লেখক: জয়দীপ চক্রবর্তী
নেই নজর কাড়া থিমের দাপট। নেই চমকে দেওয়া লাইটিং। তবু মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন বাড়ির পুজো। জমিদার বাড়ি বা পারিবারিক পুজোর ঐতিহ্য ও পরম্পরা এখনও মানুষের কাছে সমান আগ্রহের বিষয়।
বনগাঁর গাইঘাটার ইছাপুরের চৌধুরীদের ৪০০ বছরের পুজো
বনগাঁ মহকুমার প্রাচীন বাড়ির পুজোগুলোর মধ্যে অন্যতম বন্দ্যোপাধ্যায়, দত্ত, সিংহ, দাঁ, চৌধুরী বাড়ির পুজো। এ ছাড়া, গোবরডাঙার জমিদার বাড়ির পুজো যথেষ্ট ঐতিহ্যবাহী। অশোকনগরের ধর বাড়ির পুজোও জনপ্রিয়। গাইঘাটার ইছাপুরের চৌধুরীদের জমিদারি এখন আর নেই। আর্থিক অনটনের সঙ্গে লড়াই করেই ইছাপুরের জমিদারদের উত্তরসূরিরা এখনও ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন। এক সময়ে বেশ ঘটা করেই পুজো হত। এখন এর জৌলুস কমে গিয়েছে। কিন্তু প্রায় ৪০০ বছরের বেশি এই পুজোকে ঘিরে মানুষের উত্সাহ একফোঁটাও কমেনি। তবে এখনও এই এলাকার মানুষের কাছে দুর্গা পুজো বলতে চৌধুরী বাড়ির পুজোকেই বোঝায়। বৈষ্ণব ধর্মশাস্ত্রের বিশিষ্ট পণ্ডিত রাঘব সিদ্ধান্তবাগীশ ছিলেন চৌধুরী বংশের প্রতিষ্ঠাতা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, ‘চৌধুরী’ পদবিটি তাঁরা পেয়েছিলেন মুঘল সম্রাট আকবরের কাছ থেকে। রাঘবের পৌত্র রঘুনাথ চৌধুরী আনুমানিক ১৬০০ সালে ইছাপুরে দুর্গা পুজো শুরু করেন। তারপর থেকে তা বংশ পরম্পরায় চলে আসছে। মহালয়ার পরদিন থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজো।প্রথমে ঘট পুজো। যষ্ঠীতে দেবীর বোধন। দশমীতে দেবীর বিসর্জন হয়। যমুনা নদীতে প্রথমে মোষ বলি দেওয়া হত।শোনা যায় তারপরে একটা সময় ১০১টি পাঁঠা বলি দেওয়া হত। এখন অবশ্য সে সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
গোবরডাঙার মুখোপাধ্যায় বাড়ির ৩০০ বছরের দুর্গা
গোবরডাঙার মুখোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গা পুজোও প্রায় তিনশো বছরেরও বেশি পুরনো। যা এলাকার মানুষের কাছে জমিদার বাড়ির দুর্গা পুজো হিসাবেই পরিচিত। এই বিশাল জমিদার বাড়িটি আজও উজ্জ্বল। এত থিম পুজোর সংখ্যা বাড়লেও এখনও এলাকার মানুষ কিন্তু একটি দিন এই বাড়ির পুজো দেখার জন্য বরাদ্দ রাখেন। ওই পরিবারের পূর্বপুরুষেরা প্রায় সাড়ে চারশো বছরেরও বেশি সময় আগে লখনউ থেকে এসে বাংলাদেশের সারষার সাগরদাঁড়িতে বসবাস শুরু করেন। সেখানেই প্রথম পুজোর সূচনা হয়। পরিবারের সদস্য শ্যামরাম গোবরডাঙার ইছাপুরে আসেন। সেখানকার চৌধুরী পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করেন। সেই সূত্র তিনি জমিদারির একাংশ পেয়েছিলেন। তারপর তার ছেলে খেলারাম ব্রিটিশদের তৈরি জমিদার বাড়িটি কিনে নেন। সেখানেই প্রথম দুর্গাপুজো শুরু হয়। এই বাড়ির দুর্গা প্রসন্নাময়ী দুর্গা নামে খ্যাত। কারণ, খেলারাম বাড়ির পাশেই প্রসন্নাময়ী কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিপদে ওই কালীমন্দিরে ঘট বসে। সপ্তমীর দিন ওই ঘট আনা হয় জমিদার বাড়িতে। অতীতে যষ্ঠীর দিন জমিদার বাড়িতে কামান দাগা হত। এলাকার মানুষ বুঝতে পারতেন পুজো শুরু হল। অতীতে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় হাতিও থাকত বলে শোনা যায়।
মহিষাসুর ছাড়াই পুজো। অষ্টমীতে দেবী দুর্গার সামনেই কালী ঠাকুরের পুজো হয়। দেবীর হাতে কোনও অস্ত্র থাকে না। এখানে দেবীর দু’টি হাত। কোলে গণেশ, সঙ্গে থাকে দুই মেয়ে। কার্তিক এই পুজোতে গরহাজির। এ ভাবেই প্রায় আড়াইশো বছর ধরে এই পুজো হয়ে আসছে। জমিদার কাশীনাথ ধর এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। ষষ্ঠীতে পুঁথি পুজো দিয়ে উত্সব শুরু হয় বলে পরিবার সূত্রের খবর।
বনগাঁর দাঁ বাড়িতে কমলেকামিনী দুর্গা
বনগাঁ শহরে ট’বাজার এলাকায় দাঁ বাড়ির দুর্গা পুজোতে দেখা যাবে কমলেকামিনী দুর্গা। কথিত আছে জাহাজে চড়ে বাণিজ্য করতে গিয়েছিলেন শ্রীমন্ত নামে এক ব্যক্তি। প্রবল ঝড় বৃষ্টিতে জাহাজ জলে ডুবে যায়। ডুবে যাচ্ছিলেন শ্রীমন্তও। সেই সময়ে মা কমলেকামিনী হাত ধরে তাঁকে টেনে তুলেছিলেন। দাঁ বাড়িতে দেবী কমলেকামিনী অভয়া দুর্গা। প্রায় দু’শো বছরেরও আগে হুগলির বৈঁচিতে এই পুজোর সূচনা হয়। পরবর্তীকালে কৃষ্ণচন্দ্র দাঁ গোপালনগরে এই পুজো শুরু করেন। প্রতি বছর উল্টো রথের দিন মায়ের কাঠামোতে সিঁদুর দিয়ে শুরু হয় প্রতিমা গড়ার কাজ। বিসর্জনের আগে বাড়ির প্রধান ফটকের সামনে দেবীকে সাতবার দোলানো হয়। সেই সময়ে বাড়ির সকলে প্রতিমা লক্ষ্য করে গুড় ও চাল ছোড়েন। ইছামতীতে বিসর্জনের আগে পাত্রে জল রেখে দর্পণে মায়ের চরণ দর্শন করা হয়।
বনগাঁর দত্তপাড়ায় দত্তবাড়ির পুজো
বনগাঁর দত্তপাড়ায় দত্তবাড়ির পুজো আড়াইশো বছর ছাড়িয়েছে। প্রফুল্ল দত্ত ও তাঁর ছেলে সুনীল দত্তের সময়ে এই পুজো শুরু হয়েছিল। বছর চল্লিশ আগে দত্তরা এখান থেকে চলে যান। তখন থেকে ঘোষেরা এই পুজো করছেন। অতীতে প্রতিমা বিসর্জনের আগে নীলকন্ঠ পাখি ওড়ানো এবং বন্দুক ছোড়ার প্রথা ছিল। অতীতে দেবী একবার স্বপ্নে আদেশ দেন হাতের ভার আর তিনি বহন করতে পারছেন না। তারপর থেকে দু’টি বড় হাতের সঙ্গে ছোট আটটি হাত করা হয়। যা দর্শনার্থীরা দেখতে পারবেন না। চুল ও অলংকার দিয়ে সেই হাত ঢাকা থাকে।
বনগাঁর সিংহ বাড়ির ৩০০ বছরের পুজো
বনগাঁর সিংহ বাড়ির তিনশো বছরেরও আগেকার পুজো। গিরীশচন্দ্র সিংহ ওই পুজোর সূচনা করেন। অতীতে পশুবলি দেওয়ার রেওয়াজ থাকলেও একশো বছর আগে থেকে পশুবলি বন্ধ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাকচিক্য ও গরিমা কমেছে অনেক পারিবারিক পুজোর। কিন্তু ঐতিহ্য রক্ষাতে তারা এখনও ভাস্বর।
লেখকের কথা: জয়দীপ চক্রবর্তী
পশ্চিমবঙ্গ তথা বাংলাদেশ সহ অন্যান্য পত্রপত্রিকা তে দীর্ঘদিন লিখে আসছি।প্রথম কবিতা লেখা শুরু ষষ্ঠ শ্রেণীতে বিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক পাখা ও বাড়ির বিড়াল নিয়ে।।এখনও পর্যন্ত দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে।লেখালেখি আমার কাছে কোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যে নয় শুধুমাত্র এক অকৃত্রিম ভালোলাগা,অনেকটা নেশার মতো,মনের সুস্থতার উপাদান সংগ্রহ,নিজেকে ভালো রাখা আসলে এক কথায় বলতে গেলে না লিখে থাকতে পারি না।অনেক সংস্থা,কত চেনা অচেনা মানুষের ভালোবাসা,মর্যাদা ,সন্মান, সম্মাননা পেয়েছি এই পর্যন্ত ,কখনও কখনও মনে প্রশ্ন ভীড় করে এই সামান্য আমার লেখালেখি,এত ভালবাসা,সন্মান সত্যিই কি আমি পাওয়ার যোগ্য???যাইহোক আপনাদের আপনার আমার শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানাই আমার লেখাকে এখানে নির্বাচিত করার জন্য।আপনার ও আপনাদের সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনেক শুভ কামনা, অভিনন্দন ও শ্রীবৃদ্ধি কামনা করি।ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন ও সাবধানে থাকবেন।