাফকা এই সমাজ ও সভ্যতাকে ‘সারমেয় সভ্যতা ‘ বলে মনে করেছেন। আর তা মনে করেছেন বলেই মানুষের জীবনের দুঃস্বপ্নকে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন উজ্জ্বল রোদের মতো তীক্ষ্ণ দীপ্ত ধারলো কলমের আঁচড়ে। তাই ‘ডি ফেন্ডভারলুঙ’ (Metamorphosis) গল্পের প্রথম লাইনেই খুব সরলভাবে লেখেন, ‘Gregor Samsa awoke one morning from uneasy dreams and he found himself transformed in his bed into a gigantic insect’। একজন ব্যর্থ, ভীতু ফেরিওয়ালা (salesman) গ্রেগর সামসা, যে নিজের পরিবারেই অনাহুত, যেন ক্রীতদাস, এই পোকার মতো জীবন কাটাতে কাটাতে নিজেই পরিণত হয়ে যায় দৈত্যাকৃতি পোকায়। এখানে The Trial উপন্যাসের যোষেফ কে-র সঙ্গে কোথাও মিলে যায় গ্রেগর সামসা, যাদের সকাল আর ঠিক পূর্বনির্ধারিত নিয়মে আসে না। তাদের অজান্তেই তাদের না-অস্তিত্বের গূঢ় চেতনা জীবনকে অনিবার্য ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে।

কাফকা উপন্যাস ও গল্পে সমাজ ও মানুষের নৈতিক ও অধ্যাত্মিক সমস্যাকে এক আবেগহীন, মেদহীন যুক্তিতে স্থাপিত করতে চান। তবে কি তিনি অধ্যাত্মিক দিক থেকে বিচার করতে চেয়েছেন সবকিছু? তিনি ভাবতেন, পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব ইহজাগতিক নিয়ন্ত্রণে নয়, বরং ঐশ্বরিক এক চেতনায়। মানুষ তা বোঝে না বলেই ভুল করে ফেলে। যারা বোঝে তারা খুব উদাসীনভাবে দেখে পৃথিবীকে, তার যাবতীয় ঘটনাবলীকে, যেমন কাফকা দেখেছেন প্রথম মহাযুদ্ধের শুরু ও শেষ। অন্যান্য ইউরোপীয় সাহিত্যিক ও শিল্পী একে দেখেছিলেন ফ্যাসিবাদের পতনের সূচনা হিসেবে, কিন্তু কাফকা তার ‘সারমেয় সভ্যতা’র পরিবর্তনের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন না। ‘Great Wall of China’ গ্রন্থের ‘বাকেট রাইডার’ গল্পটা প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর কয়লা, খাদ্যর অভাবকে ব্যঙ্গ করে লেখা। তবে কি কাফকা নৈরাজ্যবাদী? এ বিষয়ে আমরা সাক্ষ্যগ্রহণ করতে পারি ফেলিসে বাউয়েরকে লেখা চিঠির অংশবিশেষের –

‘যদি ভালো করে ভেবে দেখি আমার চূড়ান্ত লক্ষ্য কী, মনে হয় আমি যে কোনো পরমবিচারের দাবিপূরণের জন্য ছুটছি তা নয়, বরং ঠিক উল্টো। আমি জানতে চাই সমস্ত মানবজগৎ, সমস্ত প্রাণীজগৎ, বুঝতে চাই তাদের মৌল বাসনা, তাদের নৈতিক আদর্শ, সহজ নিয়মের মধ্যে ভরে আনতে চাই তাকে, আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের আচরণকে করে তুলতে চাই সেই মতো যাতে সমস্ত পৃথিবীর চোখে দেখতে পারি প্রসাদ।’
(অনুবাদ – শঙ্খ ঘোষ, অন্তহীন সিঁড়ি)

আসলে কাফকা কোনো সহজ সমাধানে পৌঁছতে চান নি। তাঁর অন্তর্দৃষ্টি তাঁকে দেখিয়েছিল নৈরাজ্যবাদের কোনো শেষ হয় না কোনোদিন, শেষ হয় না মানুষ ও সমাজের বা রাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব, যেখানে ব্যক্তিমানুষ পরিচয়হীন হয়ে পিষ্ট হতে থাকে, হতেই থাকে। কাফকার মৃত্যু পরবর্তী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, নাৎসীদের উত্থান ও ভয়ের জগৎ রচনা, তারপর দীর্ঘসময়ব্যাপী ঠাণ্ডা যুদ্ধ, আজকের পৃথিবীতে ধর্মকে কেন্দ্র করে বর্ণকে কেন্দ্র করে মানুষকে অস্তিত্বহীন করে তোলা, মারণাস্ত্র প্রতিযোগিতা ও আরও অসংখ্য ছোটোবড়ো ব্যাপার কাফকার ভাবনাকেই সমর্থন করে চলে ক্রমাগত।দিশাহীন নানুষকে দিশা দেখাবার প্রচেষ্টা তাঁর ছিল না, ছিল শুধু আবেগহীন নির্লিপ্তিতে ক্ষুরধার নির্মেদ ভাষায় এই পৃথিবীর স্বরূপ উন্মোচনের দায়। এডুইন ম্যুয়র ‘Great Wall of China’ গ্রন্থের মুখবন্ধে কাফকার এই পৃথিবী-উদাসীনতা সম্বন্ধে যে লিখেছিলেন, that he was of a Jewish blood, and that he was an invalid and thus doubly isolated’– একথা তাই মেনে নেওয়া যায় না। মেনে নেওয়া যায় না প্রখ্যাত মার্ক্সবাদী লুকাচর কথাও, যে কথা তিনি লিখেছেন ‘ফ্রানৎস কাফকা না টোমাস মান’ প্রবন্ধে – কাফকার নির্বেদকে, অবক্ষয়ী আধুনিকতাকে সরিয়ে টোমাস মানের ফলদায়ী কোনো বাস্তবতাকে গ্রহণ করার কথা। একথা অনস্বীকার্য যে সমাজ ও রাষ্ট্র ছাড়া মানুষের পক্ষে শৃঙ্খলা রক্ষা করে জীবন যাপন সম্ভব নয়। কিন্তু সেই কারণে যদি সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যক্তিমানুষের পরিসর কেড়ে নিয়ে তাকে শুধুই সমাজ বা রাষ্ট্রর দাস করে তুলতে চায়, মুছে দিতে চায় তার স্বতন্ত্র পরিচয়, তবে তা ব্যক্তি মানুষকে এক অতল খাদের কিনারে দাঁড় করায়। মার্ক্সবাদী হিসাবে লুকাচ নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রকে অগ্রবর্তী রাখেন, রাখেন সমাজকে, আর তা থেকে জন্ম নেয় এমন ভাবনা। এই সরলরৈখিক ভাবনা ও আশাবাদ আজকের জটিল জীবনে – যেখানে যে কোনো সময়ে মানুষকে রাষ্ট্রর জন্য বলিপ্রদত্ত মনে করা হয় – কোন সমাধান আনতে পারে না। আর কাফকা সমাধানের পথেই যান নি, কারণ পরিপূর্ণ সমাধান বলে কিছু হয় না তিনি জানতেন, একটার থেকে আরেক সমস্যায় যাওয়াই মানুষের নিয়তি, তার থেকে তার মুক্তি নেই।

(৪)

উনিশ শতকের শুরুতেই সোরেন কিয়ের্কেগার্দ ‘ভয় ও তজ্জনিত কাঁপুনি’র কথা বলেছিলেন। তাকেই যেন ধারণ করে অতি সাধারণ, সমাজে কোনো চিহ্ন না রাখা মানুষের জীবনের অন্তহীন চলার কথা লিখে গেলেন কাফকা।পাশ্চাত্যের কবিতা যেমন বদলে গেল বোদলেয়রের পরে, তেমনি কাফকার পরে বদলে গেল কথাসাহিত্যের রূপ। যে রূপক ও প্রতীকের আকারে কাফকা খুঁজে গেলেন অসহায়, নিস্তেল মানুষের জীবনমর্ম, তাকে ধারণ করেই বা বলা যায় তারই গর্ভ থেকে জন্ম নিল আলবেয়র কাম্যুর ‘আউটসাইডার’। Myth of Sisyphus-এর শুরুতেই কাম্যু যখন লেখেন, ‘There is but one truly serious philosophical problem and that is suicide’ তখন তা যেন কাফকার bleak aphorism- এর এই পংক্তিটিরই প্রতিধ্বনিপ্রায় হয়ে ওঠে – ‘A first sign of the beginning of understanding is the wish to die’।

স্যামুয়েল বেকেট অবশ্য কাফকার প্রভাব অস্বীকার করতে চেয়েছেন (you notice how Kafka’s form is classic, it goes on like a steamroller almost serene. It seems to be threatened the whole time – but the construction is in the form, in my work there is construction behind the form, not in the form’. [Interview of Samuel Beckett by Israel Shenkar::New York Times::05.05.1956]), কিন্তু আমরা লক্ষ্য করি তাঁর লেখায় (বিশেষত ১৯৪৬ খ্রীষ্টাব্দে রচিত তাঁর চারটি নভেলাতে) কাফকার মেটামরফোসিস ও দ্য ক্যাসলের প্রভাব অনস্বীকার্য।

অন্যদিকে হোর্হে লুই বোর্হেস কাফকাকে অনুবাদ ও আলোচনার মাধ্যমে আর্জেন্তিনায় শুধু পরিচিত করান নি, তাঁর রচিত ‘La loteria en babilonia’ এবং ‘La bibliotica de babel’ গ্রন্থদুটির গল্পে কাফকার ঋণ সরাসরি স্বীকার করেছেন। তাঁর অন্যান্য লেখাতেও (যেমন El Milagro Secreto বা Examen de la obra de Herbert Quain) Kafkaesque স্পষ্ট।

আর একজন বিশ্বখ্যাত লাতিন আমেরিকান লেখক গ্যাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ তাঁর লেখক হয়ে ওঠার পিছনে কাফকার অবদান স্বীকারে অকুন্ঠ – ‘One night a friend lent me a book of short-stories by Franz Kafka. I went back to the pension where I was staying and began to read The Metamophosis The fist line almost knocked me of the bed. I was so surprised.’ এবং সেই সুবিখ্যাত প্রথম লাইনটা পড়ার পর মার্কেজ ‘thought to myself that I didn’t know anyone was allowed to write things like that. If I had known I would have started writing a long time ago. So I immediately started writing short-stories’।

কাফকার লেখা তাই তাঁর সময়জ হয়েও ডানা মেলে দেয় সুদূর ভাবিকালের দিকে এবং প্রায় শতাব্দী অতিক্রান্ত হয়েও ছায়া ফেলে যায় বর্তমান জীবন-জটিলতার অনুষঙ্গে তীব্রভাবে প্রাসঙ্গিক থেকে।


ছবি: প্রণবশ্রী হাজরা


তথ্যসূত্র:
1. Epilogue: Max Brod :The Trial
2. ভূমিকা: নৃপেন্দ্র সান্যাল: বিচার
3. ঐতিহ্যের বিস্তার: শঙ্খ ঘোষ
4. হে অনন্ত নক্ষত্রবীথি: চিন্ময় গুহ


লেখকের কথা: শমিতকুমার দাস

জন্ম : হাওড়া জেলার হাওড়া শহরে। বর্তমান আস্তানা গড়িয়ায়। লেখালেখির শুরু স্কুলজীবনে। কবিতা দিয়ে শুরু। সেখান থেকে ছোটগল্প ও প্রবন্ধর দিকে যাওয়া। নেশা বলতে গান শোনা, নাটক দেখা। মাঝেমধ্যে আবৃত্তি বা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করলেও তা নিয়মিত নয়। আগ্রাসী পাঠক হলেও বই পড়া নেশা বা শখ নয়, কাজ। প্রকাশিত দুটি কাব্যগ্রন্থ– ‘এই যে আমার বিষাদগাথা’, ‘বিন্দুজল বাতাসে কাঁপে’।

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

2 Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।